Ajker Patrika

পাঁচ মিনিটের বৃষ্টিতেই ঘিওর হাটে হাঁটুপানি

ঘিওর (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি
আপডেট : ১২ মে ২০২২, ১১: ২৮
পাঁচ মিনিটের বৃষ্টিতেই  ঘিওর হাটে হাঁটুপানি

বৃষ্টি হলেই মানিকগঞ্জের ঘিওর হাটে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। ফলে হাজারো ক্রেতা-বিক্রেতাদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। খানাখন্দে ভরা সড়ক, নালা ও পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় এ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।

গতকাল বুধবার ছিল ঘিওর হাট বার। এদিন বৃষ্টির ফলে বাজারের অলিগলিসহ কয়েকটি প্রবেশ রাস্তা পানিতে ডুবে যায়। হাটে বেচাকেনা করতে আসা হাজারো মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়।

জনগুরুত্বপূর্ণ এই বাজারটিতে এ রকম জলাবদ্ধতার দীর্ঘদিনেও কোনো প্রতিকার মেলেনি। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নেওয়া হলে আগামী বর্ষার শুরুতেই বৃষ্টির পানিতে বাজার অচল হয়ে পড়তে পারে। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এখানে বিশুদ্ধ পানির অভাব দীর্ঘদিনের। রাস্তায় বিদ্যুতের খুঁটিতে নেই কোনো বাতি।

গতকাল বেলা ২টার দিকে সামান্য সময়ের বৃষ্টিতে হাঁটু সমান জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। কার্যত অচল হয়ে পড়ে ঘিওর বাজারে মানুষজনের চলাফেরা। অন্যতম বৃহত্তম ঘিওর বাজার থেকে লাখ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় হলেও, বিন্দু মাত্র উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। ৫ মিনিটের বৃষ্টিতেই ঘিওর পুরোনো গরু হাটসহ বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।

হাটের কাপড় ব্যবসায়ী মোসলেম মিয়া জানান, সামান্য বৃষ্টিতে তলিয়ে যায় এই গলির পথ। ফলে দুই একদিন আর এই পথে ক্রেতা আসেন না।

অস্থায়ী জুতা বিক্রেতা সুধীর দাস আক্ষেপ করে বললেন, গতকাল ঠিকমতো দোকানদারি করে বাড়ি যাই। আজ (বুধবার) সকালে হাঁটু জল মারিয়ে দোকান খুলে দেখি, আমার সব জুতা ঘরের ভেতর পানিতে ভাসছে। এর কি কোনো প্রতিকার নেই?

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ঘিওর বাসস্ট্যান্ড, ধানহাট, কাঠ পট্টি, দুধবাজার, মাছবাজার, চাল বাজারসহ ৭টি স্পট বেহাল। ঘিওর পুরোনো গরু হাটসহ আশপাশের নানা জায়গায় ৫-১০ মিনিটের বৃষ্টিতেই হাঁটু পানি জমে পুরো এলাকা প্লাবিত হয়ে যায়। বাজারের নালা ব্যবস্থা অপ্রতুল। পয়োনিষ্কাশনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় বাজার ব্যবসায়ীদের দুর্ভোগের অন্ত নেই। ময়লা-আবর্জনা ফেলার ডাস্টবিন নেই। বৈদ্যুতিক খুঁটিতে সিকিউরিটি বাতি না থাকায় সন্ধ্যার পর পুরো বাজারে অন্ধকার থাকে। লাখ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় হলেও ন্যূনতম নাগরিক সুবিধা না পেয়ে অনেকে হতাশা প্রকাশ করছেন।

কাঠ পট্টির ব্যবসায়ী মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, সাপ্তাহিক হাট বারে গড়ে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকার কাঠ বিক্রি করি। এই আয় দিয়েই চলে আমার সংসার। কিন্তু আজ (বুধবার) প্রবেশ রাস্তায় হাঁটু পানি থাকায় কোনো ক্রেতাই আসেনি। আমরা নিয়মিত খাজনা দিই, তারপরেও কেন এমন ভোগান্তি?

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ব্যবস্থাপনা কমিটির এক সদস্য জানান, ১৯৮৮ সালের প্রথম দিকে ঘিওর বাসস্ট্যান্ড, ধান হাট ও গরু হাটের কয়েকটি স্থানে নলকূপ ও শৌচাগার নির্মাণ করা হলেও অল্প দিনেই সেগুলো ভরাট হয়ে ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার না করায় ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ফলে যত্রতত্র প্রস্রাব ও মলমূত্র ত্যাগ করায় উৎকট গন্ধে দোকানদার ও হাটুরেদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। তবে ব্যবসায়ীদের দাবি পরিকল্পিত, মানসম্মত উন্নয়নকাজ না করায় রাস্তা-ঘাট ও বাজারের এ অবস্থা হয়েছে।

ঘিওর বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক আ. মতিন মুসা জনান, ঘিওর বাজারের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবগত করেছি। তিনি দ্রুত সমস্যা সমাধানে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন।

ঘিওর সদর ইউনিয়ন ইউপি চেয়ারম্যান অহিদুল ইসলাম টুটুল বলেন, হাট-বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটি ও ঊর্ধ্বতন প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। অবিলম্বে বাজারের উন্নয়নে বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে কাজ করা হবে।

ঘিওর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. হামিদুর রহমান বলেন, বৃহত্তম ঘিওর হাট-বাজারের সমস্যার কথা জানার পর, একাধিকবার সরেজমিন পরিদর্শন করে কিছু প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। আশা করি অতি দ্রুত এই কাজগুলো করলে হাটের সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে। তখন কেনা বেচা করতে আসা মানুষজনের ভোগান্তি পোহাতে হবে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত