সেলিম জাহান
গত বছর ২৫ মে যুক্তরাষ্ট্রের মিনিয়াপোলিস শহরে শ্বাসরুদ্ধ করে কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েডকে হত্যা করেছিল এক শ্বেতাঙ্গ পুলিশ। এর পরপরই দেশটির বিভিন্ন শহরে বিশাল বিশাল প্রতিবাদ মিছিল হচ্ছিল, ছড়িয়ে পড়েছিল সহিংস দাঙ্গা। তেমনই একটি মিছিলে একটি কৃষ্ণাঙ্গ কিশোরীর মুখাবরণীর ওপরে দেখেছিলাম লেখা কটি—‘আমরা এখনো নিশ্বাস নিতে পারছি’। যতটা বলা, তার চেয়েও না–বলা কথা অনেক বেশি ছিল ওই একটি বাক্যে। দিনভর কথাটি আমার করোটি আর হৃদয়ে ‘জলের মতো ঘুরে ঘুরে’ কথা কইতে থাকল।
মনে হলো, আহ্! ছোট্ট বাক্যটির সত্যতা অত্যন্ত সুগভীর এবং বিরাট এক বাস্তবতার এটি একটি সুতীব্র ঘোষণা। এই কিশোরী এখনো হয়তো নিশ্বাস নিতে পারছে, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের মতো একটি বিভাজিত দেশে, একটি বর্ণবাদী সমাজে, এবং শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্বে বিশ্বাসী একটি ক্রমসম্প্রসারণশীল জনগোষ্ঠীর পরিপ্রেক্ষিতে এমন সময় ও ঘটনাপ্রবাহের শিকার কি এ মেয়েটি হতে পারে না, যেখানে সেও হত্যার মুখোমুখি হয়ে জর্জ ফ্লয়েডের মতো বলবে, ‘আমি নিশ্বাস নিতে পারছি না’!
‘আমি নিশ্বাস নিতে পারছি না’—এ কথাটি যে কতবার উচ্চারিত হয়েছে কৃষ্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠীর অবদমনে শ্বেতাঙ্গ পুলিশি বর্বরতার মুহূর্তে। আজ থেকে মাত্র সাত বছর আগে ২০১৪ সালে যখন নিউইয়র্কের পুলিশ এরিক গার্নার নামক কৃষ্ণাঙ্গ তরুণের টুঁটি চেপে ধরে তাঁকে হত্যা করেছিল, তখনো সে বলেছিল, ‘আমি নিশ্বাস নিতে পারছি না’। ১৯৯২ সালে লস অ্যাঞ্জেলসে পুলিশি বর্বরতার শিকার রডনি কিং একই কথা বলেছিলেন। ১৯৬৩ সালে কৃষ্ণাঙ্গ অধিকারের সপক্ষের শান্তি মিছিলে আক্রমণের সময়েও আক্রান্ত ব্যক্তিরা একইভাবে তাঁদের আর্তি প্রকাশ করেছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্রে কৃষ্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠীর অবদমনের শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি এত দিনেও তেমন কিছু একটা বদলায়নি। ‘আমি নিশ্বাস নিতে পারছি না’—এ কথাটি এখন যুক্তরাষ্ট্রের কৃষ্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠীর জীবন-বাস্তবতা হয়ে উঠেছে। দীর্ঘদিনের অবদমন আর অত্যাচারের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের পুরো কৃষ্ণাঙ্গ সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর স্বাধীন নিশ্বাসের জায়গাটি ক্রমান্বয়ে সীমিত হয়ে আসছিল, সাম্প্রতিক সময়ে রাষ্ট্রযন্ত্রের বিভিন্ন বাহিনীর চরম নিপীড়নে তা আজ বন্ধ হওয়ার উপক্রম। আট বছর একজন কৃষ্ণাঙ্গ রাষ্ট্রপ্রধান দেশ শাসন করলেও অবস্থার তেমন কোনো তারতম্য ঘটেনি।
দিনের পর দিন দারিদ্র্য, বঞ্চনা, বৈষম্য ও অসমতায় যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ কৃষ্ণাঙ্গ মানুষের জীবন আজ প্রান্তিকতার পর্যায়ে পৌঁছেছে। আর্থসামাজিক দিক থেকে বিচার করা যাক। শ্বেতাঙ্গদের মধ্যে দারিদ্র্যের হার যেখানে ৮ শতাংশ, কৃষ্ণাঙ্গদের মাঝে তা ২০ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রে শ্বেতাঙ্গদের গড়পড়তা আয় যেখানে ৬৯ হাজার ডলার, কৃষ্ণাঙ্গদের তা ৪০ হাজার ডলার। একজন শেতাঙ্গ ব্যক্তি যেখানে ৭৯ বছর বাঁচার প্রত্যাশা করতে পারেন, একজন কৃষ্ণাঙ্গ মানুষের প্রত্যাশিত গড় আয়ু সেখানে ৭৪ বছর। আজকের করোনাভাইরাস সংকটকালেও যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি সংক্রমিত মানুষের ২৫ শতাংশ একজন কৃষ্ণাঙ্গ, যদিও জনসংখ্যায় তাঁদের অনুপাত মাত্র ১২ শতাংশ।
যুক্তরাষ্ট্রে কৃষ্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠীর অবদমনের ক্ষেত্রে আরও পাঁচটি কথা উল্লেখ্য।
ঐতিহাসিকভাবেই দেখা গেছে, কৃষ্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অবদমনে আইনরক্ষাকারী বাহিনীর যেসব সদস্য মূল হোতা বা মূল নায়ক, তাঁদের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। নামমাত্র কোনো শাস্তি পেয়ে তাঁরা পার পেয়ে যান। বর্তমান ঘটনায়ও এর ব্যতয় ঘটবে বলে আশা করা যায় না।
সব ঘটনাতেই দেখা গেছে, যখন একজন পুলিশ কর্মকর্তা অত্যাচারের আসল হোতা হিসেবে কাজ করেন, তখন অন্যান্য পুলিশ কর্মকর্তা মূল হোতার সহযোগী হিসেবে কাজ করেন। অথচ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তাঁদের আইনের আওতায় আনা হয় না।
কৃষ্ণাঙ্গ অবদমনের মূল শিকার হন সাধারণ দরিদ্র ও প্রান্তিক কৃষ্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠী। সে ক্ষেত্রে বিত্তবান ও ক্ষমতাবান কৃষ্ণাঙ্গরা অত্যাচারিত জনগোষ্ঠীর পক্ষে মুখের কথা ভিন্ন কার্যকর ব্যবস্থায় এগিয়ে আসেন না। তাঁর আট বছর শাসনামলে প্রেসিডেন্ট ওবামা অতি সতর্কতার সঙ্গে প্রতিনিয়ত চেষ্টা করেছেন তাঁর কৃষ্ণাঙ্গ আত্মসত্ত্বাকে সযত্নে সুপ্ত রাখতে, যাতে তিনি কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট হিসেবে চিহ্নিত না হন এবং কৃষ্ণাঙ্গদের প্রেসিডেন্ট হিসেবে অভিহিত না হন। ফলে না কৃষ্ণাঙ্গদের কোনো উপকার হয়েছে, না যুক্তরাষ্ট্রের চিরায়ত বর্ণ ও জাতিভেদ প্রশ্নের কোনো মীমাংসা হয়েছে। এর বদলে নিজের কৃষ্ণাঙ্গ পরিচয়কে পরিষ্কারভাবে স্বীকার করে তিনি যদি এই প্রশ্নগুলো সরাসরিভাবে মোকাবিলা করতেন, তাতে পরিপূর্ণ সফল না হলেও তিনি যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রেসিডেন্ট হিসেবে ইতিহাসে স্মরণীয় হতেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতাবান এক বিরাট জনগোষ্ঠী বর্ণবাদী এবং তারা কৃষ্ণাঙ্গদের প্রতি সহানুভূতিশীল নয়। সত্যিকার অর্থে, এ জনগোষ্ঠীর কথাবার্তায় শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্বের সুর প্রায়ই প্রচ্ছন্নভাবে উঠে আসে। সে অবস্থায় এটা ভাবা বাতুলতা যে যুক্তরাষ্ট্রের বর্ণবাদের সংকটকে একটি সংবেদনশীল, সহানুভূতিশীল গঠনমূলক দৃষ্টিতে দেখা হবে এবং যুক্তরাষ্ট্রে বর্ণবাদ ও জাতিভেদের মূল সমস্যার মীমাংসার জন্য আন্তরিক কোনো প্রচেষ্টা নেওয়া হবে। কুম্ভীরাশ্রু বর্ষণ করা হবে অনেক, দোষারোপ করা হবে আরও, কথা বলা হবে অফুরন্ত। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হবে না।
বর্তমান ঘটনাপ্রবাহের পরিপ্রেক্ষিতে অনেকেই বলছেন, সহিংসতা গ্রহণযোগ্য নয় এবং সহিংসতা কোনো সমস্যার সমাধান হতে পারে না। দুটোই সত্যি। কিন্তু মনে রাখা দরকার, সাধারণ লোকজন শান্তিপ্রিয় এবং প্রথমেই তাঁরা সহিংসতার পথ বেছে নেন না। মানুষ অবদমন ও অত্যাচার যখন দিনের পর দিন চলতে থাকে, যখন তাঁরা ক্রমাগতভাবে দারিদ্র্য, বঞ্চনা ও বৈষম্যের শিকার হন, যখন সব পন্থা অবলম্বন করেও ন্যায্য বিচার তাঁরা পান না এবং যখন তাঁদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে যায়, তখনই তাঁরা সহিংস হয়ে ওঠেন। এ কথাটা যেন আমরা ভুলে না যাই।
শেষের কথা বলি। এ জাতীয় ঘটনায় আমাদের মতো বাদামি গাত্রবর্ণীয় মানুষেরা নিশ্চুপ থাকি, নির্লিপ্ত থাকি, গা বাঁচিয়ে চলি। নিজেকেই বলি, ‘আজ রাতে ওরা তাদের জন্যে এলে, কাল প্রভাতে ওরা আমার জন্যে আসবে।’ যুক্তরাষ্ট্রের বিত্তবান, ক্ষমতাবান অকৃষ্ণাঙ্গ গোষ্ঠীকে বলি, ‘দিনে দিনে বাড়িয়াছে দেনা, শুধিতে হইবে ঋণ’। আজ না হয় কাল, কাল না হয় পরশু। অস্বীকার তারা করতে পারবে না, এ দায়ভাগের তারাও সমান অংশীদার ?
গত বছর ২৫ মে যুক্তরাষ্ট্রের মিনিয়াপোলিস শহরে শ্বাসরুদ্ধ করে কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েডকে হত্যা করেছিল এক শ্বেতাঙ্গ পুলিশ। এর পরপরই দেশটির বিভিন্ন শহরে বিশাল বিশাল প্রতিবাদ মিছিল হচ্ছিল, ছড়িয়ে পড়েছিল সহিংস দাঙ্গা। তেমনই একটি মিছিলে একটি কৃষ্ণাঙ্গ কিশোরীর মুখাবরণীর ওপরে দেখেছিলাম লেখা কটি—‘আমরা এখনো নিশ্বাস নিতে পারছি’। যতটা বলা, তার চেয়েও না–বলা কথা অনেক বেশি ছিল ওই একটি বাক্যে। দিনভর কথাটি আমার করোটি আর হৃদয়ে ‘জলের মতো ঘুরে ঘুরে’ কথা কইতে থাকল।
মনে হলো, আহ্! ছোট্ট বাক্যটির সত্যতা অত্যন্ত সুগভীর এবং বিরাট এক বাস্তবতার এটি একটি সুতীব্র ঘোষণা। এই কিশোরী এখনো হয়তো নিশ্বাস নিতে পারছে, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের মতো একটি বিভাজিত দেশে, একটি বর্ণবাদী সমাজে, এবং শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্বে বিশ্বাসী একটি ক্রমসম্প্রসারণশীল জনগোষ্ঠীর পরিপ্রেক্ষিতে এমন সময় ও ঘটনাপ্রবাহের শিকার কি এ মেয়েটি হতে পারে না, যেখানে সেও হত্যার মুখোমুখি হয়ে জর্জ ফ্লয়েডের মতো বলবে, ‘আমি নিশ্বাস নিতে পারছি না’!
‘আমি নিশ্বাস নিতে পারছি না’—এ কথাটি যে কতবার উচ্চারিত হয়েছে কৃষ্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠীর অবদমনে শ্বেতাঙ্গ পুলিশি বর্বরতার মুহূর্তে। আজ থেকে মাত্র সাত বছর আগে ২০১৪ সালে যখন নিউইয়র্কের পুলিশ এরিক গার্নার নামক কৃষ্ণাঙ্গ তরুণের টুঁটি চেপে ধরে তাঁকে হত্যা করেছিল, তখনো সে বলেছিল, ‘আমি নিশ্বাস নিতে পারছি না’। ১৯৯২ সালে লস অ্যাঞ্জেলসে পুলিশি বর্বরতার শিকার রডনি কিং একই কথা বলেছিলেন। ১৯৬৩ সালে কৃষ্ণাঙ্গ অধিকারের সপক্ষের শান্তি মিছিলে আক্রমণের সময়েও আক্রান্ত ব্যক্তিরা একইভাবে তাঁদের আর্তি প্রকাশ করেছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্রে কৃষ্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠীর অবদমনের শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি এত দিনেও তেমন কিছু একটা বদলায়নি। ‘আমি নিশ্বাস নিতে পারছি না’—এ কথাটি এখন যুক্তরাষ্ট্রের কৃষ্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠীর জীবন-বাস্তবতা হয়ে উঠেছে। দীর্ঘদিনের অবদমন আর অত্যাচারের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের পুরো কৃষ্ণাঙ্গ সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর স্বাধীন নিশ্বাসের জায়গাটি ক্রমান্বয়ে সীমিত হয়ে আসছিল, সাম্প্রতিক সময়ে রাষ্ট্রযন্ত্রের বিভিন্ন বাহিনীর চরম নিপীড়নে তা আজ বন্ধ হওয়ার উপক্রম। আট বছর একজন কৃষ্ণাঙ্গ রাষ্ট্রপ্রধান দেশ শাসন করলেও অবস্থার তেমন কোনো তারতম্য ঘটেনি।
দিনের পর দিন দারিদ্র্য, বঞ্চনা, বৈষম্য ও অসমতায় যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ কৃষ্ণাঙ্গ মানুষের জীবন আজ প্রান্তিকতার পর্যায়ে পৌঁছেছে। আর্থসামাজিক দিক থেকে বিচার করা যাক। শ্বেতাঙ্গদের মধ্যে দারিদ্র্যের হার যেখানে ৮ শতাংশ, কৃষ্ণাঙ্গদের মাঝে তা ২০ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রে শ্বেতাঙ্গদের গড়পড়তা আয় যেখানে ৬৯ হাজার ডলার, কৃষ্ণাঙ্গদের তা ৪০ হাজার ডলার। একজন শেতাঙ্গ ব্যক্তি যেখানে ৭৯ বছর বাঁচার প্রত্যাশা করতে পারেন, একজন কৃষ্ণাঙ্গ মানুষের প্রত্যাশিত গড় আয়ু সেখানে ৭৪ বছর। আজকের করোনাভাইরাস সংকটকালেও যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি সংক্রমিত মানুষের ২৫ শতাংশ একজন কৃষ্ণাঙ্গ, যদিও জনসংখ্যায় তাঁদের অনুপাত মাত্র ১২ শতাংশ।
যুক্তরাষ্ট্রে কৃষ্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠীর অবদমনের ক্ষেত্রে আরও পাঁচটি কথা উল্লেখ্য।
ঐতিহাসিকভাবেই দেখা গেছে, কৃষ্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অবদমনে আইনরক্ষাকারী বাহিনীর যেসব সদস্য মূল হোতা বা মূল নায়ক, তাঁদের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। নামমাত্র কোনো শাস্তি পেয়ে তাঁরা পার পেয়ে যান। বর্তমান ঘটনায়ও এর ব্যতয় ঘটবে বলে আশা করা যায় না।
সব ঘটনাতেই দেখা গেছে, যখন একজন পুলিশ কর্মকর্তা অত্যাচারের আসল হোতা হিসেবে কাজ করেন, তখন অন্যান্য পুলিশ কর্মকর্তা মূল হোতার সহযোগী হিসেবে কাজ করেন। অথচ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তাঁদের আইনের আওতায় আনা হয় না।
কৃষ্ণাঙ্গ অবদমনের মূল শিকার হন সাধারণ দরিদ্র ও প্রান্তিক কৃষ্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠী। সে ক্ষেত্রে বিত্তবান ও ক্ষমতাবান কৃষ্ণাঙ্গরা অত্যাচারিত জনগোষ্ঠীর পক্ষে মুখের কথা ভিন্ন কার্যকর ব্যবস্থায় এগিয়ে আসেন না। তাঁর আট বছর শাসনামলে প্রেসিডেন্ট ওবামা অতি সতর্কতার সঙ্গে প্রতিনিয়ত চেষ্টা করেছেন তাঁর কৃষ্ণাঙ্গ আত্মসত্ত্বাকে সযত্নে সুপ্ত রাখতে, যাতে তিনি কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট হিসেবে চিহ্নিত না হন এবং কৃষ্ণাঙ্গদের প্রেসিডেন্ট হিসেবে অভিহিত না হন। ফলে না কৃষ্ণাঙ্গদের কোনো উপকার হয়েছে, না যুক্তরাষ্ট্রের চিরায়ত বর্ণ ও জাতিভেদ প্রশ্নের কোনো মীমাংসা হয়েছে। এর বদলে নিজের কৃষ্ণাঙ্গ পরিচয়কে পরিষ্কারভাবে স্বীকার করে তিনি যদি এই প্রশ্নগুলো সরাসরিভাবে মোকাবিলা করতেন, তাতে পরিপূর্ণ সফল না হলেও তিনি যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রেসিডেন্ট হিসেবে ইতিহাসে স্মরণীয় হতেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতাবান এক বিরাট জনগোষ্ঠী বর্ণবাদী এবং তারা কৃষ্ণাঙ্গদের প্রতি সহানুভূতিশীল নয়। সত্যিকার অর্থে, এ জনগোষ্ঠীর কথাবার্তায় শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্বের সুর প্রায়ই প্রচ্ছন্নভাবে উঠে আসে। সে অবস্থায় এটা ভাবা বাতুলতা যে যুক্তরাষ্ট্রের বর্ণবাদের সংকটকে একটি সংবেদনশীল, সহানুভূতিশীল গঠনমূলক দৃষ্টিতে দেখা হবে এবং যুক্তরাষ্ট্রে বর্ণবাদ ও জাতিভেদের মূল সমস্যার মীমাংসার জন্য আন্তরিক কোনো প্রচেষ্টা নেওয়া হবে। কুম্ভীরাশ্রু বর্ষণ করা হবে অনেক, দোষারোপ করা হবে আরও, কথা বলা হবে অফুরন্ত। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হবে না।
বর্তমান ঘটনাপ্রবাহের পরিপ্রেক্ষিতে অনেকেই বলছেন, সহিংসতা গ্রহণযোগ্য নয় এবং সহিংসতা কোনো সমস্যার সমাধান হতে পারে না। দুটোই সত্যি। কিন্তু মনে রাখা দরকার, সাধারণ লোকজন শান্তিপ্রিয় এবং প্রথমেই তাঁরা সহিংসতার পথ বেছে নেন না। মানুষ অবদমন ও অত্যাচার যখন দিনের পর দিন চলতে থাকে, যখন তাঁরা ক্রমাগতভাবে দারিদ্র্য, বঞ্চনা ও বৈষম্যের শিকার হন, যখন সব পন্থা অবলম্বন করেও ন্যায্য বিচার তাঁরা পান না এবং যখন তাঁদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে যায়, তখনই তাঁরা সহিংস হয়ে ওঠেন। এ কথাটা যেন আমরা ভুলে না যাই।
শেষের কথা বলি। এ জাতীয় ঘটনায় আমাদের মতো বাদামি গাত্রবর্ণীয় মানুষেরা নিশ্চুপ থাকি, নির্লিপ্ত থাকি, গা বাঁচিয়ে চলি। নিজেকেই বলি, ‘আজ রাতে ওরা তাদের জন্যে এলে, কাল প্রভাতে ওরা আমার জন্যে আসবে।’ যুক্তরাষ্ট্রের বিত্তবান, ক্ষমতাবান অকৃষ্ণাঙ্গ গোষ্ঠীকে বলি, ‘দিনে দিনে বাড়িয়াছে দেনা, শুধিতে হইবে ঋণ’। আজ না হয় কাল, কাল না হয় পরশু। অস্বীকার তারা করতে পারবে না, এ দায়ভাগের তারাও সমান অংশীদার ?
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস স্বয়ং একাধিকবার বলেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন এমন এক আবহে অনুষ্ঠিত হবে যে তা শুধু দেশে নয়, সারা পৃথিবীতে সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও সর্বজনে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। এটা তাঁর নিজের এবং অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে
১ দিন আগেসোমবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫। আস্থা আছে কি না, স্বপ্রণোদিত হয়ে যাচাই করতে গিয়ে বিপাকে পড়েন ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী ফ্রাঁসোয়া বাইরু। সংসদে ১৯৪ জন সংসদ সদস্য তাঁর ওপর আস্থা জানিয়ে ভোট দিলেও ৩৬৪ জন তাঁকে লাল কার্ড দেখিয়ে দিয়েছেন। উল্লেখ্য, ফ্রান্সের আইনপ্রণেতা হচ্ছেন মোট ৫৭৭ জন। ফলে মাত্র ৯ মাস ক্ষমতায়
১ দিন আগেসময় এখন অদ্ভুত এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। মানুষ তার হাজার বছরের ইতিহাসে অনেক বিপ্লবের সাক্ষী হয়েছে—কৃষি, শিল্প, তথ্যপ্রযুক্তি। প্রতিটি বিপ্লব আমাদের জীবনধারায় গভীর পরিবর্তন এনেছে, কেউ কেউ পেছনে পড়ে গেছে, কেউ সামনের সারিতে উঠে এসেছে। কিন্তু এইবার যা আসছে, তা হয়তো আর কাউকে কেবল পেছনেই ফেলবে না; বরং মানুষক
১ দিন আগেবাংলাদেশে ১৯৭২ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত কীটনাশক ব্যবহারের পরিমাণ প্রায় ১০ গুণ বেড়েছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকি তৈরি করছে। আজকের পত্রিকায় ১০ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত ‘সেন্টার ফর অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড বায়োসায়েন্স ইন্টারন্যাশনাল’ (ক্যাবি) আয়োজিত এক কর্মশালায় এই উদ্বেগজনক তথ্য উঠে এসেছে।
১ দিন আগে