Ajker Patrika

৪৭তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা: শেষ মুহূর্তের ৭টি পরামর্শ

শাহ বিলিয়া জুলফিকার
৪৭তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা: শেষ মুহূর্তের ৭টি পরামর্শ

১৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ৪৭তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা। হাজার হাজার প্রার্থী এতে অংশগ্রহণ করলেও খুব অল্পসংখ্যক প্রার্থীই উত্তীর্ণ হন। বিসিএস পরীক্ষার তিনটি ধাপের মধ্যে প্রিলিমিনারি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিতে হলে প্রথমে প্রিলিতে সফল হতে হয়। তাই প্রিলির শেষ সময়ের প্রস্তুতি খুবই কৌশলগত ও সুসংগঠিত হওয়া প্রয়োজন। শেষ সময়ে একজন পরীক্ষার্থীর প্রস্তুতি নিয়ে জানাচ্ছেন ৪৩তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে নিয়োগপ্রাপ্ত মো. শরীফুল ইসলাম। তাঁর অভিজ্ঞতালব্ধ পরামর্শ শুনেছেন শাহ বিলিয়া জুলফিকার।

নতুন কিছু না পড়া, রিভিশনে জোর দিন

পরীক্ষার মাত্র কিছুদিন আগে সম্পূর্ণ নতুন কোনো বিষয় শুরু করা উচিত নয়। এতে বিভ্রান্তি ও চাপ বাড়ে। বরং আগে যা পড়েছেন, তা-ই পরিকল্পনা করে রিভিশন করুন। বারবার রিভিশন করলে পুরোনো পড়া মস্তিষ্কে স্থায়ীভাবে জমা হয়। চেষ্টা করবেন, অপশন ছাড়া উত্তর মুখস্থ করে ফেলতে।

সময় ব্যবস্থাপনায় কঠোর হতে হবে

শেষ সময়ে প্রতিটি ঘণ্টাই মূল্যবান। তাই প্রতিদিনের পড়াশোনাকে সময়ভিত্তিক পরিকল্পনায় ভাগ করুন। কোন বিষয় কতক্ষণ পড়বেন, আগে থেকেই নির্ধারণ করুন। প্রতিদিন একটি করে মডেল টেস্ট দিন এবং সেটির জন্য আলাদা সময় রাখুন। পড়াশোনা ও রিভিশনের জন্য ঘড়ি ব্যবহার করুন—এতে সময় নষ্ট হবে না। মোবাইল যথাসম্ভব কম ব্যবহার করুন।

অগ্রাধিকার ঠিক করুন

এ পর্যায়ে দুর্বল বিষয় বা জটিল টপিকের পেছনে অতিরিক্ত সময় দেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ নয়। বরং যেসব বিষয় থেকে বেশি মার্কস নিশ্চিত করা যায়, আগে সেগুলো রিভিশন করুন। সহজ ও নিজের শক্তিশালী বিষয়গুলোকে ‘সেফ জোন’ বানান। গুরুত্বপূর্ণ টপিককে আগে কভার করুন। যেমন গণিতের বেসিক সূত্র, ইংরেজির ব্যাকরণ, সাধারণ বিজ্ঞানের সাধারণ তথ্য, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাবলি ইত্যাদি।

প্রশ্নব্যাংক ও মডেল টেস্ট অনুশীলন

আগের বছরের প্রশ্নগুলো সমাধান করা অত্যন্ত কার্যকর একটি কাজ হতে পারে। কারণ বিসিএস প্রিলিমিনারিতে অনেক প্রশ্ন হুবহু কমন আসে বা একই ধরনের আসে। প্রশ্ন সমাধান করার সময় শুধু উত্তর মুখস্থ করবেন না, উত্তর কেন সঠিক তা ব্যাখ্যাসহ বোঝার চেষ্টা করুন। উত্তর করার সময় শুধু যেগুলো নিশ্চিত জানেন, সেগুলোই মার্ক করার অভ্যাস করুন। এতে নেগেটিভ মার্কিং এড়ানো সম্ভব হবে।

বিষয়ভিত্তিক রিভিশন কৌশল

বাংলা ও ইংরেজি: এ দুটো বিষয় থেকে অনেক নম্বর আসে, তাই এখানে তুলনামূলক বেশি সময় দিন। বিশেষ করে ইংরেজি সাহিত্য ও বাংলা ব্যাকরণে কম সময়ে বেশি নম্বর পাওয়া সম্ভব।

বিজ্ঞান, কম্পিউটার ও ভূগোল: এই অংশে সিলেবাস ছোট হওয়ায় অল্প পড়াশোনায় বেশি মার্কস পাওয়া যায়। তাই এগুলো আগে রিভিশন করুন।

বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি: এ বিষয়ে ভালো প্রস্তুতি নিলে অনেক প্রশ্ন কমন পাওয়া যায়। সাম্প্রতিক অংশের জন্য নতুন করে কিছু পড়ার প্রয়োজন নেই; বরং আগের পড়াই ভালোভাবে ঝালিয়ে নিন।

মানসিক দক্ষতা: শর্টকাট টেকনিক ও সূত্র ঝালাই করুন। বিগত বছরের প্রশ্ন সমাধান করে প্র্যাকটিস করুন।

গণিত: নতুন কঠিন টপিক না পড়ে সহজ ও মাঝারি স্তরের প্রশ্নগুলো বেশি বেশি অনুশীলন করুন। নবম-দশম শ্রেণির অঙ্কগুলো অবশ্যই রিভিশন দিন।

নৈতিকতা ও সুশাসন: বিগত সালের প্রশ্নগুলো ভালো করে পড়ুন। পরীক্ষার হলে খুব ঠান্ডা মাথায় সতর্কতার সঙ্গে উত্তর করুন।

শারীরিক যত্ন

বিসিএস শুধু জ্ঞানের পরীক্ষা নয়, ধৈর্য ও সুস্থতারও পরীক্ষা। তাই শরীর খারাপ হলে পুরো প্রস্তুতিই ব্যাহত হবে। একটানা পড়বেন না; ছোট ছোট বিরতি নিন। সঠিক ভঙ্গিতে বসে পড়ুন, চোখ ও মেরুদণ্ডের যত্ন নিন। নিয়মিত ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম নিশ্চিত করুন। স্বাস্থ্যকর খাবার ও পর্যাপ্ত পানি পান করুন। নিয়মিত সামান্য হাঁটাহাঁটি বা হালকা ব্যায়াম করুন।

মানসিক প্রস্তুতি

শেষ সময়ে অনেক প্রার্থী ভেবে বসেন—‘আমার প্রস্তুতি যথেষ্ট হয়নি।’ এভাবে হতাশ হওয়া স্বাভাবিক, তবে ক্ষতিকর। যতটুকু সম্ভব ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে হলে বসলে অনেক কিছুই মনে পড়বে এবং পরীক্ষায় সঠিকভাবে উত্তর দিতে পারবেন। তাই নিজের প্রতি আস্থা রাখুন। মনে রাখবেন, বিসিএসের জন্য যে প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তা অন্য নিয়োগ পরীক্ষার জন্যও কাজে লাগবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত