Ajker Patrika

কর্মশালায় কর্মকর্তারা, বাইরে তাঁদের গাড়ি চালকদের এসি বিলাস

রিমন রহমান, রাজশাহী
কর্মশালায় কর্মকর্তারা, বাইরে তাঁদের গাড়ি চালকদের এসি বিলাস

কর্মকর্তাদের গাড়ি সারি সারি দাঁড়িয়ে। একটুও নড়ছে না। কিন্তু ইঞ্জিন চলছে। কাছাকাছি গেলেই ইঞ্জিনের শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। ভেতরে চলছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি)। গাড়িতে কোনো কর্মকর্তা নেই। চালকদের কেউ আয়েশ করে ঘুমাচ্ছেন। কেউ আসনে বসে ঝিমাচ্ছেন।

বৈশ্বিক সংকটের কারণে সরকারের তরফ থেকে সবাইকে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান জানানো। কিন্তু রাজশাহীতে আজ বৃহস্পতিবার এভাবে চালকদের এসি বিলাস দেখা গেছে। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে কর্মশালায় কর্মকর্তারা এসেছিলেন। বাইরে চালকেরা গাড়ির ইঞ্জিন চালিয়ে এসি উপভোগ করছিলেন। যদিও জ্বালানি সাশ্রয় করতে বেশিরভাগ সভা অনলাইনে করার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।

কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক। ঢাকা থেকে এসেছিলেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রত্যেক অধিদপ্তর ও দপ্তরের শীর্ষ কর্মকর্তারা। এ ছাড়া রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের প্রত্যেক জেলা ও উপজেলার কৃষি কর্মকর্তারা এসেছিলেন এ কর্মশালায়। ঢাকা ও উত্তরের ১৬ জেলা থেকে সব মিলিয়ে শতাধিক গাড়ি এসেছিল সেখানে। এর মধ্যে অন্তত ৩০টি গাড়ির চালকদের ইঞ্জিন স্টার্ট দিয়ে এসি ছেড়ে রাখতে দেখা গেছে। 

সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত চলে এ কর্মশালা। কর্মশালা যতক্ষণ চলেছে ততক্ষণই গাড়ির ইঞ্জিন স্টার্ট রেখে ভেতরে বসে ছিলেন অনেক চালক। তাঁদের মধ্যে ১০ জনের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের।

ইঞ্জিন স্টার্ট দিয়ে এসি ছেড়ে বসে ছিলেন ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্ল্যান ব্রিডিং প্রধানের গাড়িচালক মানিক মৌয়ালী। গাজীপুর-ঠ ১১-০০৫৩ নম্বরের এই গাড়ির চালকের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বললেন, ‘একটু ঠান্ডা হওয়ার জন্য এই এখনই দিলাম।’ 

ইঞ্জিন স্টার্ট দিয়ে বসেছিলেন পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার গাড়িচালক মো. জুয়েল। ঢাকা মেট্রো-ঠ ১৩-৬২১৭ নম্বরের গাড়িটির এই চালক বলেন, ‘খুব গরম লাগছিল। তাই পাঁচ-দশ মিনিট ইঞ্জিন স্টার্ট দিয়ে একটু এসি চালাচ্ছি।’

গাড়ি (ঢাকা মেট্রো-ঠ ১৩-৭০৪৯) না চললেও ইঞ্জিন স্টার্ট দিয়ে রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালকের চালক মো. রাহী বলেন, ‘এসি ঠিক আছে কি না টেস্ট করে দেখলাম!’ 

ঢাকা মেট্রো-ঠ ১৩-৬১৯১ নম্বরের গাড়িটিও ইঞ্জিন স্টার্ট রাখা ছিল। জানালা দিয়ে দেখা গেল ভেতরে চালক ঘুমাচ্ছেন। ডেকেও তাঁর সাড়া পাওয়া গেল না। দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালকের গাড়িটির (ঢাকা মেট্রো-ঠ ১৩-৩৬৭৯) চালক মহসীন আলী বললেন, ‘মোবাইল বন্ধ হয়ে গেছে। চার্জ দিতে ইঞ্জিন স্টার্ট দিলাম। তাই এসিটাও ছাড়লাম।’ 

কর্মকর্তারা যখন কর্মশালায় বাইরে চালকেরা এসি চালিয়ে ঘুমাচ্ছেন। রাজশাহী শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণ থেকে তোলা।বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রকল্প পরিচালক রফিকুল ইসলামের গাড়ির (ঢাকা মেট্রো-ঠ ১১-৭০৬৯) চালক মিন্টু হোসেন বললেন, ‘গাড়ির ভেতরে খুব গরম। তাই এসি দিয়ে একটু নাশতা করছি।’

গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার গাড়ির (মেট্রো-ঠ ১৩-৭০৪২) চালক জহুরুল ইসলাম আরও কয়েকজন চালককে ভেতরে নিয়ে ইঞ্জিন স্টার্ট দিয়ে এসি ছেড়ে বসে ছিলেন। তিনি বলেন, ‘গরম লাগছে, তাই এসি দিয়েছি।’

সরকার ব্যয় সাশ্রয় করতে বললেও এভাবে জ্বালানি পোড়ানোর বিষয়ে জানতে চাইলে ভেতর থেকে চালক পরিচয় দিয়ে মো. হাশেম নামের এক ব্যক্তি বললেন, ‘আমরা এভাবেই অভ্যস্ত। সহজে তো যাচ্ছে না।’ 

সাশ্রয়ের দিকে কর্মকর্তাদেরও তো মনোযোগ দেওয়া উচিত! দায়টা অনেকখানি কর্তাদের ওপর চাপিয়ে হাশেম বলেন, ‘সরকার তো মিটিংও অনলাইনে করতে বলেছে। তাহলে ১৬টা জেলা থেকে এখানে এতগুলো গাড়ি আসল কেন? অন্তত ২০০-২৫০ গাড়ি এসেছে। এতে তেল পুড়েছে না? আমার জেলা থেকেই ছয়জন অফিসার এসেছেন ছয়টা গাড়ি নিয়ে। তাঁরা সবাই একটা গাড়ি আনলেও তো তেল বাঁচত।’

এমন অপচয়ের নিয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালকের কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ লিয়াজোঁ অফিসার মো. আবদুল মোমিন বলেন, ‘এই প্রোগ্রামটা অনেক আগে সেট করা। মন্ত্রী মহোদয়ের সময়সূচির কারণে পিছিয়েছে। আর এই কর্মশালায় কৃষক এবং সার-কীটনাশকের পরিবেশকেরাও অংশ নিয়েছেন। অনলাইনে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায় না।’ 

তিনি জানান, এই কর্মশালায় কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ ২০টি সংস্থার কর্মকর্তারা অংশ নেন। কর্মশালা চলাকালে চালকদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা ইঞ্জিন স্টার্ট দিয়ে এসি ছেড়ে রাখার প্রসঙ্গ তুললে আবদুল মোমিন বলেন, ‘এটা আমি বলতে পারব না। এই বিষয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রোহিঙ্গা নারীকে নাগরিক সনদ প্রদান, চেয়ারম্যানকে সাময়িক বরখাস্ত

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি  
ইউপি প্যানেল চেয়ারম্যান মো. লিয়াকত আলী। ছবি: সংগৃহীত
ইউপি প্যানেল চেয়ারম্যান মো. লিয়াকত আলী। ছবি: সংগৃহীত

সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলায় রোহিঙ্গা নারী রোকেয়া বেগমকে নাগরিক ও চারিত্রিক সনদ দেওয়ার ঘটনায় ভদ্রঘাট ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) প্যানেল চেয়ারম্যান মো. লিয়াকত আলী খান মোহামকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব মো. নুরে আলম স্বাক্ষরিত সাময়িক বরখাস্তের আদেশের চিঠিটি গত ২০ অক্টোবর ইস্যু হলেও প্যানেল চেয়ারম্যান এটি ৩ নভেম্বর হাতে পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন ভদ্রঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সচিব ওমর ফারুক। এরপর বিষয়টি আজ বৃহস্পতিবার জানাজানি হয়।

জানা গেছে, রোহিঙ্গা রোকেয়া বেগম বাংলাদেশি নাগরিক না হয়েও ভদ্রঘাট ইউনিয়ন পরিষদ থেকে নাগরিক সনদপত্র সংগ্রহ করেন। সেই সনদ ব্যবহার করে তিনি জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) করার জন্য কামারখন্দ উপজেলা নির্বাচন অফিসে গেলে ধরা পড়েন।

এর আগে গত ২৫ আগস্টে রোকেয়া বেগম ও তাঁর স্বামী মো. আনিছ ভুয়া কাগজপত্র নিয়ে এনআইডি করতে গেলে নির্বাচন কর্মকর্তার সন্দেহ হয়। পরে জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা কক্সবাজারের উখিয়া টেংখালী ক্যাম্প-১২, জি-৪ ব্লকের রোহিঙ্গা শরণার্থী বলে স্বীকার করেন। আর ওই দিন বিকেলেই কামারখন্দ উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মাসুদ রানা বাদী হয়ে কামারখন্দ থানায় মামলা করেন। এরপর পুলিশ রোকেয়া ও তাঁর স্বামী আনিছকে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠায়।

রোকেয়ার নাগরিক সনদে দেখা গেছে, ৪০২ নম্বর ক্রমিকের ওই সনদটি ইস্যু করা হয়েছে গত ৮ আগস্ট। তাতে রোকেয়ার নাম, পিতার নাম সাব্বির আহমেদ, মাতার নাম রাশিদা বেগম ও ঠিকানা বানিয়াগাতী গ্রাম উল্লেখ আছে। তাতে স্বাক্ষর করেছেন ইউপি প্যানেল চেয়ারম্যান মো. লিয়াকত আলী।

জানতে চাইলে প্যানেল চেয়ারম্যান মো. লিয়াকত আলী বলেন, ‘আমাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তবে আমার স্বাক্ষর জাল করে ওই সনদ তৈরি করা হয়েছে। আমি এতে জড়িত নই। এ বিষয়ে আমি লিখিত জবাব আজ সন্ধ্যার আগেই অফিসে জমা দেব।’

এ বিষয়ে কামারখন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিপাশা হোসাইন বলেন, তাঁকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে এবং ১০ কর্মদিবসের মধ্যে লিখিত জবাব দিতে বলা হয়েছে। তাঁর জবাব পাওয়ার পর জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‘তোর সময় শেষ, যা খাওয়ার খেয়ে নে’—হুমকির ৩ দিন পরেই বাবলাকে হত্যা

 নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
চট্টগ্রামের দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদের সেকেন্ড ইন কমান্ড রায়হান। ছবি: সংগৃহীত
চট্টগ্রামের দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদের সেকেন্ড ইন কমান্ড রায়হান। ছবি: সংগৃহীত

‘তোর সময় শেষ, যা খাওয়ার খেয়ে নে’—গুলি করে হত্যার তিন দিন আগে মোবাইল ফোনে এমন হুমকি দেওয়া হয়েছিল ‘সন্ত্রাসী’ সরোয়ার হোসেন ওরফে বাবলাকে (৪৩)। প্রতিপক্ষ চট্টগ্রামের দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদের সেকেন্ড ইন কমান্ড রায়হান এই হুমকি দিয়েছিলেন বলে বাবলার বাবার অভিযোগ।

হত্যাকাণ্ডের পর গতকাল বুধবার রাতে বাবলার বাবা আবদুল কাদের চট্টগ্রাম নগরের বায়েজিদ বোস্তামীর চালিতাতলী এলাকার খন্দকারপাড়ার বাড়িতে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।

বিএনপির গণসংযোগের সময় গুলিতে নিহত সরোয়ার হোসেন বাবলার লাশ আজ বৃহস্পতিবার সকালে ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে নেওয়া হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা
বিএনপির গণসংযোগের সময় গুলিতে নিহত সরোয়ার হোসেন বাবলার লাশ আজ বৃহস্পতিবার সকালে ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে নেওয়া হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

এর আগে গতকাল সন্ধ্যার পর নগরীর চালিতাতলী হাজির পোল এলাকায় চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী ও চান্দগাঁও) আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ও চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহর গণসংযোগের সময় পেছন থেকে গুলিতে বাবলার মৃত্যু হয়।

আবদুল কাদের জানান, তাঁর ছেলেকে গুলি করে হত্যার আগে দুবার ‘খতম’ করার হুমকি দিয়েছিল প্রতিপক্ষ সন্ত্রাসী গ্রুপ। সাত দিন ও তিন দিন আগে এসব হুমকি এসেছিল। বাবলা এ বিষয়ে সতর্ক থাকলেও একেবারে নিজ এলাকায় ঢুকে এভাবে গুলি করার বিষয়টি তিনি তেমন আমলে নেননি। কারণ, হুমকি এসেছিল মোবাইল ফোনে।

বাবলার ছোট ভাই মো. আজিজ বলেন, ‘এক সপ্তাহ আগে আমার ভাইকে প্রাণে মারার হুমকি দিয়েছিল হত্যাকারীরা। ওরা বলেছিল আমার ভাইয়ের সময় আর এক সপ্তাহ আছে। ওরা একাধিকবার এক সপ্তাহ সময় আছে জানিয়ে হুমকি দিত। হুমকির ঠিক এক সপ্তাহের মাথায় তারা আমার ভাইকে হত্যা করল।’

আজিজ কাতারপ্রবাসী ছিলেন। দুই বছর আগে দেশে আসেন। এলাকায় নতুন ভবন করার সময় ইট ও বালু সরবরাহের কাজ করেন। এ কারণে সাজ্জাদদের রোষানলে পড়েন তাঁরা। এ ক্ষেত্রে প্রতিপক্ষ শক্তি হিসেবে সাজ্জাদদের সামনে ছিলেন সরোয়ার হোসেন বাবলা।

এদিকে সরোয়ারের বাবা আবদুল কাদের সাংবাদিকদের জানান, তাঁর ছেলেকে প্রায়ই হুমকি দিতেন বিদেশে পলাতক সন্ত্রাসী সাজ্জাদ আলী, তাঁর সহযোগী সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদ, মো. রায়হান ও জিশানরা। গতকাল তাঁর বাড়ি থেকে ২০০ থেকে ৩০০ গজ দূরে রাস্তার পাশে দোকানে গণসংযোগ চালান বিএনপি নেতা এরশাদ উল্লাহ। একেবারে বাড়ির পাশে এসে কেউ তাঁকে হত্যা করবে, সে ব্যাপারে সতর্ক ছিলেন না বাবলা। পরিবারের সদস্যরাও তা কল্পনা করেননি।

আবদুল কাদের বলেন, ‘বাড়ির পাশে বায়তুন নুর জামে মসজিদে মাগরিবের নামাজে প্রথম কাতারে এরশাদ উল্লাহ, বাবলা দ্বিতীয় কাতারে ও আমি তৃতীয় কাতারে ছিলাম। নামাজ শেষে বের হওয়ার পরই সাত থেকে আট রাউন্ড গুলি। পরে দেখলাম, আমার ছেলে রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে পড়ে আছে। অটোরিকশায় করে হাসপাতালের পথে রওনা দিলাম ছেলেকে কোলে নিয়ে। তাড়াতাড়ি যাওয়ার জন্য মাঝপথে রিকশা ছেড়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় উঠে হাসপাতালে যাওয়ার আগেই আমার ছেলে আর নেই।’ পাঞ্জাবি ও লুঙ্গিতে লেগে থাকা ছোপ ছোপ রক্ত নিয়েই কথা বলছিলেন তিনি।

এদিকে পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি করার সময় মোবাইলে লাইভে ব্যস্ত যুবককে নিয়েও সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে। পিস্তল হাতে হামলাকারী যুবক লাইভে থাকা যুবককে ঠেলে সামনে হাত বাড়িয়ে বাবলাকে গুলি করেন।

এ বিষয়ে বাবলার ভাই আজিজকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘ভারতে অবস্থানরত সাজ্জাদ (বড় সাজ্জাদ) আমার ভাইকে গুলি করার দৃশ্য দেখতে চেয়েছিল। এটা হয়তো দেখাচ্ছিল ওই যুবক।’

ওই যুবকের পরিচয় সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি নেতা ইদ্রিস আলী বলেন, ‘ওই যুবক অতি উৎসাহী হয়ে লাইভ করতে পারেন। তবে তাকে আমরা চিনতে পারছি না।’

জানা গেছে, সরোয়ার হোসেন বাবলার লাশ ময়নাতদন্তের জন্য আজ সকালে ফ্রিজ থেকে বের করে মর্গে নেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে ঘটনার পর ওই এলাকায় দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। এলাকার পরিস্থিতি থমথমে। হত্যার সঙ্গে কারা জড়িত, সে বিষয়ে কেউ মুখ খুলতে রাজি নন। সবার মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। যে দোকানের ভেতরে বাবলাকে গুলি করা হয়েছে, সেটিও বন্ধ রয়েছে।

জানা গেছে, গতকাল মাগরিবের নামাজের পর বায়েজিদ বোস্তামী থানার চালিতাতলীর খন্দকারপাড়া এলাকায় নির্বাচনী জনসংযোগ করছিলেন চট্টগ্রাম-৮ আসনের বিএনপির প্রার্থী এরশাদ উল্লাহ। ‘চালিতাতলীর মাটি, এরশাদ ভাইয়ের ঘাঁটি’—এ ধরনের স্লোগানও চলছিল। একপর্যায়ে লিফলেট বিতরণের জন্য পাশের একটি দোকানে ঢোকেন এরশাদ উল্লাহ। তাঁর সঙ্গে ২০-২৫ জন নেতা-কর্মী ছিলেন। হত্যাকারীরা ওই নেতা-কর্মীদের বহরে ঢুকে মিশে যায়। হঠাৎ গুলির শব্দ। ছত্রভঙ্গ হয়ে যান নেতা-কর্মীরা। খুব কাছ থেকে ঘাড়ের নিচে পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি করা হয় বাবলাকে। গুলিবিদ্ধ হন এরশাদ উল্লাহসহ চারজন। এরশাদ উল্লাহসহ অন্যরা নগরের বেসরকারি হাসপাতাল এভারকেয়ারে চিকিৎসাধীন। তাঁরা আশঙ্কামুক্ত বলে জানিয়েছেন ওই হাসপাতালের জিএম রাম প্রসাদ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জমি নিয়ে সংঘর্ষ, একই পরিবারের সাজাপ্রাপ্ত ৯ আসামি গ্রেপ্তার

তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ) সংবাদদাতা
গ্রেপ্তার সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা। ছবি: সংগৃহীত
গ্রেপ্তার সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা। ছবি: সংগৃহীত

সিরাজগঞ্জের তাড়াশে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে সংঘর্ষের ঘটনায় করা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত একই পরিবারের ৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল বুধবার রাতে নিজ বাড়ি থেকে পুলিশ তাঁদের গ্রেপ্তার করে। তাড়াশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জিয়াউর রহমান এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন উপজেলার হেমনগর গ্রামের মো. আব্দুল করিম (৬০), মো. শাহ আলম (৪০), নুরুজ্জামান (৪৫), নুরুল আমিন (৪১), রুহুল আমিন (৪২), বাটুল হোসেন (৩৮), হাবিবুল্লাহ (৩৫), আরিফুল ইসলাম (৩২) ও স্বপন আলী (৩৬)। তাঁরা সবাই একই পরিবারের সদস্য বলে জানা গেছে।

মামলা সূত্রে জানা যায়, উপজেলার হেমনগর গ্রামে ১৮ শতাংশ জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে ২০১৮ সালে নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলা সদরের আশিক উল্লার সঙ্গে হেমনগর গ্রামের উল্লেখিত আসামিদের সংঘর্ষ হয়। এতে মামলার বাদী আশিক উল্লা গুরুতর জখম হন। তিনি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সিরাজগঞ্জ ফৌজদারি আদালতে মামলা দায়ের করেন। দীর্ঘ শুনানি শেষে বিজ্ঞ আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয়।

এ বিষয়ে পেশকার আশিকুর রহমান বলেন, আসামিরা পলাতক থাকায় তাঁদের বিরুদ্ধে আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। তাড়াশ থানার ওসি জিয়াউর রহমান বলেন, সাজাপ্রাপ্ত পরোয়ানাভুক্ত আসামিদের গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করা হয়। আইনি কার্যক্রম শেষে তাঁদের বৃহস্পতিবার বিকেলে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

লালমনিরহাটে তুলার গুদামে আগুন

লালমনিরহাট প্রতিনিধি 
তুলার গুদামে আগুন।  ছবি: সংগৃহীত
তুলার গুদামে আগুন। ছবি: সংগৃহীত

লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলায় একটি তুলার গুদামে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।

আজ বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) দুপুরে উপজেলার তুষভান্ডার ইউনিয়নের কাকিনা খাদ্যগুদাম এলাকার সালেমা অটোরাইস মিলের ভেতরে থাকা তুলার গোডাউনে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।

স্থানীয়রা জানায়, উপজেলার তুষভান্ডার ইউনিয়নের কাকিনা খাদ্যগুদাম এলাকার সালেমা অটোরাইস মিলের ভেতরে থাকা তুলার গুদামে হঠাৎ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে কালীগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের একটি ইউনিট দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। প্রায় এক ঘণ্টার চেষ্টায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হন।

ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী শেখ আলী আকবর ও আলমগীর হোসেন বলেন, চোখের সামনে সব পুড়ে ছাই হয়েছে। প্রায় ২০ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

কালীগঞ্জ উপজেলা ফায়ার সার্ভিসের লিডার সাইফুল ইসলাম জানান, তুলার গুদাম হওয়ায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। যে কারণে তুলাগুলো রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। ফায়ার সার্ভিসের ১টি ইউনিট নিরলস চেষ্টা করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনায় আশপাশের এলাকাসহ পাশে থাকা মূল খাদ্যগুদামটি রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত