বাল্যবিবাহ

নারী নির্যাতন বন্ধে থানার একজন নারী কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়ার পাশাপাশি প্রতিটি জেলায় অন্তত একটি করে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার স্থাপনের প্রস্তাব করেন আ স ম ফিরোজ। মাদকের বিস্তার রোধেও প্রতিটি থানায় একজন কর্মকর্তা নির্ধারণ করে দেওয়ার প্রস্তাব করেছেন তিনি। 

নাটোরের গুরুদাসপুরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ৬ষ্ট শ্রেণিতে পড়ুয়া এক শিক্ষার্থীর বাল্যবিবাহ বন্ধ করেছেন গুরুদাসপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তমাল হোসেন। গতকাল শনিবার দিবাগত রাতে উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের জুমাইনগর এলাকায় ওই বাল্যবিবাহ বন্ধ করা হয়। 

করোনাকালে বাগেরহাটে আশঙ্কাজনক হারে বাল্যবিবাহ বেড়েছে। বাল্যবিবাহের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বিচ্ছেদও বেড়েছে উপকূলীয় এই জেলায়। সরকারি তথ্য অনুযায়ী করোনাকালীন বাগেরহাটে ৩ হাজার ১৭৮ জন শিক্ষার্থী বাল্যবিবাহের শিকার হয়েছে।

বরগুনার সদর উপজেলার ঢলুয়া ইউনিয়নের পোটকাখালী গ্রামের অভিভাবকের বক্তব্য, ‘দুইডা বচ্ছর ইশকুল বন্ধ। মাইয়া ডাঙ্গর অইছে, হেই চিন্তায় ঘুম আয়না। পোলাপানে জ্বালায়। একটা বিপদ ঘডাইয়া হালাইলে, ইজ্জাত থাকপে না। হের চাইতে পোলা পাইছি, বিয়া দিয়া দিছি।’ অর্থাৎ, নিরাপত্তার অভাবই এখানে বাল্যবিয়ের নিয়ামক হয়ে উঠেছে।

ভাতিজির বয়স হয়নি ঠিক কিন্তু ভালো পাত্র পেয়ে বিয়ে দিয়েছি। তাছাড়া বিদ্যালয়ও তো অনেক দিন বন্ধ ছিল।

নাগেশ্বরী উপজেলায় করোনাকালীন ছুটিতে শুধু মাধ্যমিকে পড়ুয়া ৫৭৭ জন শিক্ষার্থী বাল্য বিয়ের শিকার হয়েছে। বই-খাতা-কলম ফেলে দুই হাতে পরেছেন মেহেদি। শিক্ষিত জাতি গঠনের বদলে জীবনে বড় হওয়ার স্বপ্ন ছেড়ে অপ্রাপ্ত বয়সেই এখন তারা সামলাচ্ছেন সংসার। 

আয়োজন সম্পন্ন। অপেক্ষা ছিল শুধু বরের। বর এলেই কবুল পড়িয়ে কনেকে শ্বশুরবাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হবে। সেই মুহূর্তেই উপস্থিত হয় পুলিশ। পুলিশ আসার সংবাদ বাতাসের গতিতে পৌঁছে যায় বরের বাড়ি। তারা আর এদিক মাড়াননি। বাল্যবিয়ে থেকে রক্ষা পায় ১৪ বছর বয়সী নবম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী।

করোনা শুরুর পর পটুয়াখালীসহ উপকূলীয় এলাকায় আশঙ্কাজনক হারে বাল্য বিয়ে বেড়েছে। করোনার ছুটিতে এত বেশি বাল্যবিবাহ হয়েছে যে বেশ কয়েকটি বিদ্যালয়ের ক্লাসে ছাত্রী সংখ্যা অনেক কমে গেছে। বিয়ে হওয়া শিক্ষার্থীদের স্কুলে ফেরাতে শিক্ষকেরা চেষ্টা চালাচ্ছেন। 

একদিনের পত্রিকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষার্থীসংক্রান্ত তিনটি খবরই আশা নয়, আশঙ্কা তৈরি করবে পাঠকের মনে। প্রথম খবরের শিরোনাম ‘স্কুলে অনুপস্থিতি আশঙ্কাজনক’। এ খবরে বলা হয়েছে, করোনার কারণে প্রায় দেড় বছর বন্ধ থাকার পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিশেষ করে স্কুল-কলেজ খুললেও শিক্ষার্থী উপস্থিতির হার আশানুরূপ নয়।

‘অনেক দিন পর স্কুল খুলল। সব বান্ধবীর সঙ্গে মজা করব, আনন্দ করব। কিন্তু সেটা আর হলো না। স্কুল এসে দেখলাম আমার ২৮ জন বান্ধবী স্কুলে আর আসেনা। মন খারাপ হলো। পরে জানতে পারি তাদের সবার বিয়ে দিয়েছে পরিবার। স্কুলের ৮৫ থেকে ৯০ জনের বিয়ে হয়ে গেছে। জানি না আমার ভাগ্যে কি হবে!’

সবকিছুই ঠিকঠাক। সন্ধ্যায় নাবালিকা কন্যার বাড়িতে হাজির হওয়ার কথা বর ও বরযাত্রীর। রান্না ও আয়োজন শেষ প্রায়। অপেক্ষা শুধু বিয়ের। বর ও কাজি আসার অপেক্ষায় তখন বাড়ির সবাই। তবে বর-কাজি নয় অসলো পুলিশ। আর এর সঙ্গেই ভেস্তে গেল সকল আয়োজন। বাল্যবিবাহের হাত থেকে রক্ষা পেল ১০ম শ্রেণির এক ছাত্রী। মুচলেকা দিয়ে রক্ষ

মাত্র ১৪ বছর বয়সে ছেলের বিয়ে মেনে নিতেই পারছেন না কৃষক মুজিবর। মেয়েপক্ষ সামাজিকভাবে ক্ষমতাধর। মুজিবর বলেন, একমাত্র ছেলেকে স্বপ্ন ছিল বড় করবো, পড়াশোনা শেষ করে একটা ভালো চাকরি করবে, পরিবারের হাল ধরবে। সব কষ্ট আমার শেষ করে দিল ছেলেটা। ওই মেয়ের বয়সও তো কম, মাত্র এইটে পড়ে। তার পরিবারই বা কেমন করে এটা মেন

পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়েছিল গেল বছরের ৩ সেপ্টেম্বর। তবে মেয়ের বয়স কম থাকায় বিয়ের কাবিন ছিল না। অভ্যন্তরীণ কারণে আমাদের সামাজিকভাবে ডিভোর্স হয়েছে। মাতব্বররা দুই লাখ টাকা জরিমানা ধরেছিল। আমি পরিশোধ করেছি।

ভারতের রাজস্থান বিধানসভায় বাধ্যতামূলক বিবাহ নথিভুক্তিকরণ (সংশোধনী) বিল ২০২১ পাস হয়েছে। আজ শনিবার বিলটি পাস হয়।   এর ফলে এখন থেকে রাজস্থানে শিশু এবং অপ্রাপ্তবয়স্কদের বিবাহও রেজিস্ট্রার করা যাবে। 

পাকুন্দিয়ায় উপজেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে দুই স্কুলছাত্রীর বাল্যবিবাহ বন্ধ হয়েছে। গতকাল শুক্রবার দুপুরে অভিযান চালিয়ে দুই কিশোরীর বিবাহ বন্ধ করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রোজলিন শহীদ চৌধুরী।

করোনার মহামারিতে প্রায় দেড় বছর পর গত ১২ সেপ্টেম্বর খুলেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। খোলার আনন্দ-উল্লাসে নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে আসেন। কিন্তু চিত্র ছিল পুরোই ভিন্ন

উপজেলার ১০৫টি মাধ্যমিক স্কুল ও মাদ্রাসার দেড় শতাধিক ছাত্রী বাল্যবিবাহের শিকার হয়েছে। এসব বিয়ের আবার কোনো কাবিননামাও হচ্ছে না বলে জানিয়েছে কয়েকটি সূত্র। নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে লিখিতভাবে উভয় পক্ষের ১৮ বছর পূর্ণ হলে ওই ছাত্রীদের কাবিননামা হবে উল্লেখ করে বিয়ের কাজ সম্পন্ন হচ্ছে।