Ajker Patrika

আল জাজিরার প্রতিবেদন /ট্রাম্পের অস্পষ্ট গাজা প্রস্তাব: যুদ্ধ না হয় বন্ধ হলো, ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের কী হবে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০২ অক্টোবর ২০২৫, ১৭: ০০
ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেবে আরও ৬ দেশ। ছবি: এএফপি
ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেবে আরও ৬ দেশ। ছবি: এএফপি

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজা যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছেন এবং ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যা মেনে নিতে চেয়েছেন, তা হয়তো দীর্ঘদিন ধরে ফিলিস্তিনিরা যা আশা করেছিল তা দিতে পারবে না। এমনটাই বলছেন বিশ্লেষকেরা।

মাঠের বাস্তবতা উপলব্ধি করা মানুষ হয়তো এই প্রস্তাবকে ইসরায়েলের নিষ্ঠুর হামলার অবসানের স্বস্তির খবর হিসেবে দেখবে। কিন্তু ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে চলা এই হামলায় অন্তত ৬৬ হাজার ৫৫ জন নিহত ও ১ লাখ ৬৮ হাজার ৩৪৬ জন আহত হয়েছে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, ট্রাম্পের ২০ দফা প্রস্তাবে ইসরায়েলি হামলা বন্ধ হওয়ার প্রতিশ্রুতি থাকলেও এতে প্রকৃতপক্ষে ফিলিস্তিনিদের জন্য ইতিবাচক কিছু নেই।

ফিলিস্তিনি আইনজীবী ও বিশ্লেষক দিয়ানা বুত্তু বলেন, ‘এই গণহত্যা শেষ করার প্রক্রিয়াটি জড়িত এক ঔপনিবেশিক পদ্ধতির সঙ্গে। কারণ, এই প্রক্রিয়ায় গণহত্যা চালানো ইসরায়েল এবং এই গণহত্যায় অর্থের জোগান দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের কাছেই থাকছে গণহত্যার শিকার ফিলিস্তিনিদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করার ক্ষমতা।’

বুত্তু ২০০০-২০০৫ পর্যন্ত ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের স্বাধীনতা অর্জনবিষয়ক আলোচক দলের আইনি উপদেষ্টা ছিলেন। তিনি আরও বলেন, ‘যদি আপনি চুক্তিটি পড়েন তাহলে দেখবেন, এতে ফিলিস্তিনিদের জন্য কোনো গ্যারান্টি নেই, একটিও নেই। সব গ্যারান্টি দেওয়া হয়েছে ইসরায়েলিদের জন্য।’

গাজায় মনোযোগ, কিন্তু স্পষ্টতা নেই

পরিকল্পনা অনুযায়ী গাজায় যুদ্ধ বন্ধ হবে, ইসরায়েলে আটক ফিলিস্তিনি বন্দীদের ফিরিয়ে দেওয়া হবে, জীবিত বা মৃত যা-ই হোক না কেন। বিনিময়ে ইসরায়েলকে ফিরিয়ে দিতে হবে শতাধিক জীবিত ও মৃতদের অবশেষ। এরপর হামাসকে গাজা অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ ‘বোর্ড অব পিস বা শান্তি পরিষদের’ হাতে দিতে হবে। এই পরিষদের চেয়ারম্যান বা প্রেসিডেন্ট হবেন ট্রাম্প। আন্তর্জাতিক অস্থায়ী এই প্রশাসনে থাকবেন যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারও।

প্রস্তাবে বলা হয়েছে—বিশেষ করে হামাস সদস্যদের উদ্দেশে, যারা গাজায় ‘শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান’ এবং অস্ত্র ত্যাগের প্রতিশ্রুতি দেবে, তাদের ক্ষমা করা হবে। অন্য যারা গাজা ছাড়তে চাইবে, তাদের নিরাপদে বাইরে চলে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে। এ ছাড়া, গাজায় ত্রাণসহায়তা সরবরাহ পুনরায় শুরু হবে, ইসরায়েলি সেনারা নির্দিষ্ট শর্ত পূরণের পর চলে যাবে। কিন্তু এখনো এটি স্পষ্ট নয় যে, কে তাদের প্রত্যাহার নিশ্চিত করবে। এর বাইরে অঞ্চলটির জন্য অর্থনৈতিক পুনর্জীবন পরিকল্পনা তৈরি হবে, যা মধ্যপ্রাচ্যের ‘সমৃদ্ধ আধুনিক শহর’ তৈরি করা বিশেষজ্ঞরা বাস্তবায়ন করবেন।

হামাস জানিয়েছে, তারা বর্তমানে পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করছে। তবে ট্রাম্প সতর্ক করেছেন, যদি হামাস তাঁর প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে, সে ক্ষেত্রে ইসরায়েলের পূর্ণ স্বাধীনতা থাকবে যেকোনো পদক্ষেপ নেওয়ার এবং এতে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনও থাকবে। মানবাধিকার সংগঠন ও পণ্ডিতেরা এরই মধ্যেই গাজায় ইসরায়েলের চলমান কর্মকাণ্ডকে গণহত্যা হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

এই বিষয়ে কাতারের দোহা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক মুহান্নাদ সেলুম বলেন, তবে এতে অনেক প্রশ্ন অমীমাংসিত থেকে যাচ্ছে, উদাহরণস্বরূপ, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কথা পরিকল্পনায় উল্লেখ থাকলেও, তাদের কোনো ভূমিকা নেই। আগে একটি সংস্কার কর্মসূচি শেষ করতে হবে, তারপর ক্ষমতা পাবে কর্তৃপক্ষ। ট্রাম্প তাঁর ২০২০ সালে উত্থাপিত শান্তি পরিকল্পনা ও সৌদি-ফরাসি প্রস্তাবের উল্লেখ করেছেন, কিন্তু কোন সংস্কারের কথা তিনি বিশেষভাবে বলছেন তা স্পষ্ট নয়।

অতীতেও ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে তাদের প্রশাসন সংস্কার করতে, ব্যাপক দুর্নীতি দূর করতে, শিক্ষা পাঠ্যক্রম পরিবর্তন করতে এবং ফিলিস্তিনি বন্দীদের পরিবারকে সহায়তা দেওয়া সামাজিক কল্যাণ ব্যবস্থা পরিবর্তন করতে। এই কর্তৃপক্ষ বন্দীদের পরিবারের সহায়তা কর্মসূচি সংস্কার করেছে। তবে ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সে সংস্কার সত্ত্বেও মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও পুরোনো নীতির বিষয়ে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সমালোচনা করেছেন।

বিশ্লেষকদের মতে, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রকে সন্তুষ্ট করতে হবে যে—তারা সংস্কার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে। এই সন্তুষ্টিকরণ নিশ্চিত না করা পর্যন্ত তারা গাজা শাসন করতে পারবে না। ফলে স্পষ্ট কোনো লক্ষ্য না থাকায়, ট্রাম্পের নেতৃত্বের অন্তর্বর্তী পরিষদ অনির্দিষ্টকাল গাজায় শাসন চালাতে পারে।

পরিকল্পনা অনুযায়ী, গাজায় যাবতীয় সহায়তা দেওয়া হবে জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক রেড ক্রিসেন্টের মাধ্যমে। তবে কিছুদিন আগে সহায়তা দিতে গঠিত ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত কুখ্যাত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন বিলুপ্ত হবে কি না তা উল্লেখ নেই প্রস্তাবে। এই ফাউন্ডেশনের কারণে ১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি সহায়তা পেতে গিয়ে নিহত হয়েছেন। এ বিষয়ে মুহান্নাদ সেলুম বলেছেন, ‘এটি মনে হচ্ছে দ্রুত তৈরি করা একটি চুক্তি। এই চুক্তি চলাকালে ধীরে ধীরে এটিকে পূর্ণাঙ্গ করা হতে পারে।’

ফিলিস্তিনের রাষ্ট্র স্বীকৃতির বর্তমান পরিস্থিতি কী

গত ২১ সেপ্টেম্বর কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাজ্য ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র স্বীকৃতি দেয়। এর পর আরও কিছু ইউরোপীয় দেশ, যেমন—ফ্রান্স ও পর্তুগালও একই পথে এগিয়েছে। বিশ্ব নেতারা ‘দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানকে’ সম্মান জানালেও বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই স্বীকৃতি মূলত মুখরক্ষা করার একটা কৌশল মাত্র।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় প্রায়শই ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের জন্য দুই রাষ্ট্র সমাধানের কথা বলছে। সেপ্টেম্বরের ১২ তারিখে জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশন এমন একটি প্রস্তাব পাস করা হয়, যা দুই রাষ্ট্র সমাধান পুনরুজ্জীবিত করার পক্ষে। তবে বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, ‘দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধান’ বাস্তবতার সঙ্গে তেমন সম্পর্ক রাখে না। প্রশ্ন হচ্ছে—যদি গাজায় দুই বছর ধরে চলা ইসরায়েলি গণহত্যামূলক অভিযান সাময়িকভাবে থেমেও যায়, তবে ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রের রূপ কী হবে?

ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের কথা উঠলেই সাধারণত গাজা উপত্যকা ও পশ্চিম তীরকে নিয়ে এবং পূর্ব জেরুসালেমকে রাজধানী করে গঠিত রাষ্ট্রের কথা ভাবা হয়। কিন্তু এই অঞ্চলগুলো ক্রমশ ইসরায়েলি বসতি স্থাপন নীতির কারণে ছিন্নভিন্ন হয়ে যাচ্ছে। অধিকৃত পশ্চিম তীরে অবৈধ ইসরায়েলি বসতি ক্রমেই বেড়ে চলেছে, যা ভবিষ্যতের ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের সম্ভাবনাকে আরও সংকুচিত করছে এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডল বিষয়টিতে নীরবে সম্মতি দিয়েই চলেছে।

২০২৩ সালের অক্টোবরে ইসরায়েলে হামাসের হামলার আগেও এই বাস্তবতা ছিল। আর হামলার পর ফিলিস্তিনিদের চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ, জমি দখল, বসতি সম্প্রসারণ, ফিলিস্তিনিদের ওপর সেটলার এবং সেনা সহিংসতা, বাড়ি ধ্বংসের মতো কার্যক্রম আরও দ্রুত হয়েছে।

গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের আগে গাজা উপত্যকা ছিল ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় নিরবচ্ছিন্ন এলাকা। তবে গাজার মানুষ পশ্চিম তীর যেতে পারত না, পশ্চিম তীরের মানুষ গাজায় যেতে পারত না। ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড থেকে বাইরে বের হওয়া কঠিন করে রেখেছিল ইসরায়েল। এখন তা আরও কঠোর হয়েছে।

এখন বিশ্লেষকেরা উদ্বেগ প্রকাশ করছেন যে, ট্রাম্পের এই পরিকল্পনা গাজাকে পশ্চিম তীর এবং পূর্ব জেরুসালেমের সঙ্গে আরও বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে। পরিকল্পনায় কেবল সংক্ষেপে ‘ফিলিস্তিনিদের স্বশাসন ও রাষ্ট্র গঠনের জন্য সম্ভাব্য বিশ্বাসযোগ্য পথের’ কথা উল্লেখ আছে। যা কিনা আবার ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের অস্পষ্টভাবে নির্দেশিত সংস্কার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ওপর নির্ভরশীল।

মাঠের বাস্তবতা ও সাম্প্রতিক স্বীকৃতির আলোকে প্রশ্ন উঠছে যে, ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের জন্য কি এখন কিছু অবশিষ্ট আছে আসলে? এই বিষয়ে বুত্তু বলেন, ‘এটাই মিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন। সবাই ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিচ্ছে, অথচ এটিকে ধীরে ধীরে মুছে ফেলা হচ্ছে মানচিত্র থেকে এবং এটিই বড় সমস্যা।’

এ ছাড়া, ট্রাম্পের পরিকল্পনাও ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতার বিষয়টি বাইরের পক্ষের সদিচ্ছার ওপর নির্ভরশীল করে রাখে। যদি ইসরায়েল গাজা থেকে সরে না যায়, তবে ফিলিস্তিনিদের কোনো বিকল্প থাকবে না। নেতানিয়াহু একাধিকবার শপথ করে বলেছেন, তিনি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার যেকোনো প্রচেষ্টা ব্যর্থ করবেন।

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানের সমর্থক প্রস্তাব পাসের এক দিন আগে নেতানিয়াহু পশ্চিম তীরকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য একটি বসতি প্রকল্পে এগিয়ে যাওয়ার চুক্তি স্বাক্ষর করেন এবং বলেন, ‘কোনো ফিলিস্তিন রাষ্ট্র হবে না।’

বিশ্লেষকেরা মনে করেন, এই চুক্তি দুটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করছে। এক. নেতানিয়াহুর সদিচ্ছা এবং দুই. যুক্তরাষ্ট্রের তরফ থেকে এই নিশ্চয়তা যে ইসরায়েল চুক্তি মেনে চলবে। নেতানিয়াহুর শান্তি প্রক্রিয়া ব্যর্থ করার ইতিহাস এবং বারবার দখল আরও গভীর করার কারণে বিশ্লেষকেরা সন্দিহান যে, এটি বাস্তবায়ন হবে। এই বিষয়ে মুহান্নাদ সেলুম বলেন, এই চুক্তি ‘কাগজে কলমে বাস্তবায়নযোগ্য, কিন্তু অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায় অনেক বিষয়ই অস্পষ্ট।’

ফিলিস্তিনিরা আগেও ইসরায়েলের সঙ্গে এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছে। ইসরায়েল ও প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনের (পিএলও) মধ্যে স্বাক্ষরিত অসলো চুক্তির ভিত্তিতে ১৯৯০-এর দশকের শুরু ও মধ্যভাগে সম্ভাব্য ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের ভিত্তি স্থাপন করা উচিত ছিল। কিন্তু ১৯৯৫-এর দ্বিতীয় চুক্তি স্বাক্ষরের পর থেকে খুব কম অগ্রগতি হয়েছে।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, ইসরায়েল বারবার ফিলিস্তিনের রাষ্ট্র গঠনের প্রচেষ্টাকে ব্যাহত করেছে ফিলিস্তিনিদের জমিতে তেল আবিবের নিয়ন্ত্রণ বাড়িয়ে এবং দুই বছরের গণহত্যামূলক অভিযানের পর পরিস্থিতি আরও খারাপ মনে হচ্ছে। বুত্তু বলেন, ‘এটি অসলোর থেকেও খারাপ। অসলোতে অন্তত ফিলিস্তিনের পক্ষে একটি কণ্ঠ ছিল। এখন, এই চুক্তিতে সব ফিলিস্তিনি কণ্ঠকে চুপ করিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা আবার সেই যুগে ফিরে গিয়েছি যখন অন্যরা আমাদের পক্ষে কথা বলছে।’

ট্রাম্প গত ২৩ সেপ্টেম্বর আরব ও ইসলামিক দেশগুলোর নেতাদের সঙ্গে তাঁর পরিকল্পনা নিয়ে বৈঠক করেছেন, কিন্তু কোনো ফিলিস্তিনি নেতার সঙ্গে নয়। এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র ফিলিস্তিনিদের ওপরই গাজার যুদ্ধ শেষ করার দায় চাপিয়েছে। যদি হামাস এমন একটি চুক্তি না মানে তাহলে ইসরায়েলের গণহত্যা চলতে থাকবে এবং সম্ভবত আরও তীব্র হবে—এমনটাই হুমকি দিয়েছেন ট্রাম্প।

বুত্তু বলেন, ‘এই যে দুই বছর ধরে গণহত্যা চলছে এটাই বড় সমস্যা এবং... তার চেয়েও বড় সমস্যা হলো ফিলিস্তিনিদের নিজেদেরই তাদের আরোপিত গণহত্যা শেষ করার আলোচনায় বাধ্য করা হচ্ছে অন্যের নির্ধারিত শর্তে।’

অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

১১৯ আসনে প্রার্থী ঘোষণা জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের, মনোনয়ন পেলেন যাঁরা

চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২-এর বেশি বহাল থাকছে যেসব প্রতিষ্ঠানে

দিল্লির পর কলকাতায় ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ উপহাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা

ভিড়ের মধ্যে ঠেলাঠেলির ভিডিও ভাইরাল, ব্যাখ্যা দিলেন ইশরাক

রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিরাপত্তায় গেজেট

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‘ভেনেজুয়েলা সংকট’ কীভাবে আন্তর্জাতিক সংঘাতের রূপ নিচ্ছে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।

ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।

ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।

ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।

এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।

‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।

সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

১১৯ আসনে প্রার্থী ঘোষণা জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের, মনোনয়ন পেলেন যাঁরা

চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২-এর বেশি বহাল থাকছে যেসব প্রতিষ্ঠানে

দিল্লির পর কলকাতায় ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ উপহাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা

ভিড়ের মধ্যে ঠেলাঠেলির ভিডিও ভাইরাল, ব্যাখ্যা দিলেন ইশরাক

রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিরাপত্তায় গেজেট

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—ট্রাম্প প্রশাসনের এই দাবি কি যৌক্তিক

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ছবি: সংগৃহীত
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ছবি: সংগৃহীত

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ—এমন মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিলার।

গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মিলার বলেন, ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে ‘আমেরিকার শ্রম, উদ্ভাবন ও ঘামের’ ওপর আর সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেওয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেন। মিলারের এই মন্তব্যের ঠিক এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন—ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে।

বর্তমানে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এসব নৌকা যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করছিল এবং তা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোকেনসহ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রধান উৎস ভেনেজুয়েলা নয়। ফলে অনেকের মতে, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল নিয়ন্ত্রণ এবং নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো।

মিলার কী বলেছেন

গতকাল বুধবার এক্সে দেওয়া পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘আমেরিকার শ্রম, মেধা ও পরিশ্রমই ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প সৃষ্টি করেছে। এই শিল্প জোরপূর্বক রাষ্ট্রায়ত্ত করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুরি। আর সেই লুণ্ঠিত সম্পদ সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগাতে এবং আমাদের দেশের রাস্তায় খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।’

মিলার তাঁর পোস্টে ট্রাম্পের আগের একটি বক্তব্যও যুক্ত করেন, যেখানে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ‘চুরি’ করার অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করেন এবং দেশটির তেল ট্যাংকারগুলোর ওপর সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেন।

মিলার আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হবে এবং সব ‘চুরি হওয়া সম্পদ’ অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে।

ভেনেজুয়েলায় কী পরিমাণ তেল রয়েছে

বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।

২০২৩ সালের হিসাবে ভেনেজুয়েলার তেল মজুতের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল—যা বিশ্বে সর্বাধিক। তবে উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশটি এখন তেল থেকে আগের মতো আয় করতে পারছে না।

অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির মূল্য ছিল মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে সৌদি আরব রপ্তানি করেছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ বিলিয়ন ডলার ও রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার।

যুক্তরাষ্ট্র কেন ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর দাবি করছে

২০ শতকের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধান শুরু করে মার্কিন কোম্পানিগুলো। ১৯২২ সালে ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মারাকাইবো হ্রদ এলাকায় প্রথম বড় তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করে রয়্যাল ডাচ শেল।

এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল উত্তোলন ও উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করে। স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মতো কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করে ভেনেজুয়েলাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারীতে পরিণত করে।

১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠনের সময় ভেনেজুয়েলা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তবে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজ তেলশিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করেন এবং পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) প্রতিষ্ঠা করেন।

পরে হুগো শাভেজ ক্ষমতায় এসে সব বিদেশি তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের অভাবে তেল উৎপাদন ক্রমেই কমতে থাকে।

কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা

২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে নিকোলাস মাদুরোর শাসনামলে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশটি চীন, ভারত ও কিউবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।

ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির কি কোনো আইনি ভিত্তি আছে

না, নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক। এই নীতির নাম ‘স্থায়ী প্রাকৃতিক সম্পদে সার্বভৌম অধিকার’ (Permanent Sovereignty over Natural Resources)।

১৯৬২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবে এই নীতি স্বীকৃতি পায়। সে অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার তেল সম্পূর্ণভাবে ভেনেজুয়েলারই। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ তেলের ওপর দাবি জানানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।

তাহলে শেভরন কেন কাজ করছে

যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও হিউস্টনভিত্তিক তেল কোম্পানি শেভরন ভেনেজুয়েলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বিদেশি কোম্পানিগুলো ভেনেজুয়েলায় সরাসরি তেলক্ষেত্রের মালিক হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলার (পিডিভিএসএ) সঙ্গে যৌথভাবে তেল উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত তেলের একটি অংশ পায়।

২০২২ সালে জো বাইডেন প্রশাসন শেভরনকে বিশেষ লাইসেন্স দেয়, যাতে তারা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে কাজ করতে পারে। চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসন সেই নিষেধাজ্ঞা ছাড় নবায়ন করেছে।

শেভরন দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরে গেলে সেই সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—যা অতীতে এক্সন, কারগিল ও হিলটনের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটেছে।

ট্রাম্প প্রশাসন মূলত ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর করা বিনিয়োগ ও পরে তা বাজেয়াপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এই ‘মালিকানা’ দাবি করছে। তবে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ও আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশের সম্পদ অন্য দেশের মালিকানাধীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি মূলত ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি ভূরাজনৈতিক কৌশল।

আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

১১৯ আসনে প্রার্থী ঘোষণা জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের, মনোনয়ন পেলেন যাঁরা

চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২-এর বেশি বহাল থাকছে যেসব প্রতিষ্ঠানে

দিল্লির পর কলকাতায় ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ উপহাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা

ভিড়ের মধ্যে ঠেলাঠেলির ভিডিও ভাইরাল, ব্যাখ্যা দিলেন ইশরাক

রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিরাপত্তায় গেজেট

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আল-জাজিরার বিশ্লেষণ /চীন চাইলে এক দিনেই ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে পারে, কিন্তু কীভাবে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬: ৩৪
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি, চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: সংগৃহীত
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি, চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: সংগৃহীত

নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে। সোভিয়েত আমলের পরিত্যক্ত সমরাস্ত্রের ভান্ডার থেকে শুরু করে আজকের আধুনিক ড্রোনের যুদ্ধক্ষেত্র—এই তিন দশকে ইউক্রেন ও চীনের সম্পর্ক এক অদ্ভুত ও জটিল আবর্তে ঘুরপাক খেয়েছে।

ইউক্রেনের সমরাস্ত্র ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায় হলো ১৯৯৮ সালে চীনের কাছে সোভিয়েত আমলের ‘ভারিয়াগ’ রণতরি বিক্রি। ইউক্রেনের মাইকোলাইভ বন্দরে পড়ে থাকা এই বিশাল জাহাজটি বেইজিং কিনেছিল মাত্র ২০ মিলিয়ন ডলারে। অবশ্য আজকের একটি আধুনিক যুদ্ধজাহাজের মূল্যের তুলনায় এটি অতি নগণ্য। বেইজিং তখন দাবি করেছিল, জাহাজটি একটি ভাসমান ক্যাসিনো ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। কিন্তু কয়েক বছর পরই বিশ্ববাসী অবাক হয়ে দেখল, সেই পরিত্যক্ত ভারিয়াগই রূপান্তরিত হয়েছে চীনের প্রথম শক্তিশালী বিমানবাহী রণতরিতে, নাম তার ‘লিয়াওনিং’।

শুধু রণতরিই নয়, চীনের আধুনিক প্রতিরক্ষা শিল্পকে গড়ে তুলতে কিয়েভের কারিগরি সহায়তা ছিল অভাবনীয়। ইউক্রেন থেকে চীনে পাড়ি জমিয়েছে আরও অনেক প্রযুক্তি। এর মধ্যে রয়েছে: হেলিকপ্টার এবং শক্তিশালী ট্যাংক ইঞ্জিনের নকশা ও উৎপাদন প্রযুক্তি; চীনের নৌবাহিনীর গ্যাস টারবাইন এবং বিমানবিধ্বংসী রাডার ব্যবস্থার মূল কারিগরি জ্ঞান।

ইউক্রেন স্বীকার করেছে যে তারা একসময় অবৈধভাবে পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ছয়টি ‘কেএইচ-৫৫’ ক্রুজ মিসাইল বেইজিংয়ে পাঠিয়েছিল। এটি চীনের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতাকে কয়েক দশক এগিয়ে দেয়।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সম্পর্কের এই গতিপ্রকৃতি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে। আজ ইউক্রেনীয় ড্রোন বিশেষজ্ঞরা সরাসরি স্বীকার করছেন, যুদ্ধের ভাগ্য এখন বেইজিংয়ের হাতে। কিয়েভের ড্রোন যুদ্ধের অগ্রপথিক আন্দ্রেই প্রোনিন আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘চীন চাইলে মাত্র এক দিনে এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধ করতে পারে। তারা শুধু আমাদের অথবা রুশদের কাছে ড্রোন যন্ত্রাংশ রপ্তানি বন্ধ করে দিলেই হলো।’

ইউক্রেনের আকাশে আজ যে লাখ লাখ ড্রোন উড়ছে, তার প্রতিটি উপাদানে চীনের ছাপ রয়েছে। ড্রোনের ফ্রেম, মোটর, ফ্লাইট কন্ট্রোলার, লিথিয়াম ব্যাটারি এবং নেভিগেশন মডিউল—সবই মূলত চীনা কারখানায় তৈরি।

‘স্নেক আইল্যান্ড’ নামক একটি সামরিক গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউক্রেনীয় ড্রোন শিল্প এখন পুরোপুরি চীনা আমদানির ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে নিওডিয়ামিয়াম ম্যাগনেট এবং থার্মাল সেন্সরের মতো জটিল কাঁচামালের ক্ষেত্রে চীনের একচেটিয়া প্রভাব কিয়েভকে এক কঠিন রাজনৈতিক চাপে রেখেছে।

ইউক্রেনীয় নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, যুদ্ধের পর ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশ পুনর্গঠনে চীনই হতে পারে সবচেয়ে বড় কৌশলগত অংশীদার। ২০১১ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ইয়ানুকোভিচের আমলে চীনের সঙ্গে যে ‘কৌশলগত অংশীদারি’ শুরু হয়েছিল, কিয়েভ এখন তার আধুনিক সংস্করণ চাচ্ছে।

এ ছাড়া চীনের উচ্চাভিলাষী বেল্ট অ্যান্ড রোড (বিআরআই) প্রকল্পের জন্য ইউক্রেনের ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত আকর্ষণীয়। ইউক্রেনকে উত্তর-পূর্ব চীন থেকে কাজাখস্তান ও ককেশাস হয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর প্রধান লজিস্টিক হাব বা ‘সেতুবন্ধনকারী দেশ’ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে বেইজিংয়ের।

তবে বিশ্লেষক ইগার তিশকেভিচের মতে, চীনকে ইউরোপীয় বাজারে উন্নততর প্রবেশের সুযোগ দিতে ইউক্রেনকে তার সোভিয়েত আমলের চওড়া রেললাইন বদলে পশ্চিমা মানদণ্ডের ন্যারো গেজ ট্র্যাকে রূপান্তর করতে হবে।

যুদ্ধের মধ্যেও চীন এখনো ইউক্রেনীয় ইস্পাত, ভোজ্যতেল এবং সয়াবিনের প্রধান ক্রেতা। এই বাণিজ্যই বর্তমানে ইউক্রেনের যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতিকে কোনোমতে সচল রেখেছে।

বিশ্লেষক অ্যালেক্সি কুশের মতে, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে ব্যর্থ হওয়া ইউক্রেনের জন্য একটি ঐতিহাসিক ভুল হতে পারে। তিনি মনে করেন, ইউক্রেনের কূটনীতি কেবল পশ্চিমমুখী হলে চলবে না, বরং চীনসহ পুরো ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। সমরাস্ত্রের গোপন অতীত এবং ড্রোনের অনিশ্চিত বর্তমানকে পেছনে ফেলে, কিয়েভ এখন এমন এক ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছে, যেখানে ইউক্রেন হবে পূর্ব ও পশ্চিমের বাণিজ্যিক মিলনস্থল—যেখানে সীমান্ত দিয়ে বিদেশি সৈন্য নয়, বরং পণ্যবাহী জাহাজ ও ট্রেন চলাচল করবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

১১৯ আসনে প্রার্থী ঘোষণা জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের, মনোনয়ন পেলেন যাঁরা

চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২-এর বেশি বহাল থাকছে যেসব প্রতিষ্ঠানে

দিল্লির পর কলকাতায় ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ উপহাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা

ভিড়ের মধ্যে ঠেলাঠেলির ভিডিও ভাইরাল, ব্যাখ্যা দিলেন ইশরাক

রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিরাপত্তায় গেজেট

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‘ডেথ সেলে’ ইমরান খান—ক্রিকেট বিশ্বের নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
২০২৩ সালের আগস্টে গ্রেপ্তারের পর থেকে ইমরান খান কারাগারে আছেন। ছবি: শাটারস্টকের সৌজন্যে
২০২৩ সালের আগস্টে গ্রেপ্তারের পর থেকে ইমরান খান কারাগারে আছেন। ছবি: শাটারস্টকের সৌজন্যে

চার বছর আগে যিনি ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, সেই ইমরান খান আজ নিজ দেশেই ধুঁকে ধুঁকে মরছেন। ৭৩ বছর বয়সী এই ক্রিকেট কিংবদন্তি বর্তমানে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, তাঁকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে। ইমরান খানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘এটা মানসিক নির্যাতন। তাঁকে মানসিকভাবে দুর্বল করতেই এসব করা হচ্ছে। কিন্তু আমার বাবা শক্ত মানুষ।’

ইমরান খানের প্রথম স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথের দুই ছেলে কাসিম ও সুলাইমান। গত আড়াই বছর ধরে তাঁরা এক দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। চলতি সপ্তাহে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নেয়। সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে নিয়ে ইমরান খানের নির্দেশনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছিল। এরপরই সরকার কারাগারে থাকা ইমরান খানের সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেয়। দুর্নীতির মামলায় দেওয়া ১৪ বছরের সাজার সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে একের পর এক নতুন মামলা। ইমরানের পরিবারের আশঙ্কা—এই সংকট সমাধানের কোনো সহজ পথ নেই।

কাসিম বলেন, ‘বাবার বিরুদ্ধে ২০০টির বেশি মামলা আছে। একটি মামলা বাতিল হলে সঙ্গে সঙ্গে দু-তিনটি নতুন মামলা দেওয়া হয়। এটা শুধু সময়ক্ষেপণের কৌশল।’

কারাগারের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। সুলাইমান বলেন, ‘বাবাকে যে ছোট কক্ষে রাখা হয়েছে, সেটিকে “ডেথ সেল” বলা হয়। এখানে সাধারণত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রাখা হয়। ওই বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। দেওয়া হয় না বই বা পড়ার কোনো উপকরণ।’

কাসিমের ভাষায়, ‘যে পানিতে তিনি গোসল করেন, সেটি খুবই নোংরা। ওই কারাগারে অন্তত এক ডজন বন্দী হেপাটাইটিসে মারা গেছে, আর তাঁরা সবাই ছিলেন পিটিআইয়ের সমর্থক।’

তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত বন্দীদের আলাদা রাখা হয়।

জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক অ্যালিস জিল এডওয়ার্ডসের এক প্রতিবেদনে ইমরান খানের সেলের চিত্র আরও ভয়াবহভাবে উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, কক্ষটি ছোট, বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে, প্রাকৃতিক আলোর অভাব রয়েছে এবং চরম তাপমাত্রা ও পোকামাকড়ের উপদ্রবজনিত কারণে তিনি বমি বমি ভাব এবং ওজন হ্রাসের শিকার হচ্ছেন।

১৯৯২ সালে ইমরান খানের নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। ছবি: এএফপি
১৯৯২ সালে ইমরান খানের নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। ছবি: এএফপি

কিন্তু ইমরানের খানের মতো একজন মানুষের জীবনে এই পরিস্থিতি কীভাবে তৈরি হলো

পাকিস্তানের ইতিহাসে ইমরান খান শুধু একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। ১৯৯২ সালে তাঁর নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। সেই আসরে খেলোয়াড়দের তিনি বলেছিলেন, ‘কোণঠাসা বাঘের মতো লড়ো।’ প্রতীক হিসেবে বাঘ আঁকা টি-শার্টও পরেছিলেন তিনি।

মাঠের বাইরে ইমরান খানের জীবনও ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। নব্বইয়ের দশকে লন্ডনের ট্রাম্পস নাইটক্লাব থেকে শুরু করে গসিপ কলাম—সবখানেই ছিল তাঁর উপস্থিতি। মডেল মারি হেলভিন একবার বলেছিলেন, ‘ইমরানের মতো বিধ্বংসী পুরুষ আর কেউ ছিলেন না।’

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। ছবি: এএফপি
১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। ছবি: এএফপি

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। বয়স ও সংস্কৃতিগত পার্থক্য নিয়ে সমালোচনা থাকলেও জেমিমা তখন বলেছিলেন, ‘আমার জন্য ইমরান পাশ্চাত্যের রাতজাগা ও মদের জীবন ছেড়ে দিতে প্রস্তুত।’

এরপর ২০০৪ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। তবে বিচ্ছেদ হলেও, বন্দী ইমরান খানের জন্য জেমিমার উদ্বেগ আজও রয়ে গেছে। সম্প্রতি তিনি ইলন মাস্ককে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স ইমরান খান-সংক্রান্ত পোস্ট গোপনে সীমিত করছে।

ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমরা বাবার সংস্পর্শে বড় হয়েছি। এখন বাবা নেই, এটা আমাদের জন্য খুব কষ্টের। আমাদের মায়ের জন্যও এটা কষ্টের।’

ইমরান খানের দুই ছেলে কাসিম খান ও সুলাইমান ইসা খান। ছবি: সংগৃহীত
ইমরান খানের দুই ছেলে কাসিম খান ও সুলাইমান ইসা খান। ছবি: সংগৃহীত

দুই ভাই আশা করছেন, এ বিষয়গুলো সামনে আনলে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে। কিন্তু আসলেই কি ইমরান খানের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলের নজরে আসবে? এমন প্রশ্ন অবান্তর নয়। কারণ, প্রায় আড়াই বছর থেকে কারাগারে থাকলেও কেউ ইমরান খানের খোঁজ নেয়নি।

অ্যাশেজের মতো বড় আয়োজন চললেও, ক্রিকেট বিশ্ব থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ নেই। আইসিসি হল অব ফেমে জায়গা পেয়েছেন ইমরান খান, কিন্তু সেখানেও নীরবতা। তবে অনেকেই মনে করেন, কথা বললে সরকার আরও কঠোর হতে পারে। ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘প্রতিবার আমরা কিছু বললে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।’

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত ৫০ বছরে পাকিস্তানের প্রতিটি প্রধানমন্ত্রীকেই কারাবরণ করতে হয়েছে। চ্যাথাম হাউসের গবেষক ফারজানা শেখ মনে করেন, ইমরান খানের সামনে বর্তমানে দুটি পথ—হয় লন্ডনে নির্বাসন অথবা পাকিস্তানে গৃহবন্দিত্ব।

কিন্তু তাঁর ছেলেরা বলছেন, দুটোই অগ্রহণযোগ্য। কাসিমের মতে, ‘লন্ডনে গেলে বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়বেন।’ আর সুলাইমান বলেন, ‘গৃহবন্দিত্ব মানে রাজনীতি থেকে নির্বাসন—বাবা সেটা মানবেন না।’

ওয়াশিংটনে গিয়ে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। সুলাইমান বলেন, ‘সেনাপ্রধান ও ট্রাম্পের সম্পর্ক এখন ভালো। ফলে আমাদের আশার জায়গা কম।’

শেষ বিকল্প হিসেবে পাকিস্তানে যাওয়ার কথাও ভাবছেন তাঁরা। কিন্তু সেটিও ঝুঁকিপূর্ণ। কাসিম বলেন, ‘পাকিস্তানে যাওয়ার পর আমাদের গ্রেপ্তার করা হলে হয়তো সেটাই বাবাকে কোনো সমঝোতায় যেতে বাধ্য করবে। কিন্তু আমরা এ রকম কিছু করতে চাই না। সবচেয়ে ভয়াবহ আশঙ্কা—তিনি ৭৩ বছরের একজন মানুষ। আমরা কি আর কখনো তাঁকে দেখতে পাব?’

ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ থেকে অনূদিত

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

১১৯ আসনে প্রার্থী ঘোষণা জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের, মনোনয়ন পেলেন যাঁরা

চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২-এর বেশি বহাল থাকছে যেসব প্রতিষ্ঠানে

দিল্লির পর কলকাতায় ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ উপহাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা

ভিড়ের মধ্যে ঠেলাঠেলির ভিডিও ভাইরাল, ব্যাখ্যা দিলেন ইশরাক

রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিরাপত্তায় গেজেট

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত