Ajker Patrika

সম্পদ লিখে দিয়ে সুখে থাকা হলো না নবির-সুফিয়ার

রংপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ২৩ মে ২০২২, ১৪: ৪১
সম্পদ লিখে দিয়ে সুখে থাকা হলো না নবির-সুফিয়ার

জীবনের পড়ন্ত বেলায় কে ধরবে সংসারের হাল? কে দেবে ভরণপোষণ? একটি ছেলে হলে ভালো হয়। অন্তত মরার পর খাটিয়া ধরবে—এমন চিন্তাভাবনা সমাজের অধিকাংশ মা-বাবার। এই চিন্তার বাইরে ছিলেন না রংপুরের সিও বাজারের উত্তম বেতারপাড়া এলাকার নবির হোসেন ও সুফিয়া খাতুন দম্পতি।

তিন মেয়ের পর চতুর্থ সন্তান হিসেবে ছেলের জন্ম হয় নবির-সুফিয়ার ঘরে। তিন মেয়ের তুলনায় ছেলেকে বেশ আদর-যত্নে মানুষ করেন। একসময় ছেলেমেয়েদের বিয়ে হয়। নবির-সুফিয়া দম্পতি বৃদ্ধ হন।

কখন শেষনিশ্বাস ত্যাগ করবেন এমন অনিশ্চয়তায় নবির নিজের নামে থাকা সম্পত্তি লিখে দেন একমাত্র ছেলের নামে। যাতে জীবনের শেষ বেলায় ছেলের সংসারে সুখে-শান্তিতে কাটে। কিন্তু তা হয়নি। সম্পত্তি লিখে নেওয়ার দুই মাসের মাথায় নবির ও সুফিয়াকে ঘর থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে একমাত্র ছেলে সাইদুল ইসলামের বিরুদ্ধে। ছেলের কাছ থেকে বিতাড়িত হয়ে এখন বৃদ্ধ নবির ও সুফিয়া আশ্রয়ের খোঁজে ঘুরছেন পথে পথে। থাকছেন অন্যের বাড়িতে, অর্ধাহারে-অনাহারে।

স্থানীয় লোকজন এবং ওই বৃদ্ধ দম্পতির স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নবির সিও বাজার উত্তম বেতারপাড়ায় দীর্ঘ ৫০ বছর মসজিদের মুয়াজ্জিনের দায়িত্ব পালন করেছেন। এখন বয়সের ভারে ন্যুব্জ। তিনি মুয়াজ্জিনের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি নিজের জমিতে চাষাবাদও করতেন। অনেক কষ্টে আবাদি জমিসহ বাড়িঘর তৈরি করেছেন।

শারীরিক অসুস্থতায় ভুগতে থাকা নবির জীবনসায়াহ্নে একটু সুখের আশায় বাড়িঘরসহ সব জমিজমা ছেলে সাইদুলের নামে দলিল করে দেন। এটাই কাল হয়ে দাঁড়ায় তাঁর জীবনে। একসময় তিলে তিলে গড়ে তোলা ঘরদোর ছাড়তে হয়।

নবির অভিযোগ করে বলেন, ‘একমাত্র ছেলেকে আমার সব সম্পত্তি লিখে দিয়েছি। মেয়েদেরও জানাইনি। যাতে ছেলে সুখে থাকে, শেষ সময়টাতে আমাদের সুখে-শান্তিতে রাখে, দুই বেলা ভালো-মন্দ খেয়ে ছেলের সঙ্গে থাকতে পারি। কিন্তু সব আশা ছাই হয়ে গেছে। জমিজমা লিখে দেওয়ার পর থেকে ছেলে খুব খারাপ আচরণ শুরু করে। খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দেয়। রমজানে আমাদের মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। স্থানীয় মসজিদ কমিটি, ওয়ার্ড কাউন্সিলরসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা বিষয়টি জানার পর বেশ কয়েকবার বৈঠকও করেন। কিন্তু সাইদুল কারও কথা শোনে না। এখন আমরা মানুষের বাড়ি বাড়ি ঘুরে এক বেলা আধপেট খেয়ে বেঁচে আছি।’

তবে সাইদুলের স্ত্রী সালমা আখতার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমার স্বামী তাঁর বাবা-মাকে মারধর করেনি। বাড়ি থেকে বেরও করে দেয়নি। আমার স্বামীর বিরুদ্ধে এসব মিথ্যা অভিযোগ।’

যোগাযোগ করা হলে রংপুর সিটি করপোরেশনের ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবুল কালাম আজাদ গতকাল রোববার বলেন, ‘বৃদ্ধ নবির ও সুফিয়াকে তাঁর ছেলে মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে, এ ঘটনা সত্য। বিষয়টি এলাকাবাসী সবাই জানে। নির্যাতনের শিকার বাবা-মাকে আইনের সহায়তা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত