Ajker Patrika

উন্নত শির শেখ হাসিনা

আহমেদ শমসের
উন্নত শির শেখ হাসিনা

১১ জুন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার কারামুক্তি দিবস। ২০০৮ সালের এই দিনে তাঁকে সংসদ ভবন চত্বরে স্থাপিত বিশেষ কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। এর আগে ২০০৭ সালের ১৩ জুলাই তাঁকে সেনাসমর্থিত বিশেষ সরকার গ্রেপ্তার করেছিল। গ্রেপ্তারের আগে এক খোলা চিঠিতে শেখ হাসিনা দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছিলেন, ‘অন্যায়ের প্রতিবাদ করবেন। যে যেভাবে আছেন, অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবেন। মাথা নত করবেন না। সত্যের জয় হবেই। আমি আছি আপনাদের সঙ্গে, আমৃত্যু থাকব।’

দেশের মানুষ তাঁর কথায় সাহস পেয়েছিল। তাঁর পক্ষে দাঁড়িয়েছিল। প্রতিকূল পরিবেশে, ক্ষমতাসীনদের লালচোখ উপেক্ষা করে শেখ হাসিনার মুক্তির দাবিতে জনমত প্রবল হয়ে ওঠায় এবং কারাগারে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়ায় তখনকার সরকার তাঁকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। মুক্তি পেয়ে চিকিৎসার জন্য আমেরিকা যান এবং চিকিৎসা শেষে ২০০৮ সালের ৬ নভেম্বর দেশে ফিরে আসেন। দেশে ফেরার পর শেখ হাসিনা নির্বাচনী প্রচারে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ দ্বিতীয় দফা সরকার গঠন করে। এরপর আরও দুটি নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়ে সরকার গঠনে সক্ষম হয়। শেখ হাসিনা টানা তিন মেয়াদে সরকারপ্রধানের দায়িত্ব পালন করে বাংলাদেশের ক্ষমতার রাজনীতিতে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছেন।

তবে শেখ হাসিনার রাজনীতিতে আসা এবং পথচলা—কোনোটাই ঝুঁকিমুক্ত নয়। ১৯৭৫ সালে তাঁর বিদেশে অবস্থানকালে তিনি পিতা-মাতা-ভাই-ভাবিসহ স্বজনহারা হন। ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যা করে বাংলাদেশের রাজনীতিকে মুক্তিযুদ্ধের বিপরীত ধারায় চালানোর অপচেষ্টা নেওয়া হয়। সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান ঘোষণা দিয়ে রাজনীতিকে রাজনীতিবিদদের জন্য ‘ডিফিকাল্ট’ করে তোলার ব্রত নিয়ে সুবিধাবাদী এবং নীতিহীনতার পথ উন্মুক্ত 
করে দিয়েছেন। জিয়ার রোপিত বিষবৃক্ষ ফল দিয়েছে এবং রাজনীতি এখনো সুস্থ ধারায় ফিরে আসতে পারছে না।

এক বিশেষ রাজনৈতিক ও দলীয় সংকটের মুহূর্তে ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয় শেখ হাসিনাকে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শ পুনঃপ্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার নিয়ে শেখ হাসিনা পিতার রেখে যাওয়া দল আওয়ামী লীগের হাল ধরেন। কিন্তু তাঁর পথচলা কণ্টকমুক্ত ছিল না। তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে তাঁকে শারীরিকভাবে হত্যার কমপক্ষে ১৯টি অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। ২০০৭ সালে তাকে রাজনৈতিকভাবে ‘হত্যার’ চেষ্টাও সফল হয়নি বলে বাংলাদেশ এখন তার সুযোগ্য নেতৃত্বে চলছে।

২০২০ সালের ১০ জুন জাতীয় সংসদে শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমি এখানে (বাংলাদেশে) বেঁচে থাকার জন্য আসিনি। জীবনটা বাংলার মানুষের জন্য বিলিয়ে দিতে এসেছি। এখানে ভয় পাওয়ার কিছু নেই।’

হ্যাঁ, তিনি নির্ভয়ে তার লক্ষ্যপূরণে এগিয়ে যাচ্ছেন ঘরে-বাইরে শত্রুর মুখে ছাই দিয়ে। বাংলাদেশের মানুষের রাজনৈতিক, গণতান্ত্রিক, অর্থনৈতিক, মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই অব্যাহত রেখেছেন অনেকটা নিঃসঙ্গ শেরপার মতো। শেখ হাসিনার প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী খালেদা জিয়া, বিএনপির চেয়ারপারসন।

আমাদের দেশের রাজনীতির একটি বিশেষ ‘দুষ্টচক্র’ অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে ‘দুই নেত্রী’ অভিধা চালু করে শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াকে তথা আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে এক পাল্লায় তুলে রাজনীতির বড় ক্ষতি করেছে।

দুজনের রাজনীতির মত ও পথ এক নয়। যারা বলেন, আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির রাজনীতি মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ, তারা আসলে অতি সরলীকরণ দোষে দুষ্ট। পানি এবং আলকাতরার তফাত বুঝতে না পেরে রাজনীতিকে যারা স্বার্থ হাসিলের উপায় বলে ভেবে মানুষের মধ্যে মুখরোচক শব্দাবলি ছড়িয়ে দিয়ে অহেতুক কৌতূহল ও আশাবাদ তৈরিতে ভূমিকা রেখেছেন, তারা রাজনীতির বড় ক্ষতি করেছেন। 
হাসিনা-খালেদাকে এক জায়গায় আনার পথে যে ‘গোড়ায় গলদ’ আছে, সেটা বুঝতে না পারলে, রাজনীতির মূল বিরোধগুলোর নিষ্পত্তি না করলে নতুন পথের সন্ধান পাওয়া কঠিন। শেখ হাসিনা একা এবং এককভাবে লড়াই করছেন। সাধারণ মানুষকে আরও ঘনিষ্ঠভাবে কাছে পাওয়ার জন্য তাকে কিছু অপ্রিয় এবং সাহসী পদক্ষেপ নিতে হবে বলে অনেকেই মনে করেন। শেখ হাসিনার সফলতা এলে বাংলাদেশেরই সফলতা। তাই তাঁর সামনে জয়লাভের বিকল্প কিছু নেই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত