Ajker Patrika

নেপাল পুলিশের স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র নেই, জেন-জি বিক্ষোভে গুলি ছুড়ল কারা—ষড়যন্ত্রের অভিযোগ কে পি শর্মার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২০: ০২
নেপালের সাবেক প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি। ছবি: সংগৃহীত
নেপালের সাবেক প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি। ছবি: সংগৃহীত

ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর প্রথমবার প্রকাশ্যে মুখ খুলেছেন নেপালের সাবেক প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলি। সংবিধান দিবসে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি দীর্ঘ পোস্টে তিনি বিক্ষোভের সহিংস রূপের নিন্দা জানিয়েছেন এবং নেপালের সার্বভৌমত্ব ও সংবিধান রক্ষায় জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি এই অস্থিরতাকে একটি ‘বিকৃত কাল্পনিক বিবৃতি’ দ্বারা ইন্ধন জোগানো হয়েছে বলে অভিহিত করেছেন, যা তরুণদের ভুল পথে চালিত করেছে এবং জাতিকে অস্থিতিশীল করে তুলেছে। তিনি আরও অভিযোগ করেছেন, নেপাল পুলিশের কাছে কোনো ধরনের স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র নেই। তাহলে প্রশ্ন উঠে, জেন-জিদের আন্দোলনে গুলি ছুড়ল কারা?

৯ সেপ্টেম্বর পদত্যাগের পর অলি নেপাল সেনাবাহিনীর ব্যারাকে আশ্রয় নেন। ধারণা করা হয়, এটি কাঠমান্ডুর উত্তরে শিবাপুরী বনাঞ্চলে অবস্থিত। নেপাল সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের মতে, কে পি শর্মা অলি একটি ভাড়া বাড়িতে ওঠার আগে ৯ দিন সামরিক সুরক্ষায় ছিলেন। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম পিটিআইয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, নিরাপত্তার কারণে তাঁর সঠিক অবস্থান এখনো অপ্রকাশিত রয়েছে।

জানা গেছে, রাজধানী ও অন্যান্য অঞ্চলে বিক্ষোভ সহিংস রূপ ধারণ করলে তিনি পদত্যাগের দিনই ব্যারাকে আশ্রয় নিয়েছিলেন।

গতকাল দেওয়া ফেসবুক পোস্টে কে পি শর্মা অলি দাবি করেন, জেন-জিদের বিক্ষোভ প্রাথমিকভাবে শান্তিপূর্ণভাবেই শুরু হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীকালে এর মধ্যে ‘ষড়যন্ত্রকারীদের’ অনুপ্রবেশ ঘটলে বিশৃঙ্খলা ও রক্তপাতের ঘটনা ঘটে।

অলি তাঁর ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘গত সপ্তাহে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু জেন-জিদের এই বিক্ষোভে ষড়যন্ত্রকারীদের অনুপ্রবেশ ঘটে। এরাই সহিংসতা তৈরি করে এবং আমাদের যুবকদের হত্যা করে।’

তিনি জোর দিয়ে বলেন, সরকার বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালানোর জন্য পুলিশকে কোনো আদেশ দেয়নি। পুলিশের কাছে এসব স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রও ছিল না। তিনি দাবি করেন, বিক্ষোভের সময় স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র ব্যবহারের ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত হওয়া উচিত।

তিনি বলেন, ‘পুলিশের কাছে নেই এমন স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র দিয়ে গুলি করার ঘটনা তদন্ত হওয়া উচিত। আমি আবারও নিহত তরুণদের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি এবং আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি।’

ফেসবুক পোস্টে অলি তাঁর বিরোধীদের বিরুদ্ধে নেপালের গণতন্ত্র এবং সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত হানার অভিযোগ এনেছেন। তিনি তাঁর পদত্যাগের পর দেশব্যাপী অগ্নিসংযোগ ও ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের কথা উল্লেখ করেন। তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমাদের সংবিধানের ওপর একটি বড় আক্রমণ হতে চলছে। আমার প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগের পর সিংহ দরবার (পার্লামেন্ট) জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে—নেপালের মানচিত্র পুড়িয়ে দেশের প্রতীক মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে। জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী সংস্থা, আদালত, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক দলের কার্যালয় এবং নেতা ও কর্মীদের বাড়িঘর পুড়ে ছাই করে দেওয়া হয়েছে।’

অলি এই আন্দোলনের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, এই বিক্ষোভ নেপালকে পুনর্গঠনের প্রকৃত আকাঙ্ক্ষার পরিবর্তে মিথ্যা তথ্যের ওপর ভিত্তি করে ছিল। তিনি প্রশ্ন করেন, ‘আমাদের দেশ কি গড়া হচ্ছিল, নাকি নষ্ট করা হচ্ছিল, নাকি এটি কেবল একটি বিকৃত কাল্পনিক বিবৃতি দিয়ে ছড়ানো ক্ষোভ ছিল?’

নিজের বার্তায় অলি নেপালের সকল প্রজন্মের নাগরিকদের সংবিধান রক্ষা এবং জাতীয় সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি ঘোষণা করেন, ‘যদি সার্বভৌমত্ব আমাদের অস্তিত্ব হয়, তবে সংবিধান আমাদের স্বাধীনতার ঢাল। কেবল আমাদের ঐক্যই এই অপ্রত্যাশিত সংকট থেকে দেশকে আবার এগিয়ে নিতে ও বাঁচাতে পারে।’

ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বদের উদাহরণ টেনে কে পি শর্মা অলি বর্তমান অস্থিরতাকে নেপালের ইতিহাসে অতীতের বিশ্বাসঘাতকতার সঙ্গে তুলনা করেন এবং বিভাজন ও অস্থিতিশীলতার দীর্ঘমেয়াদি পরিণতির বিষয়ে সতর্ক করেন। তিনি বলেন, ‘বাস্তবতার বাইরে গিয়ে প্রসারিত অসন্তোষের ফলাফল কেবল অনুশোচনার কারণ হয়।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত