Ajker Patrika

রহস্যময় গ্রামের নারীরাজ্য

শাকেরা তাসনীম ইরা, ঢাকা
আপডেট : ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৯: ৪১
রহস্যময় গ্রামের নারীরাজ্য

হিমালয়ের পাদদেশের নয়নাভিরাম হ্রদ লুগু। চীনের ইউনান প্রদেশে অবস্থিত এই হ্রদ। এর স্বচ্ছ জলের ধার ঘেঁষে পৌঁছে যাওয়া যায় রহস্যময় এক গ্রামে। সেই গ্রামে বসবাস করে ‘মসুও’ নামের এক জনগোষ্ঠী। ভ্রমণপিয়াসি ও গবেষকদের কাছে বিভিন্ন কারণে রহস্যময় হয়ে ওঠা এই গ্রাম খেতাব পেয়েছে ‘দ্য কিংডম অব উইমেন’ বা নারীরাজ্য নামে।

সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২ হাজার ৭০০ মিটার উঁচুতে অবস্থিত এই গ্রামে মসুও জনগোষ্ঠীর সদস্যসংখ্যা প্রায় ৪০ হাজার। গ্রামটিকে চারপাশ থেকে ঘিরে রেখেছে উঁচু পাহাড়। এই গ্রামে বসবাস করা মসুওরা চীনের সর্বশেষ ও বিশ্বের অন্যতম মাতৃতান্ত্রিক জনগোষ্ঠী।

মসুও সম্প্রদায়কে শাসন করেন একজন রানি। তিনিই সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। এদের ভাষায় তাঁকে বলা হয় ‘আহ মি’। মসুও আদিবাসীদের রয়েছে নিজস্ব সংস্কৃতি। এর মধ্যে প্রধানতম হচ্ছে বিবাহপদ্ধতি। তাদের বিবাহপদ্ধতিকে বলে ‘জউহুন’। ইংরেজি অনুবাদে এর অর্থ দাঁড়ায় ‘ওয়াকিং ম্যারেজ’। বাংলায় হয়তো এর অর্থ করা যেতে পারে ‘হাঁটতে চলতে বিবাহ’।

মসুওদের প্রথা অনুসারে, যখন কোনো মেয়ে বিয়ের বয়সে উপনীত হন, তখন তিনি নিজের ইচ্ছেমতো জীবনসঙ্গী বাছাই করে নিতে পারেন। একই সঙ্গে অনেক স্বামীও গ্রহণ করতে পারেন তিনি। গবেষকেরা এই পদ্ধতির নাম দিয়েছেন ফ্রি লাভ। আবার এখানকার নারীরা যখন ইচ্ছা বিয়ে ভেঙে দিতে পারেন।

মসুও জনগোষ্ঠীর দুই নারী।পাশাপাশি নারীরা ঘরে স্বামী থাকা সত্ত্বেও আরও অনেক পুরুষ সঙ্গী রাখতে পারেন। কারণ মসুও সমাজ বিষয়টিকে মোটেও নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখে না। শুধু সন্তান লালন-পালন ও পশু শিকারের কাজে সংশ্লিষ্টতা ছাড়া মসুও সমাজে পুরুষদের তেমন কোনো কাজ নেই।

মসুও সম্প্রদায়ে সন্তানের অভিভাবক নারী। মায়ের পরে মামা-খালারা সন্তানের অভিভাবকত্বের বিবেচনায় আসেন প্রথম। তাঁরাই পিতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হন; অর্থাৎ সন্তানের ওপর পিতার অধিকার থাকে খুব সামান্য পরিসরে। এমনকি বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সন্তানেরা তাদের পিতার নামই জানে না। মাতৃপরিচয়ই সেখানে মুখ্য। মসুওরা তাদের নামের শেষে মায়ের বংশপরিচয় যুক্ত করে। 

মসুও সমাজে সম্পদের উত্তরাধিকারীও নারীদের বংশ অনুসারে নির্ধারিত হয়ে থাকে। মূলত তাদের বিবাহপদ্ধতির বৈচিত্র্যের কারণে সন্তানের পিতৃপরিচয় অনেক ক্ষেত্রেই পাওয়া যায় না। তবে এ নিয়ে মাথাব্যথা নেই এই সম্প্রদায়ের কারোরই। তাদের ওয়াকিং ম্যারেজ পদ্ধতিতে স্বামী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে পুরুষের সম্পদ কোনো ভূমিকা পালন করে না। মসুও নারীদের মতে, কেউ কাউকে পছন্দ করলে সেখানে সম্পদের ব্যাপারটি কখনোই মুখ্য ভূমিকা পালন করে না।

মসুও শিশুরা মায়ের পরিবারে বড় হয়। বড় হওয়ার আগে যদি তার পিতা-মাতার মধ্যে ‘তালাক’ হয়ে যায়, তবু সন্তানের ওপর তার কোনো প্রভাব পড়ে না। পরিবার পরিচালনার পাশাপাশি ব্যবসায়িক কাজেও নারীদের সিদ্ধান্ত এই সম্প্রদায়ে চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হয়। মসুওদের প্রধান অর্থনৈতিক উৎস কৃষি। নারীরাই সে ক্ষেত্রে কৃষক।

তাঁরা প্রতিদিন ৭ ঘণ্টা ও বছরে ৭ মাস সময় কৃষিকাজে ব্যয় করেন। জমি চাষের পাশাপাশি তাঁরা পশুপালনও করে থাকেন। তবে পশুপালনে নারীদের পাশাপাশি পুরুষদের সম্পৃক্ততা রয়েছে। অনেক পুরুষ ও নারী লুগু হ্রদ থেকে মাছ শিকার করেও জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন।

মসুওদের মতে, বিবাহপদ্ধতির ভিন্নতার কারণে অন্যান্য সমাজ তাদের নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখে। কিন্তু বাস্তব চিত্র ঠিক তা নয়। অধিকাংশ মসুও জীবনে একজন সঙ্গী গ্রহণ করেন এবং তাঁদের সম্পর্ক আজীবন টিকে থাকে। মূলত মাতৃপ্রধান সমাজ বলে পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার বেশির ভাগ জনগোষ্ঠী তাদের প্রতি নেতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করে থাকে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরকারি বাসভবনে একাই থাকতেন শরীয়তপুরের ডিসি, পরিবার থাকত ঢাকায়

‘তোরা তো পুলিশ মারছিস, ফাঁড়ি জ্বালাইছিস’ বলেই জুলাই যোদ্ধাকে মারধর

কারাগারে ১০৫ মন্ত্রী-এমপি

বুশেহরে হামলা হলে মধ্যপ্রাচ্যে ‘ফুকুশিমা’ ঘটতে পারে, বিশ্লেষকদের হুঁশিয়ারি

ইউআইইউ শিক্ষার্থীদের বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত ও পুলিশ কর্মকর্তা প্রত্যাহার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত