Ajker Patrika

প্লিজ মাত্র সাতটি দিন

শওগাত আলী সাগর
আপডেট : ০৩ জুলাই ২০২১, ১২: ৪৯
প্লিজ মাত্র সাতটি দিন

জানি, আপনার মনে অনেক প্রশ্ন আছে। প্রায় দেড় বছর ধরেই তো এই প্রশ্নগুলো করে যাচ্ছেন। এবারও হয়তো আপনি সেই একই প্রশ্ন তুলবেন। আপনাকে একটা অনুরোধ করি, প্লিজ! এবারের জন্য অন্তত প্রশ্নগুলো পাশে সরিয়ে রাখেন। অন্তত এই সপ্তাহটা, সম্ভব হলে পনেরোটা দিন। ব্যাংক খোলা কেন, গার্মেন্টস খোলা কেন, কাঁচাবাজার খোলা কেন—এই প্রশ্নগুলো না করে বরং বলুন : নিতান্তই প্রয়োজন না হলে এই সপ্তাহটা ব্যাংকে যাবেন না, খুব বেশি দরকার না হলে কাঁচাবাজারে যাওয়ার দরকার নেই। না খেয়ে মানুষ মরে না, মানুষ বরং মরে বেশি খেয়ে। গার্মেন্টস খোলা আছে! জোর দিয়ে বলুন : গার্মেন্টস ফাক্টরিতে স্বাস্থ্যবিধি যাতে অনুসরণ করা হয়, সেটা নিশ্চিত করুন। এই একটা সপ্তাহ অন্তত, (দুটো সপ্তাহ হচ্ছে সবচেয়ে বিজ্ঞানসম্মত) কোনো প্রশ্ন না তুলে মানুষকে কষ্ট করে হলেও ঘরে থাকতে বলেন, নিতান্তই বের হতে হলে যেন মাস্কটা পরে বের হন—সেই কথা বলেন। কাছাকাছি কারও সঙ্গে কথা বলার সুযোগ থাকলে শুধু একটা কথাই বলেন : প্লিজ! লোকসমাগমে যেয়ো না, বাইরে যেয়ো না।

কোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে সবকিছু বন্ধ রাখতে হলে কী করতেন? রাজনৈতিক কারণে দেশে হরতাল চললে কী করতেন? ঘরে বসে থাকতেন না! এখনো একটা বিপর্যয়ই তো চলছে। কাজেই সবাইকে এই সপ্তাহটা ঘরে থাকতে বলেন। আপনি নিজেও থাকেন। জানি, অনেকেই মনে করে তাদের করোনা হবে না। আপনি নিজেও হয়তো ভাবছেন, আপনার করোনা হবে না। আপনার ভাবনাই হয়তো ঠিক। শুধু আপনার কথাই ভাববেন! অন্যের কথা একটু ভাববেন না? আরেকজনের জন্য, আপনার পাশের মানুষের জন্য আপনি ঘরে থাকেন।

কোনো কারণে বের হতে হলে মাস্ক পরেন। মিডিয়া এই সময়টা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। দেড়টা বছর ধরে তো অনেক প্রশ্ন হলো, অনেক সমালোচনা হলো। এই একটা সপ্তাহ অন্তত শুধু ঘরে থাকার কথা বলেন। লকডাউনের সমস্যার কথা না বলে, মানুষ যে কষ্ট স্বীকার করেই স্বাস্থ্যবিধি মানছে—সেই কথা বলেন। মানুষের মনের মধ্যে একটা ‘পজিটিভ ভাইভ’ তোলার চেষ্টা করেন। নিজের প্রতি আপনি দায়িত্বহীন হতে পারেন; কিন্তু সমাজের আর দশটা মানুষের প্রতি দায়িত্বহীন হতে পারেন না!—এই কথাটা মানুষকে বলেন। অন্যের প্রতি আঙুল তুলে, নিজেদের মধ্যে বিভক্তির দেয়াল তুলে কোনো বিপর্যয় ঠেকানো যায় না।

বিপর্যয় ঠেকাতে হয় ঐক্যবদ্ধভাবে। পৃথিবীর যেসব দেশ করোনার ভয়াল থাবা থেকে নিজেদের কিছুটা হলেও মুক্ত করতে পেরেছে, তারা ঐক্যবদ্ধভাবে, প্রত্যেকে দায়িত্ব ভাগাভাগি করেই সেটা করেছে। গত দেড়টা বছরই তো আমরা জীবন আর জীবিকার বিতর্ক করে করেই কাটিয়ে দিলাম। তাতে কী লাভ হয়েছে? অথচ পনেরোটা দিন কঠিনভাবে লকডাউন করা গেলে সংক্রমণ ঠেকিয়ে দেওয়া যেত। যখন সীমান্তে সংক্রমণের কথা শোনা যাচ্ছিল, তখন ব্যবস্থা নিলে সেখানেই এটাকে ঠেকিয়ে রাখা যেত। এখন সারা দেশে ছড়িয়েছে। আমরা জীবন-জীবিকার তর্কে ব্যস্ত থেকেছি, করোনা তার জীবনকে সেকেন্ড জেনারেশনে (ডেলটা প্লাস) পৌঁছে দিয়েছে। আমরা জীবন-জীবিকা নিয়ে তর্ক করেছি, আমাদের জীবন ও জীবিকা দুটোকেই অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিয়েছি। অথচ পনেরোটা দিন কষ্ট করা গেলে পরিস্থিতিটা অন্যরকম হতে পারত। এই পনেরোটা দিন কষ্ট করা গেলে পরিস্থিতিটা অন্যরকম হতে পারে।

তাই লকডাউন নিয়ে কোনো প্রশ্ন নয়, বিতর্ক নয়, মানুষকে এটি মানতে উৎসাহ দিন, করোনার বিরুদ্ধে সম্মিলিত একটা যুদ্ধের ভূমিকা রাখুন।

লেখক: কানাডাপ্রবাসী সাংবাদিক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত