Ajker Patrika

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়: শিক্ষকের পদোন্নতিতে শর্ত ভঙ্গের অভিযোগ

  • সহকারী অধ্যাপক হিসেবে ৫ বছরের অভিজ্ঞতা প্রয়োজন হলেও তাঁর রয়েছে ২ বছর ৪ মাস
  • আজকের সিন্ডিকেটে পদোন্নতির বিষয়টি চূড়ান্ত হওয়ার কথা
  • শর্ত পূরণ না হওয়ায় পদোন্নতিতে বাদ সেধেছেন পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান
নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের একজন শিক্ষককে সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেওয়ার সব আয়োজন চূড়ান্ত হয়েছে। আজ শনিবার ববির ৯১তম সিন্ডিকেটের ১৬টি অ্যাজেন্ডার মধ্যে পঞ্চম এবং ষষ্ঠ অ্যাজেন্ডায় রাখা হয়েছে বিষয়টি। কিন্তু এতে বাদ সেধেছেন খোদ বিভাগীয় প্রধান ড. রহিমা নাসরিন। তাঁর দাবি, পদোন্নতির শর্ত পূরণ না হলেও তাঁকে দেওয়া হচ্ছে পদোন্নতি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা অনুযায়ী একজন সহকারী অধ্যাপক ৫ বছর পর সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পাওয়ার কথা। কিন্তু পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ড. মো. লোকমান হোসেনের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে অভিজ্ঞতা ২ বছর ৪ মাস ৩ দিন। এ ছাড়া ১ বছর আগে শিক্ষাছুটি নিয়ে ড. লোকমান তথ্য গোপন করায় তদন্ত কমিটিও গঠিত হয়েছে।

অভিযোগ উঠেছে, পদোন্নতির শর্ত ভঙ্গ এবং তথ্য গোপন করা সত্ত্বেও ড. লোকমানের পদোন্নতির বিষয়টি তড়িঘড়ি করে আজকের ৯১তম সিন্ডিকেট সভায় তুলছেন উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ তৌফিক আলম। সিন্ডিকেটের ১৬টি অ্যাজেন্ডার মধ্যে পঞ্চম এবং ষষ্ঠ অ্যাজেন্ডা ড. লোকমান হোসেনের পদোন্নতিবিষয়ক।

ববি সিন্ডিকেটের দায়িত্বশীল এক সদস্য বলেন, সিন্ডিকেটের দুটি অ্যাজেন্ডাই ড. লোকমানকেন্দ্রিক হওয়ায় মনে হচ্ছে, এটা নিয়ে কর্তৃপক্ষের আগ্রহ অতিমাত্রায়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন কমিটির (পিঅ্যান্ডডি) সদস্য সহকারী অধ্যাপক ড. মো. আরিফ উল ইসলাম। তিনি গত ১৪ সেপ্টেম্বর বিভাগীয় প্রধানের কাছে লোকমান হাকিমের পদোন্নতি-সংক্রান্ত মতামতের পর্যবেক্ষণে উল্লেখ করেছেন, ‘সহকারী অধ্যাপক হিসেবে ড. লোকমান হাকিমের অভিজ্ঞতা ২ বছর ৪ মাস ৩ দিন। কিন্তু সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতির জন্য আপগ্রেডেশন বিধি অনুযায়ী ন্যূনতম ৫ বছর অভিজ্ঞতা প্রয়োজন। তিনি পদোন্নতির শর্ত পূরণ করেননি। তিনি পিএইচডি নথিভুক্তকরণ চিঠি দাখিল করেননি। তিনি যোগদানের আনুষ্ঠানিক চিঠিও প্রদান করেননি। উপরোক্ত বিষয় বিবেচনা করে আপগ্রেডেশন বিধি অনুযায়ী ড. লোকমান হোসেনকে সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতির সুপারিশ করা গেল না।’

এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক ড. আরিফ উল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুযায়ী সহকারী অধ্যাপক লোকমান হোসেনের পদোন্নতির সময় হয়নি। তবে পিঅ্যান্ডডি মতামত পরিবর্তনের জন্য নানা দিক থেকে চাপ আসছে।’

এদিকে সহকারী অধ্যাপক ড. মো. লোকমান হোসেন বলেন, ‘আমি ১০ বছর আগে ববিতে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেছি। সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতির যোগ্যতা অনেক আগেই হয়েছে। কিন্তু বিভাগীয় প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ড. রহিমা নাসরিন পিঅ্যান্ডডি ছাড়ছেন না। ব্যক্তিগত রেষারেষির কারণে বিভাগীয় প্রধানসহ দুজন শিক্ষক আমার পদোন্নতিকে বাধাগ্রস্ত করছেন।’ তিনি দাবি করেন, পদোন্নতির সঙ্গে শিক্ষাছুটি বেশি ভোগ করার কোনো সম্পর্ক নেই। বিভাগীয় প্রধানই পদোন্নতির নীতিমালা মানছেন না।

এদিকে, ২০২৪ সালের ১৬ মে ড. লোকমান হোসেনের অর্জিত পিএইচডি ডিগ্রির সনদ নথিভুক্তকরণে আরোপিত শর্তের ব্যাখ্যা যাচাইয়ে ৪ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির দায়িত্বশীল এক সদস্য জানান, প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, শিক্ষাছুটির ৯ মাস পর ড. লোকমান যোগদান করায় ৯ মাসের মধ্যে ৩ মাস গ্রহণ করে বাকি ৬ মাস সাধারণ ছুটির জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে।

এসব বিষয়ে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ড. রহিমা নাসরিন বলেন, ‘যে কারও চাকরির অভিজ্ঞতা কাউন্ট করতে হবে নিয়োগপত্রের যোগদান অনুযায়ী। ড. লোকমানের নিয়োগপত্রে লেখা আছে, শিক্ষাছুটি শেষে কাজে যোগদানের তারিখ থেকে তাঁর নিয়োগ কার্যকর হবে। সে ক্ষেত্রে আপগ্রেডেশন নীতিমালা অনুযায়ী তাঁর অভিজ্ঞতা মাত্র ২ বছর ৪ মাসের।’

ড. রহিমা নাসরিন দাবি করেন, ড. লোকমানের সঙ্গে তাঁর কোনো রেষারেষি নেই, নীতিমালও ভঙ্গ করেননি। ড. রহিমা বলেন, তিনি বিব্রত হয়ে গত বৃহস্পতিবার রেজিস্ট্রার দপ্তরে চিঠি দিয়ে শিক্ষকদের চাকরির অভিজ্ঞতার সময়কাল জানতে চেয়েছেন।

ববির রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মুহসিন উদ্দীন বলেন, ড. লোকমান হাকিম পদোন্নতি চেয়ে আবেদন করেছেন। সে অনুযায়ী পিঅ্যান্ডডি চাওয়া হয়েছে।

শিক্ষাছুটির বিষয়ে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন প্রসঙ্গে রেজিস্ট্রার বলেন, ড. লোকমান হাকিম তাঁর পিএইচডি শেষে যোগদানের বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়েছিলেন। ওই ব্যাখ্যা খতিয়ে দেখা হয়েছিল। তবে এটিকে তদন্ত কমিটি মানতে নারাজ। ড. লোকমানের বিষয়টি সিন্ডিকেটে তোলা হচ্ছে কি না, এ প্রসঙ্গে রেজিস্ট্রার বলেন, সিন্ডিকেট সভার আগে অ্যাজেন্ডা প্রকাশ করবেন না।

এ ব্যাপারে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ তৌফিক আলমকে কয়েকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিসিএসে পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফর নিয়ে প্রশ্ন, নেই মুক্তিযুদ্ধ

যুক্তরাষ্ট্রে ভয়াবহ বিস্ফোরণ, নিহত ও নিখোঁজ বহু

‘কারা লুঙ্গি তুলে চেক করে মানুষ মেরেছে, তা সবারই জানা’

স্বামীকে হত্যার পর ইয়াবা সেবন করে লাশ টুকরো করেন স্ত্রী ও প্রেমিক

ইসলামি তালেবান ও হিন্দুত্ববাদী বিজেপির ঘেঁষাঘেঁষি কিসের আলামত

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত