অপরাহ্ন সুস্মিতো
ক্যাডেট কলেজ থেকে আমাকে রাসটিকেট করা হয় আমি যখন একাদশ শ্রেণিতে। আমি একা নই, আমার সঙ্গে আরও চারজন। ক্লাস সেভেনে আমাকে যখন বাবা ক্যাডেট কলেজে ভর্তি করান, তার ছয় মাস পরেই আমি একদিন ছুটিতে বাসায় এসে গোঁ ধরি ক্যাডেটে আর পড়ব না।
আমার কথা বাসায় কেউ পাত্তা দেয়নি। বয়সের তুলনায় আমাকে অনেক ছোট লাগত। হোস্টেলে রাতের আলো নিভে গেলে রুমমেট বড়ভাই আমাকে জড়িয়ে ধরতেন, চুমু খাওয়ার চেষ্টা করতেন। মনে হতো রুমমেট বড়ভাই পশু হচ্ছে রাতের অন্ধকারে। আমি ভয়ে কাঁপি। কাউকে কিছু বলতে পারি না। ক্যাডেটে বড়ভাইদের পানিশমেন্ট খুব তীব্র।
বাথরুমে লুকিয়ে বুক সেভ করতাম, মুখ সেভ করতাম, যাতে তাড়াতাড়ি আমার বুকে লোম ওঠে, দাড়িগোঁফ গজায়। আমাকে যেন ক্লাস সেভেনের চেয়ে অনেক বড় দেখায়। ড্রিলে বেশি বেশি রোদে পুড়তাম, যাতে আমার ফরসা রংটা পুড়ে কালো হয়ে যায়। রুমে শর্টস পরতে ভয় করত, রুমমেট চান্স পেলেই ঊরুতে হাত রাখেন। আমি অক্ষম চিৎকার করে উঠি। বাবার প্রতি, সব মানুষের প্রতি আমার ঘৃণা সেভিংস অ্যাকাউন্টের মতো জন্ম নিতে থাকে। আমি আস্তে আস্তে পকেটে চাকু রাখতে শুরু করি। ক্যাডেট কলেজে রোদ নামে সাঁওতাল অঞ্চলের মতো। শীত নামে, বর্ষার নিপুণ তির ছুটে যায় আমার অজস্র কান্নার ক্ষুরধ্বনিতে। একাকী একাকী। এসএসসিতে আমি সম্মিলিত মেধাতালিকায় দ্বিতীয় হলাম। বাসায় যেন ব্রাজিলীয় উৎসব। যেন বিশ্বকাপ জেতার আনন্দ।
আমি নিরিবিলি মুষড়ে পড়তে থাকি। মিনমিন করে বাবাকে আবার বলতে থাকি, ক্যাডেট কলেজে পড়ব না। আমাকে নিয়ে এসো। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে দরখাস্ত পাঠানোর মতো আমার সবিনয় আবেদন বাবার কান স্পর্শ করল না। একাদশ শ্রেণিতে উঠে একদিন ঘুটঘুটে অন্ধকার রাতে রুমমেট বড় ভাইকে ছুরি চালাই। হাউসজুড়ে তুমুল চিৎকার। আমাদের রুম ভেসে গেল লাল ফুটফুটে জবা ফুলের মতো সুন্দর রক্তে। প্রিফেক্টসহ ক্যাডেট কলেজের সব কর্মকর্তা ছুটে এলেন। আমার নামে মামলা হলো, বহিষ্কৃত হলাম আমি। না না। মেধাবী রুমমেট সুদর্শন বড়ভাই মারা যাননি। আমার অপটু ছুরিচালনা তাঁর ঊরুতে লেগেছিল মাত্র। পেপারে নিউজ হলো। তখনই আমার মায়ের সঙ্গে বাবার সম্পর্ক চুকেবুকে গেল। ছাড়াছাড়ি। বাবা তাঁর গার্লফ্রেন্ড কাম একান্ত সচিবকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়া উড়াল দিলেন। বাবা আমাকে ভোলেননি। আমাকে নিয়ে এলেন মেলবোর্নে। দিনভর বিয়ার খাই, টো টো করে ঘুরি। যদিও ভর্তি হয়েছিলাম মনাশ ইউনিভার্সিটিতে। পড়াশোনায় আমার আর মন নেই। দিনভর ঘুমাই, ক্লাস করি না। রাত জাগি শহরের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে।
বাবা মাঝে মাঝে আমাকে দেখতে আসেন। চুপচাপ হুহু করে কাঁদেন। আমার বিরক্ত লাগে। বাবার ব্যবসা মেলবোর্নে ফুলতে থাকে। একদিন দুপুর নাগাদ টাকার দরকার পড়ল খুব, বাসে যাচ্ছিলাম বাবার কাছে। মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডের পাশ দিয়ে যাচ্ছে আমার বাস। জানালা দিয়ে স্টেডিয়ামের চারপাশ দেখি। সেই স্বপ্নের গ্রাউন্ড। জলিমন্ট রোডে এসে দেখি রাস্তার একপাশে ভিড়, পুলিশের গাড়ি, অ্যাম্বুলেন্স। শহরের স্বাভাবিক ছবি। আচমকা ভিড় গলে চোখ পড়ে একটা লোক রাস্তায় লম্বালম্বি পড়ে আছে। পায়ে ক্র্যাম্প ব্যান্ডেজ। বাস ড্রাইভারকে অনুরোধ করে ই–মেইলের গতিতে নেমে যাই বাস থেকে। ছুটে যাই ভিড়ের কাছে। পুলিশ আটকে দিচ্ছে। আমার বাবা রক্তাক্ত পড়ে আছেন জলিমন্ট রোডে। বাবার লাশ নিয়ে ছুটে চলে অ্যাম্বুলেন্স সাইরেন বাজিয়ে। ইয়ারা পার্কে আমি সবুজ হয়ে ঝিম মেরে বসে থাকি। পার্কটা কী যে সুন্দর! মনে হচ্ছে আমি সেই ক্লাস সেভেনে। বাবার কনে আঙুল ধরে হাঁটছি। তির তির করে ছোট ছোট পা। বাবার হাঁটার সঙ্গে তাল মেলাতে পারছি না। আমি ছোট থেকে ছোট হতে থাকি। মনে হচ্ছে ভ্রূণের মতো মায়ের পেটে ঢুকে যাচ্ছি।
ক্যাডেট কলেজ থেকে আমাকে রাসটিকেট করা হয় আমি যখন একাদশ শ্রেণিতে। আমি একা নই, আমার সঙ্গে আরও চারজন। ক্লাস সেভেনে আমাকে যখন বাবা ক্যাডেট কলেজে ভর্তি করান, তার ছয় মাস পরেই আমি একদিন ছুটিতে বাসায় এসে গোঁ ধরি ক্যাডেটে আর পড়ব না।
আমার কথা বাসায় কেউ পাত্তা দেয়নি। বয়সের তুলনায় আমাকে অনেক ছোট লাগত। হোস্টেলে রাতের আলো নিভে গেলে রুমমেট বড়ভাই আমাকে জড়িয়ে ধরতেন, চুমু খাওয়ার চেষ্টা করতেন। মনে হতো রুমমেট বড়ভাই পশু হচ্ছে রাতের অন্ধকারে। আমি ভয়ে কাঁপি। কাউকে কিছু বলতে পারি না। ক্যাডেটে বড়ভাইদের পানিশমেন্ট খুব তীব্র।
বাথরুমে লুকিয়ে বুক সেভ করতাম, মুখ সেভ করতাম, যাতে তাড়াতাড়ি আমার বুকে লোম ওঠে, দাড়িগোঁফ গজায়। আমাকে যেন ক্লাস সেভেনের চেয়ে অনেক বড় দেখায়। ড্রিলে বেশি বেশি রোদে পুড়তাম, যাতে আমার ফরসা রংটা পুড়ে কালো হয়ে যায়। রুমে শর্টস পরতে ভয় করত, রুমমেট চান্স পেলেই ঊরুতে হাত রাখেন। আমি অক্ষম চিৎকার করে উঠি। বাবার প্রতি, সব মানুষের প্রতি আমার ঘৃণা সেভিংস অ্যাকাউন্টের মতো জন্ম নিতে থাকে। আমি আস্তে আস্তে পকেটে চাকু রাখতে শুরু করি। ক্যাডেট কলেজে রোদ নামে সাঁওতাল অঞ্চলের মতো। শীত নামে, বর্ষার নিপুণ তির ছুটে যায় আমার অজস্র কান্নার ক্ষুরধ্বনিতে। একাকী একাকী। এসএসসিতে আমি সম্মিলিত মেধাতালিকায় দ্বিতীয় হলাম। বাসায় যেন ব্রাজিলীয় উৎসব। যেন বিশ্বকাপ জেতার আনন্দ।
আমি নিরিবিলি মুষড়ে পড়তে থাকি। মিনমিন করে বাবাকে আবার বলতে থাকি, ক্যাডেট কলেজে পড়ব না। আমাকে নিয়ে এসো। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে দরখাস্ত পাঠানোর মতো আমার সবিনয় আবেদন বাবার কান স্পর্শ করল না। একাদশ শ্রেণিতে উঠে একদিন ঘুটঘুটে অন্ধকার রাতে রুমমেট বড় ভাইকে ছুরি চালাই। হাউসজুড়ে তুমুল চিৎকার। আমাদের রুম ভেসে গেল লাল ফুটফুটে জবা ফুলের মতো সুন্দর রক্তে। প্রিফেক্টসহ ক্যাডেট কলেজের সব কর্মকর্তা ছুটে এলেন। আমার নামে মামলা হলো, বহিষ্কৃত হলাম আমি। না না। মেধাবী রুমমেট সুদর্শন বড়ভাই মারা যাননি। আমার অপটু ছুরিচালনা তাঁর ঊরুতে লেগেছিল মাত্র। পেপারে নিউজ হলো। তখনই আমার মায়ের সঙ্গে বাবার সম্পর্ক চুকেবুকে গেল। ছাড়াছাড়ি। বাবা তাঁর গার্লফ্রেন্ড কাম একান্ত সচিবকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়া উড়াল দিলেন। বাবা আমাকে ভোলেননি। আমাকে নিয়ে এলেন মেলবোর্নে। দিনভর বিয়ার খাই, টো টো করে ঘুরি। যদিও ভর্তি হয়েছিলাম মনাশ ইউনিভার্সিটিতে। পড়াশোনায় আমার আর মন নেই। দিনভর ঘুমাই, ক্লাস করি না। রাত জাগি শহরের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে।
বাবা মাঝে মাঝে আমাকে দেখতে আসেন। চুপচাপ হুহু করে কাঁদেন। আমার বিরক্ত লাগে। বাবার ব্যবসা মেলবোর্নে ফুলতে থাকে। একদিন দুপুর নাগাদ টাকার দরকার পড়ল খুব, বাসে যাচ্ছিলাম বাবার কাছে। মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডের পাশ দিয়ে যাচ্ছে আমার বাস। জানালা দিয়ে স্টেডিয়ামের চারপাশ দেখি। সেই স্বপ্নের গ্রাউন্ড। জলিমন্ট রোডে এসে দেখি রাস্তার একপাশে ভিড়, পুলিশের গাড়ি, অ্যাম্বুলেন্স। শহরের স্বাভাবিক ছবি। আচমকা ভিড় গলে চোখ পড়ে একটা লোক রাস্তায় লম্বালম্বি পড়ে আছে। পায়ে ক্র্যাম্প ব্যান্ডেজ। বাস ড্রাইভারকে অনুরোধ করে ই–মেইলের গতিতে নেমে যাই বাস থেকে। ছুটে যাই ভিড়ের কাছে। পুলিশ আটকে দিচ্ছে। আমার বাবা রক্তাক্ত পড়ে আছেন জলিমন্ট রোডে। বাবার লাশ নিয়ে ছুটে চলে অ্যাম্বুলেন্স সাইরেন বাজিয়ে। ইয়ারা পার্কে আমি সবুজ হয়ে ঝিম মেরে বসে থাকি। পার্কটা কী যে সুন্দর! মনে হচ্ছে আমি সেই ক্লাস সেভেনে। বাবার কনে আঙুল ধরে হাঁটছি। তির তির করে ছোট ছোট পা। বাবার হাঁটার সঙ্গে তাল মেলাতে পারছি না। আমি ছোট থেকে ছোট হতে থাকি। মনে হচ্ছে ভ্রূণের মতো মায়ের পেটে ঢুকে যাচ্ছি।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস স্বয়ং একাধিকবার বলেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন এমন এক আবহে অনুষ্ঠিত হবে যে তা শুধু দেশে নয়, সারা পৃথিবীতে সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও সর্বজনে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। এটা তাঁর নিজের এবং অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে
১৮ ঘণ্টা আগেসোমবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫। আস্থা আছে কি না, স্বপ্রণোদিত হয়ে যাচাই করতে গিয়ে বিপাকে পড়েন ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী ফ্রাঁসোয়া বাইরু। সংসদে ১৯৪ জন সংসদ সদস্য তাঁর ওপর আস্থা জানিয়ে ভোট দিলেও ৩৬৪ জন তাঁকে লাল কার্ড দেখিয়ে দিয়েছেন। উল্লেখ্য, ফ্রান্সের আইনপ্রণেতা হচ্ছেন মোট ৫৭৭ জন। ফলে মাত্র ৯ মাস ক্ষমতায়
১৮ ঘণ্টা আগেসময় এখন অদ্ভুত এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। মানুষ তার হাজার বছরের ইতিহাসে অনেক বিপ্লবের সাক্ষী হয়েছে—কৃষি, শিল্প, তথ্যপ্রযুক্তি। প্রতিটি বিপ্লব আমাদের জীবনধারায় গভীর পরিবর্তন এনেছে, কেউ কেউ পেছনে পড়ে গেছে, কেউ সামনের সারিতে উঠে এসেছে। কিন্তু এইবার যা আসছে, তা হয়তো আর কাউকে কেবল পেছনেই ফেলবে না; বরং মানুষক
১৮ ঘণ্টা আগেবাংলাদেশে ১৯৭২ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত কীটনাশক ব্যবহারের পরিমাণ প্রায় ১০ গুণ বেড়েছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকি তৈরি করছে। আজকের পত্রিকায় ১০ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত ‘সেন্টার ফর অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড বায়োসায়েন্স ইন্টারন্যাশনাল’ (ক্যাবি) আয়োজিত এক কর্মশালায় এই উদ্বেগজনক তথ্য উঠে এসেছে।
১৮ ঘণ্টা আগে