আজকের পত্রিকা ডেস্ক
পাকিস্তান-শাসিত আজাদ কাশ্মীরে টান-টান পরিস্থিতি বিরাজ করছে। টানা চার দিনের হরতাল পালিত হয়েছে গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত। এ সময় বিক্ষোভকারী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছে, তাদের মধ্যে তিনজন পুলিশ সদস্যও আছেন। আহত হয়েছে আরও অনেকে।
এরই মধ্যে পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকার একটি আলোচক কমিটি পাঠিয়েছে। বৃহস্পতিবার তারা আজাদ কাশ্মীরের রাজধানী মুজাফফরাবাদে পৌঁছে জম্মু-কাশ্মীর জয়েন্ট আওয়ামী অ্যাকশন কমিটির (জেএএসি) সঙ্গে বৈঠক শুরু করেছে। ব্যবসায়ী ও নাগরিক সমাজের সংগঠনগুলোর এই জোট স্থানীয়দের অসন্তোষের প্রতিনিধিত্ব করছে।
কর্মসূচির নেতৃত্ব দিচ্ছেন কর্মী শওকত নাবাজ মীর। তাঁর নেতৃত্বেই গত ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া অবরোধে পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীরের (আজাদ জম্মু অ্যান্ড কাশ্মীর বা এজেকে) কয়েকটি জেলা কার্যত অচল হয়ে গেছে। কেন্দ্র সরকার পুরো অঞ্চলের যোগাযোগব্যবস্থা বন্ধ করে দিয়েছে। ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে মোবাইল নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট একেবারেই অচল। ফলে সাধারণ মানুষ বাইরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পারছে না।
মুজাফফরাবাদের চিরচেনা ব্যস্ত বাজারগুলো বন্ধ। রাস্তায় নেই হকার বা গণপরিবহন। অঞ্চলটির প্রায় ৪০ লাখ মানুষ এখন অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। সরকার এক বিবৃতিতে বলেছে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে। জনগণকে ‘ভুয়া খবর’ ও ‘প্রচারিত মিথ্যা তথ্যের’ প্রভাবমুক্ত থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে। সরকারের দাবি, এগুলো ‘বিশেষ উদ্দেশ্যপূর্ণ এজেন্ডার’ অংশ। তবে, জেএএসি বলছে, সরকারের সঙ্গে তাদের ৩৮ দফা দাবির ব্যাপারে সমঝোতা না হওয়ায় এ আন্দোলন শুরু হয়েছে।
গত দুই বছরে এটি তৃতীয়বারের মতো বড় আন্দোলন। এর আগে একাধিকবার মাঠে নেমে নিজেদের শক্তি দেখিয়েছে এ জনভিত্তিক আন্দোলন। এবারও সেটি নতুন করে বড় আকার নিয়েছে।
আন্দোলনের বিস্ফোরণ ঘটল যেভাবে
হিমালয়ের পাদদেশের এই কাশ্মীর অঞ্চলকে কেন্দ্র করে স্বাধীনতার পর একাধিকবার যুদ্ধ করেছে ভারত ও পাকিস্তান। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই এ অঞ্চল নিয়ে দুই দেশের টানাপোড়েন চলছে। ভারত পুরো কাশ্মীরকে নিজেদের দাবি করে, অন্যদিকে পাকিস্তান দাবি করে ভারত নিয়ন্ত্রিত অংশ বাদে পুরো কাশ্মীরকে। চীনের দখলেও আছে কাশ্মীরের উত্তরাঞ্চলের দুটি ছোট অংশ।
২০১৭ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীরে বাস করে ৪০ লাখেরও বেশি মানুষ। আজাদ কাশ্মীর আধা স্বায়ত্তশাসিত ব্যবস্থা অনুযায়ী চলে। তাদের নিজস্ব প্রধানমন্ত্রী ও আইনসভা আছে।
বর্তমান অস্থিরতার সূত্রপাত ২০২৩ সালের মে মাসে। সে সময় স্থানীয় বাসিন্দারা রাস্তায় নামেন। তাদের অভিযোগ—বিদ্যুতের বিল হঠাৎ অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে। একই সঙ্গে অভিযোগ ওঠে ময়দা চোরাচালান বেড়ে যাওয়ার এবং সরকারি ভর্তুকিতে দেওয়া গমের তীব্র সংকটের।
পরিস্থিতি ধীরে ধীরে বদলাতে থাকে। ২০২৩ সালের আগস্টে এই বিচ্ছিন্ন অভিযোগগুলো মিলেমিশে সংগঠিত আন্দোলনে রূপ নেয়। ওই বছরের সেপ্টেম্বর মাসে শত শত কর্মী মুজাফফরাবাদে জড়ো হয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে গঠন করেন জেএএসি। এতে অঞ্চলটির সব জেলার প্রতিনিধিরা একত্রিত হন।
এরপর, ২০২৪ সালের মে মাসে আন্দোলন প্রথম বড় ধরনের সহিংস মোড় নেয়। সে সময় আন্দোলনকারীরা মুজাফফরাবাদের দিকে লংমার্চ শুরু করলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। ওই ঘটনায় অন্তত পাঁচজন নিহত হন, যাঁদের একজন ছিলেন পুলিশ সদস্য।
রক্তক্ষয়ী এই বিক্ষোভের পর আন্দোলনকারীরা সাময়িকভাবে কর্মসূচি স্থগিত করেন। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ আন্দোলনকারীদের দাবির কাছে নতি স্বীকার করলে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়। তিনি ময়দার দাম কমানো এবং বিদ্যুতের বিল হ্রাসে সম্মত হন। এ জন্য সরকার ভর্তুকি বাবদ হাজার হাজার কোটি রুপি বরাদ্দ দেয়, যাতে ময়দা সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে থাকে এবং বিদ্যুতের খরচ কমে।
তবে এই শান্তি বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। চলতি বছরের আগস্টে জেএএসি নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করে। এবার তারা শুধু অর্থনৈতিক দাবি নয়, আরও বিস্তৃত রাজনৈতিক ও সামাজিক ইস্যু সামনে আনে।
বিক্ষোভকারীরা কেন অসন্তুষ্ট, তাদের দাবি কী
জেএএসি সর্বশেষ যে দাবিপত্র দিয়েছে, তাতে মোট ৩৮টি দাবি আছে। এর মধ্যে আছে—বিনা খরচে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা চালু, বড় আকারের অবকাঠামো প্রকল্প নেওয়া থেকে শুরু করে প্রাদেশিক আইনসভার কাঠামো বদলের দাবি। তবে সবচেয়ে বড় দাবি হলো, ‘শাসক শ্রেণির বিশেষ সুবিধা’ বাতিল করা। আগের দাবি–দাওয়ায়ও বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়ে তোলা হয়েছিল।
জেএএসি বলছে, ২০২৪ সালের মে মাসের আন্দোলনের পর পাকিস্তান সরকার স্বীকার করেছিল যে, উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তাদের দেওয়া বিশেষ সুবিধা খতিয়ে দেখতে একটি বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠন করা হবে। বর্তমান নিয়মে মন্ত্রীসহ জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তারা দুটি সরকার প্রদত্ত গাড়ি, ব্যক্তিগত কর্মী ও দেহরক্ষী পান। এ ছাড়া সরকারি কাজের জন্য তাঁদের গাড়িতে সীমাহীন জ্বালানি সরবরাহ করা হয়।
এবারের দাবিতে নতুন করে জায়গা পেয়েছে আরেকটি বিষয়—স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের আইনসভায় শরণার্থীদের জন্য রাখা ১২টি আসন বাতিল করা। জেএএসির অভিযোগ, ১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর ভারতশাসিত কাশ্মীর থেকে আসা শরণার্থী ও তাদের উত্তরসূরিরা এখন একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক গোষ্ঠীতে পরিণত হয়েছে। তারাই উন্নয়ন তহবিলের বড় অংশ দখল করে রেখেছে।
দাবিপত্রে আরও বলা হয়েছে—২০২৩ ও ২০২৪ সালের বিক্ষোভের সময় যেসব মামলায় কর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছিল, সেগুলো প্রত্যাহার করতে হবে। এ ছাড়া কর অব্যাহতি, কর্মসংস্থান বাড়ানোসহ আরও বেশ কিছু দাবি তোলা হয়েছে। অবকাঠামো উন্নয়নকেও জেএএসি বড় গুরুত্ব দিয়েছে। তারা পাহাড়ি অঞ্চলকে পাকিস্তানের অন্যান্য জায়গার সঙ্গে যুক্ত করতে নতুন সেতু ও টানেল নির্মাণের দাবি তুলেছে। সেই সঙ্গে একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর স্থাপনের কথাও বলেছে।
মুজাফফরাবাদে আগে থেকেই একটি বিমানবন্দর আছে। তবে সেটি বহু বছর ধরে অচল। চলতি বছরের এপ্রিলে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ বিমানবন্দর চালু করার উদ্যোগ নিতে একটি কমিটি গঠন করেছেন। একই সঙ্গে মীরপুরে (যা ওই অঞ্চলের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর) আরেকটি বিমানবন্দর নির্মাণের সম্ভাব্যতা খতিয়ে দেখার নির্দেশও দিয়েছেন।
স্থানীয় সরকারের প্রতিক্রিয়া কী
স্থানীয় প্রশাসন যোগাযোগের সব ধরনের উপায় বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে এবং সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে। আরও বিতর্কিত বিষয় হলো—অঞ্চলটিতে আধা সামরিক বাহিনী এবং পাকিস্তানের অন্যান্য অঞ্চল থেকে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনের আদেশ দিয়েছে।
জেএএসি এই আধা সামরিক বাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছে। জেএএসির নেতা মীর সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, স্থানীয় পুলিশ ইতিমধ্যেই সেখানে উপস্থিত থাকায় ‘পাকিস্তানের মূল ভূখণ্ড থেকে আধা সামরিক বাহিনী পাঠানোর কোনো প্রয়োজন ছিল না।’
পাকিস্তানশাসিত কাশ্মীরের অর্থমন্ত্রী আব্দুল মজিদ খান স্বীকার করেছেন, এরই মধ্যে প্রথম রাউন্ডের আলোচনা হয়েছে। নতুন একটি বিশেষ কমিটি মুজাফফরাবাদে এসেছে যাতে তারা প্রতিবাদকারীদের অভিযোগগুলোর সমাধান করতে পারে। তিনি বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে, যখন তারা গত বছর প্রতিবাদ শুরু করেছিল, সবই ছিল বিদ্যুৎ ও আটা-ছোলার দামের কারণে এবং আমরা সেই বিষয়ে সম্মত হয়েছিলাম। তবে তাদেরও বুঝতে হবে, সবকিছু একরাতে ঘটতে পারে না, সময় লাগে।’
তবে মজিদ খান স্বীকার করেছেন, যে জেএএসির ৩৮টি প্রস্তাবের বেশির ভাগে সরকার সম্মত হলেও, দুটি বিতর্কিত বিষয়ে টানাপোড়েন চলছে। এগুলো হলো—শরণার্থী জন্য সংরক্ষিত ১২টি আসন বাতিল এবং ‘শাসক শ্রেণির সুবিধা’ বাতিলের বিষয়টি। তিনি শরণার্থীদের জন্য সংরক্ষিত আসন বাতিলের যুক্তি চ্যালেঞ্জ করেছেন। তিনি দেশভাগের সময় তারা যা হারিয়েছে তা উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরেছেন।
আব্দুল মজিদ খান বলেন, ‘এরা সেই মানুষদের পরিবার, যারা ভারতের জমিদার ও ব্যবসায়ী পরিবার থেকে এসেছে, কিন্তু পাকিস্তানে এসেছিল দারিদ্র্যের মধ্যে, তাদের সম্পদ ছেড়ে। কিন্তু জেএএসি মনে করে এদের জন্য আসন দেওয়া অন্যায়। আমরা যদি এই মানুষদের অধিকার না দিই, তবে তারা কেন এত ঝুঁকি নিয়ে এখানে এসেছিল?’
মন্ত্রী মজিদ নিজেই সেই ২৭ লাখ মানুষের মধ্যে একজন, যাদের পরিবার ভারতশাসিত কাশ্মীর থেকে এসেছিল। এ ছাড়া, তিনি পুনরায় প্রতিবাদের যুক্তি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন, বিশেষ করে যেহেতু জেএএসির পূর্বের দাবি বেশির ভাগ পূরণ হয়ে গেছে। তিনি বলেন, অনেক বিষয় নিয়ে স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে ইসলামাবাদে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে অর্থের জন্য আবেদন করতে হবে।
তিনি বলেন, ‘এখানে নাগরিকদের ওপর প্রায় কোনো কর নেই, বিদ্যুতের ট্যারিফও কমানো হয়েছে। এ ছাড়া পুরো অঞ্চলে ৫ হাজারের কম করদাতা আছেন, যার কারণে সরকারের রাজস্ব সংগ্রহ খুবই কম।’
এরপর কী ঘটতে পারে
বৃহস্পতিবার সরকারের প্রতিনিধি এবং জেএএসি সদস্যদের মধ্যে আলোচনায় কোনো সমাধানে পৌঁছানো যায়নি। আগামী শুক্রবার আরও এক রাউন্ড আলোচনা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। উভয় পক্ষই মুখে কথায় সংলাপে আগ্রহী থাকলেও, বারবার প্রতিশ্রুতি ও হতাশার চক্রের কারণে আস্থা অনেকটা কমে গেছে।
জেএএসি-এর অব্যাহত বিক্ষোভের পরও, সরকার বলছে তারা বেশির ভাগ দাবি মিটিয়েছে এবং সংবিধান ও নির্বাচনী সংস্কারের মতো বিষয়গুলো আইনসভার মাধ্যমে করতে হবে, যা এক রাতের মধ্যে সম্ভব নয়। মজিদ খান জানিয়েছেন, আলোচনায় যথার্থ অগ্রগতি হলে সরকার দ্রুত ইন্টারনেট ও মোবাইল সেবা পুনরায় চালু করবে। তিনি বলেন, ‘মাঠের বাস্তব পরিস্থিতির কারণে এগুলো সাময়িকভাবে সীমিত করা হয়েছিল।’
তিনি আরও বলেন, ‘আলোচক দল মুজাফফরাবাদে উপস্থিত থাকায় আমি নিশ্চিত যে, এই অচলাবস্থার সমাধান হবে এবং পরিস্থিতি শিগগিরই স্বাভাবিক হয়ে যাবে।’
পাকিস্তান-শাসিত আজাদ কাশ্মীরে টান-টান পরিস্থিতি বিরাজ করছে। টানা চার দিনের হরতাল পালিত হয়েছে গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত। এ সময় বিক্ষোভকারী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছে, তাদের মধ্যে তিনজন পুলিশ সদস্যও আছেন। আহত হয়েছে আরও অনেকে।
এরই মধ্যে পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকার একটি আলোচক কমিটি পাঠিয়েছে। বৃহস্পতিবার তারা আজাদ কাশ্মীরের রাজধানী মুজাফফরাবাদে পৌঁছে জম্মু-কাশ্মীর জয়েন্ট আওয়ামী অ্যাকশন কমিটির (জেএএসি) সঙ্গে বৈঠক শুরু করেছে। ব্যবসায়ী ও নাগরিক সমাজের সংগঠনগুলোর এই জোট স্থানীয়দের অসন্তোষের প্রতিনিধিত্ব করছে।
কর্মসূচির নেতৃত্ব দিচ্ছেন কর্মী শওকত নাবাজ মীর। তাঁর নেতৃত্বেই গত ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া অবরোধে পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীরের (আজাদ জম্মু অ্যান্ড কাশ্মীর বা এজেকে) কয়েকটি জেলা কার্যত অচল হয়ে গেছে। কেন্দ্র সরকার পুরো অঞ্চলের যোগাযোগব্যবস্থা বন্ধ করে দিয়েছে। ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে মোবাইল নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট একেবারেই অচল। ফলে সাধারণ মানুষ বাইরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পারছে না।
মুজাফফরাবাদের চিরচেনা ব্যস্ত বাজারগুলো বন্ধ। রাস্তায় নেই হকার বা গণপরিবহন। অঞ্চলটির প্রায় ৪০ লাখ মানুষ এখন অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। সরকার এক বিবৃতিতে বলেছে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে। জনগণকে ‘ভুয়া খবর’ ও ‘প্রচারিত মিথ্যা তথ্যের’ প্রভাবমুক্ত থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে। সরকারের দাবি, এগুলো ‘বিশেষ উদ্দেশ্যপূর্ণ এজেন্ডার’ অংশ। তবে, জেএএসি বলছে, সরকারের সঙ্গে তাদের ৩৮ দফা দাবির ব্যাপারে সমঝোতা না হওয়ায় এ আন্দোলন শুরু হয়েছে।
গত দুই বছরে এটি তৃতীয়বারের মতো বড় আন্দোলন। এর আগে একাধিকবার মাঠে নেমে নিজেদের শক্তি দেখিয়েছে এ জনভিত্তিক আন্দোলন। এবারও সেটি নতুন করে বড় আকার নিয়েছে।
আন্দোলনের বিস্ফোরণ ঘটল যেভাবে
হিমালয়ের পাদদেশের এই কাশ্মীর অঞ্চলকে কেন্দ্র করে স্বাধীনতার পর একাধিকবার যুদ্ধ করেছে ভারত ও পাকিস্তান। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই এ অঞ্চল নিয়ে দুই দেশের টানাপোড়েন চলছে। ভারত পুরো কাশ্মীরকে নিজেদের দাবি করে, অন্যদিকে পাকিস্তান দাবি করে ভারত নিয়ন্ত্রিত অংশ বাদে পুরো কাশ্মীরকে। চীনের দখলেও আছে কাশ্মীরের উত্তরাঞ্চলের দুটি ছোট অংশ।
২০১৭ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীরে বাস করে ৪০ লাখেরও বেশি মানুষ। আজাদ কাশ্মীর আধা স্বায়ত্তশাসিত ব্যবস্থা অনুযায়ী চলে। তাদের নিজস্ব প্রধানমন্ত্রী ও আইনসভা আছে।
বর্তমান অস্থিরতার সূত্রপাত ২০২৩ সালের মে মাসে। সে সময় স্থানীয় বাসিন্দারা রাস্তায় নামেন। তাদের অভিযোগ—বিদ্যুতের বিল হঠাৎ অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে। একই সঙ্গে অভিযোগ ওঠে ময়দা চোরাচালান বেড়ে যাওয়ার এবং সরকারি ভর্তুকিতে দেওয়া গমের তীব্র সংকটের।
পরিস্থিতি ধীরে ধীরে বদলাতে থাকে। ২০২৩ সালের আগস্টে এই বিচ্ছিন্ন অভিযোগগুলো মিলেমিশে সংগঠিত আন্দোলনে রূপ নেয়। ওই বছরের সেপ্টেম্বর মাসে শত শত কর্মী মুজাফফরাবাদে জড়ো হয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে গঠন করেন জেএএসি। এতে অঞ্চলটির সব জেলার প্রতিনিধিরা একত্রিত হন।
এরপর, ২০২৪ সালের মে মাসে আন্দোলন প্রথম বড় ধরনের সহিংস মোড় নেয়। সে সময় আন্দোলনকারীরা মুজাফফরাবাদের দিকে লংমার্চ শুরু করলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। ওই ঘটনায় অন্তত পাঁচজন নিহত হন, যাঁদের একজন ছিলেন পুলিশ সদস্য।
রক্তক্ষয়ী এই বিক্ষোভের পর আন্দোলনকারীরা সাময়িকভাবে কর্মসূচি স্থগিত করেন। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ আন্দোলনকারীদের দাবির কাছে নতি স্বীকার করলে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়। তিনি ময়দার দাম কমানো এবং বিদ্যুতের বিল হ্রাসে সম্মত হন। এ জন্য সরকার ভর্তুকি বাবদ হাজার হাজার কোটি রুপি বরাদ্দ দেয়, যাতে ময়দা সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে থাকে এবং বিদ্যুতের খরচ কমে।
তবে এই শান্তি বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। চলতি বছরের আগস্টে জেএএসি নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করে। এবার তারা শুধু অর্থনৈতিক দাবি নয়, আরও বিস্তৃত রাজনৈতিক ও সামাজিক ইস্যু সামনে আনে।
বিক্ষোভকারীরা কেন অসন্তুষ্ট, তাদের দাবি কী
জেএএসি সর্বশেষ যে দাবিপত্র দিয়েছে, তাতে মোট ৩৮টি দাবি আছে। এর মধ্যে আছে—বিনা খরচে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা চালু, বড় আকারের অবকাঠামো প্রকল্প নেওয়া থেকে শুরু করে প্রাদেশিক আইনসভার কাঠামো বদলের দাবি। তবে সবচেয়ে বড় দাবি হলো, ‘শাসক শ্রেণির বিশেষ সুবিধা’ বাতিল করা। আগের দাবি–দাওয়ায়ও বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়ে তোলা হয়েছিল।
জেএএসি বলছে, ২০২৪ সালের মে মাসের আন্দোলনের পর পাকিস্তান সরকার স্বীকার করেছিল যে, উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তাদের দেওয়া বিশেষ সুবিধা খতিয়ে দেখতে একটি বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠন করা হবে। বর্তমান নিয়মে মন্ত্রীসহ জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তারা দুটি সরকার প্রদত্ত গাড়ি, ব্যক্তিগত কর্মী ও দেহরক্ষী পান। এ ছাড়া সরকারি কাজের জন্য তাঁদের গাড়িতে সীমাহীন জ্বালানি সরবরাহ করা হয়।
এবারের দাবিতে নতুন করে জায়গা পেয়েছে আরেকটি বিষয়—স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের আইনসভায় শরণার্থীদের জন্য রাখা ১২টি আসন বাতিল করা। জেএএসির অভিযোগ, ১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর ভারতশাসিত কাশ্মীর থেকে আসা শরণার্থী ও তাদের উত্তরসূরিরা এখন একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক গোষ্ঠীতে পরিণত হয়েছে। তারাই উন্নয়ন তহবিলের বড় অংশ দখল করে রেখেছে।
দাবিপত্রে আরও বলা হয়েছে—২০২৩ ও ২০২৪ সালের বিক্ষোভের সময় যেসব মামলায় কর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছিল, সেগুলো প্রত্যাহার করতে হবে। এ ছাড়া কর অব্যাহতি, কর্মসংস্থান বাড়ানোসহ আরও বেশ কিছু দাবি তোলা হয়েছে। অবকাঠামো উন্নয়নকেও জেএএসি বড় গুরুত্ব দিয়েছে। তারা পাহাড়ি অঞ্চলকে পাকিস্তানের অন্যান্য জায়গার সঙ্গে যুক্ত করতে নতুন সেতু ও টানেল নির্মাণের দাবি তুলেছে। সেই সঙ্গে একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর স্থাপনের কথাও বলেছে।
মুজাফফরাবাদে আগে থেকেই একটি বিমানবন্দর আছে। তবে সেটি বহু বছর ধরে অচল। চলতি বছরের এপ্রিলে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ বিমানবন্দর চালু করার উদ্যোগ নিতে একটি কমিটি গঠন করেছেন। একই সঙ্গে মীরপুরে (যা ওই অঞ্চলের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর) আরেকটি বিমানবন্দর নির্মাণের সম্ভাব্যতা খতিয়ে দেখার নির্দেশও দিয়েছেন।
স্থানীয় সরকারের প্রতিক্রিয়া কী
স্থানীয় প্রশাসন যোগাযোগের সব ধরনের উপায় বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে এবং সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে। আরও বিতর্কিত বিষয় হলো—অঞ্চলটিতে আধা সামরিক বাহিনী এবং পাকিস্তানের অন্যান্য অঞ্চল থেকে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনের আদেশ দিয়েছে।
জেএএসি এই আধা সামরিক বাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছে। জেএএসির নেতা মীর সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, স্থানীয় পুলিশ ইতিমধ্যেই সেখানে উপস্থিত থাকায় ‘পাকিস্তানের মূল ভূখণ্ড থেকে আধা সামরিক বাহিনী পাঠানোর কোনো প্রয়োজন ছিল না।’
পাকিস্তানশাসিত কাশ্মীরের অর্থমন্ত্রী আব্দুল মজিদ খান স্বীকার করেছেন, এরই মধ্যে প্রথম রাউন্ডের আলোচনা হয়েছে। নতুন একটি বিশেষ কমিটি মুজাফফরাবাদে এসেছে যাতে তারা প্রতিবাদকারীদের অভিযোগগুলোর সমাধান করতে পারে। তিনি বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে, যখন তারা গত বছর প্রতিবাদ শুরু করেছিল, সবই ছিল বিদ্যুৎ ও আটা-ছোলার দামের কারণে এবং আমরা সেই বিষয়ে সম্মত হয়েছিলাম। তবে তাদেরও বুঝতে হবে, সবকিছু একরাতে ঘটতে পারে না, সময় লাগে।’
তবে মজিদ খান স্বীকার করেছেন, যে জেএএসির ৩৮টি প্রস্তাবের বেশির ভাগে সরকার সম্মত হলেও, দুটি বিতর্কিত বিষয়ে টানাপোড়েন চলছে। এগুলো হলো—শরণার্থী জন্য সংরক্ষিত ১২টি আসন বাতিল এবং ‘শাসক শ্রেণির সুবিধা’ বাতিলের বিষয়টি। তিনি শরণার্থীদের জন্য সংরক্ষিত আসন বাতিলের যুক্তি চ্যালেঞ্জ করেছেন। তিনি দেশভাগের সময় তারা যা হারিয়েছে তা উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরেছেন।
আব্দুল মজিদ খান বলেন, ‘এরা সেই মানুষদের পরিবার, যারা ভারতের জমিদার ও ব্যবসায়ী পরিবার থেকে এসেছে, কিন্তু পাকিস্তানে এসেছিল দারিদ্র্যের মধ্যে, তাদের সম্পদ ছেড়ে। কিন্তু জেএএসি মনে করে এদের জন্য আসন দেওয়া অন্যায়। আমরা যদি এই মানুষদের অধিকার না দিই, তবে তারা কেন এত ঝুঁকি নিয়ে এখানে এসেছিল?’
মন্ত্রী মজিদ নিজেই সেই ২৭ লাখ মানুষের মধ্যে একজন, যাদের পরিবার ভারতশাসিত কাশ্মীর থেকে এসেছিল। এ ছাড়া, তিনি পুনরায় প্রতিবাদের যুক্তি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন, বিশেষ করে যেহেতু জেএএসির পূর্বের দাবি বেশির ভাগ পূরণ হয়ে গেছে। তিনি বলেন, অনেক বিষয় নিয়ে স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে ইসলামাবাদে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে অর্থের জন্য আবেদন করতে হবে।
তিনি বলেন, ‘এখানে নাগরিকদের ওপর প্রায় কোনো কর নেই, বিদ্যুতের ট্যারিফও কমানো হয়েছে। এ ছাড়া পুরো অঞ্চলে ৫ হাজারের কম করদাতা আছেন, যার কারণে সরকারের রাজস্ব সংগ্রহ খুবই কম।’
এরপর কী ঘটতে পারে
বৃহস্পতিবার সরকারের প্রতিনিধি এবং জেএএসি সদস্যদের মধ্যে আলোচনায় কোনো সমাধানে পৌঁছানো যায়নি। আগামী শুক্রবার আরও এক রাউন্ড আলোচনা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। উভয় পক্ষই মুখে কথায় সংলাপে আগ্রহী থাকলেও, বারবার প্রতিশ্রুতি ও হতাশার চক্রের কারণে আস্থা অনেকটা কমে গেছে।
জেএএসি-এর অব্যাহত বিক্ষোভের পরও, সরকার বলছে তারা বেশির ভাগ দাবি মিটিয়েছে এবং সংবিধান ও নির্বাচনী সংস্কারের মতো বিষয়গুলো আইনসভার মাধ্যমে করতে হবে, যা এক রাতের মধ্যে সম্ভব নয়। মজিদ খান জানিয়েছেন, আলোচনায় যথার্থ অগ্রগতি হলে সরকার দ্রুত ইন্টারনেট ও মোবাইল সেবা পুনরায় চালু করবে। তিনি বলেন, ‘মাঠের বাস্তব পরিস্থিতির কারণে এগুলো সাময়িকভাবে সীমিত করা হয়েছিল।’
তিনি আরও বলেন, ‘আলোচক দল মুজাফফরাবাদে উপস্থিত থাকায় আমি নিশ্চিত যে, এই অচলাবস্থার সমাধান হবে এবং পরিস্থিতি শিগগিরই স্বাভাবিক হয়ে যাবে।’
পোল্যান্ডের আকাশে রুশ ড্রোন; এস্তোনিয়ার আকাশসীমায় মিগ যুদ্ধবিমান; বাল্টিক সাগরের গভীরে টেলিকম কেব্ল বিনষ্টীকরণ; সাইবার ও ড্রোন হামলায় বিমানবন্দরগুলোতে অচলাবস্থা; রহস্যজনক বিস্ফোরণ ও হত্যাকাণ্ড; নির্বাচন বিঘ্ন ঘটাতে বটসেনাদের প্রোপাগান্ডা—এসবের কোনোটিই এককভাবে যুদ্ধ ঘোষণা করার মতো কারণ নয়, কিন্তু সব
১ ঘণ্টা আগেভারতীয়-আমেরিকানরা সংবাদপত্রের সম্পাদকীয় বোর্ড, থিঙ্কট্যাংক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন। রাজনৈতিক প্রচারণায় অর্থ অনুদান দেন, সিনেটরদের পরামর্শ দেন, নীতিনির্ধারণে ভূমিকা রাখেন। অথচ এক মার্কিন প্রতিনিধি ভারতীয় এমপিদের জানিয়েছেন—তাঁর অফিসে ভারতের বিরুদ্ধে প্রশাসনের পদক্ষেপ নিয়ে কোনো...
৭ ঘণ্টা আগেমার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজা যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছেন এবং যেটি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যে প্রস্তাব মেনে নেওয়ার কথা বলেছেন, তা হয়তো দীর্ঘদিন ধরে ফিলিস্তিনিরা যা আশা করেছিলেন তা দিতে পারবে না। এমনটাই বলছেন বিশ্লেষকেরা।
১ দিন আগেযুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত গাজা যুদ্ধবিরতির পরিকল্পনা মেনে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ওয়াশিংটনে ট্রাম্পের পাশে দাঁড়িয়ে তিনি সমর্থন জানানোর পর ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই আবার হিব্রু ভাষায় ইসরায়েলি জনগণের উদ্দেশে
২ দিন আগে