Ajker Patrika

‘ম্যামের মুখটা দেখলাম, মনে হলো—শুয়ে আছেন, কিছুই হয়নি তাঁর’

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৪: ১৭
চারুকলা বিভাগের সামনে আনা হয় জান্নাতুল ফেরদৌস আনজুমের মরদেহ। ছবি: আজকের পত্রিকা
চারুকলা বিভাগের সামনে আনা হয় জান্নাতুল ফেরদৌস আনজুমের মরদেহ। ছবি: আজকের পত্রিকা

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচনে ভোট গণনার দায়িত্ব পালন করতে এসে অসুস্থ হয়ে চারুকলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জান্নাতুল ফেরদৌসের মৃত্যুতে ক্যাম্পাসজুড়ে নেমেছে শোকের মাতম। তাঁর সহকর্মী কিংবা শিক্ষার্থী, কেউই যেন মেনে নিতে পারছেন না। তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হবে কিছুক্ষণের মধ্যেই।

আজ শুক্রবার সকাল ৮টার দিকে জাকসু নির্বাচনের ভোট গণনার কাজে এসে অচেতন হয়ে পড়েন তিনি। পরে তাঁকে সাভারের এনাম মেডিকেল হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকেরা মৃত বলে ঘোষণা দেন। আজ দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের সামনে তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। জানাজার জন্য অপেক্ষারত শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০তম আবর্তন ও চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থী তাহমিনা আক্তার মৌরি বলেন, ‘চাদর সরিয়ে ম্যামের মুখটা দেখলাম। দেখে মনে হলো—উনি শুয়ে আছেন, কিছুই হয়নি তাঁর। দুদিন আগেও মন খারাপের সময় আমাদের বোঝালেন, জীবনে অনেক বড় হতে হবে, এগিয়ে যেতে হবে। এ রকম একটা মানুষ চোখের সামনে এভাবে চলে যাবেন কখনোই ভাবিনি। আমি এখনো বিশ্বাস করতে পারছি না, ম্যাম আসলে আমাদের মাঝে নেই।’

জান্নাতুল ফেরদৌস আনজুম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৯তম আবর্তনের শিক্ষার্থী। কথা হলে অশ্রুসিক্ত নয়নে বলেন, ‘একজন বড় বোন যেমন হন, উনি তেমন। তিনি যে শিক্ষক, এমন দূরত্ব রাখতেন না। যেকোনো প্রয়োজনে তাঁর কাছে যাওয়া যেত, সব সময় সহযোগিতা করেছেন। জাকসু নিয়েও উনি আমাদের পরামর্শ দিয়েছেন। ওনার মৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি না।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞানের অধ্যাপক মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের সহকর্মীর অকাল মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত। চারুকলা বিভাগের একজন প্রতিশ্রুতিশীল ও মেধাবী শিক্ষককে হারিয়ে বিভাগটি অপূরণীয় ক্ষতির শিকার হয়েছে। তিনি ছিলেন বিভাগের একমাত্র শিক্ষার্থী, যিনি শিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। স্বাভাবিকভাবেই, তার চলে যাওয়া শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবার মনে এক গভীর আঘাত হেনেছে।’

তবে, এই ট্র‍্যাজিক ঘটনাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক অব্যবস্থাপনা এবং বিশেষ করে বর্তমান নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে—উল্লেখ করে এই শিক্ষক বলেন, ‘প্রশাসনের আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন না থাকলেও, তাদের ব্যবস্থাপনা কৌশল নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। ডিজিটাল পদ্ধতি বাদ দিয়ে অ্যানালগ পদ্ধতিতে নির্বাচন করায়, ২১টি হলের ভোট গণনা একটি মাত্র কেন্দ্রে করা হয়েছে। এতে সময় ও মান উভয় ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রেই প্রশ্ন উঠেছে। টানা এই প্রক্রিয়ায় একজন মানুষ কতটা সময় কাজ করতে পারে, সেই বিবেচনা করা হয়নি। মানুষ তো আর মেশিন নয়। একজন মানুষের কর্মক্ষমতা অনুযায়ী তার জন্য রিলিভার বা বিকল্প ব্যবস্থার প্রয়োজন ছিল।’

উল্লেখ্য, জান্নাতুল ফেরদৌস যথাক্রমে ২০১৮ এবং ২০১৬ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা (চিত্রকলা শৃঙ্খলা) বিভাগ থেকে এমএফএ এবং বিএফএ সম্পন্ন করেন। পরে তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ডাকসুতে শিবিরের জয়ে উদ্বেগ শশী থারুরের, জবাব দিলেন মেঘমল্লার

‘বেয়াদবি ছুটায় দেব’: সরি বলতে অসুবিধা নেই, বললেন সেই জামায়াত নেতা

শাহজালাল বিমানবন্দরের অভ্যন্তরীণ টার্মিনালের সামনে কোমরপানি

ইসরায়েলের হামলার কী জবাব হবে—আরব-ইসলামিক সম্মেলন ডাকল কাতার

ট্রাম্প ঘনিষ্ঠ চার্লি কার্ক কেন খুন হলেন, কী ঘটেছিল, কে ছিলেন তিনি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত