Ajker Patrika

মন্ত্রী সুজনের স্বজনদের দাপট ছিল পঞ্চগড়জুড়ে

  • জেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে তাঁর ১০ স্বজন
  • দুই ভাতিজার ছিল সুদের ব্যবসা। চালাতেন টর্চার সেল
  • নির্যাতনের শিকার হয়েছেন স্থানীয় ইউপি সদস্যও
পঞ্চগড় প্রতিনিধি 
নূরুল ইসলাম সুজন। ছবি: সংগৃহীত
নূরুল ইসলাম সুজন। ছবি: সংগৃহীত

জেলা আওয়ামী লীগসহ এর সহযোগী সংগঠনে পরিবারতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, এলাকায় সিন্ডিকেট, জমি দখল, বিদ্যালয় কমিটি নিয়ন্ত্রণ, সুদ, জুয়া নিয়ন্ত্রণ; বিরুদ্ধমত দমন করতে নির্যাতন—সবই করেছেন তিনি। এ ছাড়া এলাকার অধিকাংশ স্থাপনাও করেছেন নিজ পরিবারের সদস্যদের নামে। বলা হচ্ছে সাবেক রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজনের কথা। সরকার পতনের পর তিনি গ্রেপ্তার হয়েছেন। এরপর নির্যাতিত অনেকে এখন মুখ খুলতে শুরু করেছেন।

সুজন ছিলেন পঞ্চগড় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। জেলার সর্বশেষ কমিটিতে তাঁর পরিবার ও স্বজন রয়েছেন ১০ জন। এ ছাড়া দলের সহযোগী সংগঠনগুলোও ছিল তাঁর কবজায়। তাঁদের অনেকে এখন এলাকাছাড়া।

আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে সুজন ক্ষমতার পাশাপাশি সম্পদ বাড়িয়েছেন বহুগুণ। কেবল হলফনামা অনুযায়ী গত ১৫ বছরে তাঁর অস্থাবর সম্পত্তি বেড়েছে প্রায় ৩২ গুণ। নির্বাচনী হলফনামায় দেখা যায়, ২০০৮ সালে তাঁর অস্থাবর সম্পদ ছিল প্রায় ৮ লাখ টাকা। ২০২৩ সালে এসে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় আড়াই কোটি টাকায়। তবে এলাকাবাসীর দাবি, এর বাইরে কয়েক শ গুণ সম্পদ আছে তাঁর।

সুজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক, পরে যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির আইনবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদকও ছিলেন তিনি। তাঁর বড় ভাই সিরাজুল ইসলাম বীর মুক্তিযোদ্ধা ও পঞ্চগড়ের সংসদ সদস্য ছিলেন। তাঁর হাত ধরে মূলত রাজনীতিতে আসা সুজনের। এরপর ২০০৮ সাল থেকে চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। গত ১৬ সেপ্টেম্বর সুজনকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর পুলিশ।

নাম নিয়ে টানাটানি

আওয়ামী লীগের আমলে ঐতিহাসিক পঞ্চগড় রেলস্টেশনের নামকরণ করেন ভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলামের নামে। পঞ্চগড় স্টেডিয়ামের নামকরণও করা হয় তাঁর ভাইয়ের নামে। বোদা উপজেলার বিলুপ্ত পুঁটিমারী ছিটমহলের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলামনগর। সরকার পতনের পর এসব স্থাপনার নাম বদলের দাবি উঠেছে।

ভাতিজার টর্চার সেল

সুজন মন্ত্রী হওয়ার পর থেকে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন তাঁর ভাইয়ের ছেলেরা এবং তাঁদের অনুসারীরা। স্থানীয়রা জানান, সুজনের চাচাতো ভাইয়ের দুই ছেলে রবিউল আওয়াল ডলার ও রাফিউল হাসান জানি এলাকায় চালিয়েছেন রামরাজত্ব। তাঁদের বিরুদ্ধে কেউ কিছু বললেই নেওয়া হতো টর্চার সেলে। পুড়িয়ে দেওয়া হতো ঘরবাড়ি। টর্চার সেলে নিয়ে লিখে নেওয়া হতো জমি। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, জানি ও ডলারের টর্চার সেলের মদদদাতা সুজন।

সুজনের এই দুই ভাতিজা করতেন সুদের ব্যবসা। সুদের ওপর টাকা দিয়ে সেই টাকা আদায়ের নামে চলত নির্যাতন। অনেকেই টাকা পরিশোধ করার পরও হারিয়েছেন জমি। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে সাইকেল মেকার হকিকুল নামের একজন আত্মহত্যাও করেছেন। তবে এরপরও থামেনি নির্যাতন।

