Ajker Patrika
সাক্ষাৎকার

ঢাবির শিক্ষার্থীরা এমন সিদ্ধান্ত নেবে ভাবতেই পারিনি

মমিনুল ইসলাম জিসান

ডাকসু ও জাকসুর ভোটে বড় জয় পেয়েছে ছাত্রশিবির। বিপরীতে কেন্দ্রীয় একটি পদেও জিততে পারেনি ছাত্রদল। ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক মমিনুল ইসলাম জিসান। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রেজা করিম।

আপডেট : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৪: ০২

প্রশ্ন: ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রদলের বিশাল ভরাডুবির বিপরীতে ছাত্রশিবির-সমর্থিত প্যানেলের ভূমিধস বিজয়—এই ফলাফলকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?

মমিনুল ইসলাম: এককভাবে শুধু ছাত্রদলের জন্য নয়, আমি মনে করি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠানে এই ফলাফল সবার জন্য দুঃখজনক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধু ছাত্রদল হারেনি, হেরেছে বাংলাদেশ।

প্রশ্ন: নির্বাচনে ছাত্রদলের বিপর্যয়ের কারণ কী?

মমিনুল ইসলাম: প্রথমত, ১০ বছর ধরে ছাত্রদল অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার হয়েছে। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড দূরে থাক, হলে পর্যন্ত থাকতে পারেননি নেতা-কর্মীরা। এটা একটা কারণ। অন্যদিকে তড়িঘড়ি নির্বাচনের আয়োজন করা হয়েছে। সেই নির্বাচনে অংশগ্রহণের পূর্ণ প্রস্তুতি আমাদের ছিল না। এমনকি নির্বাচনে যাওয়া নিয়েও সিদ্ধান্তহীনতা ছিল। সবচেয়ে বড় যে কারণ, তা হলো নির্বাচনে ব্যাপক কারসাজি।

প্রশ্ন: তবে কি কারসাজিতে ফল ছাত্রদলের বিপক্ষে গেছে?

মমিনুল ইসলাম: কারসাজির এই অভিযোগ শুধু ছাত্রদলের নয়, অন্যরাও একই অভিযোগ তুলেছে। খতিয়ে দেখলে এই অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যাবে। ছাত্রদল শুরু থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের কাছে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের কথা বলেছে; কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সেই দাবিতে মনোযোগ দেয়নি। তারা তড়িঘড়ি একতরফা একটা মেকানিজম, ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে একপক্ষীয় নির্বাচনের আয়োজন করেছে।

প্রশ্ন: ডাকসু নির্বাচনে এমন ফল হতে পারে, তা আগে থেকে আন্দাজ করতে পেরেছিলেন?

মমিনুল ইসলাম: যে বিশ্ববিদ্যালয় এই দেশের জন্ম দিয়েছে, যে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এই দেশের পতাকার ডিজাইন এসেছে, সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা স্বাধীনতাবিরোধীদের পক্ষে অবস্থান নেবে, এটা আসলে আমরা কখনো চিন্তা করিনি।

প্রশ্ন: ছাত্রশিবিরকে কেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা ভোট দিলেন? কারণটা কি আদর্শিক নাকি তাঁরা এর মধ্য দিয়ে এবার বিকল্প কিছু বেছে নিলেন?

মমিনুল ইসলাম: আমি ব্যক্তিগতভাবে এটা মনে করি না। যে গুপ্ত বাহিনী, যে বট বাহিনী, তারা কিন্তু একেক সময় একেকভাবে বলে। ৫ আগস্টের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মব কালচার করেছে তারা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এত অসভ্য, অশ্লীল স্লোগান ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধেও কখনো দেওয়া হয়েছে বলে জানি না। এমনকি নব্বইয়ের দশকের দুটি আন্দোলনের সময় এত অসভ্য ও কুরুচিপূর্ণ স্লোগান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাটিতে দেওয়া হয়নি। কিন্তু দেখেন, ৫ আগস্টের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে তারা কী অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ স্লোগান দিয়েছে।

প্রশ্ন: ছাত্রদলের বিরুদ্ধেও গত এক বছরে দখল, চাঁদাবাজিসহ অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে। নির্বাচনে কি তার প্রভাব পড়েছে?

মমিনুল ইসলাম: মোটেও না। ছাত্রদল হলরুম দখল কিংবা কোনো কালচারে কখনো জড়িত ছিল না এবং ভবিষ্যতেও হবে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের প্যানেলসহ যাঁরা নেতা রয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে যদি এক পয়সার কোনো লেনদেন, চাঁদাবাজির ঘটনা কেউ প্রমাণ করতে পারে, আমরা এই দেশে কোনো দিন রাজনীতি করব না।

প্রশ্ন: ডাকসু নির্বাচনের ফলাফল ছাত্রদলের জন্য বড় ধাক্কা। এখন কী ভাবছে ছাত্রদল, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

মমিনুল ইসলাম: আমরা অতীতে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকারের জন্য লড়েছি, বর্তমানে লড়ছি এবং ভবিষ্যতেও লড়ব। যত দিন বাংলাদেশে প্রকৃত গণতন্ত্র বাস্তবায়ন করা না হয়, ছাত্রদলের লড়াই অব্যাহত থাকবে। আমাদের শীর্ষ নেতারা ডাকসু নির্বাচন এবং অন্য ঘটনাগুলো নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন, মূল্যায়ন করছেন। মূল্যায়নের পরে হাইকমান্ড যে সিদ্ধান্ত নেবে, ছাত্রদল সেই সিদ্ধান্তের জন্য প্রস্তুত রয়েছে।

প্রশ্ন: ডাকসু ও জাকসু নির্বাচন শেষ। সামনে রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হবে। ওই দুই নির্বাচন নিয়ে ছাত্রদল কী ভাবছে? এমন কথা বলা হচ্ছে, ছাত্রশিবির মেধাবী ও স্বচ্ছ ইমেজের প্রার্থী দিয়েছে।

মমিনুল ইসলাম: শিবিরের তথাকথিত ক্লিন ইমেজ নিয়ে বলি, ছাত্রলীগের পর্দার আড়ালে থেকে কেউ যদি ক্লিন ইমেজের হয়, এর চেয়ে তামাশাজনক, হতাশাজনক, হাস্যকর কিছু হতে পারে না। তারা হলে থেকেছে, ছাত্রলীগের সঙ্গে থেকেছে, নৌকার পক্ষে স্লোগান দিয়েছে। তারা কীভাবে ক্লিন ইমেজের হয়?

রাকসু ও চাকসু নির্বাচন নিয়ে আমাদের প্রত্যাশা—আমরা চাই অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হোক। কোনো কারসাজি, কোনো ইঞ্জিনিয়ারিং যেন না হয়।

আজকের পত্রিকা: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

মমিনুল ইসলাম: আজকের পত্রিকাকেও ধন্যবাদ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত