Ajker Patrika

বন্ধের মধ্যে শুধু নাগেশ্বরী উপজেলাতেই ৫৭৭ শিক্ষার্থীর বাল্যবিয়ে

নাগেশ্বরী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি
বন্ধের মধ্যে শুধু নাগেশ্বরী উপজেলাতেই ৫৭৭ শিক্ষার্থীর বাল্যবিয়ে

কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলায় করোনাকালীন ছুটিতে শুধু মাধ্যমিকে পড়ুয়া ৫৭৭ শিক্ষার্থী বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে। বই-খাতা-কলম ফেলে দুই হাতে পরেছে মেহেদি। শিক্ষিত জাতি গঠনের বদলে জীবনে বড় হওয়ার স্বপ্ন ছেড়ে অপ্রাপ্ত বয়সেই এখন তারা সামলাচ্ছে সংসার। 

উপজেলার ভিতরবন্দ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মামুনুর রশিদ জানান, করোনার ভাইরাসের কারণে দীর্ঘ দেড় বছরেরও বেশি সময় পর গত ১২ সেপ্টেম্বর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হয়। ক্লাস নিয়মিত শুরু হওয়ার পর দেখা গেছে সপ্তম শ্রেণির ৩ জন, অষ্টম শ্রেণির ২ জন ও নবম শ্রেণির ৪ জন ছাত্রী বিদ্যালয়ে আসছে না। পরে তাদের বান্ধবীদের কাছ থেকে জানা যায় যে ওই অনুপস্থিত ৯ জন ছাত্রীর বিয়ে হয়ে গেছে। এটা প্রচণ্ড উদ্বেগের একটা বিষয়। এই দুঃসময়ে অভিভাবকেরা শিক্ষকদের অগোচরে এ কাজগুলো করেছেন। এতে করে তারা মূলত তাদের মেয়েদের সম্ভাবনাকে গলা টিপে হত্যা করেছেন। 

কচাকাটা বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ফজলুর রহমান বলেন, বিদ্যালয়ের অনুপস্থিত শিক্ষার্থীর মধ্যে সাতজনের বিয়ে হয়েছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে। এই বাল্যবিয়ের কারণে স্কুলে আসা ছেড়ে দিয়েছেন তারা। এর সংখ্যা আরও বেশি বলে ধারণা করা হচ্ছে। এদিকে দশ-বারো জন শিক্ষার্থী এখনো নিয়মিত ক্লাসে আসছেন, যাদের বিয়ে হয়ে গেছে। 

পশ্চিম রামখানা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক আবু আক্কাস সিদ্দিক জানান, তার প্রতিষ্ঠানে এ পর্যন্ত নবম ও দশম শ্রেণির ৭ জন শিক্ষার্থীর বাল্য বিয়ে হওয়ার তথ্য পেয়েছেন তারা। 

এদিকে বাল্যবিয়ের সঠিক পরিসংখ্যান নিয়ে লুকোচুরি চলছে বলে ধারণা করছেন শিক্ষিত সচেতন ব্যক্তিবর্গ। বিদ্যালয়গুলো এবং প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাল্য বিয়ের তথ্য লুকানো হচ্ছে। প্রশাসনের দেওয়া তথ্যের চেয়ে প্রকৃত বাল্যবিয়ের সংখ্যা আরও অনেক বেশি মনে করেন তাঁরা। 
 
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম জানান, করোনার কারণে স্কুল বন্ধ থাকার সুযোগে উপজেলার ৫৯ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ৩৮ মাদ্রাসার ৫৭৭ জন শিক্ষার্থীর বাল্যবিয়ে সম্পন্ন হয়েছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে। আরও তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। এই সংখ্যা বাড়তে পারে। স্কুলগুলোতে গিয়ে শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে, যাতে তারা শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণা দিয়ে বাল্য বিয়ে প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। 
 
এদিকে মেয়ে শিশুরা যাতে বাল্যবিয়ের শিকার না হয় এবং নিজেদের জীবনমান উন্নয়ন করতে পারে সেই বিষয়ে উপজেলায় কাজ করছে আরডিআরএস বাংলাদেশ নামে একটি প্রতিষ্ঠান। শিক্ষার্থীদের সক্ষমতা বাড়াতে উপজেলার ৪৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাজ করছে তাদের বিল্ডিং বেটার ফিউচার ফর গার্লস (বিবিএফজি) প্রকল্প। 

এই প্রকল্পের উপজেলা সমন্বয়কারী রবিউল ইসলাম বলেন, আমরা বাল্যবিয়ে নিরোধ আইন-২০১৭ বাস্তবায়নে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি ১ হাজার ইমাম, কাজী, ঘটক ও পুরোহিতকে প্রশিক্ষণ দিয়েছি। তারপরেও করোনা পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে এতগুলো বাল্যবিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। এতে আমরা মর্মাহত। 
 
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুর আহমেদ মাছুম বলেন, আমরা তথ্য সংগ্রহ করছি। অধিকাংশ বাল্যবিয়ে আমাদের অঞ্চলের বাইরে সম্পন্ন হওয়ায় যথাযথ তথ্য প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে না। তথ্য প্রমাণ পেলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাকা দিয়ে নারীর চাবুকের ঘা খাচ্ছিলেন পুরুষ, দুজন গ্রেপ্তার

ভারতের সঙ্গে সংঘাতে পাকিস্তানের ভাগ্যনিয়ন্তা সেনাপ্রধান জেনারেল মুনির

প্রবাসীর রেমিট্যান্সের অর্থ আত্মসাৎ, নারী ব্যাংক কর্মকর্তা কারাগারে

পাকিস্তানে কীভাবে হামলা চালাতে পারে ভারত, ইতিহাস যা বলছে

জনবল-সরঞ্জাম বেশি হলেও সমরশক্তিতে ভারত কি পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত