জুলাই সনদ বাস্তবায়নের জন্য গণভোটের বিষয়ে সব দলের ঐকমত্য হয়েছে। মানে সবাই একমত হয়েছে যে গণভোট করা যেতে পারে। এরপরই প্রশ্ন উঠেছে, কোন প্রক্রিয়ায় গণভোট হবে? কখন হবে? সংসদ নির্বাচনের দিন একই সঙ্গে নাকি তার আগে? বিএনপি এবং এনসিপি বলছে একই দিন হতে পারে।
অরুণ কর্মকার
দেশের ছোট-বড় ৩০টি রাজনৈতিক দলকে নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দীর্ঘ অধ্যবসায়ের মধ্য দিয়ে আমরা বোধ হয় দেশের রাজনীতি ও সমাজ বিকাশের একটি জটিল-কুটিল প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণের সুযোগ পেয়েছি। সম্ভবত পৃথিবীতে সমাজ বিকাশের সর্বজনীন ও গ্রহণযোগ্য দার্শনিক তত্ত্ব হচ্ছে ‘দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ’। কার্ল মার্ক্স এবং তাঁর বন্ধু ফ্রেডারিক এঙ্গেলস এই তত্ত্বের জনক। এর অন্তর্নিহিত বক্তব্য হলো—দুই বিপরীতের দ্বন্দ্ব ও বিকাশ। প্রতিটি বস্তু বা ধারণার মধ্যে দুটি পরস্পরবিরোধী শক্তি থাকে এবং তাদের মধ্যকার দ্বন্দ্বই সব পরিবর্তন ও বিকাশের মূল চালিকাশক্তি। দ্বন্দ্বের মাধ্যমেই নতুন নতুন ধারণার জন্ম হয় এবং এটিই বিবর্তনের পরিবর্তনের ভিত্তি।
দুই বিপরীতের দ্বন্দ্ব ও বিকাশের তত্ত্ব নিয়ে কথা বলার কারণটা ব্যাখ্যা করা দরকার। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় থেকেই শুরু করা যায়। সেই অভ্যুত্থানের শক্তি হিসেবে যে বৃহত্তর রাজনৈতিক-সামাজিক ঐক্য আমরা দেখেছি, অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের অল্প কিছুদিন পরই সেই ঐক্যে আমরা বিভক্তিও শুরু হতে দেখেছি। সেই বিভক্তি ক্রমান্বয়ে বহুধা বিভক্ত শক্তিতে পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন বিষয়ে সেই রাজনৈতিক শক্তিগুলোর মধ্যে মতভিন্নতা তীব্র থেকে তীব্রতর হয়েছে। তার মধ্য দিয়ে নতুন ধারণার সৃষ্টি হয়েছে। কিছু বিষয়ে অনুচ্চারিত আপসরফা হয়েছে। এইভাবে সংস্কার, বিচার ও নির্বাচনের প্রক্রিয়া অগ্রসর হতে হতে একটা সমঝোতার জায়গায় উপনীত হওয়া গেছে। এই সপ্তাহেই জুলাই সনদ চূড়ান্ত হচ্ছে। যেসব বিষয়ে সব দল একমত হয়েছে, সেগুলোর সমন্বয়ে প্রণীত সনদে সবাই স্বাক্ষর করবে। যেগুলোতে ঐকমত্য হয়নি, নোট অব ডিসেন্ট দেওয়া অবস্থায় রয়েছে, সেগুলোকেও সম্পৃক্ত করে গণভোট আয়োজনের বিষয়েও ঐকমত্য হয়েছে। পাশাপাশি বিচার এবং নির্বাচনের প্রক্রিয়া তো চলমান আছেই।
কিন্তু এখানেই কি সব শেষ! সব দ্বন্দ্বের অবসান হয়ে গেছে? তা তো হতে পারে না। দ্বন্দ্ব থেমে গেলে তো বিকাশ বন্ধ হয়ে যাবে। তাতে পৃথিবীর কেন্দ্রানুগ শক্তি (সেন্ট্রিপেটাল ফোর্স) এবং কেন্দ্রাতিগ শক্তির (সেন্ট্রিফিউগাল ফোর্স) বিপরীতমুখী টানাপোড়েন থেমে যাবে। চন্দ্র-সূর্যের উদয়-অস্ত বন্ধ হয়ে যাবে। একইভাবে সমাজ হয়ে পড়বে স্থবির, অচল। সুতরাং সবকিছুর ফয়সালা হয়ে যায়নি। নতুন নতুন প্রশ্ন উঠবে। তার জবাব আসবে। নতুন নতুন ধারণার সৃষ্টি হবে। ভিন্নমত হবে। অনৈক্য হবে। আলোচনা হবে। অধ্যবসায় চলবে। অগ্রগতিও হবে। এইভাবে চলতে থাকবে।
এই যেমন বলা যায় গণভোটের কথা। জুলাই সনদ বাস্তবায়নের জন্য গণভোটের বিষয়ে সব দলের ঐকমত্য হয়েছে। মানে সবাই একমত হয়েছে যে গণভোট করা যেতে পারে। এরপরই প্রশ্ন উঠেছে, কোন প্রক্রিয়ায় গণভোট হবে? কখন হবে? সংসদ নির্বাচনের দিন একই সঙ্গে নাকি তার আগে? বিএনপি এবং এনসিপি বলছে একই দিন হতে পারে। নির্বাচন কমিশনও বলছে একই দিন হলেই ভালো। আর জামায়াতে ইসলামী বলছে নির্বাচনের আগেই, আগামী নভেম্বরেই গণভোট হতে হবে। এরই মধ্যে প্রশ্ন আরও উঠেছে—গণভোটের কোনো প্রয়োজন আছে কি? এ ছাড়া গণভোটের আইনগত বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন আছে বলে আইনজ্ঞদের অভিমত। কারণ, সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে গণভোটের বিধান বাতিল করা হয়েছিল। পঞ্চদশ সংশোধনীকে চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা এক মামলার রায়ে গত বছর ১৭ ডিসেম্বর হাইকোর্ট গণভোট-সংক্রান্ত সেই ১৪২ ধারা বাতিল করেছেন বটে। কিন্তু হাইকোর্টের রায়ের ভিত্তিতেই কি গণভোট আয়োজন করা যায়? ওই রায় চ্যালেঞ্জ করে তো যে কেউ যেকোনো সময় আপিল করতে পারেন। আপিলের রায়ে অন্য রকম সিদ্ধান্তও দিতে পারেন আপিল বিভাগ।
এই অবস্থায় ঐকমত্য কমিশনকে বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়েছেন যে একটি আদেশ জারি করে (রাষ্ট্রপতির সাংবিধানিক আদেশ) গণভোট আয়োজন করতে হবে। কিন্তু রাষ্ট্রপতির সাংবিধানিক আদেশ বলতে তো সংবিধানে কিছু নেই! তাহলে ওই আদেশ বা জারি হবে কিসের ভিত্তিতে? ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ সাংবাদিকদের বলেছেন, রাজনৈতিক দল ও জোটগুলো চাইছে, রাজনৈতিক দল ও বিশেষজ্ঞদের মতামতের সমন্বয়ে কমিশন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে সরকারকে এসব বিষয়ে পরামর্শ দিক।
কিন্তু তাতেও গণভোট আয়োজন নিয়ে জটিলতার পূর্ণ সমাধান মেলে না। কারণ, ঐকমত্য কমিশন চাইছে সংবিধান সংশোধনীর প্রস্তাবিত বিষয়গুলো দুই ভাগে ভাগ করে গণভোট করতে। যেমন যে ৯টি বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর ‘নোট অব ডিসেন্ট’ রয়েছে, সেগুলোকে গণভোটের এক ভাগে রাখা হবে। আর অন্য ভাগে থাকবে যেসব বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়েছে, সেগুলো। এখন প্রশ্ন হলো, এর কোনো একটি ভাগের যেকোনো একটি বা একাধিক বিষয়ে যদি কোনো ভোটার না ভোট দিতে চান এবং অন্যগুলোতে হ্যাঁ ভোট দিতে চান, সেটা তিনি কীভাবে দেবেন! সুতরাং এই ধারণা কতটা বাস্তবসম্মত সে প্রশ্ন থেকেই যায়। এ প্রসঙ্গে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা, অর্থনীতিবিদ ও গবেষক হোসেন জিল্লুর রহমানের বক্তব্য প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেছেন, কোনো দুর্বোধ্য বিষয় এবং একাধিক বিষয় সন্নিবেশিত করে গণভোট নেওয়া যায় না। এমনকি কোনো প্রশ্ন গণভোটের বিষয়বস্তু করা যায় না যে প্রশ্নের একাধিক ভাগের এক রকম জবাব হতে পারে। শুধু হ্যাঁ কিংবা না বলে যেসব বিষয়ে মতপ্রকাশ করা যায় না। বাংলাদেশে এর আগে তিনটি গণভোট আয়োজন করা হয়েছে ১৯৭৭, ১৯৮৫ এবং ১৯৯১ সালে। এর প্রতিটিতেই ভোটের জন্য একটি মাত্র সুনির্দিষ্ট প্রশ্ন রাখা হয়েছিল।
