ফারুক মেহেদী
তখন নদী, নীলাকাশ চিনি। না বুঝলেও ভালো লাগে নিসর্গ। অজানা আনন্দে ফুল, পাখি দেখি। প্রজাপতির পেছনে ছুটি! তখনো আগুন-পানি চিনি। তারপরও অনেক কিছুই অচেনা। তখনো দ্বান্দ্বিক জীবনের জটিল জ্যামিতি মাথায় ঢোকেনি। তখনো বয়স অল্প। গরমের রাতে উঠোনে চাটাই বিছিয়ে দাদুর সঙ্গে গল্প করে ঘুমিয়ে পড়ি। মনে আছে, আলো ঝলমল রাতে তারাদের দেখে স্বপ্নের অচিনপুরে চলে যেতাম! তখনো তারাদের চিনি না, শুধু ভালো লাগে। মনে হতো, ইশ! যদি কাছাকাছি যেতে পারতাম! যদি ছুঁয়ে দেখতে পারতাম! পরে জানলাম, ওই তারকাদের ধরা যায় না, ছোঁয়া যায় না! তবে আকাশের মতো পৃথিবীতেও কিছু তারা আছে; যাঁরা আমাদের দেশ, সমাজ আর মানুষকে আলোয় উদ্ভাসিত করে, তাঁদের মূল্যবোধ আর সত্য-সুন্দর জীবনের জয়গান আমাদের উজ্জীবিত করে। তেমনই এক তারকার নাম লতিফুর রহমান। শৈশবে না চিনলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবস্থায়ই তাঁর নাম জানি। তবে দেশসেরা অত্যন্ত শুদ্ধ-মার্জিত এ ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তাকে নিয়ে লিখতে গিয়ে আমার পেশাগত জীবনে তাঁর সঙ্গে যেটুকু স্মৃতি আছে, তার আলোকে কিছু লিখব বলে ঠিক করেছি। অর্থনৈতিক সাংবাদিকতার কারণে তাঁর সঙ্গে আমার বহুবার দেখা হয়েছে। তাঁর ব্যক্তিত্ব ও উঁচুমানের রুচির সঙ্গে পরিচয় হয়েছে নানাভাবে। একটি ঘটনার কথা বলি। সম্ভবত ২০১৫ সালের মে মাস। আমি তখন একটি সংবাদভিত্তিক টিভি চ্যানেলের বিজনেস এডিটর। বাজেট নিয়ে একটি আলোচনার আয়োজন করি। এতে তিনি অতিথি। সাধারণত অফিসে কোনো বিশিষ্ট অতিথি এলে তাঁকে আমিই স্বাগত জানাতাম। সেদিনও তাঁকে আমি গেট থেকে স্বাগত জানিয়ে আমার রুমে নিয়ে আসি। তখন বিকেল ৪টার কাছাকাছি হবে। সম্ভবত রেকর্ডিং হওয়ার কথা ৫টায়। তিনি আগেই চলে এসেছেন। এই প্রথম তাঁকে আমি ব্যক্তিগতভাবে কাছে পাই। সত্যি বলতে কি, ওই দিন তাঁকে পেয়ে আমার কী যে ভালো লাগছিল! মনে হলো বাংলাদেশের একজন সত্যিকারের তারকা আমার সামনে। তাঁকে নিয়ে আমার রুমে বসলাম! কী খাবেন জানতে চাইলাম। তিনি খুব ধীরে নরমভাবে কথা বলেন। জানালেন শুধু চা খাবেন। তিনি বলছেন, আমি শুনছি। দেশে তখন
রাজনৈতিক জ্বালাও–পোড়াও চলছে। তাতে তিনি খুবই হতাশা প্রকাশ করে বললেন, ‘এভাবে যদি রাজনৈতিক হানাহানি হয়, তবে দেশে কীভাবে বিনিয়োগ হবে? কীভাবে কর্মসংস্থান হবে মানুষের?’
চা খাওয়া শেষ হলে আমরা স্টুডিওতে যাই। রেকর্ডিংয়ে সময় লাগে প্রায় এক ঘণ্টা। অনুষ্ঠান শেষে তাঁকে এগিয়ে দিতে গেট পর্যন্ত এগোই। তিনি আপত্তি করেন। তাঁর গাড়িটি সামনে আসে। গাড়ি দেখে অবাক হই। দেশসেরা শিল্পপতির জন্য সাধারণ মানের একটি টয়োটা গাড়ি! আমি মেলাতে পারি না। চ্যানেলটিতে আমি একটি বিজনেস শো হোস্ট করতাম। তাতে অন্তত আড়াই শ বিশিষ্টজন অংশ নেন। তাঁদের যখন বিদায় জানাতাম, তখন একেকজনের গাড়ি দেখে অবাক হতাম! মার্সিডিজ, বিএমডব্লিউ, পোরশে, অডি, রেঞ্জরোভার গাড়ি নিয়ে আসতেন তাঁরা। বছরে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা যার প্রতিষ্ঠানের লেনদেন, সেই লতিফুর রহমান এসেছেন সাধারণ একটি টয়োটায়! পরে তাঁর সম্পর্কে আরও জানার চেষ্টা করেছি। আসলে তিনিই লতিফুর রহমান। যাঁর জীবনযাপন ছিল সাধারণ অথচ আভিজাত্যময়। তাঁর অসাধারণ ব্যক্তিত্ব, রুচি ও মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপনই তাঁকে তারকায় পরিণত করেছে। জন্ম থেকে শেষ দিন পর্যন্ত শক্ত নীতি-আদর্শে গড়া জীবনের প্রতিফলন ছিল তাঁর কাজে, চিন্তায়। যে কারণে এখনো তিনিই প্রথম, তিনিই একমাত্র ব্যক্তিত্ব যিনি বাংলাদেশের হয়ে অসলো থেকে বিশ্বের ব্যবসাক্ষেত্রের নোবেলখ্যাত ‘বিজনেস অ্যাওয়ার্ড ফর পিস’ অর্জন করেছেন। পরিশ্রম, সততা, নীতি-নৈতিকতা, আভিজাত্যে তাঁর চেয়ে বড় তারকা আর কে বাংলাদেশে? আমার দেখা দেশসেরা এ তারকা আজ সত্যিই ধরাছোঁয়ার বাইরে! আকাশের তারাদের সঙ্গে মিলে জ্বলছেন ওই দূরে!
লেখক: সহকারী সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
তখন নদী, নীলাকাশ চিনি। না বুঝলেও ভালো লাগে নিসর্গ। অজানা আনন্দে ফুল, পাখি দেখি। প্রজাপতির পেছনে ছুটি! তখনো আগুন-পানি চিনি। তারপরও অনেক কিছুই অচেনা। তখনো দ্বান্দ্বিক জীবনের জটিল জ্যামিতি মাথায় ঢোকেনি। তখনো বয়স অল্প। গরমের রাতে উঠোনে চাটাই বিছিয়ে দাদুর সঙ্গে গল্প করে ঘুমিয়ে পড়ি। মনে আছে, আলো ঝলমল রাতে তারাদের দেখে স্বপ্নের অচিনপুরে চলে যেতাম! তখনো তারাদের চিনি না, শুধু ভালো লাগে। মনে হতো, ইশ! যদি কাছাকাছি যেতে পারতাম! যদি ছুঁয়ে দেখতে পারতাম! পরে জানলাম, ওই তারকাদের ধরা যায় না, ছোঁয়া যায় না! তবে আকাশের মতো পৃথিবীতেও কিছু তারা আছে; যাঁরা আমাদের দেশ, সমাজ আর মানুষকে আলোয় উদ্ভাসিত করে, তাঁদের মূল্যবোধ আর সত্য-সুন্দর জীবনের জয়গান আমাদের উজ্জীবিত করে। তেমনই এক তারকার নাম লতিফুর রহমান। শৈশবে না চিনলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবস্থায়ই তাঁর নাম জানি। তবে দেশসেরা অত্যন্ত শুদ্ধ-মার্জিত এ ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তাকে নিয়ে লিখতে গিয়ে আমার পেশাগত জীবনে তাঁর সঙ্গে যেটুকু স্মৃতি আছে, তার আলোকে কিছু লিখব বলে ঠিক করেছি। অর্থনৈতিক সাংবাদিকতার কারণে তাঁর সঙ্গে আমার বহুবার দেখা হয়েছে। তাঁর ব্যক্তিত্ব ও উঁচুমানের রুচির সঙ্গে পরিচয় হয়েছে নানাভাবে। একটি ঘটনার কথা বলি। সম্ভবত ২০১৫ সালের মে মাস। আমি তখন একটি সংবাদভিত্তিক টিভি চ্যানেলের বিজনেস এডিটর। বাজেট নিয়ে একটি আলোচনার আয়োজন করি। এতে তিনি অতিথি। সাধারণত অফিসে কোনো বিশিষ্ট অতিথি এলে তাঁকে আমিই স্বাগত জানাতাম। সেদিনও তাঁকে আমি গেট থেকে স্বাগত জানিয়ে আমার রুমে নিয়ে আসি। তখন বিকেল ৪টার কাছাকাছি হবে। সম্ভবত রেকর্ডিং হওয়ার কথা ৫টায়। তিনি আগেই চলে এসেছেন। এই প্রথম তাঁকে আমি ব্যক্তিগতভাবে কাছে পাই। সত্যি বলতে কি, ওই দিন তাঁকে পেয়ে আমার কী যে ভালো লাগছিল! মনে হলো বাংলাদেশের একজন সত্যিকারের তারকা আমার সামনে। তাঁকে নিয়ে আমার রুমে বসলাম! কী খাবেন জানতে চাইলাম। তিনি খুব ধীরে নরমভাবে কথা বলেন। জানালেন শুধু চা খাবেন। তিনি বলছেন, আমি শুনছি। দেশে তখন
রাজনৈতিক জ্বালাও–পোড়াও চলছে। তাতে তিনি খুবই হতাশা প্রকাশ করে বললেন, ‘এভাবে যদি রাজনৈতিক হানাহানি হয়, তবে দেশে কীভাবে বিনিয়োগ হবে? কীভাবে কর্মসংস্থান হবে মানুষের?’
চা খাওয়া শেষ হলে আমরা স্টুডিওতে যাই। রেকর্ডিংয়ে সময় লাগে প্রায় এক ঘণ্টা। অনুষ্ঠান শেষে তাঁকে এগিয়ে দিতে গেট পর্যন্ত এগোই। তিনি আপত্তি করেন। তাঁর গাড়িটি সামনে আসে। গাড়ি দেখে অবাক হই। দেশসেরা শিল্পপতির জন্য সাধারণ মানের একটি টয়োটা গাড়ি! আমি মেলাতে পারি না। চ্যানেলটিতে আমি একটি বিজনেস শো হোস্ট করতাম। তাতে অন্তত আড়াই শ বিশিষ্টজন অংশ নেন। তাঁদের যখন বিদায় জানাতাম, তখন একেকজনের গাড়ি দেখে অবাক হতাম! মার্সিডিজ, বিএমডব্লিউ, পোরশে, অডি, রেঞ্জরোভার গাড়ি নিয়ে আসতেন তাঁরা। বছরে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা যার প্রতিষ্ঠানের লেনদেন, সেই লতিফুর রহমান এসেছেন সাধারণ একটি টয়োটায়! পরে তাঁর সম্পর্কে আরও জানার চেষ্টা করেছি। আসলে তিনিই লতিফুর রহমান। যাঁর জীবনযাপন ছিল সাধারণ অথচ আভিজাত্যময়। তাঁর অসাধারণ ব্যক্তিত্ব, রুচি ও মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপনই তাঁকে তারকায় পরিণত করেছে। জন্ম থেকে শেষ দিন পর্যন্ত শক্ত নীতি-আদর্শে গড়া জীবনের প্রতিফলন ছিল তাঁর কাজে, চিন্তায়। যে কারণে এখনো তিনিই প্রথম, তিনিই একমাত্র ব্যক্তিত্ব যিনি বাংলাদেশের হয়ে অসলো থেকে বিশ্বের ব্যবসাক্ষেত্রের নোবেলখ্যাত ‘বিজনেস অ্যাওয়ার্ড ফর পিস’ অর্জন করেছেন। পরিশ্রম, সততা, নীতি-নৈতিকতা, আভিজাত্যে তাঁর চেয়ে বড় তারকা আর কে বাংলাদেশে? আমার দেখা দেশসেরা এ তারকা আজ সত্যিই ধরাছোঁয়ার বাইরে! আকাশের তারাদের সঙ্গে মিলে জ্বলছেন ওই দূরে!
লেখক: সহকারী সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস স্বয়ং একাধিকবার বলেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন এমন এক আবহে অনুষ্ঠিত হবে যে তা শুধু দেশে নয়, সারা পৃথিবীতে সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও সর্বজনে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। এটা তাঁর নিজের এবং অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে
১৫ ঘণ্টা আগেসোমবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫। আস্থা আছে কি না, স্বপ্রণোদিত হয়ে যাচাই করতে গিয়ে বিপাকে পড়েন ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী ফ্রাঁসোয়া বাইরু। সংসদে ১৯৪ জন সংসদ সদস্য তাঁর ওপর আস্থা জানিয়ে ভোট দিলেও ৩৬৪ জন তাঁকে লাল কার্ড দেখিয়ে দিয়েছেন। উল্লেখ্য, ফ্রান্সের আইনপ্রণেতা হচ্ছেন মোট ৫৭৭ জন। ফলে মাত্র ৯ মাস ক্ষমতায়
১৫ ঘণ্টা আগেসময় এখন অদ্ভুত এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। মানুষ তার হাজার বছরের ইতিহাসে অনেক বিপ্লবের সাক্ষী হয়েছে—কৃষি, শিল্প, তথ্যপ্রযুক্তি। প্রতিটি বিপ্লব আমাদের জীবনধারায় গভীর পরিবর্তন এনেছে, কেউ কেউ পেছনে পড়ে গেছে, কেউ সামনের সারিতে উঠে এসেছে। কিন্তু এইবার যা আসছে, তা হয়তো আর কাউকে কেবল পেছনেই ফেলবে না; বরং মানুষক
১৫ ঘণ্টা আগেবাংলাদেশে ১৯৭২ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত কীটনাশক ব্যবহারের পরিমাণ প্রায় ১০ গুণ বেড়েছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকি তৈরি করছে। আজকের পত্রিকায় ১০ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত ‘সেন্টার ফর অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড বায়োসায়েন্স ইন্টারন্যাশনাল’ (ক্যাবি) আয়োজিত এক কর্মশালায় এই উদ্বেগজনক তথ্য উঠে এসেছে।
১৬ ঘণ্টা আগে