Ajker Patrika

বিচারের জন্য আর কত অপেক্ষা, বাবার প্রশ্ন

কুড়িগ্রাম ও নাগেশ্বরী প্রতিনিধি
আপডেট : ০৭ জানুয়ারি ২০২২, ০৮: ৩৯
বিচারের জন্য আর কত  অপেক্ষা, বাবার প্রশ্ন

বুলেটে ছিন্নভিন্ন কিশোরীর দেহটি সীমান্তের কাঁটাতারে ঝুলে ছিল সাড়ে চার ঘণ্টা। এই ছবি বাংলাদেশ-ভারত দুই দেশসহ আন্তর্জাতিক পর্যায়েও আলোড়ন তুলেছিল। ব্যাপক সমালোচনা হয়েছিল ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) হত্যাকাণ্ড নিয়ে।

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীর রামখানা অনন্তপুর সীমান্তে বিএসএফের হাতে নির্মমভাবে কিশোরী ফেলানী নিহত হওয়ার ১১ বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ ৭ জানুয়ারি। কিন্তু এত দিনেও মেয়ে হত্যার বিচার না পেয়ে হতাশ ফেলানীর বাবা-মা।

বাবা নূর ইসলাম হতাশা নিয়ে বললেন, ‘বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষ আমার নিরীহ মেয়েটাকে গুলি করে হত্যা করল। এই হত্যার বিচার চেয়ে আমি অনেক ঘুরেছি, মানবাধিকার সংস্থাসহ বহু জনের কাছে গেছি। ১১ বছর হয়ে গেল, এখনো বিচার পেলাম না। বিচার পাইলে মেয়েটার আত্মা শান্তি পাইতো। আর কত অপেক্ষা করতে হবে?’

ফেলানীদের বাড়ি কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার রামখানা ইউনিয়নের কলোনীটারী গ্রামে। জীবিকার প্রয়োজনে ফেলানীর বাবা নূর ইসলাম পরিবার নিয়ে থাকতেন ভারতের বঙ্গাইগাঁও গ্রামে। দেশে ফেলানীর বিয়ে দেবেন বলে ২০১১ সালের ৬ জানুয়ারি রাতের আঁধারে মেয়েকে নিয়ে সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশের উদ্দেশে রওনা দেন নূর ইসলাম। ৭ জানুয়ারি ভোরে ফুলবাড়ির অনন্তপুর সীমান্তে কাঁটাতারের ওপর দিয়ে মই বেয়ে নামার সময় বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষের গুলিতে মর্মান্তিক মৃত্যু হয় ফেলানীর।

ফেলানী হত্যার বিচার এবং সীমান্ত হত্যা বন্ধে ভারতের ওপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টি হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৩ সালের ১৩ আগস্ট ভারতের কোচবিহারে জেনারেল সিকিউরিটি ফোর্সেস কোর্টে ফেলানী হত্যা মামলার বিচার শুরু হয়। কিন্তু ৬ সেপ্টেম্বর রায়ে আসামি অমিয় ঘোষকে খালাস দেওয়া হয়। রায় প্রত্যাখ্যান করে পুনর্বিচারের দাবি জানান ফেলানীর বাবা। ২০১৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর পুনর্বিচার শুরু হলে ১৭ নভেম্বর আবারও আদালতে সাক্ষ্য দেন ফেলানীর বাবা। ২০১৫ সালের ২ জুলাই এ আদালত পুনরায় আত্মস্বীকৃত আসামি অমিয় ঘোষকে খালাস দেয়। রায়ের পরে একই বছর ১৪ জুলাই ভারতের মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চ ‘মাসুম’ ফেলানীর বাবার পক্ষে দেশটির সুপ্রিম কোর্টে রিট পিটিশন করে। ওই বছর ৬ অক্টোবর রিট শুনানি শুরু হয়। ২০১৬ ও ১৭ সালে কয়েক দফা শুনানি পিছিয়ে যায়। পরে ২০১৮ সালের ২৫ জানুয়ারি শুনানির দিন ধার্য হলেও শুনানি হয়নি। এরপর ২০১৯ এবং ২০২০ সালে কয়েকবার শুনানির তারিখ ধার্য হলেও এখন পর্যন্ত তা সম্পন্ন হয়নি।

ফেলানীর বাবা নূর ইসলাম বলেন, ‘ফেলানী হত্যার পর সরকারসহ বিভিন্ন সংগঠন খোঁজ নিলেও এখন আর কেউ খোঁজ নেয় না। আমার বাকি ছেলেমেয়েদের নিয়ে খুব বিপাকে আছি। পরিবারে কারও চাকরির ব্যবস্থা করলে দুই বেলা খেয়েপরে বাঁচতে পারতাম।’

ফেলানীর মা জাহানারা বেগম বলেন, ‘আমি দুই দেশের সরকারের কাছে মেয়ে হত্যার সঠিক বিচার দাবি করছি।’

ফেলানী হত্যাকাণ্ডের পর ফেলানীর পরিবারকে আইনি পরামর্শ দেওয়াসহ ফেলানীর বাবার সঙ্গে ভারতে একাধিকবার যান কুড়িগ্রামের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এস এম আব্রাহাম লিংকন। বিচারের সর্বশেষ অবস্থা নিয়ে এই আইনজীবী বলেন, নানা কারণে শুনানির দিন পিছিয়ে গেছে। এখন করোনাকালীন নিয়মিত শুনানি হয়তো সম্ভব নয়। তবে রিটটি নিষ্পত্তি হওয়া জরুরি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাজধানীর মিরপুরে যাত্রী নামিয়ে গুলি ছুড়ে বাসে আগুন দিল দুর্বৃত্তরা

দিল্লির সংকটকালে ভারতীয়-আমেরিকানদের বিস্ময়কর নীরবতা

দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানের শর্তেই কেবল ট্রাম্পের গাজা প্রস্তাব মানতে প্রস্তুত রাশিয়া: পুতিন

মানচিত্র থেকে পাকিস্তানকে মুছে ফেলার হুমকি দিলেন ভারতের সেনাপ্রধান

জনসংখ্যার সংকট, তারপরও বিদেশিদের প্রতি ঘৃণা এখন তীব্র জাপানে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত