Ajker Patrika

অলিম্পিক ২০২০ ও আমরা

অরুণাভ পোদ্দার
অলিম্পিক ২০২০ ও আমরা

পৃথিবীর বৃহত্তম ক্রীড়া প্রতিযোগিতা বা টোকিও ২০২০ অলিম্পিক শেষ হলো সম্প্রতি। এবারের প্রতিযোগিতা করোনা অতিমারির কারণে নির্ধারিত সময়ের এক বছর পর অনুষ্ঠিত হয়েছে, দর্শকশূন্য পরিবেশে। জাপানিরা এই করোনা মহামারির সময়েও অত্যন্ত সুচারুভাবে সম্পন্ন করল এই মহাযজ্ঞ। টিভিতে টোকিওর শেষ দিনের মনভোলানো অনুষ্ঠানমালা দেখছিলাম। ২০২৪ অলিম্পিকের ভেন্যু প্যারিসের আইফেল টাওয়ারের পাশে উৎসবমুখর জনতা ও ফরাসি বৈমানিকদের মনোমুগ্ধকর ডিসপ্লে দেখে হঠাৎ মনে হলো, আগামী বছর আমরা বেঁচে থাকব তো? গত দেড় বছরে করোনা-ঝড়ে বিশ্ব যখন বিধ্বস্ত, তখন সেই চিন্তা অমূলক নয়। অলিম্পিক থেকে আমাদের প্রাপ্তি শূন্য।
ছাত্রজীবনে সোভিয়েত ইউনিয়নে পড়াশোনার সৌভাগ্য হয়েছিল।

সেখানকার টেলিভিশনে ১৯৮৮ সালের সিউল, ১৯৯২ সালের বার্সেলোনা ও ১৯৯৬ সালের আটলান্টা অলিম্পিক দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। সেই থেকেই অলিম্পিকের ওপর আমার আগ্রহ। সোভিয়েত ইউনিয়নের কথা বলছি এই কারণে যে, তখন খেলাধুলায় সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোর একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল। ওদের সরকার এটাকে পুঁজিবাদী রাষ্ট্রের বিপক্ষে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের সুযোগ হিসেবে ভাবত। তখন সোভিয়েত তথা সমাজতান্ত্রিক দেশের বিজয়কে নিজেদের বিজয় ভেবে ভালো লাগলেও মনের অগোচরে নিজ জন্মভূমি বাংলাদেশের ক্রীড়াক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকার দুঃখও পেয়ে বসত। ভাবতাম স্বৈরাচার এরশাদের পতনের পর গণতান্ত্রিক সরকার এলে দেশের ক্রীড়াক্ষেত্রও ঢেলে সাজানো হবে, অদূর ভবিষ্যতে আমরাও একদিন অলিম্পিকে যাব পদক জয়ের জন্য। রুশ দেশের মানুষেরা ক্রীড়ামোদী।

তাঁদের সঙ্গে কথা বলে খেলাধুলা বিষয়ে অনেক কিছু জানতে পেরেছি। স্বৈরাচারের পতনের পর গণতান্ত্রিক সরকার এসেছে, গণতন্ত্রের ছদ্মাবরণে গণতন্ত্র হরণ হয়েছে, আবার সামরিক সরকারের ছায়া উঁকি দিয়েছে। কিন্তু ক্রীড়াঙ্গনে সেভাবে সফলতা আসেনি। ক্রিকেটে আমরা টেস্ট স্ট্যাটাস পেয়েছি, বিশ্বকাপেও ভালোই খেলছি। কিন্তু ক্রিকেট বিশ্ব খুবই ছোট। ক্রীড়া বিশ্বের ডাকসাইটে দলগুলো ক্রিকেট বলতে গেলে খেলেই না।

অলিম্পিক তথা বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনে ভালো করতে হলে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার বিকল্প নেই। ক্রিকেট বাদে আরও বহু খেলা আছে যেখানে পরিকল্পনা করলে আমরা ১০-১৫ বছরের মধ্যে সুফল পেতে পারি। প্রথমেই আমাদের বেছে নিতে হবে সেই খেলাগুলোকে, যেখানে খেলোয়াড়দের শারীরিক কাঠামো সাফল্যের প্রতিবন্ধক নয়। যেমন শুটিং, আর্চারি, ব্যাডমিন্টন, টেবিল টেনিস ইত্যাদি। এরপর ব্যক্তিনৈপুণ্য ও শারীরিক কাঠামোর খেলাগুলো যেমন কুস্তি, জুডো, তায়কোয়ান্দো, ভারোত্তোলন, জ্যাভলিন, শটপুট, হ্যামার থ্রো, ডিসকাস থ্রো ইত্যাদি। ১৭০ মিলিয়ন জনশক্তির দেশে সেই সক্ষমতা খুঁজে পাওয়া কঠিন কিছু নয়।

আমাদের প্রথমেই মফস্বলে এই খেলাগুলো ছড়িয়ে দিতে হবে, আয়োজন করতে হবে নিয়মিত প্রতিযোগিতার! প্রতিটি জেলা, বিভাগে এগুলোর আয়োজন করতে পারলে একটা প্রজন্ম উঠে আসবে এই খেলাগুলো থেকে।

সে জন্য প্রথমেই দরকার সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও আন্তর্জাতিক মানের কোচের। আমাদের অর্থনীতি এখন মধ্যম আয়ের দেশগুলোর পর্যায়ে, তাই অর্থনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা খুব একটা কঠিন নয়। আর বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে উৎসাহিত করতে হবে। বিভিন্ন ব্যাংক, বিমা, সেবা সংস্থাকে ক্রীড়াক্ষেত্রে বিনিয়োগে এগিয়ে আসতে হবে। এতে তারাও ভবিষ্যতে সফল খেলোয়াড়দের ব্র‍্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবে নির্বাচিত করতে পারবে। আফ্রিকার কেনিয়া, ইথিওপিয়া কিন্তু আমাদের থেকে ধনী রাষ্ট্র নয়, কিন্তু দূরপাল্লার দৌড়ের কথা উঠলেই কয়েক দশক ধরে ওরা অপ্রতিদ্বন্দ্বী। আমরাও কি সেই স্বপ্ন দেখতে পারি না ভবিষ্যতের অলিম্পিকগুলোয় কোনো এক বিজয়ী বাঙালি লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে পাওয়া প্রাণের লাল-সবুজ পতাকা নিজের বুকে জড়িয়ে গাইছেন, ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’। 

লেখক: চিকিৎসক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ডাকসুতে শিবিরের জয়ে উদ্বেগ শশী থারুরের, জবাব দিলেন মেঘমল্লার

সবচেয়ে সুখী দেশ ফিনল্যান্ডে স্থায়ী বসবাসের আবেদন করবেন যেভাবে

‘ম্যামের মুখটা দেখলাম, মনে হলো—শুয়ে আছেন, কিছুই হয়নি তাঁর’

তিন ভোটে দায়িত্ব পালনকারীদের ‘যথাসম্ভব’ দূরে রাখতে হবে

৪ বিষয়ে সুরাহা চেয়ে ডাকসুর চিফ রিটার্নিং কর্মকর্তাকে অভিযোগ দিলেন ৯ পোলিং এজেন্ট

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত