আজকের পত্রিকা ডেস্ক
আফগানিস্তানের তালেবান সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি এক সপ্তাহের রাষ্ট্রীয় সফরে ভারতে পৌঁছেছেন। ২০২১ সালে ক্ষমতা দখলের পর এটি তালেবানের সবচেয়ে বড় কোনো উচ্চপর্যায়ের সফর। মুত্তাকি তাঁর আট দিনের অবস্থানকালে ভারতীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে কূটনৈতিক, বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করবেন।
এই অকল্পনীয় সফরকে ভারতের আফগানিস্তান নীতির বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত হিসেবে দেখা হচ্ছে। আজ শুক্রবার মুত্তাকির সঙ্গে ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের বৈঠকের পর দিল্লি ঘোষণা করেছে, তারা চার বছর পর কাবুলে নিজেদের দূতাবাস পুনরায় খুলবে। ভারতের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তান এ সফর ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। ঐতিহাসিকভাবে তালেবানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ মিত্রতার ইতিহাস রয়েছে পাকিস্তানের। যদিও তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানকে (টিটিপি) ঘিরে কিছু বৈরিতাও বিদ্যমান।
জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা সাময়িকভাবে শিথিল করার পর মুত্তাকি রাশিয়া থেকে দিল্লিতে পৌঁছান। উল্লেখ্য যে, রাশিয়াই এখন পর্যন্ত তালেবান সরকারকে সম্পূর্ণভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, ইসলামাবাদ, দিল্লি কিংবা তালেবান কেউই ভাবেনি যে ক্ষমতা দখলের এত অল্প সময়ের মধ্যে তালেবানের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক এমন পর্যায়ে খারাপ হবে আর ভারত তালেবান সরকারের সঙ্গে বহুপক্ষীয় সম্পর্ক গড়ে তুলবে।
একসময় ভারত পশ্চিমা-সমর্থিত আফগান প্রজাতন্ত্র সরকারের মিত্র ছিল, যাদের তালেবান ক্ষমতাচ্যুত করে। তাই এ সফর উভয় পক্ষের বাস্তববাদী অবস্থান ও কৌশলগত সম্পর্ক জোরদারের আগ্রহকে স্পষ্ট করেছে।
মুত্তাকি আফগান পররাষ্ট্র ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে আজ দিল্লিতে জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠক করেন। জয়শঙ্কর বলেন, ‘আমাদের ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা আফগানিস্তানের জাতীয় উন্নয়ন, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও দুই দেশের সম্পর্ক আগের অবস্থানে নিয়ে যেতে অবদান রাখবে।’ তিনি আফগানিস্তানের ‘সার্বভৌমত্ব, ভৌগোলিক অখণ্ডতা ও স্বাধীনতা’ রক্ষায় ভারতের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
অন্যদিকে মুত্তাকি ভারতকে ‘ঘনিষ্ঠ বন্ধু’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, এ সফর দুই দেশের সম্পর্ক উন্নত করবে। আফগান প্রতিনিধিদল ভারতীয় ব্যবসায়ী মহলের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করবে।
অপ্রত্যাশিত মিত্রতার সেতুবন্ধন
ভারত যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দেয়নি, তবু অনেক দেশের মতো তাদের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রেখেছে। বর্তমানে কাবুলে ভারতের একটি ছোট মিশন রয়েছে এবং ভারত আফগানিস্তানে মানবিক সহায়তা পাঠাচ্ছে।
ক্ষমতা পুনরুদ্ধারের কিছুদিন পর থেকে ইসলামপন্থী তালেবানের সঙ্গে হিন্দু জাতীয়তাবাদী বিজেপি সরকারের সম্পর্ক গড়ে উঠতে শুরু করে। সর্বশেষ টিটিপিকে ঘিরে আফগানিস্তান-পাকিস্তানের সম্পর্কে টানাপোড়েন ও সীমান্তে ভারত-পাকিস্তানের খণ্ড যুদ্ধের পর এ রাষ্ট্রীয় সফর হলো।
অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের গবেষক হর্ষ ভি পন্ত ও শিভম শেখাওয়াত ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভিতে লিখেছেন, পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েনের ফলে তালেবান ইসলামাবাদনির্ভরতা থেকে বেরিয়ে আসছে ও নিজস্ব কৌশলগত অবস্থান জোরদার করছে। একই সঙ্গে ভারতের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক সৃষ্টি করে তালেবান নিজ দেশের জনগণের কাছে বৈধ সরকার হয়ে ওঠার আবহ তৈরি করছে।
কৌশলগত সম্পর্ক বিশ্লেষক ব্রহ্মা চেলানি এক্সে বলেছেন, এ সফর পাকিস্তানের জন্য একটি বড় ধাক্কা এবং তালেবান সরকারের স্বীকৃতির পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এটি সতর্কতার সঙ্গে ভারত-তালেবান সম্পর্ক ‘পুনর্নির্মাণের’ ইঙ্গিত, যেখানে দুই পক্ষই নিজেদের কৌশলগত স্বার্থ অগ্রাধিকার দিচ্ছে।
চার বছরে নাটকীয় পরিবর্তন
মাত্র চার বছর আগে এ দৃশ্য কল্পনাতীত ছিল। ২০২১ সালের ১৫ আগস্ট তালেবান কাবুল দখল করলে ভারত তার দূতাবাস ও চারটি কনস্যুলেট বন্ধ করে দেয়, আফগানদের প্রায় সব ভিসা বাতিল করে দেয় এবং কড়া নিরাপত্তা সতর্কতা জারি করে।
তবে এক বছরের মধ্যেই ভারত কাবুলে একটি ‘টেকনিক্যাল টিম’ পাঠায়, যারা মানবিক সহায়তা কার্যক্রম তদারকি করে। এর পর থেকে প্রভাবশালী তালেবান নেতাদের ভিসা দেওয়া শুরু হয়। এসব অঘোষিত সফরের মাধ্যমে আস্থা ও যোগাযোগ গড়ে ওঠে।
২০২৪ সালের নভেম্বরে ভারত তালেবানকে দিল্লিতে দূত পাঠানোর এবং মুম্বাই ও হায়দরাবাদে কনস্যুলেট খোলার অনুমতি দেয়। এর পর থেকে উভয় পক্ষ ধীরে ধীরে সম্পর্ক পুনর্গঠন করছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে দুবাইয়ে মুত্তাকি ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রির সঙ্গে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করেন।
প্রভাব বিস্তারের লড়াই
আফগানিস্তান নিয়ে ভারত ও পাকিস্তান দীর্ঘদিন ধরে প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। যেখানে এক পক্ষের প্রভাব বাড়া মানে অপর পক্ষের প্রভাব কমে যাওয়া। ১৯৯৪ সালের জন্মলগ্ন থেকে তালেবানের সঙ্গে পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। ঐতিহাসিক এ ঘনিষ্ঠতার কারণে ভারত সব সময় এই গোষ্ঠীকে ইসলামাবাদের প্রক্সি হিসেবে দেখত। ২০০১ সালে তালেবানের পতনের আগপর্যন্ত ভারত রাশিয়া ও ইরানের সঙ্গে তালেবানবিরোধী গোষ্ঠীগুলোর সমর্থক ছিল।
পরবর্তী ২০ বছর ভারত আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ও যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত আফগান সরকারের অন্যতম বড় পৃষ্ঠপোষক ছিল। এ দীর্ঘ সময় তালেবানসহ বিভিন্ন জঙ্গিগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে লড়েছে আফগান প্রজাতন্ত্র সরকার।
অন্যদিকে পাকিস্তান ১৯৯৬-২০০১ সালে তালেবানের প্রথম শাসনকাল ও দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় ফেরার শুরুতে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখলেও সাম্প্রতিক সময়ে দুই দেশের সম্পর্কে টানাপোড়েন বেড়েছে। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রীসহ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা প্রকাশ্যে আফগানিস্তানকে ‘শত্রু রাষ্ট্র’ পর্যন্ত আখ্যা দিয়েছেন।
ইসলামাবাদ অভিযোগ করছে, আফগানিস্তানের তালেবান সরকার পাকিস্তানি তালেবানকে (টিটিপি) নিজেদের ভূখণ্ড ব্যবহার করে পাকিস্তানে হামলা চালানোর সুযোগ দিচ্ছে। এ কারণে পাকিস্তান আফগান ভূখণ্ডে টিটিপি ঘাঁটি লক্ষ্য করে বিমান হামলাও চালিয়েছে। তালেবান এসব অভিযোগ বারবার প্রত্যাখ্যান করেছে এবং পাল্টা অভিযোগে বলেছে, পাকিস্তানের কিছু মহল আফগানিস্তানকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে।
ভারতের তালেবানের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখার মূল কারণ এর জাতীয় স্বার্থ। দিল্লির সবচেয়ে বড় উদ্বেগ নিরাপত্তা, বিশেষত ইসলামিক স্টেট, আল-কায়েদা ও ভারতকেন্দ্রিক অন্যান্য জঙ্গিগোষ্ঠীর কর্মকাণ্ড। তালেবান ভারতকে আশ্বাস দিয়েছে যে, আফগান মাটি কখনো ভারতের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে ব্যবহৃত হবে না। এই অবস্থান আজ তালেবান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি আবারও পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
তালেবানের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করা ভারতের জন্য আরও একটি কৌশলগত পদক্ষেপ। চীন ও পাকিস্তানের প্রভাবকে মোকাবিলা করতে ইরান ও মধ্য এশিয়ার সঙ্গে সংযোগ গভীর করতে চায় দেশটি।
তবে সম্পর্ক যতই গভীর হোক না কেন, দুই পক্ষই সতর্ক অবস্থান বজায় রেখেছে। অতীতের ঘটনার কারণে পারস্পরিক সন্দেহ, অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিবেচনা ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়ার আশঙ্কায় ভারত-তালেবান সম্পর্ক এখনো কৌশলগত পর্যায়েই সীমাবদ্ধ।
আফগানিস্তানের তালেবান সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি এক সপ্তাহের রাষ্ট্রীয় সফরে ভারতে পৌঁছেছেন। ২০২১ সালে ক্ষমতা দখলের পর এটি তালেবানের সবচেয়ে বড় কোনো উচ্চপর্যায়ের সফর। মুত্তাকি তাঁর আট দিনের অবস্থানকালে ভারতীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে কূটনৈতিক, বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করবেন।
এই অকল্পনীয় সফরকে ভারতের আফগানিস্তান নীতির বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত হিসেবে দেখা হচ্ছে। আজ শুক্রবার মুত্তাকির সঙ্গে ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের বৈঠকের পর দিল্লি ঘোষণা করেছে, তারা চার বছর পর কাবুলে নিজেদের দূতাবাস পুনরায় খুলবে। ভারতের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তান এ সফর ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। ঐতিহাসিকভাবে তালেবানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ মিত্রতার ইতিহাস রয়েছে পাকিস্তানের। যদিও তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানকে (টিটিপি) ঘিরে কিছু বৈরিতাও বিদ্যমান।
জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা সাময়িকভাবে শিথিল করার পর মুত্তাকি রাশিয়া থেকে দিল্লিতে পৌঁছান। উল্লেখ্য যে, রাশিয়াই এখন পর্যন্ত তালেবান সরকারকে সম্পূর্ণভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, ইসলামাবাদ, দিল্লি কিংবা তালেবান কেউই ভাবেনি যে ক্ষমতা দখলের এত অল্প সময়ের মধ্যে তালেবানের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক এমন পর্যায়ে খারাপ হবে আর ভারত তালেবান সরকারের সঙ্গে বহুপক্ষীয় সম্পর্ক গড়ে তুলবে।
একসময় ভারত পশ্চিমা-সমর্থিত আফগান প্রজাতন্ত্র সরকারের মিত্র ছিল, যাদের তালেবান ক্ষমতাচ্যুত করে। তাই এ সফর উভয় পক্ষের বাস্তববাদী অবস্থান ও কৌশলগত সম্পর্ক জোরদারের আগ্রহকে স্পষ্ট করেছে।
মুত্তাকি আফগান পররাষ্ট্র ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে আজ দিল্লিতে জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠক করেন। জয়শঙ্কর বলেন, ‘আমাদের ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা আফগানিস্তানের জাতীয় উন্নয়ন, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও দুই দেশের সম্পর্ক আগের অবস্থানে নিয়ে যেতে অবদান রাখবে।’ তিনি আফগানিস্তানের ‘সার্বভৌমত্ব, ভৌগোলিক অখণ্ডতা ও স্বাধীনতা’ রক্ষায় ভারতের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
অন্যদিকে মুত্তাকি ভারতকে ‘ঘনিষ্ঠ বন্ধু’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, এ সফর দুই দেশের সম্পর্ক উন্নত করবে। আফগান প্রতিনিধিদল ভারতীয় ব্যবসায়ী মহলের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করবে।
অপ্রত্যাশিত মিত্রতার সেতুবন্ধন
ভারত যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দেয়নি, তবু অনেক দেশের মতো তাদের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রেখেছে। বর্তমানে কাবুলে ভারতের একটি ছোট মিশন রয়েছে এবং ভারত আফগানিস্তানে মানবিক সহায়তা পাঠাচ্ছে।
ক্ষমতা পুনরুদ্ধারের কিছুদিন পর থেকে ইসলামপন্থী তালেবানের সঙ্গে হিন্দু জাতীয়তাবাদী বিজেপি সরকারের সম্পর্ক গড়ে উঠতে শুরু করে। সর্বশেষ টিটিপিকে ঘিরে আফগানিস্তান-পাকিস্তানের সম্পর্কে টানাপোড়েন ও সীমান্তে ভারত-পাকিস্তানের খণ্ড যুদ্ধের পর এ রাষ্ট্রীয় সফর হলো।
অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের গবেষক হর্ষ ভি পন্ত ও শিভম শেখাওয়াত ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভিতে লিখেছেন, পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েনের ফলে তালেবান ইসলামাবাদনির্ভরতা থেকে বেরিয়ে আসছে ও নিজস্ব কৌশলগত অবস্থান জোরদার করছে। একই সঙ্গে ভারতের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক সৃষ্টি করে তালেবান নিজ দেশের জনগণের কাছে বৈধ সরকার হয়ে ওঠার আবহ তৈরি করছে।
কৌশলগত সম্পর্ক বিশ্লেষক ব্রহ্মা চেলানি এক্সে বলেছেন, এ সফর পাকিস্তানের জন্য একটি বড় ধাক্কা এবং তালেবান সরকারের স্বীকৃতির পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এটি সতর্কতার সঙ্গে ভারত-তালেবান সম্পর্ক ‘পুনর্নির্মাণের’ ইঙ্গিত, যেখানে দুই পক্ষই নিজেদের কৌশলগত স্বার্থ অগ্রাধিকার দিচ্ছে।
চার বছরে নাটকীয় পরিবর্তন
মাত্র চার বছর আগে এ দৃশ্য কল্পনাতীত ছিল। ২০২১ সালের ১৫ আগস্ট তালেবান কাবুল দখল করলে ভারত তার দূতাবাস ও চারটি কনস্যুলেট বন্ধ করে দেয়, আফগানদের প্রায় সব ভিসা বাতিল করে দেয় এবং কড়া নিরাপত্তা সতর্কতা জারি করে।
তবে এক বছরের মধ্যেই ভারত কাবুলে একটি ‘টেকনিক্যাল টিম’ পাঠায়, যারা মানবিক সহায়তা কার্যক্রম তদারকি করে। এর পর থেকে প্রভাবশালী তালেবান নেতাদের ভিসা দেওয়া শুরু হয়। এসব অঘোষিত সফরের মাধ্যমে আস্থা ও যোগাযোগ গড়ে ওঠে।
২০২৪ সালের নভেম্বরে ভারত তালেবানকে দিল্লিতে দূত পাঠানোর এবং মুম্বাই ও হায়দরাবাদে কনস্যুলেট খোলার অনুমতি দেয়। এর পর থেকে উভয় পক্ষ ধীরে ধীরে সম্পর্ক পুনর্গঠন করছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে দুবাইয়ে মুত্তাকি ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রির সঙ্গে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করেন।
প্রভাব বিস্তারের লড়াই
আফগানিস্তান নিয়ে ভারত ও পাকিস্তান দীর্ঘদিন ধরে প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। যেখানে এক পক্ষের প্রভাব বাড়া মানে অপর পক্ষের প্রভাব কমে যাওয়া। ১৯৯৪ সালের জন্মলগ্ন থেকে তালেবানের সঙ্গে পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। ঐতিহাসিক এ ঘনিষ্ঠতার কারণে ভারত সব সময় এই গোষ্ঠীকে ইসলামাবাদের প্রক্সি হিসেবে দেখত। ২০০১ সালে তালেবানের পতনের আগপর্যন্ত ভারত রাশিয়া ও ইরানের সঙ্গে তালেবানবিরোধী গোষ্ঠীগুলোর সমর্থক ছিল।
পরবর্তী ২০ বছর ভারত আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ও যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত আফগান সরকারের অন্যতম বড় পৃষ্ঠপোষক ছিল। এ দীর্ঘ সময় তালেবানসহ বিভিন্ন জঙ্গিগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে লড়েছে আফগান প্রজাতন্ত্র সরকার।
অন্যদিকে পাকিস্তান ১৯৯৬-২০০১ সালে তালেবানের প্রথম শাসনকাল ও দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় ফেরার শুরুতে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখলেও সাম্প্রতিক সময়ে দুই দেশের সম্পর্কে টানাপোড়েন বেড়েছে। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রীসহ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা প্রকাশ্যে আফগানিস্তানকে ‘শত্রু রাষ্ট্র’ পর্যন্ত আখ্যা দিয়েছেন।
ইসলামাবাদ অভিযোগ করছে, আফগানিস্তানের তালেবান সরকার পাকিস্তানি তালেবানকে (টিটিপি) নিজেদের ভূখণ্ড ব্যবহার করে পাকিস্তানে হামলা চালানোর সুযোগ দিচ্ছে। এ কারণে পাকিস্তান আফগান ভূখণ্ডে টিটিপি ঘাঁটি লক্ষ্য করে বিমান হামলাও চালিয়েছে। তালেবান এসব অভিযোগ বারবার প্রত্যাখ্যান করেছে এবং পাল্টা অভিযোগে বলেছে, পাকিস্তানের কিছু মহল আফগানিস্তানকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে।
ভারতের তালেবানের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখার মূল কারণ এর জাতীয় স্বার্থ। দিল্লির সবচেয়ে বড় উদ্বেগ নিরাপত্তা, বিশেষত ইসলামিক স্টেট, আল-কায়েদা ও ভারতকেন্দ্রিক অন্যান্য জঙ্গিগোষ্ঠীর কর্মকাণ্ড। তালেবান ভারতকে আশ্বাস দিয়েছে যে, আফগান মাটি কখনো ভারতের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে ব্যবহৃত হবে না। এই অবস্থান আজ তালেবান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি আবারও পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
তালেবানের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করা ভারতের জন্য আরও একটি কৌশলগত পদক্ষেপ। চীন ও পাকিস্তানের প্রভাবকে মোকাবিলা করতে ইরান ও মধ্য এশিয়ার সঙ্গে সংযোগ গভীর করতে চায় দেশটি।
তবে সম্পর্ক যতই গভীর হোক না কেন, দুই পক্ষই সতর্ক অবস্থান বজায় রেখেছে। অতীতের ঘটনার কারণে পারস্পরিক সন্দেহ, অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিবেচনা ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়ার আশঙ্কায় ভারত-তালেবান সম্পর্ক এখনো কৌশলগত পর্যায়েই সীমাবদ্ধ।
হামাস প্রকাশ্যে অস্ত্র ত্যাগ করার আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, গোষ্ঠীটি ব্যক্তিগত পর্যায়ে কিছু পরিমাণ অস্ত্র হস্তান্তরের বিষয়ে ছাড় দিতে পারে। থিংক ট্যাংক ইউরোপীয় কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনসের ইসরায়েল-ফিলিস্তিন বিশেষজ্ঞ হিউ লভাট বলেন, ‘অস্ত্র পরিত্যাগের বিষয়ে হামাসের অবস্থান সবচেয়ে...
১০ ঘণ্টা আগে২০২৫ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কার নিয়ে আলোচনায় সবচেয়ে বেশি যাঁর নাম উচ্চারিত হচ্ছে, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপের চুক্তিতে তাঁর মধ্যস্থতা, ভারত-পাকিস্তানসহ একাধিক আঞ্চলিক বিরোধে তাঁর ভূমিকার দাবি এবং কয়েকটি দেশের পক্ষ থেকে মনোনয়ন—তাঁকে আবারও...
১ দিন আগেগত ১৫ আগস্ট ভারতের স্বাধীনতা দিবসে নরেন্দ্র মোদি দিল্লির লালকেল্লা থেকে দেশের উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ঘোষণা করেন, অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করার জন্য একটি ‘উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন জনসংখ্যা মিশন’ গঠন করা হবে। তিনি বলেন, ‘কোনো দেশই নিজেকে অনুপ্রবেশকারীদের হাতে তুলে দেয় না।
২ দিন আগেদুই বছর আগে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের সশস্ত্র বাহিনী ইসরায়েলে আকস্মিক হামলা চালায়। এতে প্রায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত হয় এবং ২৫০ জনকে জিম্মি করা হয়। জবাবে ইসরায়েল গাজায় ব্যাপক বিমান হামলা ও স্থল অভিযান চালিয়ে আসছে।
৩ দিন আগে