এ ছাড়া নতুন নতুন আরও নানা দ্বন্দ্বের সৃষ্টি প্রতিনিয়তই হচ্ছে। এর মধ্যে বহুল আলোচিত একটি হলো ‘সেফ এক্সিট’ (নিরাপদ প্রস্থান)। সম্প্রতি একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, উপদেষ্টাদের অনেকেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে লিয়াজোঁ করে ফেলেছেন। তাঁরা নিজেদের সেফ এক্সিটের কথা ভাবছেন। এর আগেও এনসিপির কোনো কোনো নেতা অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকা নিয়ে তাঁদের অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। এমনকি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে বিশ্বাস করা তাঁদের ভুল হয়েছিল বলেও তাঁদের মন্তব্য শোনা গেছে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কখনো কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। এবার অবশ্য সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে চুপ থাকতে পারেননি পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেছেন, ‘বিভিন্ন সময় দেশের নানা ঝড়-ঝঞ্ঝায় কোথাও পালিয়ে যাননি, আগামীতেও দেশেই থাকবেন। এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামকেই পরিষ্কার করতে হবে, কারা সেফ এক্সিট চায়।’
জনগণের চাওয়া শুধু একটিই। তা হলো, দুই বিপরীতের দ্বন্দ্ব যেন আমাদের বিকশিতই করে। বিভেদে কলুষিত যেন না করে।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
দেশের ছোট-বড় ৩০টি রাজনৈতিক দলকে নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দীর্ঘ অধ্যবসায়ের মধ্য দিয়ে আমরা বোধ হয় দেশের রাজনীতি ও সমাজ বিকাশের একটি জটিল-কুটিল প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণের সুযোগ পেয়েছি। সম্ভবত পৃথিবীতে সমাজ বিকাশের সর্বজনীন ও গ্রহণযোগ্য দার্শনিক তত্ত্ব হচ্ছে ‘দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ’। কার্ল মার্ক্স এবং তাঁর বন্ধু ফ্রেডারিক এঙ্গেলস এই তত্ত্বের জনক। এর অন্তর্নিহিত বক্তব্য হলো—দুই বিপরীতের দ্বন্দ্ব ও বিকাশ। প্রতিটি বস্তু বা ধারণার মধ্যে দুটি পরস্পরবিরোধী শক্তি থাকে এবং তাদের মধ্যকার দ্বন্দ্বই সব পরিবর্তন ও বিকাশের মূল চালিকাশক্তি। দ্বন্দ্বের মাধ্যমেই নতুন নতুন ধারণার জন্ম হয় এবং এটিই বিবর্তনের পরিবর্তনের ভিত্তি।
দুই বিপরীতের দ্বন্দ্ব ও বিকাশের তত্ত্ব নিয়ে কথা বলার কারণটা ব্যাখ্যা করা দরকার। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় থেকেই শুরু করা যায়। সেই অভ্যুত্থানের শক্তি হিসেবে যে বৃহত্তর রাজনৈতিক-সামাজিক ঐক্য আমরা দেখেছি, অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের অল্প কিছুদিন পরই সেই ঐক্যে আমরা বিভক্তিও শুরু হতে দেখেছি। সেই বিভক্তি ক্রমান্বয়ে বহুধা বিভক্ত শক্তিতে পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন বিষয়ে সেই রাজনৈতিক শক্তিগুলোর মধ্যে মতভিন্নতা তীব্র থেকে তীব্রতর হয়েছে। তার মধ্য দিয়ে নতুন ধারণার সৃষ্টি হয়েছে। কিছু বিষয়ে অনুচ্চারিত আপসরফা হয়েছে। এইভাবে সংস্কার, বিচার ও নির্বাচনের প্রক্রিয়া অগ্রসর হতে হতে একটা সমঝোতার জায়গায় উপনীত হওয়া গেছে। এই সপ্তাহেই জুলাই সনদ চূড়ান্ত হচ্ছে। যেসব বিষয়ে সব দল একমত হয়েছে, সেগুলোর সমন্বয়ে প্রণীত সনদে সবাই স্বাক্ষর করবে। যেগুলোতে ঐকমত্য হয়নি, নোট অব ডিসেন্ট দেওয়া অবস্থায় রয়েছে, সেগুলোকেও সম্পৃক্ত করে গণভোট আয়োজনের বিষয়েও ঐকমত্য হয়েছে। পাশাপাশি বিচার এবং নির্বাচনের প্রক্রিয়া তো চলমান আছেই।
কিন্তু এখানেই কি সব শেষ! সব দ্বন্দ্বের অবসান হয়ে গেছে? তা তো হতে পারে না। দ্বন্দ্ব থেমে গেলে তো বিকাশ বন্ধ হয়ে যাবে। তাতে পৃথিবীর কেন্দ্রানুগ শক্তি (সেন্ট্রিপেটাল ফোর্স) এবং কেন্দ্রাতিগ শক্তির (সেন্ট্রিফিউগাল ফোর্স) বিপরীতমুখী টানাপোড়েন থেমে যাবে। চন্দ্র-সূর্যের উদয়-অস্ত বন্ধ হয়ে যাবে। একইভাবে সমাজ হয়ে পড়বে স্থবির, অচল। সুতরাং সবকিছুর ফয়সালা হয়ে যায়নি। নতুন নতুন প্রশ্ন উঠবে। তার জবাব আসবে। নতুন নতুন ধারণার সৃষ্টি হবে। ভিন্নমত হবে। অনৈক্য হবে। আলোচনা হবে। অধ্যবসায় চলবে। অগ্রগতিও হবে। এইভাবে চলতে থাকবে।
এই যেমন বলা যায় গণভোটের কথা। জুলাই সনদ বাস্তবায়নের জন্য গণভোটের বিষয়ে সব দলের ঐকমত্য হয়েছে। মানে সবাই একমত হয়েছে যে গণভোট করা যেতে পারে। এরপরই প্রশ্ন উঠেছে, কোন প্রক্রিয়ায় গণভোট হবে? কখন হবে? সংসদ নির্বাচনের দিন একই সঙ্গে নাকি তার আগে? বিএনপি এবং এনসিপি বলছে একই দিন হতে পারে। নির্বাচন কমিশনও বলছে একই দিন হলেই ভালো। আর জামায়াতে ইসলামী বলছে নির্বাচনের আগেই, আগামী নভেম্বরেই গণভোট হতে হবে। এরই মধ্যে প্রশ্ন আরও উঠেছে—গণভোটের কোনো প্রয়োজন আছে কি? এ ছাড়া গণভোটের আইনগত বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন আছে বলে আইনজ্ঞদের অভিমত। কারণ, সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে গণভোটের বিধান বাতিল করা হয়েছিল। পঞ্চদশ সংশোধনীকে চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা এক মামলার রায়ে গত বছর ১৭ ডিসেম্বর হাইকোর্ট গণভোট-সংক্রান্ত সেই ১৪২ ধারা বাতিল করেছেন বটে। কিন্তু হাইকোর্টের রায়ের ভিত্তিতেই কি গণভোট আয়োজন করা যায়? ওই রায় চ্যালেঞ্জ করে তো যে কেউ যেকোনো সময় আপিল করতে পারেন। আপিলের রায়ে অন্য রকম সিদ্ধান্তও দিতে পারেন আপিল বিভাগ।
এই অবস্থায় ঐকমত্য কমিশনকে বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়েছেন যে একটি আদেশ জারি করে (রাষ্ট্রপতির সাংবিধানিক আদেশ) গণভোট আয়োজন করতে হবে। কিন্তু রাষ্ট্রপতির সাংবিধানিক আদেশ বলতে তো সংবিধানে কিছু নেই! তাহলে ওই আদেশ বা জারি হবে কিসের ভিত্তিতে? ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ সাংবাদিকদের বলেছেন, রাজনৈতিক দল ও জোটগুলো চাইছে, রাজনৈতিক দল ও বিশেষজ্ঞদের মতামতের সমন্বয়ে কমিশন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে সরকারকে এসব বিষয়ে পরামর্শ দিক।
কিন্তু তাতেও গণভোট আয়োজন নিয়ে জটিলতার পূর্ণ সমাধান মেলে না। কারণ, ঐকমত্য কমিশন চাইছে সংবিধান সংশোধনীর প্রস্তাবিত বিষয়গুলো দুই ভাগে ভাগ করে গণভোট করতে। যেমন যে ৯টি বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর ‘নোট অব ডিসেন্ট’ রয়েছে, সেগুলোকে গণভোটের এক ভাগে রাখা হবে। আর অন্য ভাগে থাকবে যেসব বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়েছে, সেগুলো। এখন প্রশ্ন হলো, এর কোনো একটি ভাগের যেকোনো একটি বা একাধিক বিষয়ে যদি কোনো ভোটার না ভোট দিতে চান এবং অন্যগুলোতে হ্যাঁ ভোট দিতে চান, সেটা তিনি কীভাবে দেবেন! সুতরাং এই ধারণা কতটা বাস্তবসম্মত সে প্রশ্ন থেকেই যায়। এ প্রসঙ্গে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা, অর্থনীতিবিদ ও গবেষক হোসেন জিল্লুর রহমানের বক্তব্য প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেছেন, কোনো দুর্বোধ্য বিষয় এবং একাধিক বিষয় সন্নিবেশিত করে গণভোট নেওয়া যায় না। এমনকি কোনো প্রশ্ন গণভোটের বিষয়বস্তু করা যায় না যে প্রশ্নের একাধিক ভাগের এক রকম জবাব হতে পারে। শুধু হ্যাঁ কিংবা না বলে যেসব বিষয়ে মতপ্রকাশ করা যায় না। বাংলাদেশে এর আগে তিনটি গণভোট আয়োজন করা হয়েছে ১৯৭৭, ১৯৮৫ এবং ১৯৯১ সালে। এর প্রতিটিতেই ভোটের জন্য একটি মাত্র সুনির্দিষ্ট প্রশ্ন রাখা হয়েছিল।
এ ছাড়া নতুন নতুন আরও নানা দ্বন্দ্বের সৃষ্টি প্রতিনিয়তই হচ্ছে। এর মধ্যে বহুল আলোচিত একটি হলো ‘সেফ এক্সিট’ (নিরাপদ প্রস্থান)। সম্প্রতি একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, উপদেষ্টাদের অনেকেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে লিয়াজোঁ করে ফেলেছেন। তাঁরা নিজেদের সেফ এক্সিটের কথা ভাবছেন। এর আগেও এনসিপির কোনো কোনো নেতা অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকা নিয়ে তাঁদের অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। এমনকি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে বিশ্বাস করা তাঁদের ভুল হয়েছিল বলেও তাঁদের মন্তব্য শোনা গেছে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কখনো কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। এবার অবশ্য সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে চুপ থাকতে পারেননি পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেছেন, ‘বিভিন্ন সময় দেশের নানা ঝড়-ঝঞ্ঝায় কোথাও পালিয়ে যাননি, আগামীতেও দেশেই থাকবেন। এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামকেই পরিষ্কার করতে হবে, কারা সেফ এক্সিট চায়।’
জনগণের চাওয়া শুধু একটিই। তা হলো, দুই বিপরীতের দ্বন্দ্ব যেন আমাদের বিকশিতই করে। বিভেদে কলুষিত যেন না করে।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
বর্তমান বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থাকে জনমুখী ও সেবাধর্মী করতে প্রয়োজন প্রাচীন ঔপনিবেশিক ধাঁচের বিচারব্যবস্থাকে পরিবর্তন করা। এ জন্য দরকার আদালতের সব জায়গায় অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার। এটা করা গেলে নাগরিকদের আদালতকেন্দ্রিক পরিষেবা সুলভে, স্বল্প সময়ে এবং স্বচ্ছতার মাধ্যমে প্রদান করা সম্ভব হবে।
৫ ঘণ্টা আগেবাংলাদেশের যোগাযোগব্যবস্থার অন্যতম আধুনিক সংযোজন হলো ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীর সংযোগকারী এই এক্সপ্রেসওয়েটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। অথচ মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলা অংশে চার মাস ধরে সড়কবাতি জ্বলছে না।
৫ ঘণ্টা আগেফিওদর দস্তয়েফ্স্কি জনপ্রিয় হয়ে উঠছেন জেন-জি আর নতুন ডানপন্থীদের মধ্যে—এ কথা বলা হলে অনেকেই ভ্রু কুঁচকে তাকাবেন আপনার দিকে। কিন্তু একটু ব্যাখ্যা করলেই তাঁরা বুঝে যাবেন, কিছুই বাড়িয়ে বলছেন না আপনি।
১ দিন আগেসময়গুলো গোছানো না। চিন্তার দরজা-জানালা, তাও বন্ধ। বাইরে অনিশ্চয়তার দমকা হাওয়া। কী করব, কী বলব কিংবা কী করা দরকার, বলা দরকার ওসব এখন আর চলে না, অচল মুদ্রা। যাকে একদিন সবচেয়ে বেশি বিশ্বাস করেছি, সে-ই এখন বড় বিশ্বাসঘাতক। যিনি সত্য কথা বলার মস্ত দাবিদার ছিলেন, সে-ই এখন দেখি প্রচণ্ড মিথ্যাবাদী। সমাজ
১ দিন আগে