Ajker Patrika

রাষ্ট্র মেরামতে বিএনপির ৩১ দফা রূপরেখা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১৩ জুলাই ২০২৩, ১৭: ৪২
রাষ্ট্র মেরামতে বিএনপির ৩১ দফা রূপরেখা

সংবিধান ও রাষ্ট্রব্যবস্থার গণতান্ত্রিক সংস্কার এবং অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে রাষ্ট্র মেরামতে ৩১ দফা রূপরেখা ঘোষণা করেছে বিএনপি। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই রূপরেখা ঘোষণা করেন।

সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল বলেন, সংবিধান ও রাষ্ট্রব্যবস্থার গণতান্ত্রিক সংস্কারের মাধ্যমে জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি, ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ৩১ রূপরেখা ঘোষণা করা হলো। সরকার পরিবর্তন বা নির্বাচনের জন্য নয়, রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের জন্য এই রূপরেখা দেওয়া হয়েছে। জনগণের চাহিদা পরিবর্তনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বিএনপিকে জনকল্যাণমূলক সংগঠন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে রূপরেখা চূড়ান্ত করা হয়েছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, বিভিন্ন দল, জনগণ, গণমাধ্যমের প্রস্তাবনা বিবেচনায় রূপরেখা তৈরি করা হয়েছে। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে আন্দোলনে থাকা দলগুলো থেকে জাতীয় ঐকমত্যের সরকার গঠন করা হবে। 

ঘোষিত ৩১ দফা রূপরেখা

১. প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধের রাজনীতির বিপরীতে সকল মত ও পথের সমন্বয়ে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, বৈষম্যহীন ও সম্প্রীতিমূলক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা হবে। এ জন্য অব্যাহত আলোচনা, মতবিনিময় ও পারস্পরিক বোঝাপড়ার ভিত্তিতে ভবিষ্যৎমুখী এক নতুন ধারার সামাজিক চুক্তিতে পৌঁছাতে হবে। 

২. বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠায় এবং স্বচ্ছ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে স্থায়ী সাংবিধানিক ও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার লক্ষ্যে একটি ‘নির্বাচনকালীন দলনিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার’ ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হবে। 

৩. সরকারের প্রধানমন্ত্রী এবং মন্ত্রিসভার নির্বাহী ক্ষমতায় ভারসাম্য আনয়ন করা হবে। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নির্বাহী বিভাগ, আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগের ক্ষমতা, দায়িত্ব ও কর্তব্যের সুসমন্বয় করা হবে। 

৪. পরপর দুই টার্মের অতিরিক্ত কেউ প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করতে পারবে না। 

৫. বিদ্যমান সংসদীয় ব্যবস্থার পাশাপাশি বিশেষজ্ঞ জ্ঞানের সমন্বয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার লক্ষ্যে দেশের বিশিষ্ট নাগরিক, প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ, পেশাজীবী, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, সমাজবিজ্ঞানী ও প্রশাসনিক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের সমন্বয়ে সংসদে ‘উচ্চকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা’ প্রবর্তন করা হবে। 

৬. আস্থা ভোট, অর্থবিল, সংবিধান সংশোধনী বিল এবং রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন জড়িত—এমন সব বিষয় ব্যতীত অন্য সব বিষয়ে সংসদ সদস্যদের স্বাধীনভাবে মতামত প্রদানের সুযোগ নিশ্চিতের লক্ষ্যে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন করার বিষয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে (দেখা হবে) বিবেচনা করা হবে। 

৭. রাজনৈতিক দলসমূহের মতামত এবং বিশিষ্টজনের অভিমতের ভিত্তিতে স্বাধীন, দক্ষ, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও দৃঢ়চিত্ত ব্যক্তিদের সমন্বয়ে একটি কার্যকর নির্বাচন কমিশন গঠন করার লক্ষ্যে বর্তমান ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২’ সংশোধন করা হবে। ইভিএম নয়, সকল কেন্দ্রে পেপার-ব্যালটের মাধ্যমে ভোট প্রদান নিশ্চিত করা হবে। রাজনৈতিক দল নিবন্ধন আইন সংস্কার করা হবে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার বাতিল করা হবে। 

৮. সংকীর্ণ রাজনৈতিক দলীয়করণের ঊর্ধ্বে উঠে সকল রাষ্ট্রীয়, সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও বিশ্বাসযোগ্যতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে এই সকল প্রতিষ্ঠান আইনি সংস্কারের মাধ্যমে পুনর্গঠন করা হবে। শুনানির মাধ্যমে সংসদীয় কমিটির ভোটিং সাপেক্ষে এই সকল প্রতিষ্ঠানের সাংবিধানিক ও গুরুত্বপূর্ণ পদসমূহে নিয়োগ প্রদান করা হবে। 

৯. বাংলাদেশের সংবিধান ও মাসদার হোসেন মামলার রায়ের আলোকে বিচার বিভাগের কার্যকর স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হবে। বর্তমান বিচারব্যবস্থার সংস্কারের জন্য একটি ‘জুডিশিয়াল কমিশন’ গঠন করা হবে। অধস্তন আদালতসমূহের নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলা বিধানের কর্তৃত্ব সুপ্রিম কোর্টের নিকট ন্যাস্ত হবে (সংবিধানের ভাষা)। বিচার বিভাগের জন্য সুপ্রিম কোর্টের নিয়ন্ত্রণাধীন একটি পৃথক সচিবালয় থাকবে। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অভিশংসন প্রশ্নে সংবিধানে বর্ণিত ইতোপূর্বেকার ‘সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল’ ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন করা হবে। এইজন্য সংবিধানে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনয়ন করা হবে। দলীয় বিবেচনার ঊর্ধ্বে উঠিয়া কেবলমাত্র জ্ঞান, প্রজ্ঞা, নীতিবোধ, বিচারবোধ ও সুনামের কঠোর মানদণ্ডে যাচাই করে বিচারক নিয়োগ করা হবে। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি নিয়োগের লক্ষ্যে সংবিধানের ৯৫ (গ) অনুযায়ী সুনির্দিষ্ট যোগ্যতা ও মানদণ্ডসংবলিত ‘বিচারপতি নিয়োগ আইন’ প্রণয়ন করা হবে। 

১০. দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ পরিষেবা, জনপ্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন গড়ে তোলার লক্ষ্যে যোগ্য, অভিজ্ঞ ও প্রাজ্ঞ ব্যক্তিদের সমন্বয়ে একটি ‘প্রশাসনিক সংস্কার কমিশন’ গঠন করে প্রশাসন সংস্কার ও পুনর্গঠন করা হবে। মেধা, সততা, সৃজনশীলতা, দক্ষতা, অভিজ্ঞতা ও প্রশিক্ষণ বেসামরিক ও সামরিক প্রশাসনে নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতিতে যোগ্যতার একমাত্র মাপকাঠি হিসেবে বিবেচনা করা হবে। 

১১. গণমাধ্যমের পূর্ণ স্বাধীনতার নিশ্চয়তা বিধান ও সার্বিক সংস্কারের লক্ষ্যে সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি, মিডিয়া সংশ্লিষ্ট পেশাজীবী এবং বিজ্ঞ, অভিজ্ঞ ও গ্রহণযোগ্য মিডিয়া ব্যক্তিদের সমন্বয়ের লক্ষ্যে একটি ‘মিডিয়া কমিশন’ গঠন করা হবে। সৎ ও স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিবেশ পুনরুদ্ধার করবার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। এই লক্ষ্যে ২০০৬, সন্ত্রাসবিরোধী আইন ২০০৯-এর প্রয়োজনীয় সংশোধনসহ মৌলিক মানবাধিকার হরণকারী সকল কালাকানুন বাতিল করা হবে। চাঞ্চল্যকর সাগর-রুনি হত্যাসহ সকল সাংবাদিক নির্যাতন ও হত্যার বিচার নিশ্চিত করা হবে। 

১২. দুর্নীতির ক্ষেত্রে কোনো আপস করা হবে না। গত দেড় দশকব্যাপী সংগঠিত অর্থ পাচার ও দুর্নীতির অনুসন্ধান করে একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করা এবং শ্বেতপত্রে চিহ্নিত দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। দেশের বাইরে পাচারকৃত অর্থ দেশে ফেরত আনার প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক ও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। দুর্নীতি দমন কমিশন ও দুর্নীতি দমন আইন সংস্কারের পাশাপাশি পদ্ধতিগত সংস্কারের মাধ্যমে ‘দুদকের’ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা হবে। সংবিধান অনুযায়ী ‘ন্যায়পাল’ নিয়োগ করা হবে। 

১৩. সর্বস্তরে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা হবে। মানবিক মূল্যবোধ ও মানুষের মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং অমানবিক নিষ্ঠুর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অবসান ঘটানো হবে। মানবাধিকার বাস্তবায়ন করা হবে। সুনির্দিষ্ট মানদণ্ডের ভিত্তিতে মানবাধিকার কমিশনে নিয়োগ প্রদান করা হবে। গত দেড় দশক যাবৎ সংগঠিত সকল বিচারবহির্ভূত হত্যা, ক্রসফায়ারের নামে নির্বিচারে হত্যা, গুম, খুন, অপহরণ, ধর্ষণ, নির্মম শারীরিক নির্যাতন এবং নিষ্ঠুর ও অমানবিক অপরাধের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত সকল ব্যক্তিকে প্রচলিত আইন অনুযায়ী সুবিচার নিশ্চিত করা হবে। 

১৪. অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিশেষজ্ঞ অর্থনীতিবিদ ও গবেষক, অভিজ্ঞ ব্যাংকার, করপোরেট নেতা, প্রশাসনিক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তি সমন্বয়ে একটি ‘অর্থনৈতিক সংস্কার কমিশন’ গঠন করা হবে। মুক্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্র সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের নিরিখে প্রবৃদ্ধির সুফল সুষম বণ্টনের মাধ্যমে ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য দূরীকরণ করা হবে। উপরোক্ত সাংবিধানিক সংস্কার কমিশন, প্রশাসনিক সংস্কার কমিশন, জুডিশিয়াল কমিশন, মিডিয়া কমিশন এবং অর্থনৈতিক সংস্কার কমিশনগুলো সুনির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে স্ব-স্ব প্রতিবেদন দাখিল করিবে যেন সংশ্লিষ্ট সুপারিশসমূহ দ্রুত বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়। 

১৫. ‘ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার’—এই মূলনীতির ভিত্তিতে প্রত্যেক ধর্মাবলম্বী নিজ নিজ ধর্ম পালনের পূর্ণ অধিকার ভোগ করবেন। দলমত ও জাতি-ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে পাহাড়ি ও সমতলের ক্ষুদ্র-বৃহৎ সকল জাতি-গোষ্ঠীর সংবিধান প্রদত্ত সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও ধর্ম-কর্মের অধিকার, নাগরিক অধিকার এবং জীবন, সম্ভ্রম ও সম্পদের পূর্ণ নিরাপত্তা বিধান করা হবে। ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের ঘরবাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, উপাসনালয় ভাঙচুর এবং তাঁদের সম্পত্তি দখলের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

১৬. মুদ্রাস্ফীতির আলোকে শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করা হবে। শিশুশ্রম বন্ধ করে তাদের জীবন বিকাশের উপযোগী পরিবেশ ও ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে। নিরাপদ কর্মপরিবেশ ও গণতান্ত্রিক ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার নিশ্চিত করা হবে। পাটকল, বস্ত্রকল, চিনিকলসহ সকল বন্ধ শিল্প পুনরায় চালুর উদ্যোগ নেওয়া হবে। প্রবাসী শ্রমিকদের জীবন, মর্যাদা ও কর্মের নিরাপত্তা এবং দেশে বিমানবন্দরসহ সকল ক্ষেত্রে হয়রানিমুক্ত সেবা প্রাপ্তি ও ভোটাধিকার নিশ্চিতের ব্যবস্থা করা হবে। চা-বাগান, বস্তি, চরাঞ্চল, হাওর-বাঁওড় ও মঙ্গাপীড়িত ও উপকূলীয় অঞ্চলের বৈষম্য দূরীকরণ ও সুষম উন্নয়নে বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হবে। 

১৭. বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ খাতে দায়মুক্তি আইনসহ সকল কালাকানুন বাতিল করা হবে এবং রাষ্ট্রীয় অর্থনীতিতে রক্তক্ষরণ রোধ করার লক্ষ্যে জনস্বার্থবিরোধী কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো হতে বিদ্যুৎ ক্রয়ে চলমান সীমাহীন দুর্নীতি বন্ধ করা হবে। আমদানি-নির্ভরতা পরিহার করে নবায়নযোগ্য ও মিশ্র এনার্জি-নির্ভর বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং উপেক্ষিত গ্যাস ও খনিজ সম্পদ আবিষ্কার ও আহরণে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। শিল্প খাতের বিকাশে বিনিয়োগবান্ধব নীতি গ্রহণ করে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা হবে। প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিনিয়োগে উৎসাহ, সুযোগ ও প্রণোদনা দেওয়া হবে। পরিকল্পিতভাবে দেশব্যাপী সমন্বিত শিল্প অবকাঠামো গড়ে তোলা হবে। 

১৮. বৈদেশিক সম্পর্কের সর্বক্ষেত্রে বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থ, জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেওয়া হবে। সমতা, ন্যায্যতা, পারস্পরিক স্বার্থের স্বীকৃতি ও স্বীকৃত আন্তর্জাতিক বিধিবিধান অনুযায়ী দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক সমস্যাদির সমাধান করা হবে। বাংলাদেশ ভূখণ্ডের মধ্যে কোনো প্রকার সন্ত্রাসী তৎপরতা বরদাশত করা হবে না এবং কোনো সন্ত্রাসবাদী তৎপরতা আশ্রয়-প্রশ্রয় পাবে না। সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অপব্যবহারের মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদকে রাজনৈতিক ঢাল বা হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে এবং সন্ত্রাসবাদের তকমা লাগাইয়া ভিন্নমতের বিরোধী শক্তি এবং রাজনৈতিক বিরোধী দল দমনের অপতৎপরতা বন্ধ করা হলে প্রকৃত সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করা এবং আইনের আওতায় এনে শাস্তি প্রদান করা সম্ভব হবে। 

১৯. দেশের সার্বভৌমত্ব সুরক্ষায় প্রতিরক্ষা বাহিনীকে সুসংগঠিত, যুগোপযোগী এবং সর্বোচ্চ দেশপ্রেমের মন্ত্রে উজ্জীবিত করে গড়ে তোলা হবে। স্বকীয় মর্যাদা বহাল রেখে প্রতিরক্ষা বাহিনীকে সকল বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখা হবে। 

২০. ক্ষমতার ব্যাপক বিকেন্দ্রীকরণের লক্ষ্যে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে অধিকতর স্বাধীন, শক্তিশালী ও ক্ষমতাবান করা হবে। এই সকল প্রতিষ্ঠানকে এমনভাবে জবাবদিহির আওতায় আনা হবে যেন তারা শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন পরিষেবা প্রদান ও উন্নয়ন কার্যক্রমে কার্যকর ভূমিকা রাখিতে পারে। স্থানীয় প্রশাসন ও অন্য কোনো জনপ্রতিনিধির খবরদারি মুক্ত স্বাধীন স্থানীয় সরকার নিশ্চিত করা হবে। মৃত্যুজনিত কারণ কিংবা আদালতের আদেশে পদশূন্য না হলে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানে সরকারি প্রশাসক নিয়োগ করা হবে না। আদালত কর্তৃক দণ্ডপ্রাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নির্বাহী আদেশবলে সাসপেন্ড/বরখাস্ত/অপসারণ করা হবে না। 

২১. ১৯৭১ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধে যার যার অবদানের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি প্রদানের ব্যবস্থা করা হবে। রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে নিবিড় জরিপের ভিত্তিতে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের একটি তালিকা প্রণয়ন করা হবে এবং তাদের যথাযথ রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ও স্বীকৃতি প্রদান করা হবে। এই তালিকার ভিত্তিতে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের কল্যাণার্থে নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা হবে। মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা যাচাই-বাছাই করে একটি সঠিক তালিকা প্রস্তুত করা হবে। 

২২. যুবসমাজের ভিশন, চিন্তা ও আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে আধুনিক ও যুগোপযোগী যুব উন্নয়ন নীতিমালা প্রণয়ন করা হবে। এক বছরব্যাপী অথবা কর্মসংস্থান না হওয়া পর্যন্ত, যেটাই আগে হবে, শিক্ষিত বেকারদের বেকার ভাতা প্রদান করা হবে। বেকারত্ব দূরীকরণের লক্ষ্যে নানামুখী বাস্তবসম্মত কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে। যুব সমাজের দক্ষতা বৃদ্ধি করে ‘ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড’ আদায়ের লক্ষ্যে দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও পুষ্টির ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়া মানবসম্পদ উন্নয়নে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ করা হবে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধি বিবেচনা করা হবে। 

২৩. জাতীয় উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় নারীর কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নারীর ক্ষমতায়নে সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে। নারী ও শিশুদের জীবন মান বিকাশের নিমিত্তে যুগোপযোগী উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা হবে। জাতীয় সংসদে মনোনয়নের ক্ষেত্রে নীতিগতভাবে নারীদের প্রাধান্য দেওয়া হবে। স্থানীয় সরকারব্যবস্থায় নারীর প্রতিনিধিত্ব বাড়ানোর উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। 

২৪. বর্তমানে শিক্ষা ক্ষেত্রে বিরাজমান নৈরাজ্য দূর করে নিম্ন ও মধ্যপর্যায়ে চাহিদাভিত্তিক শিক্ষা এবং উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে জ্ঞানভিত্তিক শিক্ষাকে প্রাধান্য দেওয়া হবে। গবেষণায় বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করা হবে। একই মানের শিক্ষা ও মাতৃভাষায় শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। ভবিষ্যতের নেতৃত্ব গড়ে তুলতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়মিত ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হবে। যোগ্য, দক্ষ ও মানবিক জনগোষ্ঠী গড়ে তোলার লক্ষ্যে জাতীয় বাজেটে শিক্ষা খাতে জিডিপির ৫% অর্থ বরাদ্দ করা হবে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সংগতিপূর্ণভাবে ক্রমান্বয়ে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের মতো জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট খাতে বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হবে। 

দক্ষ মানবসম্পদ সৃষ্টির লক্ষ্যে শিক্ষা, প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণসহ সংশ্লিষ্ট সকল খাতকে ঢেলে সাজানো হবে। শিক্ষা, শিল্প, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং উৎপাদান খাতে গবেষণা ও উন্নয়নকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। ক্রীড়া উন্নয়ন ও জাতীয় সংস্কৃতির বিকাশে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অনৈতিক আকাশ সংস্কৃতি ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসন রোধ করা হবে। 

২৫. স্বাস্থ্যকে সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করে ‘সবার জন্য স্বাস্থ্য’ ও ‘বিনা চিকিৎসায় কোনো মৃত্যু নয়’—এই নীতির ভিত্তিতে যুক্তরাজ্যের আদলে সর্বজনীন করা হবে। 

২৬. স্বাস্থ্যসেবা প্রবর্তন করে সবার জন্য স্বাস্থ্য কার্ড চালু করা হবে। জাতীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে জিডিপির ৫% অর্থ বরাদ্দ করা হবে। দারিদ্র্য বিমোচন না হওয়া পর্যন্ত সুবিধাবঞ্চিত হতদরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী আরও সম্প্রসারিত করা হবে। 

২৭. কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা হবে। পর্যায়ক্রমে সকল ইউনিয়নে কৃষিপণ্যের জন্য সরকারি ক্রয়কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। প্রয়োজনে ভর্তুকি দিয়া হলেও শস্যবিমা, পশুবিমা, মৎস্যবিমা এবং পোলট্রি বিমা চালু করা হবে। কৃষিজমির অকৃষি ব্যবহার নিরুৎসাহিত করা হবে। কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতের উন্নয়ন এবং গবেষণার জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কর্মকৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। এতদসংশ্লিষ্ট রপ্তানিমুখী কৃষি প্রক্রিয়াকরণ শিল্প খাতকে প্রণোদনা দেওয়া হবে। 

২৮. দেশের যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়নে সড়ক, রেল ও নৌপথের প্রয়োজনীয় সংস্কার করে সারা দেশে সমন্বিত বহুমাত্রিক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। দেশের সমুদ্রবন্দর ও নৌবন্দরসমূহের আধুনিকায়ন, উন্নয়ন ও দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বৃদ্ধির ব্যবস্থা করা হবে। 

২৯. জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সংকট ও ক্ষতি মোকাবিলায় টেকসই ও কার্যকর কর্মকৌশল গ্রহণ করা হবে। বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড় ও ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় সর্বাধুনিক ইকুইপমেন্ট সংগ্রহ করে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হবে। নদী ও জলাশয় দূষণ প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং বন্যা ও খরা প্রতিরোধে খাল-নদী খনন পুনঃখনন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে। সামুদ্রিক সম্পদের বিজ্ঞানসম্মত জরিপ ও মজুতের ভিত্তিতে তা আহরণ এবং অর্থনৈতিক ব্যবহারের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

৩০. তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতকে বৈশ্বিক মানে উন্নীত করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ এবং সর্বক্ষেত্রে এর প্রয়োগকে প্রাধান্য দেওয়া হবে। মহাকাশ গবেষণা এবং আণবিক শক্তি কমিশনের কার্যক্রমের প্রাতিষ্ঠানিক ও প্রায়োগিক সুযোগ সমৃদ্ধ করা হবে। 

৩১. একজাতীয় মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের মাধ্যমে শহরে ও গ্রামে কৃষিজমি নষ্ট না করে এবং নগরে জনসংখ্যার ক্রমবর্ধমান চাপ হ্রাস করে পরিকল্পিত আবাসন ও নগরায়ণের নীতিমালা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হবে। পর্যায়ক্রমে দেশের সকল দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আবাসন নিশ্চিত করা হবে। 

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

দলগুলোর টানাপোড়েন: রাজনীতির মাঠে উত্তাপ

  • আগামীকাল রাজধানীর পুরানা পল্টন মোড়ে গণসমাবেশ করবে জামায়াত
  • নির্বাচন বিলম্বের চেষ্টা বলে মনে করছে বিএনপি, রাজপথে সক্রিয় হওয়ার ইঙ্গিত
  • ‘লকডাউন’ কর্মসূচি দিয়ে অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টায় কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ
‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১০ নভেম্বর ২০২৫, ০৮: ৫৯
দলগুলোর টানাপোড়েন: রাজনীতির মাঠে উত্তাপ

জুলাই সনদের বাস্তবায়ন ও গণভোট নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যকার টানাপোড়েন এখন চরমে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে দীর্ঘদিনের সংলাপে যেসব বিষয় নিয়ে ঐকমত্য এসেছিল, তার বাস্তবায়ন নিয়ে এখন বিপরীত অবস্থানে চলে গেছে বড় দুই দল বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী। প্রতিদিনই চলছে কথার লড়াই। আলোচনার টেবিল ছেড়ে এখন মাঠের কর্মসূচিতে চলে গেছে দলগুলো। এতে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রাজনীতির মাঠ।

জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি এবং ওই আদেশের ওপর নভেম্বর মাসের মধ্যেই গণভোট আয়োজন করার দাবিতে অনড় জামায়াত। একই সঙ্গে আগামী জাতীয় নির্বাচনে উভয়কক্ষে বা উচ্চকক্ষে পিআর (সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) পদ্ধতি চালু করার দাবিও জানিয়েছে দলটি। এসব দাবির পক্ষে ইসলামী আন্দোলন, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা), নেজামে ইসলাম পার্টি, ডেভেলপমেন্ট পার্টি ও বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনকে সঙ্গে নিয়ে রাজপথের কর্মসূচি পালন করে আসছে তারা। এরই ধারাবাহিকতায় আগামীকাল ১১ নভেম্বর মঙ্গলবার রাজধানীর পুরানা পল্টন মোড়ে গণসমাবেশ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে জামায়াত। এই সমাবেশকে ঘিরে বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী জমায়েতের পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানা গেছে।

জামায়াতসহ ৮ দলের এমন কর্মসূচিকে নির্বাচন বিলম্বের চেষ্টা বলে মনে করছে বিএনপি। এ অবস্থায় দলটি রাজপথে সক্রিয় হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে। ৭ নভেম্বর রাজধানীতে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের শোভাযাত্রায় এমন ইঙ্গিত দেন দলটির নেতারা।

মাঠের কর্মসূচির পাশাপাশি কথার যুদ্ধেও জড়িয়ে পড়ছেন রাজনৈতিক নেতারা। গতকাল রোববার রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে মানুষের আকাঙ্ক্ষা তীব্র হলেও একটি পক্ষ তা বিলম্বিত করতে মাঠে নেমেছে।’ তাদের উদ্দেশ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘যারা বিলম্বিত (নির্বাচন) করতে চায়, তারা কি গণতন্ত্রের পক্ষের মানুষ? বিশ্বাস করা যায়?’

জামায়াত অবশ্য মনে করে গণতন্ত্রে আলোচনার পাশাপাশি রাজপথে আওয়াজ তোলা, দুটোই চলে। সম্প্রতি এক কর্মসূচিতে দলটির নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ‘আমরা এখনো নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় আন্দোলনে আছি। সোজা আঙুলে যদি ঘি না ওঠে তাহলে আঙুল বাঁকা করব; কিন্তু ঘি আমাদের লাগবেই। সুতরাং যা বোঝাতে চাই, বুঝে নিন। নো হাঙ্কি-পাঙ্কি, জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট লাগবেই।’

১১ নভেম্বরের সমাবেশকে সামনে রেখে গতকাল প্রস্তুতি সভা করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। ওই সভার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে এক বিবৃতিতে দলটির মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা ইউনুস আহমদ বলেন, ‘আমরা প্রত্যাশা করেছিলাম, আমাদের দাবির গুরুত্ব অনুধাবন করে প্রধান উপদেষ্টা কোনো ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেবেন; কিন্তু আমাদের হতাশ হতে হয়েছে। তাই আমাদের আগে ঘোষিত কর্মসূচি মাঠে প্রতিফলিত হবে।’ তিনি বলেন, ‘গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্র মেরামতের যে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, তা কোনোভাবেই ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না। আমরা যাঁরা চব্বিশের জুলাইয়ে জীবনবাজি রেখে লড়াই করেছি, তাঁরা প্রয়োজনে আবারও রাজপথে গণজোয়ার তৈরি করব।’

বিরাজমান পরিস্থিতিকে মোটেও ‘ভালো’ মনে করছেন না রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। সব মিলিয়ে উত্তেজনার পাশাপাশি নির্বাচন অনুষ্ঠানের পথে বড় ধরনের এক প্রতিবন্ধকতাও দেখছেন তাঁরা। উত্তেজনার মূলে রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকাকে দায়ী করে বিশ্লেষকেরা বলছেন, দলগুলো নিজ অবস্থানে অনড় থাকায় উত্তেজনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সরকারের তরফে ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্তের বিষয়ে এক জায়গায় আসার অনুরোধেও গা করেনি দলগুলো। এতে মাঠের রাজনৈতিক দলগুলোর বিবাদে উত্তেজনা ক্রমেই বাড়ছে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের (অব.) শিক্ষক অধ্যাপক ড. আল মাসুদ হাসানুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, উত্তেজনা প্রশমন না হলে নেতিবাচক প্রভাব থেকে যাবে। নির্বাচন হওয়াকে প্রভাবিত করতে পারে। এটি আশঙ্কার দিক। সবারই প্রশ্ন, তাহলে নির্বাচন কীভাবে সম্ভব হবে? এখানে নির্বাচন মুখ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ সবার একটি নির্বাচিত সরকারের প্রত্যাশা। সেভাবে সহতম না থাকলে রাজনীতিতে চরম নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

এদিকে আগামী ১৩ নভেম্বর শেখ হাসিনার নামে হওয়া মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার রায় ঘোষণার দিনক্ষণ চূড়ান্ত হবে। সেদিন ঢাকা ‘লকডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দলের পেজ থেকে এ ঘোষণা আসে। এ কর্মসূচি ঘিরে ক্ষণে-ক্ষণে দলটির পক্ষ থেকে বিভিন্ন বার্তা দেওয়া হচ্ছে, যেখানে নানা ধরনের হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে।

দলগুলোর এমন কর্মসূচি দেখে নড়েচড়ে বসেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও। এসব কর্মসূচি ঘিরে নাশকতার আশঙ্কা করে তারা প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিচ্ছে বলেও জানা গেছে।

পুলিশের একাধিক সূত্র বলছে, ১১ নভেম্বর পুরানা পল্টনে সমাবেশ ও ১৩ নভেম্বর আওয়ামী লীগের ঘোষিত ‘ঢাকা লকডাউন’কে সামনে রেখে আগাম প্রস্তুতি নিচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। শনিবার বিকেলে রাজধানীর বিভিন্ন মোড়ে পুলিশ সদস্যদের বাড়তি উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। রায়ট গিয়ার, হেলমেট, বডি আর্মারসহ পূর্ণ প্রস্তুতিতে তারা অবস্থান নেয়। এ সময় পথচারীদের সন্দেহ হলে ব্যাগ তল্লাশি ও জিজ্ঞাসাবাদ করতে দেখা যায়। সন্দেহজনক যানবাহন থামিয়ে তল্লাশিও করা হয়।

ডিএমপির কয়েকটি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জানান, বিকেল ৪টা থেকে ৫টা পর্যন্ত ‘ডিসপ্লে এক্সারসাইজ’ চালানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়। এটি নিয়মিত মহড়া, এর সঙ্গে অন্য কোনো বিশেষ ঘটনাবলির সম্পৃক্ততা নেই।

ডিএমপির গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, এটি আমাদের নিয়মিত নিরাপত্তা মহড়া। ফোর্স মোবিলাইজেশনের একটি অংশ, যা নিয়মিতই হয়ে থাকে।

কোনো নিরাপত্তাঝুঁকির প্রস্তুতি কি না—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘না, কোনো নিরাপত্তাঝুঁকি নেই। এটি আমাদের রুটিন কার্যক্রমের অংশ। ‘ফোর্স মোবিলাইজেশন’ প্রক্রিয়ায় সাধারণত জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য বাহিনীকে একত্র করা, প্রস্তুত রাখা ও মোতায়েনের অনুশীলন করা হয়। এতে রিজার্ভ ফোর্স সক্রিয় করা, জনবল ও সরঞ্জাম প্রস্তুত রাখাসহ নানা অনুশীলন অন্তর্ভুক্ত থাকে।’

সম্প্রতি রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় ও চার্জ পয়েন্টের সামনে ককটেল বিস্ফোরণের কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। পাশাপাশি নিষিদ্ধঘোষিত আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা রাতদিন ঝটিকা মিছিল করছে। এ ছাড়া ভারতে অবস্থানরত আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক ১৩ নভেম্বর ‘ঢাকা লকডাউন’ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন।

নাশকতা ও সহিংসতা প্রতিরোধে পুলিশ বাড়তি সতর্ক অবস্থানে থাকলেও, পুলিশের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা এ বিষয়ে প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিএনপির প্রার্থিতা: ৭ জেলায় বিক্ষোভ, সংঘর্ষ, ছাত্রদল কর্মীর মৃত্যু

  • গৌরীপুরে সংঘর্ষের সময় হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে ছাত্রদল কর্মীর মৃত্যু।
  • লাকসামে সম্ভাব্য প্রার্থিতাবঞ্চিত নেত্রীসহ আহত ১৫।
  • গাইবান্ধার সাঘাটায় ১৪৪ ধারা জারি।
আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ময়মনসিংহ-৩ আসনে বিএনপির মনোনয়ন দ্বন্দ্বে প্রতিপক্ষের কর্মসূচিতে হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় ভাঙচুর করা হয় চেয়ার-টেবিল। গতকাল গৌরীপুর পৌর শহরের পাটবাজার এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
ময়মনসিংহ-৩ আসনে বিএনপির মনোনয়ন দ্বন্দ্বে প্রতিপক্ষের কর্মসূচিতে হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় ভাঙচুর করা হয় চেয়ার-টেবিল। গতকাল গৌরীপুর পৌর শহরের পাটবাজার এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা নিয়ে অসন্তোষের কারণে গতকালও দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করেছে সম্ভাব্য প্রার্থিতাবঞ্চিত নেতাদের অনুসারীরা। ময়মনসিংহের গৌরীপুরে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষের সময় তানজিন আহমেদ আবিদ (৩০) নামের এক ছাত্রদল কর্মীর মৃত্যু হয়েছে।

এ ছাড়া কুমিল্লার লাকসামে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে সম্ভাব্য প্রার্থিতাবঞ্চিত নেত্রী সামিরা আজিম দোলাসহ অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। ময়মনসিংহে দুই পক্ষের সংঘর্ষে আহত হন আটজন। গাইবান্ধার সাঘাটায় আইনশৃঙ্খলার অবনতির আশঙ্কায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে প্রশাসন। চাঁপাইনবাবগঞ্জে ঘণ্টাব্যাপী অবরোধে সড়কে তীব্র যানজট দেখা দেয়। বগুড়া-১ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী কাজী রফিকুল ইসলামকে আওয়ামী লীগের দোসর আখ্যায়িত করে বিক্ষোভ হয়েছে। রংপুর, শেরপুর ও চাঁদপুরেও বিক্ষোভ করেছে সম্ভাব্য প্রার্থিতাবঞ্চিতদের অনুসারীরা।

গতকাল বিকেলে ময়মনসিংহের গৌরীপুর পৌর শহরের পাটবাজার এলাকায় সম্ভাব্য প্রার্থিতাবঞ্চিত উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আহাম্মদ তায়েবুর রহমান হিরনের আয়োজনে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে আলোচনা চলছিল। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এম ইকবাল হোসাইনের সমর্থকেরা সেখানে গিয়ে লাঠিসোঁটা নিয়ে ধাওয়া করে। পণ্ড হয়ে যায় অনুষ্ঠান। পরে উভয় পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া শুরু হয়। এ সময় মারা যান তানজিন আহমেদ আবিদ (৩০) নামের এক ছাত্রদল কর্মী।

গৌরীপুর উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মহিউদ্দিন তালুকদার আকাশ বলেন, ময়মনসিংহ-৩ (গৌরীপুর) আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার এম ইকবাল হোসেনের সমাবেশের শেষ পর্যায়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন আবিদ। এ সময় তাঁকে মাথায় পানি ঢেলে সুস্থ করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু জ্ঞান ফিরে না আসায় দ্রুত সিএনজিচালিত অটোরিকশাযোগে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। চিকিৎসক রফিকুল ইসলাম বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, হার্টফেল করে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। ময়মনসিংহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, দুই পক্ষের সংঘর্ষে কোনো আঘাতে আবিদ মারা যায়নি।

তানজিন আহমেদ আবিদ ময়মনসিংহের কৃষ্টপুর এলাকার বাসিন্দা ছিলেন। তিনি জেলা উত্তর ছাত্রদলের সভাপতি নূরুজ্জামান সোহেলের অনুসারী হিসেবে এলাকায় পরিচিত ছিলেন। তাঁর বাবা দক্ষিণ জেলা ওলামা দলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মরহুম দেওয়ান মো. আবুল হোসেন।

কুমিল্লার লাকসামে গতকাল বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থিতাবঞ্চিত সামিরা আজিম দোলাও রয়েছেন। তিনি সাবেক এমপি আনোয়ারুল আজিমের মেয়ে।

গতকাল কান্দিরপাড় ইউনিয়নের ছনগাঁও এলাকায় গণসংযোগে যান সামিরা আজিম দোলা। এ সময় বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী মো. আবুল কালামের অনুসারীদের সঙ্গে তাঁর সমর্থকদের বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে এটি সংঘর্ষে রূপ নেয়।

সামিরা আজিম দোলা বলেন, ‘পূর্বঘোষিত গণসংযোগে যাওয়ার পথে আবুল কালামের অনুসারীরা অতর্কিত হামলা চালিয়েছে।’

তবে এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন আবুল কালাম। তিনি বলেন, ‘তাঁরা গণসংযোগের নামে এলাকায় গিয়ে আমাদের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছে। এতে দুজনের মাথা ফেটে যায় এবং সাত-আটজন আহত হয়।’

এদিকে কুমিল্লা-৬ (সদর) আসনে হাজি আমিন উর রশিদ ইয়াসিনকে দলীয় প্রার্থী ঘোষণার দাবিতে গতকাল নগরীতে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মাহবুব চৌধুরীর স্ত্রী নাসরিন খানম।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা অভিযোগ করেন, দুঃসময়ে নেতা-কর্মীদের পাশে দাঁড়ানো আমিন উর রশিদ ইয়াসিনের বদলে মনিরুল হক চৌধুরীকে সম্ভাব্য প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। অথচ তিনি নেতা-কর্মী ও সাধারণ ভোটারদের কাছে অপেক্ষাকৃত ‘কম পরিচিত’। দুঃসময়ে নেতা-কর্মীদের পাশেও তাঁকে দেখা যায়নি। ফলে প্রার্থিতা পরিবর্তন না করা হলে এ আসনে দলের বিজয় নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়বে।

গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলায় বিএনপির দুই পক্ষের ঘোষিত শোডাউনকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলার অবনতির আশঙ্কায় গতকাল জেলার সাঘাটায় ১৪৪ ধারা জারি করে প্রশাসন। এ-সংক্রান্ত ঘোষণায় বলা হয়, একই দিনে বিএনপির দুই পক্ষের মোটরসাইকেল শোডাউনকে কেন্দ্র করে উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ফলে জননিরাপত্তা নিশ্চিতে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের চাঁপাইনবাবগঞ্জ-সোনামসজিদ স্থলবন্দর মহাসড়কে গতকাল প্রায় এক ঘণ্টা অবরোধ করে রাখে বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শাহিন শওকতের অনুসারীরা। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ (শিবগঞ্জ) আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী শাহজাহান মিঞার বদলে শাহিন শওকতকে সম্ভাব্য প্রার্থী করার দাবিতে এই কর্মসূচি পালন করে তারা। বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে শুরু করে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত শিবগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে মিছিল নিয়ে মহাসড়কে অবস্থান নেন পাঁচ শতাধিক নেতা-কর্মী। এ সময় তাঁরা প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে নানা স্লোগান দেন। এতে সড়কে তীব্র যানজট দেখা দেয়।

বগুড়া-১ (সোনাতলা-সারিয়াকান্দি) আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী কাজী রফিকুল ইসলামকে আওয়ামী লীগের দোসর আখ্যায়িত করে বিক্ষোভ-সমাবেশ করেছে নেতা-কর্মীদের একাংশ। গতকাল সন্ধ্যায় সোনাতলা উপজেলার বালুয়াহাট ইউনিয়ন বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের এক সমাবেশে তাঁকে প্রতিহত করার ঘোষণা দেওয়া হয়। এর আগে গত শুক্রবার নির্বাচনী সমাবেশে দেওয়া কাজী রফিকুল ইসলামের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এতে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘ধানের শীষের বিজয় মানে নৌকার বিজয়।’ তবে তাঁর দাবি, ওই ভিডিও সম্পাদিত।

যদিও সোনাতলা উপজেলা বিএনপির সভাপতি আহসানুল তৈয়ব জাকির বলেন, সমাবেশে উপস্থিত লোকজন আমাকে বলেছেন, কাজী রফিকুল ইসলাম ‘ধানের শীষের বিজয় মানে নৌকার বিজয় বলেছেন।’ তিনি বলেন, ‘আমি ১৭ বছর দলকে সংগঠিত করেছি। মামলা-হামলার শিকার হয়েছি। তারপরেও এলাকা ছেড়ে যাইনি। বিশ্বাস ছিল মনোনয়ন পাব। তবে আমি এখনো হতাশ নই, আমার বিশ্বাস মনোনয়ন পরিবর্তন হবে।’

রংপুর-৩ (সদর) আসনে সম্ভাব্য প্রার্থিতাবঞ্চিত মাহফুজ উন নবী ডনের সমর্থনে নগরীতে গণমিছিল হয়েছে। জিলা স্কুল মোড় থেকে শুরু হওয়া মিছিলটি শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে স্টেশন রোড হয়ে বুদু বাবুর মাঠে গিয়ে শেষ হয়।

রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী অধ্যাপক নজরুল ইসলাম মণ্ডলের মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন সম্ভাব্য প্রার্থিতাবঞ্চিত তিন প্রার্থীর অনুসারীরা। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে দুর্গাপুর প্রেসক্লাবে এর আয়োজন করা হয়।

শেরপুর-১ (সদর) আসনে প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে সম্ভাব্য প্রার্থিতাবঞ্চিত জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম মাসুদের অনুসারীরা। গতকাল বিকেলে শহরের রঘুনাথ বাজারে জেলা বিএনপির কার্যালয়ের সামনে থেকে শুরু হওয়া মিছিলটি শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে।

চাঁদপুর-৪ (ফরিদগঞ্জ) আসনে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক এম এ হান্নানকে সম্ভাব্য প্রার্থী করার দাবিতে মশাল মিছিল করেছে ফরিদগঞ্জ উপজেলা ও পৌর বিএনপিসহ অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। গতকাল সন্ধ্যার পর ফরিদগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড থেকে বের হওয়া মিছিলটি উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে পুনরায় বাসস্ট্যান্ডে এসে শেষ হয়। পরে চাঁদপুর-লক্ষ্মীপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের ফরিদগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড এলাকায় সড়কে অগ্নিসংযোগ ও অবরোধ করে বিক্ষুব্ধরা।

[প্রতিবেদনে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রতিনিধিরা]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিপ্লব ও সংহতি দিবসের আলোচনায় খালেদা জিয়াকে আমন্ত্রণ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বিএনপির প্রচারবিষয়ক সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু রোববার গুলশানের বাসা ফিরোজায় খালেদা জিয়ার কাছে আমন্ত্রণপত্র পৌঁছে দেন। ছবি: সংগৃহীত
বিএনপির প্রচারবিষয়ক সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু রোববার গুলশানের বাসা ফিরোজায় খালেদা জিয়ার কাছে আমন্ত্রণপত্র পৌঁছে দেন। ছবি: সংগৃহীত

জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বিএনপির আলোচনা সভায় আমন্ত্রণ পেলেন দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

রোববার রাতে দলের প্রচারবিষয়ক সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু গুলশানের বাসা ফিরোজায় খালেদা জিয়ার কাছে আমন্ত্রণপত্র পৌঁছে দেন।

১২ নভেম্বর রাজধানীর বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে এই আলোচনা সভার আয়োজন করেছে বিএনপি।

সুলতান সালাউদ্দিন টুকু বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় দেখা করে তিনি এ আমন্ত্রণপত্র তুলে দেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রার্থী মনোনয়নে ১১ সদস্যের বোর্ড গঠন করল সিপিবি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
প্রার্থী মনোনয়নে ১১ সদস্যের বোর্ড গঠন করল সিপিবি

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী মনোনীত করতে মনোনয়ন বোর্ড গঠন করেছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। গতকাল শনিবার (৮ নভেম্বর) সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত সিপিবি কেন্দ্রীয় কমিটির এক সভায় ১১ সদস্যের মনোনয়ন বোর্ড গঠন করা হয়।

আজ রোববার সন্ধ্যায় দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মঞ্জুর মঈনের পাঠানো এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যরা হলেন কাজী সাজ্জাদ জহির চন্দন, আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন, মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, রফিকুজ্জামান লায়েক, এস এ রশীদ, রাগীব আহসান মুন্না, জলি তালুকদার, মো. আমিনুল ফরিদ, মোহাম্মদ শাহ আলম, লক্ষ্মী চক্রবর্তী ও দিবালোক সিংহ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত