স্বপ্না রেজা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাণের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আমার, শুধু আমার নয় বরং অনেকেরই। দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ, পাশ্চাত্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন পড়ার সুযোগ পেলাম, তখন প্রথম দিন বড় বোনের কাছ থেকে শাড়ি এনে পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রাখলাম। সেই দিনের শিহরণ, অনুভূতি এখনো শরীর-মনে দোলা দেয়। এ যেন অদ্ভুত এক ভালোবাসা আর প্রেম। গোটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ই আমার সদ্য ভূমিষ্ঠ এক প্রেমিক হয়ে উঠল। কত দিনের প্রতীক্ষার অবসান! সবুজ ঘাসে মোড়ানো মাঠে চলতে তারই অনুভব। প্রেম কি কেবল নারী আর পুরুষের মাঝেই হয়? মোটেও তা নয়। বড় প্রেম হয় স্বপ্ন দেখা ও তা পূরণের সঙ্গে। বিষয়বস্তু, প্রকৃতির সঙ্গেও নির্মল প্রেম হয়। যাহোক, প্রথম দিন শাড়ি পরে যাওয়ার কোনো কারণটা আজ কিছুতেই মনে করতে পারছি না। হয়তো অনেক দিনের পেছনের গল্প বা ইচ্ছার কাহিনিটা জীবনের অগুনতি সময়ের কাছে থিতু হয়ে আছে নানাবিধ কারণে। সময়ের রোদের তাপে তা জলীয় বাষ্প হয়ে মেঘে হারিয়ে গেছে। তবে আমার মনে হয়, স্বপ্নের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রথম সাক্ষাৎ অনেকটা ছিল প্রেমিকের সঙ্গে সাক্ষাতের মতো। ভালো লাগা ও ভালোবাসাটা এতই মধুর ছিল যে, সেই থেকে যে সত্যটা আমার আজও নিত্যসঙ্গী হয়ে আছে, আমার সঙ্গে জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে, সে সত্যটা হলো ‘শাড়ি আমার অত্যন্ত প্রিয় পোশাক হয়েই রইল আজ অবধি এবং আমি নিয়মিত শাড়ি পরিধান করি।’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমাকে প্রেমিকের মতো শাড়ি পরতে উৎসাহিত করেছে, অনুপ্রাণিত করেছে। আর এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরতে পরতে বাঙালিয়ানার স্পর্শ। এই স্পর্শ থেকে নিজেকে দূরে রাখি কী করে? দূরে রাখা কঠিন। সেই থেকে শাড়ি পরতে ভীষণ ও একমাত্র পছন্দ আমার।
আমি একজন বাঙালি নারী। অন্য পোশাক মাঝেসাঝে পরলেও এবং জীবন থেকে অনেক কিছু অনেক কারণে হারিয়ে গেলেও শাড়ি পরার ইচ্ছাটা কোনো কারণেই আজও হারিয়ে যায়নি, আমি আমার বাঙালিত্ব হারাইনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ ও স্নিগ্ধ পরিবেশ আমাকে বাঙালিয়ানায় অভ্যস্ত করে তুলেছিল, আজও যা অব্যাহত রয়েছে। আর বিশেষ দিনে বিশেষ রঙের সঙ্গে তাই মিল করে শাড়ি পরা চাই। এ প্রসঙ্গে একটা কথা বলে রাখি, কোনো পরিবেশ কিংবা পরিস্থিতি আমাকে আমার চিরাচরিত ইচ্ছা বা স্বভাব থেকে বিরত রাখতে পারেনি।
কলাভবনের তৃতীয় তলায় সাইকোলজি ডিপার্টমেন্ট। পাশেই ইকোনমিকস ডিপার্টমেন্ট। চোখাচোখি, মৃদু কুশল বিনিময় দুই ডিপার্টমেন্টের শিক্ষার্থীদের মাঝে হওয়াটা রীতিতে পরিণত হয়েছিল। যেচে পরিচিত হওয়া, গল্প করার মতো ঘটনা তো ছিলই। যাহোক, ক্লাস যখনই থাকুক খুব সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া চাই। কলাভবনের মাঠে কফির ভ্যান আসত প্রকৃতিতে শীত নেমে এলেই। শীতকালে সেই ভ্যান থেকে এক কাপ গরম কফি বা চা-বিক্রেতার কাছ থেকে চা না খেলে পুরো দিনটাই মাটির মতো ফ্যাকাশে হয়ে থাকত। ক্লাসে শিক্ষকদের লেকচার কানে যেতে চাইত না। মাথা ধরে আসত। আর কফি বা চা খাওয়ার সঙ্গে যখন সহপাঠীদের সাক্ষাৎটা মিলেমিশে একাকার হতো, তখন তো বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজত্বটা যেন হাতের মুঠোয় এসে ধরা দিত। অনেকটা আমরা সবাই রাজা, রাজার রাজত্বের মতো। হইহুল্লোড়, গল্প, আড্ডা আর অন্যদের দৃষ্টি আকর্ষণের এক অভিনব প্রতিযোগিতা ছিল কমবেশি সবার মধ্যে। এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষকদের লেকচারও হয়ে উঠত কত শ্রুতিমধুর। তরুণ শিক্ষকদের সুন্দরী শিক্ষার্থীদের প্রতি বাড়তি মনোযোগ, সমাদর সবই ছিল আড্ডার খোরাক। তবে সীমার মধ্যে থাকত। ব্যতিক্রম ঘটনা ছিল হাতে গোনা। আশির দশকের শেষের দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইভ টিজিং ছিল বলে মনে পড়ে না। তবে প্রেম নিবেদন, চিঠি লেখার প্রবণতা ছিল বেশ। মেয়ে শিক্ষার্থীর প্রতি পুরুষ শিক্ষার্থীর প্রেম নিবেদন যেমন ছিল, তেমন কোনো কোনো পুরুষ শিক্ষকও এর ব্যতিক্রম ছিলেন না। কবিতা, গান, নাটক চর্চা এবং এসবের পরিবেশন ও প্রদর্শন শিক্ষার্থীদের একে অন্যের কাছে এনে দিত, সম্পর্ক রচনায় ভালো অবদান রাখত। বন্ধুত্ব, সহনশীলতা, ধৈর্য, সহ্য, পরোপকারী মনোভাব ছিল দেখার মতো।
৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস, ৯ ডিসেম্বর বেগম রোকেয়া দিবস, ১০ ডিসেম্বর মানবাধিকার দিবস, ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস, ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস, ১৪ এপ্রিল পয়লা বৈশাখ ইত্যাদি দিবসগুলো এলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নানা রঙে, বর্ণে সজ্জিত হয়ে উঠতে দেখেছি। নিজেও সেজেছি পোশাকে, আবরণে, আচরণে। বাংলা ও বাঙালি জাতির কৃষ্টি, ঐতিহ্য আর সংস্কৃতিতে মুখরিত হতো এই বৃহৎ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চত্বর। পোশাক, সাজসজ্জায় তার উপস্থিতি ছিল। মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান—সব ধর্মের শিক্ষার্থীর আচরণে, আয়োজনে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ দেখেছি, সম্প্রীতি দেখেছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে একাত্তর সালে পাকিস্তানি সেনাদের বর্বরতায় অনেক নারী শিক্ষার্থী তাঁদের সম্ভ্রম হারিয়েছেন, প্রাণ বিসর্জন দিতে বাধ্য হয়েছেন। কেন পাকিস্তানি সেনারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মম হত্যাযজ্ঞ, ধর্ষণ চালিয়েছিল, তার ব্যাখ্যা আজও অনেকে মনে রেখেছে। আবার অনেকে ভুলে গেছে। কেউবা বিষয়টিকে রীতিমতো অস্বীকার করে প্রাদেশিক চেতনার প্রতি পক্ষপাতিত্ব করে চলেছে। মুক্তিযুদ্ধের প্রতি, স্বাধীনতার প্রতি, সংবিধানের প্রতি, সার্বভৌমত্বের প্রতি শিক্ষার্থীদের আপসহীন অবস্থান ও ঐক্য ছিল তখন চোখে পড়ার মতো, রাজনৈতিক মতাদর্শ ভিন্ন থাকা সত্ত্বেও। কিন্তু ধীরে ধীরে অপরাজনীতির মারাত্মক আগ্রাসনে দেশীয় কৃষ্টি, ঐতিহ্য, সংস্কৃতির রূপ, বর্ণ, স্বকীয়তা হারাতে থাকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে ওঠে অচেনা, অজানা ভিন্ন এক প্রতিষ্ঠান। শিক্ষার্থীদের গ্রাস করতে থাকে স্বার্থকেন্দ্রিক অপরাজনীতি, অপসংস্কৃতি। আড্ডা হয় রাজনৈতিক, সন্ত্রাসী কার্যকলাপ তা-ও হয় রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায়। ধর্মীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতাকে পুঁজি করে একটা শ্রেণি ধর্মীয় উগ্রবাদের বিস্তার ঘটাতে শুরু করে। রাজনৈতিক অপসংস্কৃতির কারণে জাতিতে জাতিতে বিভাজন সৃষ্টি হয়। বিরোধ তৈরি হয় সম্প্রীতির বদলে, প্রেমের বিপরীতে। নারীর প্রতি সহিংসতা, যৌন নিপীড়ন, নির্যাতন চলে ভিন্ন কায়দায়, ক্রমেই তা বাড়ে, বাড়ছে।
এখনকার শিক্ষার্থীদের পোশাক-আশাক ভিন্ন চেতনার মতো বদলে গেছে। বাংলা ও বাঙালির বৈশিষ্ট্য নেই, তেমনটা দেখা মেলে না। ভবিষ্যতে ধর্মীয় সম্প্রীতি আদৌ থাকবে কি না শিক্ষার্থীদের মাঝে, তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব, বাঙালি কৃষ্টি, ঐতিহ্য, সংস্কৃতির অস্তিত্ব ভবিষ্যতে থাকবে কি না কে জানে। পয়লা বৈশাখ উদ্যাপন হবে কি না, হলে ধরন বদলে যাবে কি না, তা-ও অজানা। ব্যক্তিস্বাধীনতা শব্দটি সম্ভবত আর থাকছে না। বিশেষ করে নারী জাতিকে কতটা পিছিয়ে নেবে আজকের পরিস্থিতি, সেটাও ভাবার বিষয়।
আলমারিভর্তি আমার দীর্ঘদিনের ভালোবাসার শাড়িগুলো পরবর্তী প্রজন্মকে উপহার দেওয়ার সুযোগ যদি না পাই, তাহলে এর দায় ও দায়িত্ব কারও ওপর বর্তাবে কি না কিংবা প্রিয় শাড়ির কোনো অস্তিত্ব থাকবে কি না এই দেশে, সেই প্রশ্নের জবাবটাইবা কী? রাষ্ট্র কি কখনো বলে বসবে, এই দেশে শাড়ি পরা নিষিদ্ধ?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাণের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আমার, শুধু আমার নয় বরং অনেকেরই। দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ, পাশ্চাত্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন পড়ার সুযোগ পেলাম, তখন প্রথম দিন বড় বোনের কাছ থেকে শাড়ি এনে পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রাখলাম। সেই দিনের শিহরণ, অনুভূতি এখনো শরীর-মনে দোলা দেয়। এ যেন অদ্ভুত এক ভালোবাসা আর প্রেম। গোটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ই আমার সদ্য ভূমিষ্ঠ এক প্রেমিক হয়ে উঠল। কত দিনের প্রতীক্ষার অবসান! সবুজ ঘাসে মোড়ানো মাঠে চলতে তারই অনুভব। প্রেম কি কেবল নারী আর পুরুষের মাঝেই হয়? মোটেও তা নয়। বড় প্রেম হয় স্বপ্ন দেখা ও তা পূরণের সঙ্গে। বিষয়বস্তু, প্রকৃতির সঙ্গেও নির্মল প্রেম হয়। যাহোক, প্রথম দিন শাড়ি পরে যাওয়ার কোনো কারণটা আজ কিছুতেই মনে করতে পারছি না। হয়তো অনেক দিনের পেছনের গল্প বা ইচ্ছার কাহিনিটা জীবনের অগুনতি সময়ের কাছে থিতু হয়ে আছে নানাবিধ কারণে। সময়ের রোদের তাপে তা জলীয় বাষ্প হয়ে মেঘে হারিয়ে গেছে। তবে আমার মনে হয়, স্বপ্নের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রথম সাক্ষাৎ অনেকটা ছিল প্রেমিকের সঙ্গে সাক্ষাতের মতো। ভালো লাগা ও ভালোবাসাটা এতই মধুর ছিল যে, সেই থেকে যে সত্যটা আমার আজও নিত্যসঙ্গী হয়ে আছে, আমার সঙ্গে জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে, সে সত্যটা হলো ‘শাড়ি আমার অত্যন্ত প্রিয় পোশাক হয়েই রইল আজ অবধি এবং আমি নিয়মিত শাড়ি পরিধান করি।’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমাকে প্রেমিকের মতো শাড়ি পরতে উৎসাহিত করেছে, অনুপ্রাণিত করেছে। আর এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরতে পরতে বাঙালিয়ানার স্পর্শ। এই স্পর্শ থেকে নিজেকে দূরে রাখি কী করে? দূরে রাখা কঠিন। সেই থেকে শাড়ি পরতে ভীষণ ও একমাত্র পছন্দ আমার।
আমি একজন বাঙালি নারী। অন্য পোশাক মাঝেসাঝে পরলেও এবং জীবন থেকে অনেক কিছু অনেক কারণে হারিয়ে গেলেও শাড়ি পরার ইচ্ছাটা কোনো কারণেই আজও হারিয়ে যায়নি, আমি আমার বাঙালিত্ব হারাইনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ ও স্নিগ্ধ পরিবেশ আমাকে বাঙালিয়ানায় অভ্যস্ত করে তুলেছিল, আজও যা অব্যাহত রয়েছে। আর বিশেষ দিনে বিশেষ রঙের সঙ্গে তাই মিল করে শাড়ি পরা চাই। এ প্রসঙ্গে একটা কথা বলে রাখি, কোনো পরিবেশ কিংবা পরিস্থিতি আমাকে আমার চিরাচরিত ইচ্ছা বা স্বভাব থেকে বিরত রাখতে পারেনি।
কলাভবনের তৃতীয় তলায় সাইকোলজি ডিপার্টমেন্ট। পাশেই ইকোনমিকস ডিপার্টমেন্ট। চোখাচোখি, মৃদু কুশল বিনিময় দুই ডিপার্টমেন্টের শিক্ষার্থীদের মাঝে হওয়াটা রীতিতে পরিণত হয়েছিল। যেচে পরিচিত হওয়া, গল্প করার মতো ঘটনা তো ছিলই। যাহোক, ক্লাস যখনই থাকুক খুব সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া চাই। কলাভবনের মাঠে কফির ভ্যান আসত প্রকৃতিতে শীত নেমে এলেই। শীতকালে সেই ভ্যান থেকে এক কাপ গরম কফি বা চা-বিক্রেতার কাছ থেকে চা না খেলে পুরো দিনটাই মাটির মতো ফ্যাকাশে হয়ে থাকত। ক্লাসে শিক্ষকদের লেকচার কানে যেতে চাইত না। মাথা ধরে আসত। আর কফি বা চা খাওয়ার সঙ্গে যখন সহপাঠীদের সাক্ষাৎটা মিলেমিশে একাকার হতো, তখন তো বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজত্বটা যেন হাতের মুঠোয় এসে ধরা দিত। অনেকটা আমরা সবাই রাজা, রাজার রাজত্বের মতো। হইহুল্লোড়, গল্প, আড্ডা আর অন্যদের দৃষ্টি আকর্ষণের এক অভিনব প্রতিযোগিতা ছিল কমবেশি সবার মধ্যে। এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষকদের লেকচারও হয়ে উঠত কত শ্রুতিমধুর। তরুণ শিক্ষকদের সুন্দরী শিক্ষার্থীদের প্রতি বাড়তি মনোযোগ, সমাদর সবই ছিল আড্ডার খোরাক। তবে সীমার মধ্যে থাকত। ব্যতিক্রম ঘটনা ছিল হাতে গোনা। আশির দশকের শেষের দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইভ টিজিং ছিল বলে মনে পড়ে না। তবে প্রেম নিবেদন, চিঠি লেখার প্রবণতা ছিল বেশ। মেয়ে শিক্ষার্থীর প্রতি পুরুষ শিক্ষার্থীর প্রেম নিবেদন যেমন ছিল, তেমন কোনো কোনো পুরুষ শিক্ষকও এর ব্যতিক্রম ছিলেন না। কবিতা, গান, নাটক চর্চা এবং এসবের পরিবেশন ও প্রদর্শন শিক্ষার্থীদের একে অন্যের কাছে এনে দিত, সম্পর্ক রচনায় ভালো অবদান রাখত। বন্ধুত্ব, সহনশীলতা, ধৈর্য, সহ্য, পরোপকারী মনোভাব ছিল দেখার মতো।
৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস, ৯ ডিসেম্বর বেগম রোকেয়া দিবস, ১০ ডিসেম্বর মানবাধিকার দিবস, ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস, ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস, ১৪ এপ্রিল পয়লা বৈশাখ ইত্যাদি দিবসগুলো এলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নানা রঙে, বর্ণে সজ্জিত হয়ে উঠতে দেখেছি। নিজেও সেজেছি পোশাকে, আবরণে, আচরণে। বাংলা ও বাঙালি জাতির কৃষ্টি, ঐতিহ্য আর সংস্কৃতিতে মুখরিত হতো এই বৃহৎ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চত্বর। পোশাক, সাজসজ্জায় তার উপস্থিতি ছিল। মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান—সব ধর্মের শিক্ষার্থীর আচরণে, আয়োজনে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ দেখেছি, সম্প্রীতি দেখেছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে একাত্তর সালে পাকিস্তানি সেনাদের বর্বরতায় অনেক নারী শিক্ষার্থী তাঁদের সম্ভ্রম হারিয়েছেন, প্রাণ বিসর্জন দিতে বাধ্য হয়েছেন। কেন পাকিস্তানি সেনারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মম হত্যাযজ্ঞ, ধর্ষণ চালিয়েছিল, তার ব্যাখ্যা আজও অনেকে মনে রেখেছে। আবার অনেকে ভুলে গেছে। কেউবা বিষয়টিকে রীতিমতো অস্বীকার করে প্রাদেশিক চেতনার প্রতি পক্ষপাতিত্ব করে চলেছে। মুক্তিযুদ্ধের প্রতি, স্বাধীনতার প্রতি, সংবিধানের প্রতি, সার্বভৌমত্বের প্রতি শিক্ষার্থীদের আপসহীন অবস্থান ও ঐক্য ছিল তখন চোখে পড়ার মতো, রাজনৈতিক মতাদর্শ ভিন্ন থাকা সত্ত্বেও। কিন্তু ধীরে ধীরে অপরাজনীতির মারাত্মক আগ্রাসনে দেশীয় কৃষ্টি, ঐতিহ্য, সংস্কৃতির রূপ, বর্ণ, স্বকীয়তা হারাতে থাকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে ওঠে অচেনা, অজানা ভিন্ন এক প্রতিষ্ঠান। শিক্ষার্থীদের গ্রাস করতে থাকে স্বার্থকেন্দ্রিক অপরাজনীতি, অপসংস্কৃতি। আড্ডা হয় রাজনৈতিক, সন্ত্রাসী কার্যকলাপ তা-ও হয় রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায়। ধর্মীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতাকে পুঁজি করে একটা শ্রেণি ধর্মীয় উগ্রবাদের বিস্তার ঘটাতে শুরু করে। রাজনৈতিক অপসংস্কৃতির কারণে জাতিতে জাতিতে বিভাজন সৃষ্টি হয়। বিরোধ তৈরি হয় সম্প্রীতির বদলে, প্রেমের বিপরীতে। নারীর প্রতি সহিংসতা, যৌন নিপীড়ন, নির্যাতন চলে ভিন্ন কায়দায়, ক্রমেই তা বাড়ে, বাড়ছে।
এখনকার শিক্ষার্থীদের পোশাক-আশাক ভিন্ন চেতনার মতো বদলে গেছে। বাংলা ও বাঙালির বৈশিষ্ট্য নেই, তেমনটা দেখা মেলে না। ভবিষ্যতে ধর্মীয় সম্প্রীতি আদৌ থাকবে কি না শিক্ষার্থীদের মাঝে, তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব, বাঙালি কৃষ্টি, ঐতিহ্য, সংস্কৃতির অস্তিত্ব ভবিষ্যতে থাকবে কি না কে জানে। পয়লা বৈশাখ উদ্যাপন হবে কি না, হলে ধরন বদলে যাবে কি না, তা-ও অজানা। ব্যক্তিস্বাধীনতা শব্দটি সম্ভবত আর থাকছে না। বিশেষ করে নারী জাতিকে কতটা পিছিয়ে নেবে আজকের পরিস্থিতি, সেটাও ভাবার বিষয়।
আলমারিভর্তি আমার দীর্ঘদিনের ভালোবাসার শাড়িগুলো পরবর্তী প্রজন্মকে উপহার দেওয়ার সুযোগ যদি না পাই, তাহলে এর দায় ও দায়িত্ব কারও ওপর বর্তাবে কি না কিংবা প্রিয় শাড়ির কোনো অস্তিত্ব থাকবে কি না এই দেশে, সেই প্রশ্নের জবাবটাইবা কী? রাষ্ট্র কি কখনো বলে বসবে, এই দেশে শাড়ি পরা নিষিদ্ধ?
ডাকসু নির্বাচনের ফলাফল ঘোষিত হয়েছে। অনেকের কাছে এই ফলাফল অপ্রত্যাশিত হলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ শিক্ষার্থীরা এই নির্বাচনে ছাত্রশিবির-সমর্থিত প্যানেলের ওপর আস্থা রেখেছেন। নির্বাচন চলাকালে বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছিল এবং নির্বাচনের পর ভোট গণনার সময় সারা রাত বিক্ষোভে উত্তাল ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
৫ ঘণ্টা আগেনির্বাচনের পরে যাঁরা মন্ত্রী হবেন, তাঁদের জন্য ৬০টি গাড়ি কেনার তোড়জোড় শুরু হয়েছিল। প্রস্তাব এসেছিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে। সমালোচনার মুখে সেই পথ থেকে সরে এসেছে সরকার। বাতিল করা হয়েছে গাড়ি কেনার সিদ্ধান্ত। বহু দুঃসংবাদের মধ্যে এটি একটি সুসংবাদ। গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল ধরনের এই কেনাকাটার বিষয়টি
৫ ঘণ্টা আগেজাতীয় প্রেসক্লাবে ৭ সেপ্টেম্বর গণশক্তি আয়োজন করে ‘জুলাই সনদ ও নির্বাচন’ শীর্ষক এক আলোচনা সভা। সেই সভায় নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না যে প্রশ্নটি করেছেন, তা কোটি টাকার সঙ্গে তুলনা করাই যায়। তাঁর সহজ জিজ্ঞাসা—‘ভোটের দিন যাঁর যেখানে শক্তি আছে, তাঁর যদি মনে হয় জিততে পারবেন না...
১ দিন আগেহিমালয়কন্যা নেপালের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ভূদৃশ্যটি পর্বতমালার মতোই চড়াই-উতরাইয়ে ভরা। ১০ বছরের মাওবাদী বিদ্রোহের রক্তক্ষরণের পর ২০০৮ সালে উচ্ছেদ হয়েছিল রাজতন্ত্র। সেই থেকে ১৩ বার সরকার বদল হয়েছে। ক্ষমতার মসনদে ঘুরেফিরে দেখা যাচ্ছিল গুটিকয়েক নেতাকে।
১ দিন আগে