বসানো হয়েছিল ছুরি

সুজনের এই দুই ভাতিজার কাছ থেকে সুদের টাকা নিয়েছিলেন রফিকুল (ছদ্মনাম)। টাকা পরিশোধও করেছিলেন। তবে এই দুজন দাবি করেন, তাঁদের টাকা দেওয়া হয়নি। এরপর রফিকুলকে ডেকে নেওয়া হয়। ভুক্তভোগীর স্ত্রী বলেন, তাঁকে ডেকে নিয়ে অজু করানোর পর কালেমা পড়িয়ে গলায় ছুরি বসানো হয়। কোনো উপায়ান্তর না পেয়ে নতুন করে আবার ৬ লাখ টাকার স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর দিয়ে প্রাণে রক্ষা পান রফিকুল।

আরেক ভুক্তভোগী হরিপুর এলাকার বাসিন্দা আব্বাস আলী। তিনি বলেন, ‘আমি তাঁদের কাছে সুদে টাকা নিয়েছিলাম ১ লাখ ৫ হাজার। ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা পরিশোধ করি। বছরখানেক পরে আবারও বড় অঙ্কের টাকা দাবি করে। আমাকে তাঁদের বাড়িতে নিয়ে ভয়ভীতি দেখান। আমার কাছে জোর করে ৫১ শতক জমি লিখে নেন তাঁরা।’

দৌলতপুর এলাকার মোকসেদ আলী বলেন, ‘জানি ও ডলারদের কাছে আমরা ৫ শতক জমি পাব। ওর বাবাও জমিটি আমাদের বুঝিয়ে দেন। কিন্তু ওই জমিতে চাষাবাদ করতে গেলে আমাদের ওপর হামলা করেন জানি ও ডলাররা। একপর্যায়ে তাঁরা সাবেক মন্ত্রী সুজনের কাছে বিচার দেন। আমাদের বাড়িতে পুলিশ পাঠালে আমরা সবাই পালিয়ে যাই। এই সুযোগে জানি ও ডলার আমাদের তিনটি বাড়ি আগুনে জ্বালিয়ে দেন।’

নির্যাতন থেকে বাদ পড়েননি জনপ্রতিনিধিও। ময়দানদীঘি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য ফজলুল হক বলেন, ‘আমি জানির কাছে ২ লাখ টাকা নিয়েছিলাম। এক বছরের মধ্যে টাকাটা পরিশোধ করি। আমি গ্রামীণ ব্যাংকে চাকরি করতাম। পেনশনের ১৪ লাখ টাকা ময়দানদীঘি রূপালী ব্যাংক শাখা থেকে তুলি। টাকাটা তুলতেই আমার হাত থেকে সব টাকা নিয়ে নেন জানি। পরে কিছু জমিও লিখে দিতে হয়।’

সরকার পতনের পর আত্মগোপনে চলে যাওয়ায় অভিযোগের বিষয়ে জানি ও ডলারের বক্তব্য জানা যায়নি।

জেলা আওয়ামী লীগকে ‘পরিবার লীগ’ বানিয়েছিলেন সুজন। মন্ত্রী থাকাকালে প্রভাব খাটিয়ে নিজে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হন। সর্বশেষ দলের কমিটিতে ঠাঁই হয় তাঁর ১০ স্বজনের। এ ছাড়া দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোও ছিল তাঁর কবজায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, সুজন পঞ্চগড় আওয়ামী লীগ শেষ করে দিয়েছেন। দলের মধ্যে বিভক্তি দলকে পুরোপুরি নষ্ট করে ফেলেছে।

সচিবদের প্রভাব

সুজন মন্ত্রী হওয়ার পর ‘জাদুর ছোঁয়া’ পেয়েছিলেন পিএস রাশেদ প্রধান ও এপিএস রেজাউল করিম রেজা। সুজন মন্ত্রী থাকাকালে রাশেদ প্রধানকেও করেন জেলা কমিটির কার্যকরী সদস্য। তাঁর মা সেলিনা বেগমকে করেন জেলা পরিষদের সদস্য। পরে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আমানুল্লাহ বাচ্চু মারা গেলে প্রভাব খাটিয়ে মাকে বসান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পদে।

এদিকে সুজনের ব্যক্তিগত সহকারী রেজাউল করিম রেজার বাবা ছিলেন দিনমজুর। সেই রেজাও কামিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। জেলার বিভিন্ন এলাকায় জমি রয়েছে ২৫ থেকে ৩৫ বিঘা। বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান রিফা এন্টারপ্রাইজের মালিকও এই রেজা। এই প্রতিষ্ঠান মাসে ৫০ থেকে ৬০ লাখ টাকার পণ্য আমদানি করে থাকে।

বিএনপির পল্লি উন্নয়ন সম্পাদক ফরহাদ হোসেন আজাদ বলেন, ফ্যাসিবাদ কায়েম করে কোনো ব্যক্তি বা কোনো দল চিরস্থায়ী হতে পারে না। দুর্নীতির অভয়ারণ্য করেছেন তিনি। শুধু রেল নয়, ওনার পরিবারের ভাই ও ভাইয়ের ছেলেরা একনায়কতন্ত্র কায়েম করেছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

অফিস দখল নিয়ে জুলাই রেভেলসের দুজনকে জখম

উত্তরা-বিমানবন্দর (ঢাকা) প্রতিনিধি 
জুলাই রেভেলস সংগঠনের সদস্যের ওপর হামলার ঘটনায় গ্রেপ্তার মো. মাসুম ও মো. ফাহিম খান। ছবি: বিজ্ঞপ্তি
জুলাই রেভেলস সংগঠনের সদস্যের ওপর হামলার ঘটনায় গ্রেপ্তার মো. মাসুম ও মো. ফাহিম খান। ছবি: বিজ্ঞপ্তি

রাজধানীর উত্তরায় ‘অফিস দখল’কে কেন্দ্র করে জুলাই রেভেলসের দুই সদস্যকে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। এ ঘটনায় মো. মাসুম ও ফাহিম খান নামের দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। দক্ষিণখান ফায়দাবাদ এলাকা থেকে রোববার (১৪ ডিসেম্বর) ভোর সাড়ে ৫টার দিকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।

এর আগে শনিবার (১৩ নভেম্বর) সন্ধ্যার পর উত্তরা ৮ নম্বর সেক্টরের পাবলিক কলেজ-সংলগ্ন জুলাই রেভেলসের অফিসে সংগঠনটির প্রস্তাবিত সহসংগঠক ইউসুফ আলী রেদওয়ান ও সদস্য মো. ইয়াসিনকে কুপিয়ে আহত করার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় শনিবার রাতেই ইউসুফ আলী রেদওয়ান বাদী হয়ে উত্তরা পূর্ব থানায় হত্যাচেষ্টার মামলা করেন।

এ বিষয়ে ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জানান, জুলাই রেভেলসের সদস্যদের ওপর হামলার ঘটনায় দক্ষিণখান থেকে মাসুম ও ফাহিম নামের দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি বলেন, মামলার সুষ্ঠু তদন্ত এবং এজাহারের অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জুলাই রেভেলসের সদস্যদের ওপর হামলার ‘মূল হোতা’ উত্তরা পূর্ব থানা শ্রমিক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ও শীর্ষ সন্ত্রাসী আলতাফ হোসেন ওরফে ঠোঁটকাটা আলতাফ। নেপথ্যে রয়েছে, জুলাই রেভেলস অফিসটি দখল। জানা গেছে, উত্তরা ৮ নম্বর সেক্টরের জুলাই রেভেলসের বর্তমান অফিসটি ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের আগে উত্তরা পূর্ব থানা শ্রমিক লীগের অফিস ছিল। সেটি নিয়ন্ত্রণ করত সন্ত্রাসী আলতাফ ওরফে ঠোঁটকাটা আলতাফ। তিনি দক্ষিণখানের ফায়দাবাদ এলাকার বাসিন্দা। তাঁর বিরুদ্ধে অস্ত্র, মাদক ও পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগসহ অন্তত ১০টি মামলা রয়েছে।

৫ আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর আলতাফ ও তাঁর নেতা-কর্মীরা পালিয়ে যান। এই সুযোগে শ্রমিক লীগের অফিসটি দখল করে ইউসুফ আলী রেদওয়ান ও তাঁর সংগঠনের লোকজন। পরে ওই অফিসে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ছবি টাঙিয়ে জুলাই রেভেলস নামের একটি সংগঠন করা হয়।

জানা যায়, সম্প্রতি আলতাফ ওরফে ঠোঁটকাটা আলতাফ উত্তরা বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আঁতাত করে প্রকাশ্যে আসেন। সেই সঙ্গে শ্রমিক লীগের অফিসটি দখল করে গড়া জুলাই রেভেলসের অফিসটি খালি করে দিতে বলেন। কিন্তু রেদওয়ান ও তাঁর সংগঠনের লোকজন এতে নারাজ ছিল; যা নিয়ে আলতাফ ও রেদওয়ানের মধ্যে বেশ কিছু দিন ধরে উত্তেজনা চলছিল। এর জের ধরেই আলতাফ ও তাঁর সহযোগীরা রেদওয়ানকে কুপিয়ে জখম করেন বলে অভিযোগ ওঠে।

উত্তরা পূর্ব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোর্শেদ আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘গত বছরের ৫ আগস্টের আগে এক কক্ষের অফিসটি ছিল শ্রমিক লীগের। শ্রমিক লীগের সেই অফিস দখল করে জুলাই রেভেলসের কার্যালয় করা হয়েছে। এদিকে শ্রমিক লীগের আলতাফ বিএনপির লোকজনের সঙ্গে মিল দিয়ে প্রকাশ্যে এসে ওই অফিস ফেরত চেয়েছিল। কিন্তু জুলাই রেভেলসের সদস্যরা সেটি না দেওয়ায় হামলার ঘটনা ঘটেছে।’

ওসি আরও জানান, আহত রেদওয়ান বাদী হয়ে আলতাফকে প্রধান আসামি করে ১১ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা ১৫-২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। হামলার অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া মাসুম ও ফাহিমও এজাহারভুক্ত আসামি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সরকারি সার অবৈধভাবে বিক্রি, চুয়াডাঙ্গায় ডিলারকে জরিমানা

চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি­
জব্দ করা সার। ছবি: আজকের পত্রিকা
জব্দ করা সার। ছবি: আজকের পত্রিকা

সরকারি সার অবৈধভাবে বিক্রির অপরাধে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় এক ডিলারকে ৫০ হাজার টাকা ও ক্রেতাকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

আজ রোববার (১৪ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ৮টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে এই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আমিনুল ইসলাম।

জানা গেছে, সদর উপজেলার পাঁচমাইল এলাকার এক বিএডিসির সারের ডিলার অবৈধ উপায়ে আলমডাঙ্গার বলেশ্বরপুর এলাকার তাওহীদ হোসেন নামের এক ব্যক্তির কাছে ডিএপি ১১ বস্তা ও এমওপি ৯ বস্তা সার বিক্রি করেন।

বিষয়টি গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পেরে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আমিনুল ইসলাম দ্রুত অভিযান চালিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাঁদের জরিমানা করেন।

ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার সময় বিএডিসি সার ডিলার মডার্ন অ্যাগ্রোর স্বত্বাধিকারী ইকবাল বিশ্বাসকে নগদ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। একই সঙ্গে অবৈধ উপায়ে সার কেনার অপরাধে ক্রেতা তাওহীদ হোসেনকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনায় সহযোগিতা করেন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আনিছুর রহমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বরিশালে বিএনপির ২ শতাধিক নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল
বিএনপি নেত্রী নাসরিনের ওপর সরোয়ার অনুসারীদের হামলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
বিএনপি নেত্রী নাসরিনের ওপর সরোয়ার অনুসারীদের হামলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

বরিশালে শহীদ বেদিতে ফুল দেওয়া নিয়ে হামলার ঘটনায় ২ শতাধিক বিএনপি নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দিয়েছেন নগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আফরোজা খানম নাসরিন।

রোববার (১৪ ডিসেম্বর) রাত ৯টার দিকে তিনি কোতোয়ালি মডেল থানায় অভিযোগ দেন। এর আগে দুপুরে ফুল দেওয়াকে কেন্দ্র করে হামলার শিকার হন নাসরিন।

কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মামুন উল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘ফুল দেওয়া নিয়ে ঝামেলা হয়েছে। সেই ইস্যুতে বিএনপির নেত্রী নাসরিন থানায় অভিযোগ দিয়েছেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’

জানা গেছে, অভিযোগে ১০ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ২০০ জনের কথা বলা হয়েছে। এদের অধিকাংশই ছাত্রদল, যুবদল ও বিএনপির নেতা-কর্মী।

জানতে চাইলে বিএনপির নেত্রী আফরোজা খানম নাসরিন জানান, তাঁর ওপর যারা হামলা করেছে, তাদের বিরুদ্ধে তিনি রোববার রাত ৯টার দিকে কোতোয়ালি থানায় অভিযোগ দিয়েছেন। ইতিমধ্যে তাদের নাম তিনি প্রকাশও করেছেন।

নাসরিনের অভিযোগ, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও বরিশাল-৫ (মহানগর-সদর) আসনের মনোনীত প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ারের অনুসারীরা তাঁর ওপর হামলা করেছে।

এ ব্যাপারে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুক জানান, রোববার দুপুরে ফুল দিয়ে তাঁরা যখন যাচ্ছেন, তখন বাইরে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নাসরিনের ঝামেলা হয়েছে। তবে কী হয়েছে জানেন না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: ফয়সালের স্ত্রীসহ আরও তিনজন গ্রেপ্তার

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩: ৩২
ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় প্রধান সন্দেহভাজন ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খানের শ্যালক শিপু, স্ত্রী সামিয়া ও বান্ধবী মারিয়া। ছবি: সংগৃহীত
ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় প্রধান সন্দেহভাজন ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খানের শ্যালক শিপু, স্ত্রী সামিয়া ও বান্ধবী মারিয়া। ছবি: সংগৃহীত

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদিকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় সন্দেহভাজন ফয়সাল করিম মাসুদের স্ত্রীসহ আরও তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। আজ রোববার (১৪ ডিসেম্বর) রাতে নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকা থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয় বলে এক বার্তায় জানিয়েছে পুলিশের বিশেষ এই ইউনিট।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন ফয়সালের স্ত্রী সামিয়া, তাঁর শ্যালক শিপু ও বান্ধবী মারিয়া।

র‍্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক ইন্তেখাব চৌধুরী জানান, সামিয়া ও শিপুকে নারায়ণগঞ্জ থেকে এবং মারিয়াকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি বলেন, গত শুক্রবার হাদিকে গুলির ঘটনার আগে ও পরে ফয়সালের সঙ্গে তাঁদের ফোনে ঘন ঘন যোগাযোগের তথ্য পাওয়া গেছে।

এ নিয়ে এ ঘটনায় র‍্যাব মোট চারজনকে গ্রেপ্তারের তথ্য জানিয়েছে। এর আগে গুলির সময় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক আব্দুল হান্নানকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাঁকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে পুলিশ তিন দিনের রিমান্ডে নেয়।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন গত শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) দুপুরে ঢাকার বিজয়নগর এলাকায় চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে করা গুলিতে গুরুতর আহত হন রিকশায় থাকা ওসমান হাদি। তাঁকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে অস্ত্রোপচারের পর তাঁকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে তিনি এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত জানা গেছে, হাদির শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল ও অপরিবর্তিত রয়েছে। আগামীকাল সোমবার দুপুরে একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হবে।

আজ রোববার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নির্দেশে সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়বিষয়ক বিশেষ সহকারী অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান, এভারকেয়ার হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জাফর, ওসমান হাদির ভাই ওমর বিন হাদির মধ্যে এক জরুরি কল কনফারেন্সে এ সিদ্ধান্ত নেন। পরে প্রেস উইং থেকে পাঠানো বিবৃতিতে এসব তথ্য জানানো হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, গত দুদিন ধরে ওসমান হাদির চিকিৎসার জন্য সরকার সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার কয়েকটি হাসপাতালে যোগাযোগ করেছে। আজ এভারকেয়ার হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দলের পরামর্শে ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনার পর প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করা হয়।

প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়বিষয়ক বিশেষ সহকারী অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান প্রধান উপদেষ্টাকে জানান, বর্তমানে ওসমান হাদির শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল ও অপরিবর্তিত রয়েছে।

আগামীকাল দুপুরে ওসমান হাদিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে পাঠানো হবে। এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় এয়ার অ্যাম্বুলেন্স, চিকিৎসক দল ও ভ্রমণসংক্রান্ত সব প্রস্তুতি ইতিমধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে। সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের অ্যাকসিডেন্ট ইমার্জেন্সি বিভাগে তাঁর চিকিৎসার সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

ওসমান হাদির চিকিৎসাসংক্রান্ত সব ব্যয় রাষ্ট্রীয়ভাবে বহন করা হবে। তাঁর চিকিৎসাপ্রক্রিয়া সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন ড. ইউনূস।

ওসমান হাদির দ্রুত সুস্থতা কামনায় দেশবাসীর কাছে দোয়া ও প্রার্থনা চেয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত