Ajker Patrika

খুলনার নতুন জেলা কারাগার

ব্যয় বেড়ে দ্বিগুণ, কাজ শেষ হয়নি ৯ বছরেও

  • নগরীর ভৈরব নদের তীরে ১১৩ বছরের পুরোনো খুলনা কারাগারে বর্তমানে ধারণক্ষমতার দ্বিগুণ বন্দী আছেন।
  • প্রায় ৩০ একর জমির ওপর গণপূর্ত বিভাগের তত্ত্বাবধানে নতুন কারাগার নির্মাণ করা হচ্ছে।
কাজী শামিম আহমেদ, খুলনা
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

খুলনার নতুন জেলা কারাগার নির্মাণ প্রকল্পের ব্যয় বেড়েছে দ্বিগুণ এবং দফায় দফায় সময় বাড়ানো হয়েছে আটবার। কিন্তু এর নির্মাণকাজ গত ৯ বছরেও শেষ হয়নি। কাজ চলছে ধীরগতিতে। মাটি ভরাট বাকি থাকাসহ কিছু ভবন অসম্পূর্ণ রয়েছে। ফলে গত মে এবং পরে জুলাই মাসে সময় নির্ধারণ করা হলেও গণপূর্ত বিভাগ কারাগারটি কারা কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করতে পারেনি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নগরীর ভৈরব নদের তীরে ১১৩ বছরের পুরোনো খুলনা কারাগারে বর্তমানে ধারণক্ষমতার দ্বিগুণ বন্দী আছেন। সেখানে জরাজীর্ণ ভবনে ঝুঁকি নিয়ে থাকতে হচ্ছে বন্দীদের। তাই খুলনার সিটি (রূপসা সেতু) বাইপাস সড়কের জয়বাংলা মোড়ের অদূরে প্রায় ৩০ একর জমির ওপর গণপূর্ত বিভাগের তত্ত্বাবধানে নতুন কারাগার নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে পরিকল্পনা অনুযায়ী ৪ হাজার বন্দী থাকতে পারবেন। তবে আপাতত ২ হাজার বন্দী রাখার অবকাঠামো তৈরি হচ্ছে। পরে প্রয়োজন পড়লে পৃথক প্রকল্প নিয়ে অন্য অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে।

এই নতুন কারাগার নির্মাণের প্রকল্প ২০১১ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন হয়। ব্যয় ধরা হয় ১৪৪ কোটি টাকা। স্থান নির্ধারণ, জমি অধিগ্রহণসহ সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালের জুনে। এরপর ২০১৭ সালে প্রকল্প সংশোধন করলে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ২৫১ কোটি টাকা এবং কাজ শেষের লক্ষ্য নেওয়া হয় ২০১৯ সালের ৩০ জুন। কিন্তু তা আর হয়নি। ২০২৩ সালে ফের প্রকল্প সংশোধন করলে ব্যয় বেড়ে হয় ২৮৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে সময় বাড়ানো হয় মোট আটবার।

প্রকল্প অফিস থেকে জানা গেছে, নতুন এ কারাগার নির্মাণ হচ্ছে সংশোধনাগার হিসেবে। এখানে বিচারাধীন ও সাজাপ্রাপ্ত বন্দীদের পৃথক স্থানে রাখা হবে। কিশোর ও কিশোরী বন্দীদের জন্য রয়েছে পৃথক ব্যারাক। নারীদের জন্য পৃথক হাসপাতাল, মোটিভেশন সেন্টার ও ওয়ার্ক শেড থাকছে। একইভাবে বন্দীদের জন্য ৫০ শয্যার হাসপাতাল থাকবে। আরও থাকবে কারারক্ষীদের সন্তানদের জন্য স্কুল, বিশাল গ্রন্থাগার, খাবার কক্ষ, আধুনিক সেলুন ও লন্ড্রি। কারাগারে শিশুসন্তানসহ নারী বন্দীদের জন্য থাকবে পৃথক ওয়ার্ড ও ডে-কেয়ার সেন্টার। এ ওয়ার্ডে সাধারণ নারী বন্দী থাকতে পারবেন না। সেখানে শিশুদের জন্য লেখাপড়া, খেলাধুলা, বিনোদন ও সংস্কৃতিচর্চার ব্যবস্থা থাকবে। কারাগারে পুরুষ ও নারী বন্দীদের হস্তশিল্পের কাজের জন্য আলাদা আলাদা ওয়ার্ক শেড, বিনোদনকেন্দ্র ও নামাজের ঘর থাকবে।

এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার খুলনা জেলা কারাগারের সুপার মো. নাসির উদ্দিন প্রধান, জেলার মো. মুনীর হুসাইনসহ অন্য কর্মকর্তারা নবনির্মিত কারাগার পরিদর্শনে যান। এ সময় তাঁরা কাজের ধীরগতি দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং দ্রুত কাজ শেষ করার তাগিদ দেন।

গতকাল কারাগার ঘুরে দেখা গেছে, বন্দীদের প্রতিটি ব্যারাকের চারপাশে পৃথক সীমানাপ্রাচীর রয়েছে। এক শ্রেণির বন্দীদের অন্য শ্রেণির বন্দীদের সঙ্গে মেশার সুযোগ নেই। ভেতরে শুধু প্রাচীরই রয়েছে প্রায় ৫ কিলোমিটার। এ ছাড়া ড্রেন, ফুটপাত, পয়োবর্জ্য শোধনকেন্দ্র, ওয়াকওয়ে, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা, দুটি পুকুর ও সৌরবিদ্যুতের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তবে মাটি ভরাটকাজ হয়নি। কিছু ভবনের কাজ অসম্পূর্ণ রয়েছে।

এ নিয়ে কথা হলে জেলার মুনীর বলেন, ‌‘আমরা নতুন কারাগার পরিদর্শনে গিয়ে দেখতে পাই, মাটি ভরাটের কাজ এখনো শেষ হয়নি। এটি দ্রুত করা না হলে বসবাস করা সম্ভব নয়। অনেক কাজ বাকি আছে। কিছু ভবনের কাজ এখনো শেষ হয়নি। পূর্ণাঙ্গ কাজ শেষ না হলে আমরা হস্তান্তর প্রক্রিয়ায় যাব না। গত জুলাই মাসে কারাগারটি হস্তান্তর করার কথা ছিল। কিন্তু কাজের যে গতি, তাতে আরও কয়েক মাস লাগবে।’

জানতে চাইলে গণপূর্ত বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী রাশিদুল ইসলাম জানান, কারাগারে ৫২টি স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে। আরও কিছু কাজ বাকি রয়েছে। কাজ চলমান। তাঁরা দ্রুত কাজ শেষ করার চেষ্টা করছেন।

কাজের ধীরগতি সম্পর্কে রাশিদুল বলেন, করোনা মহামারির কারণে কাজ বন্ধ থাকায় প্রকল্প বাস্তবায়নে দেরি হয়েছে। আশা করি চলতি বছরের মধ্যে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শেষ হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

চাকরির নামে মিরপুর-শেওড়াপাড়ায় বাসায় ডেকে নারীর সঙ্গে ভিডিও ধারণের পর টাকা হাতিয়ে নিত ‘হানি ট্র্যাপ’ চক্র

দনবাস চান পুতিন—ন্যাটো তো নয়ই, পশ্চিমা সেনাও থাকবে না ইউক্রেনে

দুস্থদের ৩৪ লাখ টাকা নিয়ে লাপাত্তা মোহনগঞ্জ সমাজসেবা কর্মকর্তা

তথ্য যাচাইয়ের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করবেন—ইউটিউব চ্যানেলে সিইসির বার্তা

ফরিদপুরে চিকিৎসকের ওপর হামলার প্রতিবাদে সেবা বন্ধের ঘোষণা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত