Ajker Patrika

ইয়াসিন লাশ হয়ে ফিরলেন বাড়ি

পাবনা প্রতিনিধি­
আপডেট : ১৩ ডিসেম্বর ২০২১, ১৫: ২৬
ইয়াসিন লাশ হয়ে ফিরলেন বাড়ি

‘সকাল সাতটার দিকে তিনি বাড়ি থেকে বের হচ্ছিলেন। সে সময় আমার রান্না শেষের দিকে। বের হওয়ার সময় আমি তাঁকে বলেছিলাম, খেয়ে যাও। তিনি বলেছিলেন, পাঁচ মিনিটের জন্য আসছি। তার সেই যাওয়াই যে শেষ যাওয়া হবে বুঝতে পারিনি। তিনি ফিরলেন, তবে লাশ হয়ে। এ কষ্ট এখন আমি কেমন করে সইব।’

কথাগুলো বলেই হাউমাউ করে কান্না শুরু করেন নাছরিন খাতুন। গত শনিবার সকালে নির্বাচনী সহিংসতায় নিহত হয়েছেন তাঁর স্বামী ইয়াসিন আলম (৩৫)।

ইয়াসিন পাবনা সদর উপজেলার ভাড়ারা গ্রামের বাসিন্দা।

চতুর্থ ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনকে সামনে রেখে ভাড়ারা ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন তিনি। ইয়াসিনের সঙ্গে একই পরিবার থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী তাঁরই চাচাতো ভাই সুলতান মাহমুদ খান। স্বজনদের দাবি, প্রার্থী হলেও চাচাতো ভাইয়ের ঘোড়া প্রতীকের পক্ষেই কাজ করছিলেন ইয়াসিন আলম।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শনিবার সকালে তাঁদের নির্বাচনী প্রচারের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আবু সাইদ খান ও তার সমর্থকেরা বাধা দিলে সংঘর্ষ বাঁধে। এতে গুরুতর আহত হন ইয়াসিন আলম। পরে পাবনা থেকে রাজশাহী নেওয়ার পথে তাঁর মৃত্যু হয়। আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করায় ইয়াসিনকে প্রাণ দিতে হয়েছে বলে দাবি করেছেন তাঁর স্বজনরা।

ইয়াসিন আলমের মৃত্যুর খবর বাড়িতে পৌঁছার পর শুরু হয় শোকের মাতম। শনিবার দুপুরে নিহতের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিবেশী স্বজনদের ভিড়। ঘরের বাইরে কান্নার শব্দ ভেসে আসে। ছেলের জন্য আহাজারি করছেন মা শেফালী বেগম। স্বামীর মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না স্ত্রী নাছরিন খাতুন। বাবাকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ ১১ বছরের শিশু চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী নাইম খান। তাঁদের সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষাও যেন হারিয়ে ফেলেছেন প্রতিবেশীরা।

পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিগত ১৪ বছর ধরে দেশের বাইরে ছিলেন ইয়াসিন আলম। সিঙ্গাপুর থেকে দেড় মাস আগে বাড়িতে আসেন তিনি। প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন করে কাগজপত্র ঠিক হলে আগামী জানুয়ারি নাগাদ সিঙ্গাপুর যাওয়ার কথা ছিল তাঁর।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে ইয়াসিন আলমের স্ত্রী নাছরিন খাতুন বলেন, ‘আমার স্বামী চিরতরে হারিয়ে গেলেন। আমার একটাই ছেলে। তাকে কেমন করে মানুষ করব? কি হবে আমাদের? কোথায় যাব? তবে সাইদ খানের যেন শাস্তি হয়। আমার স্বামী হত্যার সঠিক বিচার চাই। সাইদ এর আগে অনেক মার্ডার করেছে। কিন্তু কোনো শাস্তি হয়নি।’

ছেলের জন্য বিলাপ করছিলেন মা শেফালী বেগম। বুক চাপড়ে আহাজারি করে বলেন, ‘বেটা আমার সকালে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেল। এসে খাচ্ছি বলে চলে গেল। আর বেটাকে দেখি নাই। বেটা তো কোনো দোষ করে নাই। তালি সে মইরলো ক্যা। সাইদ কি জন্যি আমার বেটাক মাইরলো? ওর বিচার করেন আপনেরা।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত