Ajker Patrika

খাদ্যের ধরন পাল্টে বছরে দেড় কোটি মানুষ বাঁচানো সম্ভব: গবেষণা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: এএফপি
ছবি: এএফপি

খাদ্যাভ্যাস বদলানো হলে প্রতিবছর প্রায় ১ কোটি ৫০ লাখ মানুষের অকাল মৃত্যু রোধ করা সম্ভব বলে জানিয়েছে একটি যুগান্তকারী নতুন গবেষণা। আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত ২০২৫ সালের ইএটি-ল্যানসেট কমিশন জানিয়েছে, অধিকাংশ উদ্ভিদনির্ভর ও নমনীয় বৈশ্বিক খাদ্যাভ্যাস মানবস্বাস্থ্য রক্ষা, বৈষম্য হ্রাস এবং পরিবেশ ধ্বংস কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

কমিশনের তথ্যে বলা হয়েছে—শস্য, ফল, শাকসবজি, বাদাম ও ডালকে ভিত্তি করে তৈরি ‘প্ল্যানেটারি হেলথ ডায়েট’ অনুসরণ করলে অকাল মৃত্যুর ঝুঁকি ২৭ শতাংশ পর্যন্ত কমানো সম্ভব। এর ফলে ডায়াবেটিস, হৃদ্‌রোগ, ক্যানসার ও স্নায়বিক অসুখসহ দীর্ঘস্থায়ী রোগের প্রকোপ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে।

কমিশনের সহসভাপতি শকুন্তলা হরকিসিং টিলস্টেড বলেন, ‘খাদ্য ব্যবস্থা আজকের বহু সংকটের অন্যতম কারণ, আবার সমাধানের চাবিকাঠিও। পৃথিবী ও মানুষের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বাস্থ্য নির্ভর করছে আজকের সিদ্ধান্তের ওপর।’

বর্তমানে বৈশ্বিক খাদ্য উৎপাদন ও খাদ্য গ্রহণ গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের প্রায় ৩০ শতাংশের জন্য দায়ী। এর পাশাপাশি জীববৈচিত্র্য হারানো, ভূমি ও মিঠাপানির অতিরিক্ত ব্যবহার এবং দূষণেরও প্রধান উৎস এটি। পৃথিবীতে প্রতিবছর সব মানুষকে খাওয়ানোর মতো ক্যালরি উৎপাদিত হলেও প্রায় ৩৭০ কোটি মানুষ পুষ্টিকর খাদ্য, পরিচ্ছন্ন পরিবেশ বা ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত।

গবেষণায় বলা হয়েছে, বিশ্বের ধনী ৩০ শতাংশ জনগোষ্ঠীর খাদ্যাভ্যাস থেকে খাদ্য ব্যবস্থার ৭০ শতাংশ পরিবেশগত চাপ তৈরি হয়। অপরদিকে বিশ্বের অর্ধেক মানুষ স্বাস্থ্যকর খাদ্য কেনার সামর্থ্যই রাখে না। লাখ লাখ শিশু কৃষিশ্রমে নিয়োজিত এবং এক-তৃতীয়াংশ খাদ্য কর্মী ন্যূনতম মজুরি ছাড়াই অনিরাপদ পরিবেশে কাজ করছেন।

কমিশনের প্রস্তাবিত ডায়েটে দৈনিক গড়ে ১৫০ গ্রাম দানা শস্য, ৫০০ গ্রাম ফল ও সবজি, ২৫ গ্রাম বাদাম এবং ৭৫ গ্রাম ডাল রাখা হয়েছে। পাশাপাশি সপ্তাহে সীমিত পরিমাণে লাল মাংস (২০০ গ্রাম), মুরগি (৪০০ গ্রাম), মাছ (৭০০ গ্রাম) এবং তিন থেকে চারটি ডিম খাওয়ার অনুমতি রয়েছে। দুগ্ধজাত খাবারের ক্ষেত্রে দিনে সর্বোচ্চ ৫০০ গ্রাম পর্যন্ত দুধ, দই বা পনির খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

গবেষণায় আরও বলা হয়, বর্তমান খাদ্যব্যবস্থা প্রতিবছর ১৫ ট্রিলিয়ন ডলারেরও বেশি গোপন ব্যয় চাপাচ্ছে স্বাস্থ্য খরচ ও পরিবেশ ধ্বংসের মাধ্যমে। অথচ বছরে ২০০-৫০০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগে এই খাতে পাঁচ ট্রিলিয়নের বেশি ফেরত পাওয়া সম্ভব। এ জন্য অস্বাস্থ্যকর খাবারে কর, ফল-সবজিতে ভর্তুকি, ডাল-শস্য উৎপাদনে সহায়তা ও স্কুলমিল প্রোগ্রাম শক্তিশালী করার সুপারিশ করা হয়েছে।

কমিশন সতর্ক করেছে, খাদ্য ব্যবস্থার কারণে পৃথিবীর নয়টি সুরক্ষিত সীমানার মধ্যে পাঁচটি ইতিমধ্যেই ভেঙে গেছে। তবে পুনর্জাগরণমূলক কৃষি, খাদ্য অপচয় অর্ধেক করা এবং প্রাকৃতিক প্রতিবেশ ধ্বংস রোধ করলে ২০৫০ সালের মধ্যে প্রায় ৯৬০ কোটি মানুষকে সুস্থভাবে খাদ্য জোগান দেওয়া সম্ভব হবে।

ল্যানসেট সম্পাদক রিচার্ড হর্টন লিখেছেন, ‘এখন জ্ঞান ও প্রমাণ আমাদের হাতে। তাই পৃথিবীর সুরক্ষার দায়িত্ব সবার। আজ পদক্ষেপ না নিলে আগামী প্রজন্মের জন্য তা মারাত্মক হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

শুধু ডিজিএফআইয়ের লোগোর সঙ্গে মিল থাকায় শাপলা না দেওয়া বৈষম্যমূলক: এনসিপি

তোফায়েল আহমেদের শারীরিক অবস্থা ‘অপরিবর্তিত’

ন্যাটোকে ভাঙতে ধূসর খেলায় নেমেছেন পুতিন, দরকার তিন ব্যর্থতা

খাদ্যের ধরন পাল্টে বছরে দেড় কোটি মানুষ বাঁচানো সম্ভব: গবেষণা

শিগগির প্রতি আসনে একজন প্রার্থীকে ‘সবুজসংকেত’ দেবে বিএনপি: সালাহউদ্দিন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত