Ajker Patrika

নেপালে যেভাবে জেন-জিদের প্রতিবাদের হাতিয়ার হয়ে ওঠে ডিসকর্ড ও বিটচ্যাট

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
নেপালের আন্দোলনের হাতিয়ার হয়ে ওঠে ডিসকর্ড ও বিটচ্যাট। ছবি: সংগৃহীত
নেপালের আন্দোলনের হাতিয়ার হয়ে ওঠে ডিসকর্ড ও বিটচ্যাট। ছবি: সংগৃহীত

ফেসবুক, ইউটিউবসহ জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধের প্রতিবাদে শুরু হওয়া বিক্ষোভে দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন নেপালের তরুণেরা। দুর্নীতির বিরুদ্ধে এবং রাজনৈতিক স্থবিরতার প্রতিবাদে এই আন্দোলন যেমন প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগে বাধ্য করেছেন, তেমনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের শক্তিও নতুনভাবে প্রমাণিত হয়েছে।

গত সোমবার রাজধানী কাঠমান্ডুতে হাজার হাজার তরুণ-তরুণী রাস্তায় নামেন। মূলত বিশের দশকে থাকা জেনারেশন জেড বা জেন-জি প্রজন্মের তরুণেরা এই বিক্ষোভের নেতৃত্বে ছিলেন।

বিক্ষোভের মূল ইস্যু ছিল—সরকারের পক্ষ থেকে ফেসবুক, ইউটিউবসহ ২৬টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ করে দেওয়া। যদিও টিকটক ও ভাইবারের মতো কিছু অ্যাপ চালু ছিল, যেগুলো দেশীয়ভাবে নিবন্ধিত।

বিক্ষোভের একপর্যায়ে পুলিশের দমন-পীড়নে অন্তত ১৯ জন নিহত হন। এরপর বিষয়টি আরও বিস্তৃত আকার নেয়।

প্রযুক্তিই হয়ে উঠল প্রতিবাদের প্রধান হাতিয়ার

বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, নেপালের তিন কোটির বেশি জনগণের অর্ধেকেরও বেশি এখন অনলাইনে যুক্ত। তাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে প্রতিবাদের আগুন।

একজন স্থানীয় সাংবাদিক, প্রণয় রানা বলেন, ‘প্রতিবাদটা মূলত শুরু হয়েছিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দুর্নীতির বিরুদ্ধে পোস্ট করা থেকে। রাজনীতিবিদদের সন্তানেরা যে রকম বিলাসবহুল জীবন যাপন করছে, তা সাধারণ মানুষকে ক্ষুব্ধ করেছে।’

এই আন্দোলনে ‘#NepoKids’ নামে একটি হ্যাশট্যাগ ব্যাপক ব্যবহৃত হয়। এখানে ‘নেপোকিডস’ বলতে বোঝানো হচ্ছে—রাজনীতিবিদদের সন্তানদের, যারা পিতামাতার প্রভাব কাজে লাগিয়ে আরামে জীবন যাপন করছে। একজন ব্যবহারকারী ইনস্টাগ্রামে একটি পোস্টে লেখেন, ‘এই “নেপো কিডরা” যেন লাখপতি। আমাদের ট্যাক্সের টাকা কোথায় যাচ্ছে?’

পোস্টটি ১৩ হাজারের বেশি লাইক পায়। মানবাধিকারকর্মী সঞ্জীব চৌধুরী বলেন, ‘এমনকি গ্রামাঞ্চলেও ফেসবুকে “নেপোকিডস” হ্যাশট্যাগ ট্রেন্ড করছিল। এটি জনরোষ আরও উসকে দেয়।’

ডিসকর্ড ও বিটচ্যাটে ‘পরবর্তী পদক্ষেপ’ নিয়ে আলোচনা

প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি পদত্যাগের পর সেনাবাহিনী রাস্তায় নেমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। এরপর প্রতিবাদীরা নতুন করে সংগঠিত হতে শুরু করে ডিসকর্ডে।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এই গ্রুপ-চ্যাট অ্যাপে একটি সার্ভারে ১ লাখ ৪৫ হাজারের বেশি সদস্য একসঙ্গে আলোচনা করছেন—কারা হতে পারে অন্তর্বর্তীকালীন নেতা। বেশির ভাগই চাইছেন ৭৩ বছর বয়সী সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কিকে অন্তর্বর্তীকালীন নেতা হিসেবে দেখতে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম যে কেবল প্রতিবাদ শুরু করতেই নয়, বরং রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়েও আলোচনা চালানোর প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠেছে। ডিসকর্ড তার বড় উদাহরণ।

বিটচ্যাট: ইন্টারনেট ছাড়াও সংযোগের নতুন মাধ্যম

বিক্ষোভের আগে থেকেই অনেক নেপালি ভিপিএন ডাউনলোড করে প্ল্যাটফর্মগুলো ব্যবহার করছিলেন। সুইজারল্যান্ডভিত্তিক কোম্পানি প্রোটন ভিপিএন জানায়, গত তিন দিনে নেপাল থেকে সাইনআপ বেড়েছে ৬ হাজার শতাংশ।

ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে যেতে পারে—এই আশঙ্কায় অনেকেই ব্লুটুথভিত্তিক মেসেজিং অ্যাপ বিটচ্যাট ডাউনলোড করেন। অ্যাপটি তৈরি করেছেন টুইটারের সহপ্রতিষ্ঠাতা জ্যাক ডরসি।

এক্সের এক পোস্টে ডরসি নিজেই লেখেন, ‘যখন দরকার তখনই বিটচ্যাট আপনার পাশে।’ ওই পোস্টে উল্লেখ করা হয়, নেপাল ও ইন্দোনেশিয়ায় বিটচ্যাট ডাউনলোডের হার হঠাৎ বেড়ে গেছে।

‘ভুলভাবে বিচার করেছিল সরকার’

সরকার যখন সোশ্যাল মিডিয়া নিষিদ্ধ করল, তখন অনেকেই মনে করেন এটি মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ। সাংবাদিক রানা বলেন, ‘সরকার আসলে নেপোকিডস হ্যাশট্যাগ বন্ধ করতে চায়নি, তবে নিষেধাজ্ঞার সময়টা এমনভাবে মিলে যায় যে সবাই সেটিই ধরে নেয়।’

যুক্তরাষ্ট্রের ডিজিটাল অধিকার সংগঠন ‘অ্যাকসেস নাউ’-এর ফেলিসিয়া অ্যন্থোনিও বলেন, সরকার প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর কাছে চাইছিল এমন ক্ষমতা, যাতে তারা ‘ভুয়া তথ্য’ বা ‘সামাজিক সম্প্রীতি নষ্ট করে’—এমন পোস্ট বন্ধ করতে পারে।

মানবাধিকারকর্মী চৌধুরী বলেন, ‘সরকার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের শক্তিকে মারাত্মকভাবে হালকাভাবে নিয়েছিল।’

তথ্যসূত্র: এনডিটিভি

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত