Ajker Patrika

লকডাউন জরুরি, সঙ্গে অসহায় মানুষের জন্য সাহায্যও

আবেদীন কাদের
আপডেট : ১২ এপ্রিল ২০২১, ১১: ২৭
লকডাউন জরুরি, সঙ্গে অসহায় মানুষের জন্য সাহায্যও

উন্নত, বিশেষ করে যেসব দেশ অর্থনৈতিকভাবে ধনী, তারাও গত এক বছরের বেশি সময় ধরে হিমশিম খাচ্ছে তাদের নাগরিকদের করোনার জন্য স্বাস্থ্যসেবা দিতে এবং এর কারণে যে বিপুলসংখ্যক মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ছেন, তাদের আর্থিক সাহায্য দিতে। সেদিক থেকে দরিদ্র দেশগুলোর মানুষদের অবস্থা সত্যিই বেদনাদায়ক। বাইরে করোনার ভয়, ঘরে থাকলে প্রায় অনাহারে দিন কাটাতে হবে। বাংলাদেশে অর্থনৈতিক অবস্থা আগের চেয়ে অনেক ভালো, প্রতিদিন রোজগার করে সংসার চালাতে হয় এমন মানুষের সংখ্যা গত তিন দশকে কমেছে সন্দেহ নেই, কিন্তু এরপরও বিপুলসংখ্যক মানুষ শ্রমিকের কাজ করেন, যাদের পরিবার তাদের প্রতিদিনের রোজগারের ওপর নির্ভরশীল। এই মানুষের সংখ্যা দেশের জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশের বেশি।

কৃষিমজুর, শিল্পকারখানার মজুর বা শহরের হাজার ধরনের শ্রমজীবী মানুষ বা ছোট ব্যবসায়ী, যারা রাস্তার ধারে বসে তাদের ব্যবসা চালান–তারা প্রতিদিনের রোজগারের ওপরই বেঁচে থাকেন। তাদের কাজে যেতেই হয়। বড়জোর দু-একদিন ঘরে বসে থাকা সম্ভব, এরপর নয়। কিন্তু সরকার যে লকডাউন ঘোষণা করেছে, তাতে এই জনসমষ্টির কী উপায় হবে? এ ছাড়া রয়েছে ভিন্ন পেশার অনেক মানুষ, যারা সত্যিই প্রান্তিক; যেমন ভিখারি বা যৌনকর্মী। এদের বিষয়ে সমাজ বা রাষ্ট্র নিশ্চয়ই কিছু ভাবে না। আমাদের শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শুধু তাদের সামাজিক মর্যাদাপূর্ণ জীবন বিষয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। কিন্তু একজন যৌনকর্মীর অসহায় শিশুসন্তান থাকতে পারে, একজন বৃদ্ধা ভিক্ষাজীবিনীরও আগামীকালের আহার না থাকতে পারে। এই মানুষগুলো কোথায় যাবেন, কে তাদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়াবেন? রাস্তায় মানুষ নেই, গাড়ি-ঘোড়া বন্ধ–কী করে চলবে এসব প্রান্তিক মানুষের জীবন?

আর সারা দেশে করোনার এই সংখ্যাবৃদ্ধিতে বোঝা গেল, কি নিদারুণ স্বল্পসংখ্যায় রয়েছে আমাদের হাসপাতাল, রোগীদের সামাল দেওয়ার প্রয়োজনীয় ওষুধ, চিকিৎসক বা যন্ত্রপাতি! রাষ্ট্র যারা চালান, তারা অধিকাংশই এসব হাসপাতালে চিকিৎসা নেন না, তাদের প্রয়োজন মাত্র কয়েক ঘণ্টা সময়–জরুরি চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর, ব্যাংকক অথবা ইউরোপের কোনো হাসপাতালে যেতে। তাই তাদের এসব নিয়ে মাথাব্যথা কম। কিন্তু রাষ্ট্রেরও যে মৌলিক কিছু দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার প্রয়োজন, তা সম্ভবত আমাদের সমাজের কর্ণধারদের ভাবার সময় নেই। বিপদ এলে সমস্যাগুলো উৎকট আকার ধারণ করে।

অন্যদিকে লকডাউন না দিয়েও সরকারের এ মুহূর্তে উপায় নেই, কারণ পরিস্থিতি আয়ত্তের বাইরে চলে গেছে। বিপদটা আসলে দোধারি–একদিকে অপরিকল্পিত অর্থনীতিতে প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর অভাব, অন্যদিকে সম্পদের পাহাড় পরিমাণ বৈষম্য। একশ্রেণির মানুষ জগতের যেকোনো প্রান্তে শ্রেষ্ঠ চিকিৎসা নিতে সক্ষম বিমান-হাসপাতালে জরুরি ভ্রমণ করে, আর অধিকাংশ মানুষ অতি সাধারণ প্রয়োজনীয় চিকিৎসাটুকুও পান না। আর যে উল্লেখ করলাম একশ্রেণির বা প্রান্তিক পেশার মানুষ, যাদের সামাজিক কোনো মর্যাদা নেই, সমাজ তাদের ঘৃণাই করে, যদিও তাদের এ অবস্থার জন্য সমাজই দায়ী, কে তাদের দুরবস্থা নিয়ে ভাববে! এমনকি আমাদের সমাজের দাতব্য সংস্থাগুলোও কি গত একবছর আমাদের সমাজের নিগৃহীত যৌনকর্মীদের জীবন কীভাবে কাটছে, করোনায় আক্রান্ত হলে কীভাবে তাদের আহার জুটছে, তা কি তারা ভেবেছে? আসলে এই অসহায় মানুষগুলোর জন্য কিছুটা মমতা নিয়ে এগিয়ে যাওয়া যে সভ্য সমাজের কাজ, তা বোধ হয় আমরা ভাবতেই ভুলে গেছি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত