Ajker Patrika

৫ দিন ধরে উত্তরের চার জেলার সঙ্গে রংপুরের বাস চলাচল বন্ধ 

রংপুর ও নীলফামারী প্রতিনিধি
আপডেট : ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৭: ৪১
৫ দিন ধরে উত্তরের চার জেলার সঙ্গে রংপুরের বাস চলাচল বন্ধ 

রংপুর থেকে উত্তরের চার জেলার সঙ্গে সরাসরি বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে পাঁচ দিন ধরে। এতে দুর্ভোগে পড়েছে এসব রুটে চলাচলকারী যাত্রীরা। দিনাজপুর ও রংপুর জেলা মালিক সমিতির দ্বন্দ্বে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে সৈয়দপুর বাস টার্মিনাল পর্যন্ত রংপুরের এবং সৈয়দপুর থেকে নীলফামারী, দিনাজপুর, পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও বাস চলাচল করছে।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে সৈয়দপুর বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেছে, দিনাজপুরের বীরগঞ্জ থেকে অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে রংপুরে চিকিৎসক দেখাতে রওনা হন আনারুল হক (৩০)। রংপুরের গেটলক বাসে উঠে রংপুরের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। কিন্তু বাস মালিক সমিতির দ্বন্দ্বের কারণে সরাসরি বাস চলাচল না করায় সৈয়দপুর বাস টার্মিনালে তাকে নামিয়ে দেন। এরপর অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে সৈয়দপুর বাস টার্মিনালের অপর প্রান্তে গিয়ে ওঠেন রংপুরে বাসে।

আনারুল হক জানান, রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অসুস্থ স্ত্রী ছায়মা বেগমকে ভর্তি করেই বাড়ি ফিরে যাবেন তিনি। কিন্তু বীরগঞ্জ পর্যন্ত সরাসরি কোনো গাড়ি না থাকায় আবারও দুর্ভোগে পড়বেন। হঠাৎ কেন গাড়ি বন্ধ হয়েছে তা কেউ জানেও না।

পঞ্চগড়ে যাওয়ার জন্য সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা আরেক যাত্রী রওশন আরা বলেন, ‘রংপুরের কোনো গাড়ি সৈয়দপুর পার হচ্ছে না। সৈয়দপুরের টিকিট পেতেও খুব সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। সিটও পাওয়া যাচ্ছে না, খুব হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। শুনলাম গাড়ির মালিক সমিতির কি জানি সমস্যা হয়েছে, তাঁর সাজা আমার মতো যাত্রী সাধারণকে ভোগাতে হচ্ছে। দেশে কোনো কিছুর সিস্টেম নেই। সাধারণ মানুষ জিম্মি।’

নীলফামারীর সৈয়দপুর বাসটার্মিনালে গিয়ে আরও দেখা যায়, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর থেকে যেসব বাস গেটলক রংপুরে চলাচল করত, সেগুলো সৈয়দপুরে সব যাত্রীদের নামিয়ে দিচ্ছেন। আবার সৈয়দপুর থেকে তাঁরা যাত্রী নিয়ে গন্তব্যে রওনা দিচ্ছেন। একইভাবে রংপুর থেকে ছেড়ে আসা আন্তজেলা কোনো বাসকে সৈয়দপুর অতিক্রম করতে দেখা যায়নি। সেগুলোও সৈয়দপুর থেকে যাত্রী উঠাচ্ছেন। এতে চাপ বেড়েছে সৈয়দপুর বাস টার্মিনালে। এতে দুর্ঘটনা বা অপ্রীতিকর ঘটনার আশঙ্কা করছেন নীলফামারী জেলা বাস, মিনিবাস মালিক সমিতি।

দিনাজপুর ও নীলফামারী বাস মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পঞ্চগড় থেকে রংপুর হয়ে বগুড়া ও রংপুর থেকে দিনাজপুরের ফুলবাড়ি হয়ে জয়পুরহাট পর্যন্ত চলাচলের কথা। কিন্তু রংপুরের নেতারা পঞ্চগড় থেকে বগুড়ায় বাস চলাচল করতে না দিয়ে তাঁরা রংপুর থেকে দিনাজপুরের ফুলবাড়ি দিয়ে জয়পুরহাট রুটে তাদের বাস চলাচল করতে চায়। এ নিয়ে দিনাজপুর জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপ ও রংপুর মোটর মালিক সমিতির দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। ফলে রোববার থেকে উভয় গ্রুপ সরাসরি বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়ে সৈয়দপুর বাস টার্মিনাল পর্যন্ত চলাচল করে। নীলফামারীর সৈয়দপুর বাস টার্মিনাল থেকে যাত্রী উঠানামা চলছে।

সৈয়দপুর বাস টার্মিনালে কথা হয় রংপুরের গুপ্তপাড়া বাসিন্দা ব্যবসায়ী মীর আনোয়ারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ব্যবসায়িক কাজে পঞ্চগড়ে প্রায় যেতে হয়। কিন্তু ভেঙে যেতে হচ্ছে। বাস পাওয়ায় যাচ্ছে না।’

রংপুর থেকে পরিবার নিয়ে দিনাজপুরে যাচ্ছিলেন মাহিগঞ্জের রতনা বেগম। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘রংপুর থেকে দিনাজপুর গেটলক গাড়িতে আরামে কম খরচে যাওয়া যেত। এখন ভেঙে যেতে বেশি টাকা লাগছে। বলা চলে প্রায় দ্বিগুণ। মালিকদের ঝামেলা হবে আর সেগুলো আমাদের মতো যাত্রীদের ঘারে পড়বে। এগুলো কি দেখার কেউ নেই।’

রফিকুল ইসলাম নামের একজন মোটর শ্রমিক বলেন, চার জেলার গাড়ি এখন সৈয়দপুরে যাত্রী ওঠানো হচ্ছে। স্বাভাবিকের চেয়ে চারগুণ ভিড় বাড়ছে। গাড়ির চাপ, যাত্রীর চাপ খুবই বেশি। তিনি বলেন, ঠুনকো বিষয় নিয়ে এই ঝামেলা। মালিক সমিতিগুলো ইচ্ছে করলে দুই মিনিটে সমস্যা সমাধান করতে পারবে।

এ বিষয়ে দিনাজপুর জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের সভাপতি ভবানী শংকর আগরওয়ালা আজকের পত্রিকাকে বলেন, এ ঘটনার জন্য রংপুর জেলা মোটর মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আফতাবুজ্জামান লিপন সম্পূর্ণ দায়ী। তাঁর হঠকারী সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের চেষ্টাই এ উদ্ভূত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

তবে রংপুর জেলা মোটর মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আফতাবুজ্জামান লিপনের মুঠোফোনে বারবার যোগাযোগ চেষ্টা করা হয়। কিন্তু কল রিসিভ না করায় কোনো মন্তব্য জানা যায়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

চট্টগ্রামে যুবদল কর্মী নিহত: মেয়রের ক্ষোভ ঝাড়া সেই ওসিকে বদলি

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
বাকলিয়া থানার ওসি ইখতিয়ার উদ্দিন। ছবি: সংগৃহীত
বাকলিয়া থানার ওসি ইখতিয়ার উদ্দিন। ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রামে ব্যানার টানানো নিয়ে দুই পক্ষের গোলাগুলিতে এক যুবদল কর্মী নিহতের ঘটনায় বাকলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) দায়ী করে ক্ষোভ ঝেড়েছিলেন সিটি করপোরেশনের মেয়র শাহাদাত হোসেন। রোববার সেই ওসি ইখতিয়ার উদ্দিনকে বদলি করা হয়েছে।

সিএমপি কমিশনার হাসিব আজিজ স্বাক্ষরিত এক আদেশে তাঁকে বদলি করা হয়। আদেশ বলা হয়, ওসি ইখতিয়ারকে সিএমপির কাউন্টার টেররিজম (সিটি) ইউনিটে বদলি করা হয়েছে। একই আদেশে বন্দর থানার বর্তমান ওসি মোহাম্মদ আফতাব উদ্দিনকে বাকলিয়া থানার দায়িত্বে এবং পরিদর্শক মোস্তফা আহমেদকে বন্দর থানার নতুন ওসি হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে।

গত বছরের ১০ সেপ্টেম্বর পরিদর্শক ইখতিয়ারকে বাকলিয়া থানার ওসি পদে দায়িত্ব দেওয়া হয়। অন্যদিকে ৩০ জুলাই বন্দর থানার ওসি পদে দায়িত্ব পান তৎকালীন চান্দগাঁও থানার পরিদর্শক মো. আফতাব উদ্দিন।

জানা গেছে, গত আট মাসে বাকলিয়া থানা এলাকায় গুলি করে তিনজনকে হত্যা করা হয়। ২৯ মার্চ গভীর রাতে বাকলিয়া থানার এক্সেস রোডে প্রাইভেট কার ধাওয়ার পর গুলি করে দুজনকে হত্যা করা হয়। সবশেষ ২৭ অক্টোবর একই থানা এলাকার বাকলিয়া এক্সেস রোডসংলগ্ন সৈয়দ শাহ রোডে মেয়র শাহাদাত হোসেনের ব্যানার টানানো নিয়ে ছাত্রদল ও যুবদলের দুই পক্ষের সংঘর্ষ ও গোলাগুলিতে সাজ্জাদ নামের এক যুবদল কর্মী নিহত এবং আরও কয়েকজন আহত হন। এ ঘটনার জন্য নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ ও যুবলীগের পাশাপাশি বাকলিয়া থানা-পুলিশকে দোষারোপ করেন শাহাদাত।

ঘটনার পরদিন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নিহত ব্যক্তির স্বজনদের সান্ত্বনা ও আহত ব্যক্তিদের দেখতে এসে শাহাদাত বলেন, ‘এ ঘটনায় দায়ীরা সন্ত্রাসী গ্রুপের। তারা আগে ছাত্রলীগ–যুবলীগ করত। তারা আজকে এখানে এসে কারও না কারও শেল্টারে আছে। আমি এক সপ্তাহ আগে বাকলিয়া থানার ওসিকে বলেছিলাম এই ছেলেদের গ্রেপ্তারের জন্য। পোস্টার–ব্যানার নামিয়ে ফেলার কথাও বলেছি। তাদের গ্রেপ্তার করার জন্য আমি পুলিশ কমিশনার সাহেবকে বলেছি। আমি বলেছি, যদি আমার দলেরও কেউ তাদের শেল্টার দিয়ে থাকে, দরকার হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেন, তাকেও গ্রেপ্তার করেন। এটা কিন্তু ওসিকে আমি বলেছি। কিন্তু ওসি কেন জানি তাদের গ্রেপ্তার করছেন না।’ এ সময় বাকলিয়া থানা-পুলিশ নিয়েও নানা সমালোচনা করেন মেয়র।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মেট্রোরেলের সব কর্মীর ছুটি বাতিল

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) সব কর্মকর্তা ও কর্মচারীর ছুটি পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে।

আজ রোববার (৯ নভেম্বর) ডিএমটিসিএলের পরিচালক (প্রশাসন) এ কে এম খায়রুল আলম স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়।

অফিস আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে, মেট্রোরেল ভবন, ডিপো, স্টেশন, প্রকল্প এলাকা এবং সংশ্লিষ্ট স্থাপনাগুলোতে নিয়োজিত সব কর্মকর্তা ও কর্মচারীর ছুটি সাময়িকভাবে বাতিল করা হলো। নতুন কোনো নির্দেশ না আসা পর্যন্ত এ আদেশ কার্যকর থাকবে।

তবে ছুটি বাতিলের কারণ অফিস আদেশে স্পষ্ট করা হয়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সিলেটে হত্যা মামলায় অভিযুক্ত আসামি গ্রেপ্তার

সিলেট প্রতিনিধি
জুনেই আহমদ । ছবি: সংগৃহীত
জুনেই আহমদ । ছবি: সংগৃহীত

সিলেটের জালালাবাদে ক্লুলেস হত্যা মামলায় অভিযুক্ত একজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র‌্যাব-৯।

রোববার (৯ নভেম্বর) এক বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানিয়েছেন র‌্যাব-৯-এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কে এম শিমুল ইসলাম সোহাগ।

গ্রেপ্তারকৃত জুনেদ আহমদ (২৮) জালালাবাদ থানার নোয়াগাঁও গ্রামের হারিছ আলীর ছেলে।

শিমুল ইসলাম সোহাগ জানান, পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে গ্রেপ্তারকৃত আসামিকে জালালাবাদ থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বাসের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী স্বামী-স্ত্রী নিহত

ভালুকা (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

ময়মনসিংহের ভালুকায় একটি দ্রুতগতির বাসের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী স্বামী-স্ত্রী মারা গেছেন। আজ রোববার (৯ নভেম্বর) রাত ৮টার দিকে উপজেলার হাজির বাজার স্বপ্ন বিলাসের সামনে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহত ব্যক্তিরা হলেন সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশা উপজেলার কলিজাকান্দা গ্রামের মজিবুর রহমান (৬০) ও তাঁর স্ত্রী হোসনেয়ারা বেগম (৫০)। তাঁরা গাজীপুর চৌরাস্তা এলাকায় বসবাস করতেন।

স্থানীয়রা জানায়, ঘটনার সময় মোটরসাইকেলযোগে স্বামী-স্ত্রী ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক দিয়ে গাজীপুর চৌরাস্তার দিকে যাচ্ছিলেন। ভালুকা উপজেলার হাজির বাজার স্বপ্ন বিলাসের সামনে পৌঁছালে সরকার পরিবহনের একটি দ্রুতগতির বাস মোটরসাইকেলটিকে ধাক্কা দেয়। এতে তাঁরা দুজনেই গুরুতর আহত হন। স্থানীয়রা তাঁদের উদ্ধার করে ভালুকা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

ভরাডোবা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ বি এম মেহেদী মাসুদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ঘাতক বাস ও মোটরসাইকেলটি পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত