Ajker Patrika

ইন্দ্রচাঁদ বোথরার কাছারিবাড়ি

মেহেদী হাসান, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) 
আপডেট : ০২ নভেম্বর ২০২১, ১২: ২৫
ইন্দ্রচাঁদ বোথরার কাছারিবাড়ি

কাছারিবাড়িটি মনে হয় টিকবে না। ধ্বংস হয়ে যাবে। তখন কেউই অতীত ঘেঁটে বলবে না, এই কাছারিবাড়িটি দিনাজপুরের ফুলবাড়ীর জমিদার ইন্দ্রচাঁদ বোথরার।

কাছারিবাড়িটি দীর্ঘদিন উপজেলা ভূমি অফিস হিসেবে ব্যবহার করা হতো। এখন সেই অফিস চলে গেছে একটু দূরে, নতুন একটি ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। তাই সেখান থেকেই পরিচালিত হচ্ছে উপজেলা ভূমি অফিসের কাজ। তাই এখন কাছারিবাড়িটির দিকে কেউ তাকায় না। কোনো মূল্যই নেই সেটির। অযত্ন-অবহেলায় ধ্বংস হতে চলেছে উপজেলার ঐতিহ্যবাহী ও অতীত ঐতিহ্যের নীরব সাক্ষী এই কাছারিবাড়ি।

কাছারিবাড়ির কাছে গেলে দেখা যাবে, ১৮৮৬ সালে নির্মিত এই ভবনের প্রধান ফটকে পাথরে খোদাই করা দুটি বাঘ, নির্মাণ সাল ও বাড়ির মালিকের নাম লেখা রয়েছে। বাড়িটিতে খোদাই করা দুটি বড় বাঘের ছবি থাকায় বাড়িটি বাঘ মার্কা বাড়ি বলে এলাকায় পরিচিত ছিল।

ভূমি অফিস জানায়, পৌর এলাকার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম গৌরীপাড়া এলাকার এই বাড়ির মোট জমির পরিমাণ ১ একর ৭৩ শতাংশ। এর মধ্যে কিছু জমি বেদখল হয়ে গেছে। বাকি জমিতে ৭ কক্ষবিশিষ্ট দোতলা ভবন, যা প্রস্থে ৩০ ফুট ও দৈর্ঘ্যে ২০০ ফুট লম্বা। প্রতিটি দেয়াল ৩০ ইঞ্চি চওড়া, চুন-সুরকি দিয়ে বানানো।

ভবনটি সংস্কার করা দরকার। অতীত ঐতিহ্যের নিদর্শন হয়ে নতুন প্রজন্মের কাছে ইতিহাসের শিক্ষণীয় বিষয় হয়ে উঠতে পারে ভবনটি। পাশাপাশি এখানে ডাকবাংলো থাকায় পর্যটকদের কাছে দর্শনীয় একটি এলাকা হয়ে উঠতে পারে এটি।

উপজেলার বর্ষীয়ান মানুষেরা মাঝে মাঝেই অতীত রোমন্থন করেন। তাঁরা যা বলেন, তা এক করলে দাঁড়ায় এ রকম একটি গল্প: তৎকালীন প্রজাদের যাতায়াতের সুবিধার্থে ছোট যমুনা নদীর পাড়ে এই কাছারিবাড়িটি তৈরি করা হয়। এই কাছারিবাড়িটি জমিদার ইন্দ্রচাঁদ বোথরার শখের বাড়ি ছিল। নান্দনিক নির্মাণশৈলীর কারুকার্যে দর্শনার্থীরা মোহিত হতো। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর জমিদার প্রথা বিলুপ্ত হলে এই কাছারিবাড়িটি উপজেলা ভূমি অফিস হিসেবে ব্যবহার হতে থাকে। ২০১০ সাল পর্যন্ত এই বাড়িটি ছিল উপজেলা ভূমি অফিস।

এখন এই কাছারিবাড়িতে গেলে দেখা যাবে, বাড়িটির ছাদ দিয়ে পানি পড়ছে। দেয়ালের পলেস্তারা খসে পড়ছে। কর্তৃপক্ষ এই ঐতিহ্যবাহী ভবনটি সংস্কার করার কথা ভাবেনি। ভবনটির ঠিক পেছনেই তৈরি করেছে আরেকটি ভবন।

কাছারিবাড়িটি একটু দেখেশুনে রাখলে এটা হয়ে উঠতে পারত দর্শনীয় একটি স্থান। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আসতেন পর্যটকেরা। বর্ষীয়ানদের কাছ থেকে কাছারিবাড়ির ইতিহাস জেনে নিয়ে সেটা লিখে রাখা হোক। অতীত এসে জড়িয়ে ধরুক বর্তমানকে।

কেন ভবনটি সংস্কার করা হচ্ছে না, জিজ্ঞেস করা হয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রিয়াজউদ্দিনকে। তিনি জানান, এই ভবনটি সংস্কারের বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এটা কি কথার কথা, নাকি সত্যিই ভালো কিছু ঘটতে যাচ্ছে, সেটা বোঝা যাবে কিছুদিন পর।

এলাকার মানুষ চায়, ঐতিহ্যবাহী কাছারিবাড়িটি তার অতীত ঐতিহ্য নিয়ে টিকে থাকুক।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত