Ajker Patrika

জননিরাপত্তা নিয়ে উদাসীনতা

সম্পাদকীয়
জননিরাপত্তা নিয়ে উদাসীনতা

বাংলাদেশের যোগাযোগব্যবস্থার অন্যতম আধুনিক সংযোজন হলো ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীর সংযোগকারী এই এক্সপ্রেসওয়েটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। অথচ মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলা অংশে চার মাস ধরে সড়কবাতি জ্বলছে না। ফলে গুরুত্বপূর্ণ এক্সপ্রেসওয়েটি এখন মানুষের কাছে নিরাপত্তাহীনতার জায়গা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। মূলত এখানকার বৈদ্যুতিক তার কেটে চুরি করার কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ এই এক্সপ্রেসওয়ের দীর্ঘদিন ধরে এমন অবস্থা বজায় থাকা শুধু দুঃখজনক নয়, এটি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের চরম দায়িত্বহীনতা ও উদাসীনতার প্রমাণ।

আজকের পত্রিকায় ১০ অক্টোবর প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, কেরানীগঞ্জের ধলেশ্বরী সেতুর টোল প্লাজা থেকে শুরু করে সিরাজদিখানের কুচিয়ামোড়া ফ্লাইওভার হয়ে নিমতলা পর্যন্ত মূল সড়ক ও সার্ভিস লেন—সর্বত্রই রাত নামলে নেমে আসে ঘোর অন্ধকার। ফলে সহজেই ছিনতাইকারীরা চলাচলকারী মানুষকে টার্গেট করে ছিনতাই করার সুযোগ পাচ্ছে। একই সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টহল না থাকায় এই আতঙ্ক আরও বাড়ছে।

সমস্যাটি আসলে এক্সপ্রেসওয়েটি নির্মাণ করার সময়ই সৃষ্টি হয়েছে। সেই সময় যদি এক্সপ্রেসওয়ের ওভারপাস ব্রিজগুলোর নিচ দিয়ে বৈদ্যুতিক তার না টেনে ওপর দিয়ে দেওয়া হতো, তাহলে চোরেরা তার চুরি করার সুযোগ পেত না।

মুন্সিগঞ্জ সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদ মাহমুদ সুমন তার চুরির বিষয়টি স্বীকার করেছেন এবং স্থায়ী সমাধানের জন্য তারগুলো ওপর দিয়ে নেওয়ার কথা জানিয়েছেন। তাঁরা বিষয়টি টোল প্লাজার অপারেটর কোরিয়ান এক্সপ্রেসওয়ে করপোরেশনকে (কেইসি) জানিয়েছেন।

তবে প্রশ্ন থেকে যায়, চার মাস ধরে কেন কোনো সমাধান হলো না? একটি অত্যাধুনিক, টোলযুক্ত এবং জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ সড়কের সামান্য রক্ষণাবেক্ষণের জন্য চার মাস সময় নেওয়া কি কর্তৃপক্ষের অদক্ষতা আর উদাসীনতাকে নির্দেশ করে না? তার চুরির ঘটনা কেন রোধ করা যাচ্ছে না? এই এক্সপ্রেসওয়েতে সার্বক্ষণিক নজরদারি ও নিরাপত্তাব্যবস্থা থাকার কথা। চুরি ঠেকাতে ব্যর্থতার দায়ভার কার?

ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হয়েছে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ও আরামদায়ক ভ্রমণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে। যদি সামান্য তার চুরির কারণে চার মাস ধরে জননিরাপত্তা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়, তবে এই সড়কের সার্বিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন ওঠে। সড়কটি কেবল যানবাহনের গতির জন্য নয়, বরং যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্যও একটি উদাহরণ হওয়া উচিত।

এখন দ্রুততম সময়ের মধ্যে এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান করা দরকার। তার চুরির ঘটনা প্রতিরোধে সার্বক্ষণিক টহল এবং নজরদারির জন্য বিশেষত সিসিটিভি ব্যবস্থা স্থাপন করা দরকার। একই সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে এক্সপ্রেসওয়েতে রাতে টহল দেওয়া অতীব জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

একটা আধুনিক সড়কব্যবস্থার নিরাপত্তার এমন বেহাল অবস্থা চলতে পারে না। ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের এই অন্ধকার অংশটি যেন কর্তৃপক্ষের জননিরাপত্তাবিষয়ক চরম উদাসীনতার প্রতীক হয়ে না থাকে, সেই দায়িত্ব তাদেরই নিতে হবে। আমরা আশা করি, দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ জনগণের জানমালের ঝুঁকি কমাতে অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত