Ajker Patrika

সাহিত্য আড্ডার আজিজ সুপার মার্কেট এখন পোশাকের বাজার

  • আজিজ মার্কেটে এখন জমে না সাহিত্যের আড্ডা, গান ও তর্ক।
  • দোকানে বইয়ের জায়গায় ঠাঁই করে নিয়েছে বাহারি পোশাক।
  • দুঃসময়ের মধ্যেও টিকে আছে ১২ থেকে ১৫টি বইয়ের দোকান।
সাখাওয়াত ফাহাদ, ঢাকা
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

খুব বেশি দিন নয়, বছর বিশেক আগেও শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটে ঢুকলে চোখে পড়ত সারি সারি বইয়ের দোকান। কবি-সাহিত্যিকেরা মেতে উঠতেন আড্ডায়। আড্ডা, গান, তর্কে জমজমাট সাহিত্য-সংস্কৃতির এই প্রাণকেন্দ্র বদলে গেছে। বইয়ের দোকান উঠে গিয়ে ঠাঁই পেয়েছে কাপড়ের দোকান। মুক্তচিন্তা ও আড্ডার স্থান আজিজ মার্কেটের এই রূপান্তরের পেছনে রয়েছে করুণ গল্প—যা পরিবর্তনের, ব্যবসায়িক মনোবৃত্তি ও মুনাফার।

সম্প্রতি আজিজ মার্কেটে গিয়ে দেখা যায়, হাতে গোনা ১২ থেকে ১৫টি বইয়ের দোকান এখনো টিকে আছে। বাকি সব দোকানে নানা রং ও ডিজাইনের পোশাক। আজিজের বইদোকানিরা জানিয়েছেন, ২০০০ সালের পর থেকে আজিজ মার্কেটে একটা-দুইটা করে বাড়তে থাকে কাপড়ের দোকান। মার্কেটের স্থানিক গুরুত্ব ও পোশাকের চাহিদা বিবেচনায় দোকানিরাও বদলাতে শুরু করেন ব্যবসার ধরন। পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে না পেরে দোকান ছাড়তে বাধ্য হয় অনেক প্রকাশনা সংস্থা।

আজিজ মার্কেটে দীর্ঘদিন ধরে আছেন এমন কয়েকজন জানিয়েছেন, আশি ও নব্বই দশকে বইপ্রেমী, তরুণ লেখক, কবি, চিত্রশিল্পী এবং সাংস্কৃতিক কর্মীদের প্রধান আড্ডাস্থল ছিল আজিজ মার্কেট। ১৯৮৭ সালে পাঠকসমাবেশ দিয়ে আজিজ মার্কেটে বইয়ের দোকানের যাত্রা শুরু। এরপর তক্ষশীলা, বিদিত, পড়ুয়া, শ্রাবণ, পলল, বুক পয়েন্ট, প্রাকৃতজন, মনন, প্যাপিরাস, গ্রন্থ গ্যালারি, প্রাচ্য বিদ্যা, সুখ, এপিকসহ ৬০টির বেশি বইয়ের দোকান গড়ে ওঠে কয়েক বছরের মধ্যে। ছোট-বড় বইয়ের দোকান, প্রকাশনা সংস্থা, কফি শপ, নাট্যদলের কার্যালয়, গানের ক্যাসেট ও বাদ্যযন্ত্রের দোকান ঘিরে দিনভর চলত সংস্কৃতিপ্রেমী ও সৃজনশীল ব্যক্তিদের আড্ডা। নিয়মিত চলত নতুন বইয়ের প্রকাশনা উৎসব, কবিতাপাঠ এবং লিটল ম্যাগাজিনের আসর।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, ঢাকা কলেজ, ইডেন কলেজ, ঢাকা মেডিকেল কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কাছাকাছি হওয়ায় আজিজ ঘিরে জমে উঠত নিয়মিত আড্ডা। এসব আড্ডায় আসতেন হুমায়ূন আহমেদ, সেলিনা হোসেন, শামসুর রাহমান, সৈয়দ শামসুল হক, হাসান আজিজুল হক, আহমদ ছফাসহ অনেক খ্যাতিমান সাহিত্যিক।

আজিজে ‘উত্থান পর্ব’র কার্যালয় পরিচিত ছিল আহমদ ছফার ডেরা হিসেবে। সেখানে তরুণ কবি-লেখকদের সঙ্গে তুমুল তর্ক-বিতর্কে মেতে উঠতেন আহমদ ছফা। প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক আলমগীর কবির, তারেক মাসুদ, বিপাশা হায়াত, সৈয়দ হাসান ইমাম, গায়ক লাকী আখান্দ্‌, জেমস, সৈয়দ আবদুল হাদী, অভিনেতা মারজুক রাসেলসহ অনেকে নিয়মিত আড্ডা দিতেন আজিজে। এককথায় ঢাকার আজিজ সুপার মার্কেট ছিল দুই দশকের বেশি সময় ধরে সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রাণকেন্দ্র।

যেভাবে জায়গা করে নেয় কাপড়ের দোকান

আজিজে প্রথম কাপড়ের দোকানের সূচনা ঘটে এক শিল্পীর হাত ধরে। তিনি বাহার রহমান। ছাত্রজীবন থেকেই সাহিত্য-কবিতা লেখালেখি বা প্রকাশনার কাজ করতেন বাহার। লেখার পাশাপাশি নিয়মিত আজিজে লেখক-কবিদের সঙ্গে আড্ডাও দিতেন। রোজগারের জন্য চালাতেন ‘নিত্য উপহার’। ১৯৯৪ সাল থেকে ‘নিত্য উপহার’ আজিজে স্ক্রিনপ্রিন্টের মাধ্যমে বিয়ে, জন্মদিনের নিমন্ত্রণ ও উপহার কার্ড তৈরির কাজ করত। তবে ২০০১ সাল থেকে শুরু হয় টি-শার্টের যাত্রা।

বাহার রহমান বলেন, ‘আমরা দেশীয় ঘরানার টি-শার্ট করতাম। সেগুলো আসলে শুধু টি-শার্ট নয়, তার চেয়ে বেশি কিছু করার আগ্রহ ছিল। আমরা কাপড়ের দোকানের চেয়ে অন্য কিছু করতে চেয়েছিলাম। যেখানে মানুষের গায়ের ক্যানভাসে মানুষের নিজের কথা, ইতিহাস, ঐতিহ্য, আত্মপরিচয়ের কথা থাকবে।’

আজিজ মার্কেটের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ২০০৭ সালের পর থেকে মূলত আজিজ মার্কেটে কাপড়ের দোকানের আধিক্য শুরু হয়। পলল প্রকাশনীর নাজির হোসেন ২০০৬ সাল থেকে আজিজ মার্কেটে এই প্রকাশনীর দায়িত্বে আছেন। তিনি জানান, ২০০৫ সালের পর থেকে কাপড়ের দোকান থেকে বেশি ভাড়া এবং অতিরিক্ত অগ্রিম অর্থ পাওয়া যেত। ফলে বইয়ের দোকান উঠিয়ে কাপড়ের দোকান বসানোর একটি ঝোঁক তৈরি হয়। নাজির হোসেন বলেন, ‘এখন যে বইয়ের দোকানগুলো আছে, সেগুলো আর কাপড়ের দোকানের ভাড়া একই। কিন্তু বই আর কাপড় তো এক বিষয় নয়। তবু আমরা খুব কষ্ট করে টিকে আছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গৌরীপুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়কসহ ৫ নেতা বহিষ্কার

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী স্বাক্ষরিত বহিষ্কারাদেশ পরিপত্র। ছবি: সংগৃহীত
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী স্বাক্ষরিত বহিষ্কারাদেশ পরিপত্র। ছবি: সংগৃহীত

দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ, অভ্যন্তরীণ হাঙ্গামা, সহিংসতা, রক্তপাত এবং সন্ত্রাসী কার্যকলাপের অভিযোগে ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলা বিএনপির পাঁচজন শীর্ষ নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বহিষ্কৃতরা হলেন গৌরীপুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আহাম্মদ তায়েবুর রহমান (হিরন), যুগ্ম আহ্বায়ক তাজুল ইসলাম খোকন, সদস্য মাসুদ পারভেজ কার্জন এবং গৌরীপুর পৌর বিএনপির সদস্যসচিব সুজিত কুমার দাস ও যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান পলাশ।

তাঁদের প্রাথমিক সদস্যপদসহ দলের সব পর্যায়ের পদ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। রোববার (৯ নভেম্বর) রাতে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী স্বাক্ষরিত এক পরিপত্রে এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। পরিপত্রটি দলের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে প্রকাশ করা হয়েছে।

বহিষ্কারাদেশে উল্লেখ করা হয়েছে, এই নেতারা দলের অভ্যন্তরে সহিংসতা, রক্তপাত ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন, যা বিএনপির শৃঙ্খলা ও নীতির পরিপন্থী। এখন পর্যন্ত বহিষ্কৃত কোনো নেতার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গৌরীপুরে বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছিল। এই বহিষ্কারের মধ্য দিয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব দলের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার কঠোর বার্তা দিল।

উল্লেখ্য, মনোনয়ন ঘোষণার পর থেকে মনোনয়ন বঞ্চিত হিরন সমর্থকেরা মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে লাগাতার কর্মসূচি দিয়ে আসছিলেন। রোববার দুই পক্ষই আলাদা স্থানে সমাবেশের আয়োজন করে। এ সময় মনোনয়নপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার ইকবাল হোসাইনের সমর্থকেরা হিরনের সভামঞ্চ ভাঙচুর করে। এতে উভয় পক্ষের ১৫-২০ জন আহত হয়। সংঘর্ষের সময় হৃদ্‌যন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ইঞ্জিনিয়ার ইকবাল সমর্থক ছাত্রদল নেতা তানজিন আহমেদ আবিদ (২৪) ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান।

এ খবর ছড়িয়ে পড়লে গৌরীপুরে উত্তেজনা বিরাজ করে। এদিকে রাতে দুই পক্ষই আলাদা একে অপরকে দোষারোপ করে সংবাদ সম্মেলন করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জনগণের চিন্তাভাবনাকে ধারণ করে আগামী দিনের রাজনীতি এগিয়ে নিতে চাই: নুর

সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি 
পথসভায় বক্তব্য দেন গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর। ছবি: আজকের পত্রিকা
পথসভায় বক্তব্য দেন গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর। ছবি: আজকের পত্রিকা

জনগণের বিরুদ্ধে যারাই দাঁড়াবে, জনগণের সঙ্গে যারাই তামাশা করবে, তারাই রাজনীতি থেকে আওয়ামী লীগের মতো নাই হয়ে যাবে। আমরা এই তরুণ প্রজন্ম জনগণের সঙ্গে আছি এবং থাকতে চাই। জনগণের চিন্তাভাবনাকে ধারণ করেই আগামী দিনের রাজনীতি এগিয়ে নিতে চাই। গতকাল রোববার রাত ৯টার দিকে উপজেলার বাহিরগোলা চত্বরে আয়োজিত এক পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর।

তিনি আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগ একটি ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল ছিল। সেই আওয়ামী লীগ গত ১৬ বছরে ভিন্নমত দমনে জামায়াত-বিএনপি নেতা-কর্মীদের ওপর চালিয়েছিল অত্যাচার, নিপীড়ন ও নির্যাতন। তাদের নেতা-কর্মীদের খুঁজে খুঁজে বের করে দেওয়া হয়েছিল মামলা। করা হয়েছিল তাদের ঘরছাড়া। সর্বশেষ এ দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে ভারতের হাতে তুলে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু এ দেশের সচেতন নতুন প্রজন্ম, স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এবং তাদের সঙ্গে যোগ হয়ে ছাত্র-জনতার মিলিত অভ্যুত্থানে এ দেশে আওয়ামী লীগের রাজনীতি নাই হয়ে গেছে।’

ডাকসুর সাবেক ভিপি আরও বলেন, ‘আপনাদের কারও সন্তান, কারও ভাই এই তরুণেরা গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে যে অসাধ্যকে সাধন করেছে, তা গত ৫০ বছরে সম্ভব হয়নি। বাংলাদেশে গত ৫০ বছরে যে বিভাজন, হিংসা, বিদ্বেষ, হানাহানি, মারামারির রাজনীতি চলেছে তাতে সাধারণ মানুষ, আমজনতা নেতাদের জন্য রক্ত ঝরিয়েছে। নেতাদের জন্য লাশ হয়েছে। কিন্তু নেতায়-নেতায় ঠিকই থাকে। নেতায়-নেতায় ফোনে কথা হয়, আলাপ-আলোচনা হয় আর কর্মীরা রাস্তাঘাটে মারামারি করে জীবন দেয়। তাই জুলাই অভ্যুত্থান-পরবর্তী আগামীর রাজনীতি ও বাংলাদেশের গতিপথ কী হবে, তা নির্ধারণ করবে এ দেশের নতুন প্রজন্ম ও সাহসী তরুণেরা।’

নুর আরও বলেন, ‘যে তরুণেরা বুলেটের সামনে দাঁড়িয়ে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছিল, এই পরিবর্তন এনেছিল, সেই তরুণেরাই আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবে, ইনশা আল্লাহ।’

পরে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রংপুরের গঙ্গাচড়া আসনে গণঅধিকার পরিষদের প্রার্থী হানিফ খান সজিব, সুন্দরগঞ্জ আসনের প্রার্থী মাসুদ রানা মোন্নাফ এবং সাদুল্লাপুর-পলাশবাড়ী আসনে মো. সুরুজ্জামান সরকারকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে সবাইকে পাশে থাকার আহ্বান জানান নুরুল হক নুর।

গণঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় উচ্চতর পরিষদের সদস্য মো. হানিফ খান সজিব এবং গণঅধিকার পরিষদের প্রতিষ্ঠাকালীন সংগঠক ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মাসুদ রানা মোন্নাফ, জেলা গণঅধিকার পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলার আহ্বায়ক রুমন বসুনিয়া ও উপজেলা গণঅধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. রাসেল মিয়াসহ অনেকে বক্তব্য দেন এ পথসভায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাবি রেজিস্ট্রার ও রাকসু জিএসের উত্তপ্ত বাগ্‌বিতণ্ডা: ‘বিএনপি নেতা’দের সঙ্গে বৈঠকের অভিযোগ

রাবি প্রতিনিধি  
বাগ্‌বিতণ্ডার একপর্যায়ে রাবি রেজিস্ট্রার রাকসু জিএসের দিকে তেড়ে আসেন। ছবি: সংগৃহীত
বাগ্‌বিতণ্ডার একপর্যায়ে রাবি রেজিস্ট্রার রাকসু জিএসের দিকে তেড়ে আসেন। ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. ইফতেখারুল আলম মাসউদ এবং রাকসুর সাধারণ সম্পাদক (জিএস) সালাউদ্দিন আম্মারের মধ্যে উত্তপ্ত বাগ্‌বিতণ্ডার ঘটনা ঘটেছে। গতকাল রোববার (৯ নভেম্বর) দুপুরে রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। পরে রাতে সেই বাগ্‌বিতণ্ডার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তা আলোচনার জন্ম দেয়।

জানা গেছে, গতকাল দুপুরে জরুরি কাজে রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে যান রাকসু জিএস সালাউদ্দিন আম্মার। সেখানে পৌঁছানোর পর তাঁকে জানানো হয়, রেজিস্ট্রার ‘বিএনপি নেতা’দের সঙ্গে বৈঠকে ব্যস্ত আছেন। আম্মার এরপর ভেতরে প্রবেশ করে তাঁর কাজের বিষয়ে জানতে চাইলে রেজিস্ট্রার ও তাঁর মধ্যে বাদানুবাদ শুরু হয়।

জিএস সালাউদ্দিন আম্মার জানান, চিকিৎসা মনোবিজ্ঞান বিভাগের একটি ফাইল নিয়ে জটিলতা ছিল, যা উপাচার্যের স্বাক্ষরের পরও রেজিস্ট্রার দপ্তরে আটকে ছিল। এ বিষয়ে খোঁজ নিতে গিয়ে তিনি প্রথমবার কল করলেও রেজিস্ট্রার ধরেননি। দ্বিতীয়বার সরাসরি দপ্তরে গেলে তাঁর পিএস তাঁকে জানান যে রেজিস্ট্রার ‘মহানগর বিএনপির’ নেতাদের সঙ্গে মিটিং করছেন।

আম্মার বলেন, ‘আমি সেখানে গেলে তখনো বলে বিএনপির প্রোগ্রাম চলছে। এখন ভেতরে যাওয়া যাবে না। তারপর আমি ভেতরে ঢুকে যাই। গিয়ে বললাম এই চিঠিটা কখন ইস্যু হচ্ছে? তখন উনি বলল আজকে। তারপর বাগ্‌বিতণ্ডা শুরু হলো।’

সালাহউদ্দিন আম্মার আরও বলেন, ‘রেজিস্ট্রার প্রায়ই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। উনি মেয়েদের হলের আন্দোলনে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছেন। আজ (গতকাল) একপর্যায়ে তিনি আমার দিকেও তেড়ে আসেন। যিনি ভিডিও করছিল তাঁর দিকেও তেড়ে এসে ফোনটা কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। ভিডিওতেও স্পষ্ট দেখা যায়—তিনি আমাকে বারবার “গেট আউট” বলে চিৎকার করছেন এবং বলছেন, “এটা আমার কক্ষ, তুমি এখানে কেন?” আমি যদি কোনো অপ্রয়োজনীয় কাজে সেখানে যেতাম, তাহলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতাম না। আমাকে জানানো হয়েছিল, তিনি একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে একান্ত বৈঠক করছেন। তাই দায়িত্বের জায়গা থেকে আমি বিষয়টি যাচাই করতে গিয়েছিলাম। আমি কোনো রাজনৈতিক দলের অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য রাকসুতে নির্বাচিত হইনি; আমি নির্বাচিত হয়েছি শিক্ষার্থীদের স্বার্থ ও অধিকার রক্ষার জন্য।’

অন্যদিকে অধ্যাপক ড. ইফতিখারুল আলম মাসুদ বলেন, ‘চিকিৎসা মনোবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি নিয়োগ বিষয়ে গতকাল (শনিবার) একটা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেটা কার্যকর করা নিয়ে আমি আজকে (রোববার) সকাল থেকেই কাজ করছিলাম। এর মধ্যে এক সপ্তাহ আগে এনসিপির রাজশাহী মহানগরের নতুন কমিটির নেতারা আমার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করার জন্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়েছিলেন। ওনারা সাক্ষাৎ করতে এসেছিলেন আজ। ওনাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার সময় বাইরে দুজন ডিন অপেক্ষা করছিলেন।’

তিনি বলেন, ‘এর মধ্যে জিএস সালাহউদ্দিন আম্মারও দেখা করার জন্য এসেছিল। তাকেও কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু সে অপেক্ষা না করে বেয়াদবি করে হঠাৎ আমার চেম্বারে ঢুকে পড়ে। তার দাবি, আমি নাকি ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের সভাপতি নিয়োগের চিঠি আটকে রেখেছি। অথচ সকাল থেকেই আমরা বিষয়টির সুরাহা করার জন্য কাজ করছিলাম। ওই সময়ও নতুন সভাপতির নিয়োগ অনুমোদন হওয়ার পরের কাজ করছিল অন্যরা।’

রেজিস্ট্রার আরও বলেন, ‘এই অবস্থায় সে হঠাৎ চেম্বারে ঢুকে পড়ে। ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের সভাপতি নিয়োগ হবে। এখানে তাঁর কাজ কী? রাকসুর ভিপি সৌজন্য সাক্ষাৎ করার জন্য এক সপ্তাহ আগে আমাকে মেসেজ দিয়েছে। আমি এখনো বেচারাকে রিপ্লাই দিতে পারিনি। আর এই ছেলে সব জায়গায় গিয়ে মাতব্বরি করে। একটা বেহায়া ছেলে। ভিডিওতেই এর প্রমাণ রয়েছে। আমি তাকে গেট আউট বলে বের করে দিয়েছি। সে কেন একটা অফিস অর্ডার নিয়ে কথা বলতে যাবে? এটা তো আমি বরদাশত করব না। ছাত্র রিলেটেড কোনো বিষয় হলে সে যেতে পারে।’

এ ঘটনায় নিজেদের অবস্থান তুলে ধরে ফেসবুকে একটি পোস্ট করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি রাজশাহী মহানগর শাখার আহ্বায়ক মোবাশ্বের রাজ। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘সালাউদ্দিন আম্মার ও রেজিস্ট্রার স্যারের সঙ্গে উত্তপ্ত বাগ্‌বিতণ্ডার সময় সেখানে বিএনপির কেউ ছিল না। আমার উপস্থিতিতে রাজশাহী মহানগর এনসিপির নেতৃত্ব ছিল। আমরা সেখানে সৌজন্য সাক্ষাতে গিয়েছিলাম। কিন্তু রেজিস্ট্রার স্যারের পিএস সম্ভবত আমাদের বিএনপির নেতা-কর্মী ভেবে তাদের ইনফর্ম করে। এখান থেকেই ভুল-বোঝাবুঝির সূচনা হয়।’

এদিকে, জিএস আম্মার বিএনপিকে জড়িয়ে বক্তব্য দেওয়ার প্রতিক্রিয়ায় রাবি শাখা ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান আহমেদ রাহী বলেন, ‘আম্মার ও শিক্ষক পরস্পরকে ধমকাচ্ছেন, বিএনপির নাম টেনে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন, অথচ সেখানে বিএনপির কেউই ছিল না। এনসিপির সঙ্গে নিয়মিত দেখা যায় আম্মারকে, অথচ আজ তিনি তাদের চিনলেন না। গণতান্ত্রিক সমাজে যে কেউ আলোচনা করতেই পারে, এতে আমাদের আপত্তি নেই। তবে বিএনপির নাম ব্যবহার করে বিভ্রান্তি ছড়ানো অনৈতিক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শ্রমিক দল সভাপতির বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগে বিক্ষোভ

চাটমোহর (পাবনা) প্রতিনিধি 
মোন্তাজ আহমেদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, জমি ও জলাশয় দখলসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে বিক্ষোভ মিছিল (ইনসেটে মোন্তাজ আহমেদ)। ছবি: আজকের পত্রিকা
মোন্তাজ আহমেদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, জমি ও জলাশয় দখলসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে বিক্ষোভ মিছিল (ইনসেটে মোন্তাজ আহমেদ)। ছবি: আজকের পত্রিকা

পাবনার চাটমোহর উপজেলা শ্রমিক দলের সভাপতি মোন্তাজ আহমেদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, জমি ও জলাশয় দখলসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের একাংশের নেতা-কর্মীরা। রোববার (৯ নভেম্বর) রাতে উপজেলার মূলগ্রাম ইউনিয়নের রেলবাজার এলাকায় এ বিক্ষোভে ইউনিয়ন বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদলসহ বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী অংশ নেন।

সমাবেশে বক্তারা অভিযোগ করেন, শ্রমিক দলের সভাপতি পরিচয় ব্যবহার করে মোন্তাজ আহমেদ দীর্ঘদিন ধরে চাঁদাবাজি, এলাকায় সালিসের নামে অর্থ আদায়, জমি ও জলাশয় দখল, থানায় দালালি এবং নিজ দলের নেতা-কর্মীদের ওপর নির্যাতনসহ বিভিন্ন অপকর্ম করছেন। এসব কর্মকাণ্ডের কারণে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। বিশেষ করে ৫ আগস্টের পর থেকে তাঁর কারণে মূলগ্রাম ইউনিয়নসহ উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রমে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে।

তাঁরা অভিযোগ করেন, মোন্তাজ আহমেদের অপকর্মে ক্ষুব্ধ হয়ে অনেক নেতা-কর্মী দলীয় কর্মসূচি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। দ্রুত দলীয় শৃঙ্খলার স্বার্থে মোন্তাজের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান বক্তারা। সমাবেশ থেকে মূলগ্রাম ইউনিয়নে তাঁকে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করা হয়।

এ ব্যাপারে মূলগ্রাম ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি মোহাব্বত মল্লিক বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে মোন্তাজ বিএনপির নাম ব্যবহার করে চাঁদা আদায় ও ভুক্তভোগীদের ওপর বিভিন্নভাবে চাপ সৃষ্টি করে আসছে। অমৃতকুণ্ডা হাটে অতিরিক্ত টোল আদায়, রেলবাজার এলাকায় শ্রমিকদের কাছ থেকে অর্থ নেওয়া হয়। শ্রমিকেরা আপত্তি জানালে তাদের ঘরবাড়িতে হামলা করা হয়। এসব অভিযোগ এলাকাবাসীর মুখে মুখে। এসব কারণে অনেকেই দল থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন।’

তবে শ্রমিক দল সভাপতি মোন্তাজ আহমেদ সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘চাঁদাবাজির কোনো ঘটনা ঘটেনি। বরং কিছু ব্যক্তি অনুমতি ছাড়াই বিভিন্ন ট্রাক ও যানবাহন থেকে টাকা নিচ্ছিল। বিষয়টি জানার পর আমি তাদের নিষেধ করেছি। এ কারণে তারাই ক্ষিপ্ত হয়ে আমার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছে। আমাদের ইজারা নেওয়া হাটের শৃঙ্খলা বজায় রাখতে কাজ করছি। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের একটি মহল পরিকল্পিতভাবে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত