Ajker Patrika

বিশ্বের বিপর্যস্ত পানিচক্র

সম্পাদকীয়
বিশ্বের বিপর্যস্ত পানিচক্র

উন্নত দেশগুলোর অতিরিক্ত কার্বন নিঃসরণ এবং জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের কারণে বিশ্বে জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটছে। ফলে পৃথিবীর পানিচক্রের স্বাভাবিক ছন্দ হারিয়ে যাচ্ছে। আজকের পত্রিকায় ১৯ সেপ্টেম্বর এ নিয়ে বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার (ডব্লিউএমও) একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে।

এই রিপোর্ট অনুসারে পৃথিবীর পানিচক্র তার স্বাভাবিক ছন্দ হারিয়েছে। ফলে বন্যা ও খরার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ ভয়ংকর রূপ ধারণ করেছে। পানিচক্র স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় ঘটে থাকে, যেমন নদী, হ্রদ এবং অন্যান্য জলাশয় থেকে পানি বাষ্প হয়ে মেঘের সৃষ্টি করে, যা পরে বৃষ্টি বা বরফ হয়ে আবার পৃথিবীতে ফিরে আসে। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই প্রক্রিয়া এখন আর স্বাভাবিকভাবে ঘটছে না। গত বছর বিশ্বের দুই-তৃতীয়াংশ নদীর পানির প্রবাহ স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক কম বা বেশি ছিল। আমাজনের মতো বৃহত্তম নদী অববাহিকায় পানির স্তর অস্বাভাবিকভাবে কমে গিয়েছিল, আবার একই সময়ে ইউরোপ ও আমেরিকায় ভয়াবহ বন্যা হয়েছে।

বাংলাদেশের আবহাওয়া ও ঋতুচক্রের তেমন ধারাবাহিকতা নেই। এখানে এখন বর্ষাকালে উত্তরাঞ্চলে বৃষ্টি হয় না, শীতকালে দেশের কিছু জায়গায় প্রচণ্ড শীত, কিন্তু অনেক জায়গায় সেভাবে শীত অনুভূত হয় না। অন্যদিকে আমাদের নদীগুলো ক্রমে শুকিয়ে বা মরে যাচ্ছে। এসব জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঘটছে।

জলবায়ু সংকটের জন্য প্রধানত দায়ী বিশ্বের উন্নত দেশগুলো। শিল্পবিপ্লব থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত তারা সবচেয়ে বেশি কার্বন নিঃসরণ করছে। এই কার্বন বায়ুমণ্ডলে জমা হয়ে পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি করছে এবং পানিচক্রের ভারসাম্য নষ্ট করছে। তা সত্ত্বেও এসব দেশ তাদের ঐতিহাসিক দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়াচ্ছে এবং কার্বন নিঃসরণ কমানোর ক্ষেত্রে যথেষ্ট আগ্রহ দেখাচ্ছে না।

কয়েক বছর আগে বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে গৃহীত সিদ্ধান্ত মতে, কার্বন নিঃসরণের দায়ে উন্নত বিশ্বের দেশগুলোকে জরিমানা করা হয়েছিল। সেই টাকা তৃতীয় বিশ্বের জলবায়ুজনিত ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে দেওয়া হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সেই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়নি। এ থেকে বোঝা যায়, তাদের মোড়লিপনার কারণে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে, কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে কারও কিছু করার সাধ্য নেই।

এদিকে তাদের এই মোড়লিপনার কারণে শুধু তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না, বরং তারাও যে বড় ধরনের ঝুঁকিতে রয়েছে, এই প্রতিবেদনে সেটি প্রমাণিত। এই প্রতিবেদন আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে, আমরা এক ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখে দাঁড়িয়ে রয়েছি। জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার থেকে সরে

না এলে এবং উন্নত দেশগুলো তাদের দায়িত্ব পালন না করলে এই সংকট আরও বাড়বে। এখন সময় এসেছে বিশ্বজুড়ে একটি সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণের। উন্নত দেশগুলোর উচিত তাদের কার্বন নিঃসরণ কমানোর লক্ষ্যমাত্রা আরও কঠোর করা এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোকে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় সাহায্য করা। অন্যথায় এই জলবায়ু সংকট শুধু পানিসম্পদ নয়, আমাদের সভ্যতাকেও হুমকিতে ফেলবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত