সেলিনা আক্তার, ঢাকা
জুলাই অভ্যুত্থানের পর ক্ষমতার পটপরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে নজিরবিহীন ঘটনা ঘটেছে। যে ডাকসুতে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী দলের ছাত্রসংগঠনের কখনো ঠাঁই হয়নি, সেই ডাকসুই এখন ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রায় দখলে চলে গেল। ভিপিসহ বেশির ভাগ পদে জয় পেয়েছে জামায়াতে ইসলামীর ছাত্রসংগঠনটি। অন্যদিকে নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের পরের নির্বাচনে ডাকসুতে ছাত্রদল জয়ী হয়েছিল, বিএনপির সেই ছাত্রসংগঠনটির এবার ভরাডুবি হলো।
৯ সেপ্টেম্বরের নির্বাচনে ডাকসুর ভিপি, জিএস, এজিএসসহ ২৮টি পদের মধ্যে ২৩টিতে জয় পেয়েছে ছাত্রশিবির-সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’। অন্যদিকে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদে ছাত্রদলের প্যানেল থেকে কেউই জয় পায়নি। এ ফল নিয়েই এখন চলছে আলোচনা। কেউ কেউ শিবিরের এমন ফল নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করলেও অনেকেই এমনটা আন্দাজ করেছিলেন।
তাঁরা বলছেন, রাজনৈতিক মতাদর্শে বিশ্বাস থেকে না হলেও ক্যাম্পাসে দখলদারত্বের অতীত কর্মকাণ্ড বিবেচনায় বিকল্প হিসেবে শিবিরের প্রার্থীদের প্রতি অনেকে আস্থা রাখতে চেয়েছেন। নিয়মিত কৌশল ও সাংগঠনিক প্রস্তুতি নিয়ে শিবির দৃশ্যত শিক্ষার্থীদের বড় অংশকে প্রভাবিত করতে সক্ষম হয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে ‘ভালো বোঝাপড়া’ থাকায় তারা বড় বাড়তি সুবিধা পেয়েছে।
অন্যদিকে ছাত্রদলের ভরাডুবির পেছনে দেরিতে প্যানেল ঘোষণা, প্রচারে নতুনত্বের অভাব, সমন্বয়হীনতা ও কৌশলের অভাব দেখছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অনেকে। কেউ কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ে হল পর্যায়ে কমিটি করাকে কারণ হিসেবে দেখাতে চান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ডাকসু নির্বাচন আদৌ হবে কি না বা কবে হবে, সেই পালস ছাত্রদল ঠিকমতো ধরতে পারেনি। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে ছাত্রশিবিরের বোঝাপড়া ভালো থাকায় তারা সব তথ্য আগেভাগে জানতে পেরেছে এবং সেভাবেই তাদের পরিকল্পনা সাজানোর সুযোগ পেয়েছে। এর ফলে ডাকসু নির্বাচনে আগেই ছাত্রদল থেকে এগিয়ে ছিল শিবির।
ছাত্রদলের ভরাডুবির কারণ সম্পর্কে শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষার্থী সুজন মিয়া বলেন, ৫ আগস্টের পর ছাত্রদল শুধু ক্রেডিট নেওয়ার রাজনীতি করেছে। বিএনপির কর্মীদের বিরুদ্ধে যে চাঁদাবাজি ও সহিংসতার অভিযোগ উঠছে, তার প্রভাব পড়েছে ডাকসু নির্বাচনে।
মুহসীন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী নাইম ইসলাম মনে করেন, হল পর্যায়ে ছাত্রদলের সংগঠন গোছানোর তৎপরতাকে শিক্ষার্থীরা ভালোভাবে নেয়নি। তাঁর মতে, বিশ্ববিদ্যালয়ে হল পর্যায়ে রাজনীতি বন্ধে জনমত তৈরি হয়েছে।
নাইম ইসলাম বলেন, ‘অভ্যুত্থানের পর আমরা চেয়েছিলাম, হলে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ থাকুক। কিন্তু সরকার পতনের পর ছাত্রদল হল কমিটি দিয়ে আবার দখলদারত্বের রাজনীতি শুরু করে। তাদের কর্মীরা ভিন্নমতাবলম্বীদের হুমকি দেয়।’
তবে ছাত্রদলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সম্পাদক মমিনুল ইসলাম জিসান বিপর্যয়ের কারণ হিসেবে ‘তড়িঘড়ি’ করে ডাকসু নির্বাচনের আয়োজনকে দায়ী করেছেন। আজকের পত্রিকাকে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ‘পূর্ণ প্রস্তুতি’ ছাত্রদলের ছিল না। নির্বাচনে যাওয়া নিয়েও ‘সিদ্ধান্তহীনতায়’ ছিলেন তাঁরা। তা ছাড়া ‘ছাত্রদলকে হারাতে কারসাজি’ পরাজয়ের অন্যতম কারণ।
ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সূত্র বলছে, সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার-প্রচারণায় শিবির থেকে বহুগুণে পিছিয়ে ছিল ছাত্রদল। অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের পতনের পর ছাত্রদলের ‘অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস’ এবং গত এক বছরে ক্যাম্পাসে সংগঠনটির সার্বিক অবস্থান নির্বাচনে তাদের জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়।
ডাকসুতে শিবিরের উত্থানের কারণ
স্বাধীনতার পর ডাকসু নির্বাচনে যেখানে কখনো কোনো প্যানেল নিয়েই দাঁড়াতে পারেনি, সেখানে এবার পূর্ণ প্যানেল ঘোষণা করে ২৮টি পদের মধ্যে ২৩টিতেই জয়ী হয়েছে ছাত্রশিবির। এর জন্য প্যানেলে বৈচিত্র্য রাখা, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক মাত্রায় প্রচার কার্যক্রম এবং শিক্ষার্থীদের কথা মাথায় রেখে ক্যাম্পাসে বিভিন্ন ধরনের কর্মকাণ্ড পরিচালনার কৌশলকে তাদের জয়ের মূল কারণ হিসেবে দেখছেন শিক্ষার্থীরা।
তাঁদের মতে, এসব কৌশলের কারণে ভোটের মাঠে আর সব সংগঠন থেকে এগিয়ে ছিল ছাত্রশিবির।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী ফারহানা ইয়াসমিন বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানের পর ক্যাম্পাসে শিবিরের অ্যাপ্রোচ আমাদের কাছে ভালো লেগেছে। তারা হলগুলোতে পানির ফিল্টার বসিয়েছে, টিএসসিতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, লিখন প্রতিযোগিতা, সায়েন্স ফেস্ট করেছে; যা সাধারণ শিক্ষার্থীদের নজর কাড়ে। কিন্তু অভ্যুত্থানের পর ছাত্রদলের এমন কোনো কার্যক্রমই চোখে পড়েনি।’
রোকেয়া হলের শিক্ষার্থী রৌদমিলা ইসলাম বলেন, ‘শিবির ধর্মনিরপেক্ষতা বজায় রেখেছে। সবার জন্য কাজ করেছে। আমরা সচরাচর দেখেছি, বিরোধীপক্ষকে দমনের চেষ্টা রাজনীতির অংশ। কিন্তু শিবির যখন প্রতিরোধ পর্ষদের জিএস প্রার্থী মেঘমল্লার বসুর খোঁজ নিতে হাসপাতালে গেল, তখন তা একধরনের ইতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি করে।’
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী জুবায়ের আহম্মেদ বলেন, ‘গণ-অভ্যুত্থানের পর শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটা প্যারাডাইম শিফট হয়েছে। দায় চাপানোর রাজনীতি এখন আর আমরা চাই না। শিবিরকে ইশতেহার দেখে নয়; বরং দায় না চাপানোর আচরণ দেখে অনেকে ভোট দিয়েছে।’
সামানিয়া জান্নাতি নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমাদের মনে ভয় ছিল, ছাত্রদল ছাত্রলীগের মতো ক্যাম্পাসে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করবে কি না। সেই ভয় থেকেই বিকল্প হিসেবে আমরা শিবিরকে ভোট দিয়েছি। গত এক বছরে ছাত্রদলের কর্মকাণ্ডও খুব সমালোচিত ছিল।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক বলেন, গত দুই দশকে ধারাবাহিকভাবে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হচ্ছে। ধীরে ধীরে এই হার বাড়ছে। ঢাবির বেশির ভাগ মাদ্রাসাশিক্ষার্থীর ভোট পেয়েছে শিবির।
জয় পেতে কী করেছে শিবির
গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রকাশ্যে রাজনীতি শুরু করে শিবির। শুরুতেই তারা পরিকল্পনা নিয়ে শিক্ষার্থীদের সহায়তায় সাংগঠনিকভাবে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়।
এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল বিভিন্ন হলে পানির ফিল্টার বসানো, হলের গার্ড রুমে সাইকেলের পাম্পার রাখা, বিনা মূল্যে জরুরি ওষুধ সরবরাহ, কোরবানির ঈদে হলে অবস্থান করা শিক্ষার্থীদের জন্য কোরবানি ফেস্টের আয়োজন।
এর বাইরে কোচিং সেন্টার, ছাত্রদের মেস ও হলে হলে দীর্ঘদিন ধরে প্রচার চালায় শিবির। এ ছাড়া ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে অনলাইনেও প্রচার চালায় তারা।
এ ছাড়া আগের রেওয়াজ থেকে সরে এসে ডাকসুতে নিজেদের প্যানেলে নারী ও অমুসলিম শিক্ষার্থীকে প্রার্থী হিসেবে রাখায় অনেকের কাছে তাদের প্যানেলকে গ্রহণযোগ্য মনে হয়েছে। এ ছাড়া প্যানেলের নারী প্রার্থীদের মিডিয়ার সামনে আনাকেও ইতিবাচক হিসেবে দেখেছেন অনেকে।
ডাকসুতে শিবির প্যানেল থেকে কার্যনির্বাহী সদস্যপদে নির্বাচিত মো. মিফতাহুল হোসাইন আল মারুফ বলেন, ‘আমরা সব সময় শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করেছি। হেলথ ক্যাম্প আয়োজন করেছি, অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের সহায়তা করেছি। অভ্যুত্থানের আগেও এসব কাজ করেছি। কিন্তু আগের সরকারের আমলে প্রকাশ্যে এসব করতে পারিনি। আমরা কোনো ট্যাগিংয়ের রাজনীতি করিনি। আমাদের আচার-আচরণ শিক্ষার্থীরা জানে। হয়তো এ জন্যই আমাদের বিকল্প হিসেবে দেখেছে।’
কৌশলগত পরিকল্পনাই শিবিরের বড় জয়ের মূল কারণ বলে মনে করেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক খোরশেদ আলম। তিনি বলেন, ঢাবিতে শিবিরের দীর্ঘদিনের গ্রাউন্ড আছে। তারা স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি কৌশল কাজে লাগিয়েছে। হলের সমস্যা থেকে শুরু করে নানা ইস্যুতে সরাসরি অংশ নিয়েছে। কাজ করার ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা বজায় রেখেছে; যা শিক্ষার্থীদের মনে জায়গা করে নিয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদ বলেন, শিবিরকে বেছে নেওয়ার পেছনে ছাত্রদের মন জয় করার বিষয়টা গুরুত্বপূর্ণ। তাদের কথাবার্তায় সাবলীলতা আছে, স্বাভাবিকতা আছে, কোনো হিরোইজম নেই। তাদের যোগাযোগের দক্ষতা, ইশতেহার ও কথার সঙ্গে কাজের মিল ছাত্ররা হয়তো ভালোভাবে নিয়েছেন। আবার শিবির বারবার জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষা টেনে আনতে পেরেছে। এসব বিষয়ে ছাত্রদল বা অন্য সংগঠনগুলো পিছিয়ে ছিল।
জুলাই অভ্যুত্থানের পর ক্ষমতার পটপরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে নজিরবিহীন ঘটনা ঘটেছে। যে ডাকসুতে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী দলের ছাত্রসংগঠনের কখনো ঠাঁই হয়নি, সেই ডাকসুই এখন ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রায় দখলে চলে গেল। ভিপিসহ বেশির ভাগ পদে জয় পেয়েছে জামায়াতে ইসলামীর ছাত্রসংগঠনটি। অন্যদিকে নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের পরের নির্বাচনে ডাকসুতে ছাত্রদল জয়ী হয়েছিল, বিএনপির সেই ছাত্রসংগঠনটির এবার ভরাডুবি হলো।
৯ সেপ্টেম্বরের নির্বাচনে ডাকসুর ভিপি, জিএস, এজিএসসহ ২৮টি পদের মধ্যে ২৩টিতে জয় পেয়েছে ছাত্রশিবির-সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’। অন্যদিকে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদে ছাত্রদলের প্যানেল থেকে কেউই জয় পায়নি। এ ফল নিয়েই এখন চলছে আলোচনা। কেউ কেউ শিবিরের এমন ফল নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করলেও অনেকেই এমনটা আন্দাজ করেছিলেন।
তাঁরা বলছেন, রাজনৈতিক মতাদর্শে বিশ্বাস থেকে না হলেও ক্যাম্পাসে দখলদারত্বের অতীত কর্মকাণ্ড বিবেচনায় বিকল্প হিসেবে শিবিরের প্রার্থীদের প্রতি অনেকে আস্থা রাখতে চেয়েছেন। নিয়মিত কৌশল ও সাংগঠনিক প্রস্তুতি নিয়ে শিবির দৃশ্যত শিক্ষার্থীদের বড় অংশকে প্রভাবিত করতে সক্ষম হয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে ‘ভালো বোঝাপড়া’ থাকায় তারা বড় বাড়তি সুবিধা পেয়েছে।
অন্যদিকে ছাত্রদলের ভরাডুবির পেছনে দেরিতে প্যানেল ঘোষণা, প্রচারে নতুনত্বের অভাব, সমন্বয়হীনতা ও কৌশলের অভাব দেখছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অনেকে। কেউ কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ে হল পর্যায়ে কমিটি করাকে কারণ হিসেবে দেখাতে চান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ডাকসু নির্বাচন আদৌ হবে কি না বা কবে হবে, সেই পালস ছাত্রদল ঠিকমতো ধরতে পারেনি। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে ছাত্রশিবিরের বোঝাপড়া ভালো থাকায় তারা সব তথ্য আগেভাগে জানতে পেরেছে এবং সেভাবেই তাদের পরিকল্পনা সাজানোর সুযোগ পেয়েছে। এর ফলে ডাকসু নির্বাচনে আগেই ছাত্রদল থেকে এগিয়ে ছিল শিবির।
ছাত্রদলের ভরাডুবির কারণ সম্পর্কে শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষার্থী সুজন মিয়া বলেন, ৫ আগস্টের পর ছাত্রদল শুধু ক্রেডিট নেওয়ার রাজনীতি করেছে। বিএনপির কর্মীদের বিরুদ্ধে যে চাঁদাবাজি ও সহিংসতার অভিযোগ উঠছে, তার প্রভাব পড়েছে ডাকসু নির্বাচনে।
মুহসীন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী নাইম ইসলাম মনে করেন, হল পর্যায়ে ছাত্রদলের সংগঠন গোছানোর তৎপরতাকে শিক্ষার্থীরা ভালোভাবে নেয়নি। তাঁর মতে, বিশ্ববিদ্যালয়ে হল পর্যায়ে রাজনীতি বন্ধে জনমত তৈরি হয়েছে।
নাইম ইসলাম বলেন, ‘অভ্যুত্থানের পর আমরা চেয়েছিলাম, হলে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ থাকুক। কিন্তু সরকার পতনের পর ছাত্রদল হল কমিটি দিয়ে আবার দখলদারত্বের রাজনীতি শুরু করে। তাদের কর্মীরা ভিন্নমতাবলম্বীদের হুমকি দেয়।’
তবে ছাত্রদলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সম্পাদক মমিনুল ইসলাম জিসান বিপর্যয়ের কারণ হিসেবে ‘তড়িঘড়ি’ করে ডাকসু নির্বাচনের আয়োজনকে দায়ী করেছেন। আজকের পত্রিকাকে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ‘পূর্ণ প্রস্তুতি’ ছাত্রদলের ছিল না। নির্বাচনে যাওয়া নিয়েও ‘সিদ্ধান্তহীনতায়’ ছিলেন তাঁরা। তা ছাড়া ‘ছাত্রদলকে হারাতে কারসাজি’ পরাজয়ের অন্যতম কারণ।
ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সূত্র বলছে, সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার-প্রচারণায় শিবির থেকে বহুগুণে পিছিয়ে ছিল ছাত্রদল। অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের পতনের পর ছাত্রদলের ‘অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস’ এবং গত এক বছরে ক্যাম্পাসে সংগঠনটির সার্বিক অবস্থান নির্বাচনে তাদের জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়।
ডাকসুতে শিবিরের উত্থানের কারণ
স্বাধীনতার পর ডাকসু নির্বাচনে যেখানে কখনো কোনো প্যানেল নিয়েই দাঁড়াতে পারেনি, সেখানে এবার পূর্ণ প্যানেল ঘোষণা করে ২৮টি পদের মধ্যে ২৩টিতেই জয়ী হয়েছে ছাত্রশিবির। এর জন্য প্যানেলে বৈচিত্র্য রাখা, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক মাত্রায় প্রচার কার্যক্রম এবং শিক্ষার্থীদের কথা মাথায় রেখে ক্যাম্পাসে বিভিন্ন ধরনের কর্মকাণ্ড পরিচালনার কৌশলকে তাদের জয়ের মূল কারণ হিসেবে দেখছেন শিক্ষার্থীরা।
তাঁদের মতে, এসব কৌশলের কারণে ভোটের মাঠে আর সব সংগঠন থেকে এগিয়ে ছিল ছাত্রশিবির।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী ফারহানা ইয়াসমিন বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানের পর ক্যাম্পাসে শিবিরের অ্যাপ্রোচ আমাদের কাছে ভালো লেগেছে। তারা হলগুলোতে পানির ফিল্টার বসিয়েছে, টিএসসিতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, লিখন প্রতিযোগিতা, সায়েন্স ফেস্ট করেছে; যা সাধারণ শিক্ষার্থীদের নজর কাড়ে। কিন্তু অভ্যুত্থানের পর ছাত্রদলের এমন কোনো কার্যক্রমই চোখে পড়েনি।’
রোকেয়া হলের শিক্ষার্থী রৌদমিলা ইসলাম বলেন, ‘শিবির ধর্মনিরপেক্ষতা বজায় রেখেছে। সবার জন্য কাজ করেছে। আমরা সচরাচর দেখেছি, বিরোধীপক্ষকে দমনের চেষ্টা রাজনীতির অংশ। কিন্তু শিবির যখন প্রতিরোধ পর্ষদের জিএস প্রার্থী মেঘমল্লার বসুর খোঁজ নিতে হাসপাতালে গেল, তখন তা একধরনের ইতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি করে।’
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী জুবায়ের আহম্মেদ বলেন, ‘গণ-অভ্যুত্থানের পর শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটা প্যারাডাইম শিফট হয়েছে। দায় চাপানোর রাজনীতি এখন আর আমরা চাই না। শিবিরকে ইশতেহার দেখে নয়; বরং দায় না চাপানোর আচরণ দেখে অনেকে ভোট দিয়েছে।’
সামানিয়া জান্নাতি নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমাদের মনে ভয় ছিল, ছাত্রদল ছাত্রলীগের মতো ক্যাম্পাসে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করবে কি না। সেই ভয় থেকেই বিকল্প হিসেবে আমরা শিবিরকে ভোট দিয়েছি। গত এক বছরে ছাত্রদলের কর্মকাণ্ডও খুব সমালোচিত ছিল।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক বলেন, গত দুই দশকে ধারাবাহিকভাবে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হচ্ছে। ধীরে ধীরে এই হার বাড়ছে। ঢাবির বেশির ভাগ মাদ্রাসাশিক্ষার্থীর ভোট পেয়েছে শিবির।
জয় পেতে কী করেছে শিবির
গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রকাশ্যে রাজনীতি শুরু করে শিবির। শুরুতেই তারা পরিকল্পনা নিয়ে শিক্ষার্থীদের সহায়তায় সাংগঠনিকভাবে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়।
এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল বিভিন্ন হলে পানির ফিল্টার বসানো, হলের গার্ড রুমে সাইকেলের পাম্পার রাখা, বিনা মূল্যে জরুরি ওষুধ সরবরাহ, কোরবানির ঈদে হলে অবস্থান করা শিক্ষার্থীদের জন্য কোরবানি ফেস্টের আয়োজন।
এর বাইরে কোচিং সেন্টার, ছাত্রদের মেস ও হলে হলে দীর্ঘদিন ধরে প্রচার চালায় শিবির। এ ছাড়া ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে অনলাইনেও প্রচার চালায় তারা।
এ ছাড়া আগের রেওয়াজ থেকে সরে এসে ডাকসুতে নিজেদের প্যানেলে নারী ও অমুসলিম শিক্ষার্থীকে প্রার্থী হিসেবে রাখায় অনেকের কাছে তাদের প্যানেলকে গ্রহণযোগ্য মনে হয়েছে। এ ছাড়া প্যানেলের নারী প্রার্থীদের মিডিয়ার সামনে আনাকেও ইতিবাচক হিসেবে দেখেছেন অনেকে।
ডাকসুতে শিবির প্যানেল থেকে কার্যনির্বাহী সদস্যপদে নির্বাচিত মো. মিফতাহুল হোসাইন আল মারুফ বলেন, ‘আমরা সব সময় শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করেছি। হেলথ ক্যাম্প আয়োজন করেছি, অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের সহায়তা করেছি। অভ্যুত্থানের আগেও এসব কাজ করেছি। কিন্তু আগের সরকারের আমলে প্রকাশ্যে এসব করতে পারিনি। আমরা কোনো ট্যাগিংয়ের রাজনীতি করিনি। আমাদের আচার-আচরণ শিক্ষার্থীরা জানে। হয়তো এ জন্যই আমাদের বিকল্প হিসেবে দেখেছে।’
কৌশলগত পরিকল্পনাই শিবিরের বড় জয়ের মূল কারণ বলে মনে করেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক খোরশেদ আলম। তিনি বলেন, ঢাবিতে শিবিরের দীর্ঘদিনের গ্রাউন্ড আছে। তারা স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি কৌশল কাজে লাগিয়েছে। হলের সমস্যা থেকে শুরু করে নানা ইস্যুতে সরাসরি অংশ নিয়েছে। কাজ করার ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা বজায় রেখেছে; যা শিক্ষার্থীদের মনে জায়গা করে নিয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদ বলেন, শিবিরকে বেছে নেওয়ার পেছনে ছাত্রদের মন জয় করার বিষয়টা গুরুত্বপূর্ণ। তাদের কথাবার্তায় সাবলীলতা আছে, স্বাভাবিকতা আছে, কোনো হিরোইজম নেই। তাদের যোগাযোগের দক্ষতা, ইশতেহার ও কথার সঙ্গে কাজের মিল ছাত্ররা হয়তো ভালোভাবে নিয়েছেন। আবার শিবির বারবার জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষা টেনে আনতে পেরেছে। এসব বিষয়ে ছাত্রদল বা অন্য সংগঠনগুলো পিছিয়ে ছিল।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনে প্রায় নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করেছে ইসলামী ছাত্রশিবির-সমর্থিত ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেল। জাকসুর ২৫টি পদের ২০টি পদেই জয়ী হয়েছেন এই প্যানেলের প্রার্থীরা। এখন শিবিরের এমন বিজয়ের কারণ খুঁজছেন বিশ্লেষকেরা।
১ ঘণ্টা আগেআসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজা এবং অন্যান্য ধর্মীয় উৎসব উপলক্ষে দেশের সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দীর্ঘ ছুটি পেতে যাচ্ছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক ছুটির তালিকা থেকে দেখা গেছে, বিভিন্ন স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে টানা ৯ থেকে ১৪ দিন পর্যন্ত ছুটি থাকছে।
১৬ ঘণ্টা আগেঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) পাঁচ নেতাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটে সদস্য হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। তাঁরা হলেন সহসভাপতি (ভিপি) আবু সাদিক কায়েম, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) এস এম ফরহাদ, সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) মহিউদ্দিন খান, পরিবহন সম্পাদক আসিফ আবদুল্লাহ ও সদস্য সাবিকুন নাহার তামান্না।
১৬ ঘণ্টা আগে১৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ৪৭তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা। হাজার হাজার প্রার্থী এতে অংশগ্রহণ করলেও খুব অল্পসংখ্যক প্রার্থীই উত্তীর্ণ হন। বিসিএস পরীক্ষার তিনটি ধাপের মধ্যে প্রিলিমিনারি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিতে হলে প্রথমে প্রিলিতে সফল হতে হয়...
২০ ঘণ্টা আগে