Ajker Patrika

গণভোট, সনদ—এইসব আমরা বুঝি না কিছু: মির্জা ফখরুল

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি
ঠাকুরগাঁওয়ে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন বিএনপি মহাসচিব। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঠাকুরগাঁওয়ে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন বিএনপি মহাসচিব। ছবি: আজকের পত্রিকা

গণভোট, সনদ—এইসব আমরা বুঝি না; কিছু উঁচু তলার শিক্ষিত লোক এগুলো আমাদের ঘাড়ের ওপর চাপাচ্ছেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

আজ রোববার ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার দৌলতপুর বালিকা উচ্চবিদ্যালয় মাঠে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ মন্তব্য করেন। অসুস্থতা বোধ করায় মির্জা ফখরুল ইসলাম উপস্থিত নেতা-কর্মীদের অনুমতি নিয়ে চেয়ারে বসে বক্তব্য দেন।

চলমান রাজনৈতিক টানাহেঁচড়ার কথা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বর্তমানে রাজনৈতিক একটা টানাহেঁচড়া চলছে। একটা দল বলছে, গণভোট হতে হবে...গণভোট, সনদ—এইসব কি আমরা বুঝি?’

জনগণের কাছ থেকে নেতিবাচক উত্তর আসার পর বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘বুঝি না কিছু। এইসব বোঝা শিক্ষিত উঁচু তলা থেকে কিছু লোক আসছে, আইসা আমাদের ঘাড়ের ওপর চাপাচ্ছে।’ তবে তিনি জানান, যতগুলো পরিবর্তন বা সংস্কার দরকার, সেগুলোতে বিএনপি রাজি আছে।

বর্তমান সরকার প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘যেই সরকারটা এখন আছে, তাকে বলে অন্তর্বর্তী সরকার। অর্থাৎ ওই সরকার ভোট করে আসে নাই। কিন্তু আমরা সবাই মিলে তাকে দায়িত্ব দিয়েছি যে, হাসিনা পালানোর পরে সে দেশ চালাবে এবং একটি নির্বাচন করবে।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘দুঃখের কথা হচ্ছে, এই সরকারের পেছনে মানুষ নাই। মানুষের যে কষ্ট, সেটা সরকার বোঝে না। কৃষকের কষ্ট কোথায়, সমস্যা কোথায়, এই সরকার বোঝে না।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘২০২৪ সালের ৫ আগস্টে ছাত্রদের ওপর গুলি চালিয়ে হত্যাকাণ্ড এবং ১৯৭১ সালের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় হত্যাকাণ্ড—উভয়ই গণহত্যা। এই দুইটার মধ্যে পার্থক্য একটাই—তখন পশ্চিম পাকিস্তানের হানাদার বাহিনী আমাদের এখানকার কিছু লোকজনকে নিয়ে গণহত্যা করেছিল আর এইবার শেখ হাসিনা তার প্রশাসনকে দিয়ে আমাদের ছেলেগুলোকে মারছে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ৫ আগস্টে হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর একেবারে অসহায় অবস্থায় রেখে গেছেন তাঁর দলের লোকজনকে। এতে বোঝা যায়, আগের যে প্রধানমন্ত্রী হাসিনা ছিলেন, তাঁর কর্মী ও জনগণের প্রতি কোনো দরদ নেই। দরদ থাকলে তিনি পালিয়ে যেতেন না।

মির্জা ফখরুল দেশের মাটি ও জনগণের সঙ্গে থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে বলেন, ‘আমরা ওই রাজনীতি করি না। আমাদের এই মাটিতে জন্ম, এই মাটিতে আমরা থাকি, এই মাটিতে সুখ-দুঃখের সঙ্গে থাকি এবং মারা গেলে এখানেই মারা যাব। আমরা গুলি খেয়ে মরলে এখানেই মরব। দেশের মাটি ছেড়ে আমরা কখনো যাব না।’ নিজের রাজনৈতিক কষ্টের কথা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, তিনি ১১ বার জেলে গেছেন এবং তাঁকে পাঁচ দিন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের সেলে আটক করে রাখা হয়েছিল।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে ছয় বছর বিনা দোষে কারাগারে আটক করে রাখা হয়েছে। আমাদের ৬০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে।’

আসন্ন নির্বাচন প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল উপস্থিত জনগণের কাছে জানতে চান, ‘এই নির্বাচনে আপনারা ভোট দেবেন তো? এবার ভোটের ব্যবস্থা তৈরি হয়েছে তো? সবাই ভোট দিতে পারবেন তো?’ এ সময় নেতা-কর্মীরা ‘ইনশা আল্লাহ’ বলে উত্তর দেন।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এবার মার্কা কয়টা?...মার্কা একটা দেখতেছেন ধানের শীষ, নৌকাটা এবার দেখা যাচ্ছে না। আরেকটা দেখা যায় দাঁড়িপাল্লা।’

কৃষকের দুর্দশার কথা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ধানের দাম নেই। আলুতে এবার মার খেয়েছেন কৃষক, আলু হিমাগার থেকে আনছেন না তাঁরা, তার মানে, কৃষিকাজ করে লাভবান হতে পারছেন না।

বিএনপি সরকারে এলে কৃষকদের জন্য ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতের প্রতিশ্রুতি দিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা যদি সরকারে আসি, কৃষক যেন তার ধান-আলু যেটাই ফলাবে, তার যেন ন্যায্য দাম পায়, সেই ব্যবস্থাটা আমরা করতে চাই।’

বিএনপি মহাসচিব বঞ্চিত মা-বোনদের জন্য ‘ফ্যামিলি কার্ড’-এর প্রতিশ্রুতি দেন। এই কার্ডের মাধ্যমে মায়েরা ন্যায্যমূল্যে চাল, ডাল, তেল ও লবণ কিনতে পারবেন এবং স্বাস্থ্যসেবা পাবেন। এ ছাড়া কৃষকদের জন্য ‘ফার্মার কার্ড’ চালু করার কথা বলেন, যার মাধ্যমে কৃষকেরা ন্যায্যমূল্যে সার, কীটনাশক ও সেচের পানি পাবেন।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আরও বলেন, ‘১৯৭১ সালে যখন এ দেশের মানুষ দিশেহারা হয়ে গেছিল, শেখ মুজিব বন্দী হয়েছিলেন পাকিস্তানে আর আওয়ামী লীগের নেতারা পালিয়ে গিয়েছিল ইন্ডিয়াতে, তখন শহীদ জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছিলেন। সেই লোকের দল আমরা। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার দল আমরা। আমরা কথায় বিশ্বাস করি, কাজে বিশ্বাস করি, আমরা কোনো মুনাফিকিতে বিশ্বাস করি না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...