লোপা মমতাজ
কোথাও কি ভয়াবহ কিছু ঘটেছে? রাস্তায় বের হয়ে তেমন তো মনে হলো না! গতকাল সন্ধ্যা থেকে কেমন ঝিমুনি ঝিমুনি ভাব। একবার অবশ্য মনে হলো যেন কোথাও ট্রান্সফর্মার ব্লাস্ট হয়েছে। খুব একটা গুরুত্ব দিইনি। ঘুমিয়ে পড়েছি। ভোরবেলা হাঁটতে বের হয়ে দু-একজনের মুখে শুনলাম, মগবাজারের কোথাও বিস্ফোরণে ভবন ধসে পড়েছে। বাসায় ফিরে টিভি খুলে বুঝলাম ঘটনা মারাত্মক। আস্ত একটা ভবন ধসে পড়েছে। পাশের ভবনগুলো ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। মানুষ মারা গেছে, গুরুতর আহত কতজন—কে জানে! কল্পনা করতে পারছি, কাতরানো মানুষের তাজা রক্ত, কান্না, ভীতি। কেউ হয়তো নিজের শরীরটা টেনে বের করার চেষ্টা করছে, কেউ হয়তো অন্য কাউকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে। অন্যদিকে ভিড় ঠেলে স্বজনেরা নিশ্চয়ই চলে এসেছেন ঘটনাস্থলে। চলে এসেছে টেলিভিশনের ক্যামেরা, সাংবাদিক, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস এবং আরও কতজন...কেমন একটা হতভম্ব অবস্থা! যদিও ঘটনা রোববার রাতের, আজও নিশ্চয়ই তার আঁচ থাকবে সেই পথে! আজকাল রক্তাক্ত কিছু দেখলে শরীর অবশ হয়ে আসে। তা ছাড়া ও-রকম জায়গায় নিজেকে কেমন অপদার্থের মতো লাগে। মধ্যবিত্ত মনে আমার সব সময় সবকিছু হারানোর ভয় কাজ করে।
অথচ আজ সকালে আমাকে এই পথ দিয়েই যেতে হবে ওয়্যারলেস গেটের কমিউনিটি হাসপাতালে। একবার ভেবেছি যাব না, কিন্তু বের হয়েছি। রিকশা নিইনি। জানি তো, যে পথে এমনটা ঘটছে, সে পথে এখন কোনো বাহনই ঢুকতে দেবে না। যদিও যাব ওই পথের উল্টো রাস্তায়। দূরে আড়ংয়ের ভবন দেখতে পাচ্ছি। মনে মনে ভেবে নিয়েছি, গত রাতের ভবন ধসের পর এখন চারপাশে অবস্থা যদি খুব খারাপ দেখি, তবে ফিরে যাব। হেঁটে আড়ং পর্যন্ত আসতেই পায়ের নিচে কাচের টুকরো মট করে ভাঙল। আড়ংয়ের বিল্ডিংটার দিকে তাকিয়ে দেখলাম ওটার কাচ সম্পূর্ণ চূর্ণবিচূর্ণ। তবে কাচের অংশবিশেষ জানালায় লেগে আছে আর তাই লাল ফিতা দিয়ে পথে ব্যারিকেড দেওয়া, যেন পথচারীরা আঘাতপ্রাপ্ত না হন।
খুব বেশি জটলা নেই, গুঞ্জন নেই, ব্যস্তভাবে যে যার পথে ছুটে যাচ্ছে। শুধু বিস্ফোরণের জায়গায় এসে সবার পা যেন একটু থমকে যাচ্ছে। তবে তা মুহূর্তের জন্য। হাঁটতে হাঁটতেই দু-একজনকে জিজ্ঞেস করলাম: ‘কোন বিল্ডিংটা, ভাই?’ কেউ বলতে পারে না। ওভারব্রিজ থাকায় অন্য পাশটা খুব বেশি দেখা যাচ্ছে না। দুজন কেয়ারটেকার দাঁড়িয়ে আছেন। তবে তাঁরাও আমার মতো তেমন কিছু জানেন না। আট–দশজনের জটলা ওভারব্রিজের কাছটায়। তারা উঁকিবুঁকি দিয়ে অন্য পাশের ধসে যাওয়া বিল্ডিংটা দেখার চেষ্টা করছে।
রাস্তার পাশেই আমওয়ালা আম বিক্রি করছে, পেয়ারাওয়ালা পেয়ারা। উঠতি ছেলেমেয়েরা তা কিনে খাচ্ছে আর একে অন্যকে জিজ্ঞেস করছে: ‘ওই, কি হইসেরে?’ একটা ছেলে বলছে: ‘ভাইঙা পড়সে।’ শুনে অন্যরা হাসাহাসি করছে। ‘আরে শালা, গ্যাস বাস্ট হইসে।’ আরেকজন বলছে: ‘আরে নাহ্, বাসের থেইক্যা লাগছে...।’ হাসছে আর আম খাচ্ছে আবার নতুন কথার ভিড়ে গতকালের কথা হারিয়ে যাচ্ছে...। এত ভয়াবহ একটা বিস্ফোরণ ঘটে গেল, কত মানুষ মারা গেল, কত মানুষ আহত হলো! এটা মনে হয় খুব বড় কোনো ঘটনা নয় ওদের কাছে অথবা এই ছেলেমেয়েরা এসব নিয়ে ভাবতে রাজি নয়! নাকি ভাবছে, কী হবে ওসব নিয়ে ভেবে? মানুষের মন থেকে উদ্বেগ কি কমে গেছে? বছরে দু-একটা বিস্ফোরণ হবে, কোথাও লঞ্চ ডুববে, কোথাও ট্রাকচাপায় একটা পরিবার চিরতরে পৃথিবী থেকে হারিয়ে যাবে, হত্যা হবে, গুম হবে, খুন হবে, কিছু মানুষ ট্রমায় যাবে—মানুষ কি অভ্যস্ত হয়ে গেছে এসবে? একটা ঘটনা থেকে দৃষ্টি অন্য কোনো ঘটনায় মুহূর্তে আবর্তিত হচ্ছে। আমাদের অনুভূতি কি ভোঁতা হয়ে যাচ্ছে?
বাসায় ফিরে খবরের কাগজের পাতায় দেখলাম, যে বাচ্চাটা মারা গেছে তার বাবা বলছেন, ‘সবেমাত্র আমার মেয়েটা বাবা ডাকতে শুরু করছিল।’ আহ্ বাবা! কী দুর্ভাগা বাবা! সেই বাবাকেই কাল রাতে দৌড়ে আসতে হয়েছে হাসপাতালে, সন্তানের লাশ খুঁজতে। তার কণ্ঠে শুনতে পাই: ‘আপনাদের হাসপাতালে কোনো বাচ্চা আসছে নাকি?’ বাচ্চাটাকে খুঁজে পেয়ে কিছুক্ষণ বুকে জড়িয়ে ধরেছিলেন তিনি। এরপর হাসপাতালের ভরসায় মৃত সন্তানকে রেখে ছুটতে থাকেন সন্তানের মাকে অন্য হাসপাতালে খুঁজতে…
লেখক: সাহিত্যিক
কোথাও কি ভয়াবহ কিছু ঘটেছে? রাস্তায় বের হয়ে তেমন তো মনে হলো না! গতকাল সন্ধ্যা থেকে কেমন ঝিমুনি ঝিমুনি ভাব। একবার অবশ্য মনে হলো যেন কোথাও ট্রান্সফর্মার ব্লাস্ট হয়েছে। খুব একটা গুরুত্ব দিইনি। ঘুমিয়ে পড়েছি। ভোরবেলা হাঁটতে বের হয়ে দু-একজনের মুখে শুনলাম, মগবাজারের কোথাও বিস্ফোরণে ভবন ধসে পড়েছে। বাসায় ফিরে টিভি খুলে বুঝলাম ঘটনা মারাত্মক। আস্ত একটা ভবন ধসে পড়েছে। পাশের ভবনগুলো ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। মানুষ মারা গেছে, গুরুতর আহত কতজন—কে জানে! কল্পনা করতে পারছি, কাতরানো মানুষের তাজা রক্ত, কান্না, ভীতি। কেউ হয়তো নিজের শরীরটা টেনে বের করার চেষ্টা করছে, কেউ হয়তো অন্য কাউকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে। অন্যদিকে ভিড় ঠেলে স্বজনেরা নিশ্চয়ই চলে এসেছেন ঘটনাস্থলে। চলে এসেছে টেলিভিশনের ক্যামেরা, সাংবাদিক, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস এবং আরও কতজন...কেমন একটা হতভম্ব অবস্থা! যদিও ঘটনা রোববার রাতের, আজও নিশ্চয়ই তার আঁচ থাকবে সেই পথে! আজকাল রক্তাক্ত কিছু দেখলে শরীর অবশ হয়ে আসে। তা ছাড়া ও-রকম জায়গায় নিজেকে কেমন অপদার্থের মতো লাগে। মধ্যবিত্ত মনে আমার সব সময় সবকিছু হারানোর ভয় কাজ করে।
অথচ আজ সকালে আমাকে এই পথ দিয়েই যেতে হবে ওয়্যারলেস গেটের কমিউনিটি হাসপাতালে। একবার ভেবেছি যাব না, কিন্তু বের হয়েছি। রিকশা নিইনি। জানি তো, যে পথে এমনটা ঘটছে, সে পথে এখন কোনো বাহনই ঢুকতে দেবে না। যদিও যাব ওই পথের উল্টো রাস্তায়। দূরে আড়ংয়ের ভবন দেখতে পাচ্ছি। মনে মনে ভেবে নিয়েছি, গত রাতের ভবন ধসের পর এখন চারপাশে অবস্থা যদি খুব খারাপ দেখি, তবে ফিরে যাব। হেঁটে আড়ং পর্যন্ত আসতেই পায়ের নিচে কাচের টুকরো মট করে ভাঙল। আড়ংয়ের বিল্ডিংটার দিকে তাকিয়ে দেখলাম ওটার কাচ সম্পূর্ণ চূর্ণবিচূর্ণ। তবে কাচের অংশবিশেষ জানালায় লেগে আছে আর তাই লাল ফিতা দিয়ে পথে ব্যারিকেড দেওয়া, যেন পথচারীরা আঘাতপ্রাপ্ত না হন।
খুব বেশি জটলা নেই, গুঞ্জন নেই, ব্যস্তভাবে যে যার পথে ছুটে যাচ্ছে। শুধু বিস্ফোরণের জায়গায় এসে সবার পা যেন একটু থমকে যাচ্ছে। তবে তা মুহূর্তের জন্য। হাঁটতে হাঁটতেই দু-একজনকে জিজ্ঞেস করলাম: ‘কোন বিল্ডিংটা, ভাই?’ কেউ বলতে পারে না। ওভারব্রিজ থাকায় অন্য পাশটা খুব বেশি দেখা যাচ্ছে না। দুজন কেয়ারটেকার দাঁড়িয়ে আছেন। তবে তাঁরাও আমার মতো তেমন কিছু জানেন না। আট–দশজনের জটলা ওভারব্রিজের কাছটায়। তারা উঁকিবুঁকি দিয়ে অন্য পাশের ধসে যাওয়া বিল্ডিংটা দেখার চেষ্টা করছে।
রাস্তার পাশেই আমওয়ালা আম বিক্রি করছে, পেয়ারাওয়ালা পেয়ারা। উঠতি ছেলেমেয়েরা তা কিনে খাচ্ছে আর একে অন্যকে জিজ্ঞেস করছে: ‘ওই, কি হইসেরে?’ একটা ছেলে বলছে: ‘ভাইঙা পড়সে।’ শুনে অন্যরা হাসাহাসি করছে। ‘আরে শালা, গ্যাস বাস্ট হইসে।’ আরেকজন বলছে: ‘আরে নাহ্, বাসের থেইক্যা লাগছে...।’ হাসছে আর আম খাচ্ছে আবার নতুন কথার ভিড়ে গতকালের কথা হারিয়ে যাচ্ছে...। এত ভয়াবহ একটা বিস্ফোরণ ঘটে গেল, কত মানুষ মারা গেল, কত মানুষ আহত হলো! এটা মনে হয় খুব বড় কোনো ঘটনা নয় ওদের কাছে অথবা এই ছেলেমেয়েরা এসব নিয়ে ভাবতে রাজি নয়! নাকি ভাবছে, কী হবে ওসব নিয়ে ভেবে? মানুষের মন থেকে উদ্বেগ কি কমে গেছে? বছরে দু-একটা বিস্ফোরণ হবে, কোথাও লঞ্চ ডুববে, কোথাও ট্রাকচাপায় একটা পরিবার চিরতরে পৃথিবী থেকে হারিয়ে যাবে, হত্যা হবে, গুম হবে, খুন হবে, কিছু মানুষ ট্রমায় যাবে—মানুষ কি অভ্যস্ত হয়ে গেছে এসবে? একটা ঘটনা থেকে দৃষ্টি অন্য কোনো ঘটনায় মুহূর্তে আবর্তিত হচ্ছে। আমাদের অনুভূতি কি ভোঁতা হয়ে যাচ্ছে?
বাসায় ফিরে খবরের কাগজের পাতায় দেখলাম, যে বাচ্চাটা মারা গেছে তার বাবা বলছেন, ‘সবেমাত্র আমার মেয়েটা বাবা ডাকতে শুরু করছিল।’ আহ্ বাবা! কী দুর্ভাগা বাবা! সেই বাবাকেই কাল রাতে দৌড়ে আসতে হয়েছে হাসপাতালে, সন্তানের লাশ খুঁজতে। তার কণ্ঠে শুনতে পাই: ‘আপনাদের হাসপাতালে কোনো বাচ্চা আসছে নাকি?’ বাচ্চাটাকে খুঁজে পেয়ে কিছুক্ষণ বুকে জড়িয়ে ধরেছিলেন তিনি। এরপর হাসপাতালের ভরসায় মৃত সন্তানকে রেখে ছুটতে থাকেন সন্তানের মাকে অন্য হাসপাতালে খুঁজতে…
লেখক: সাহিত্যিক
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস স্বয়ং একাধিকবার বলেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন এমন এক আবহে অনুষ্ঠিত হবে যে তা শুধু দেশে নয়, সারা পৃথিবীতে সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও সর্বজনে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। এটা তাঁর নিজের এবং অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে
১৫ ঘণ্টা আগেসোমবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫। আস্থা আছে কি না, স্বপ্রণোদিত হয়ে যাচাই করতে গিয়ে বিপাকে পড়েন ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী ফ্রাঁসোয়া বাইরু। সংসদে ১৯৪ জন সংসদ সদস্য তাঁর ওপর আস্থা জানিয়ে ভোট দিলেও ৩৬৪ জন তাঁকে লাল কার্ড দেখিয়ে দিয়েছেন। উল্লেখ্য, ফ্রান্সের আইনপ্রণেতা হচ্ছেন মোট ৫৭৭ জন। ফলে মাত্র ৯ মাস ক্ষমতায়
১৫ ঘণ্টা আগেসময় এখন অদ্ভুত এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। মানুষ তার হাজার বছরের ইতিহাসে অনেক বিপ্লবের সাক্ষী হয়েছে—কৃষি, শিল্প, তথ্যপ্রযুক্তি। প্রতিটি বিপ্লব আমাদের জীবনধারায় গভীর পরিবর্তন এনেছে, কেউ কেউ পেছনে পড়ে গেছে, কেউ সামনের সারিতে উঠে এসেছে। কিন্তু এইবার যা আসছে, তা হয়তো আর কাউকে কেবল পেছনেই ফেলবে না; বরং মানুষক
১৬ ঘণ্টা আগেবাংলাদেশে ১৯৭২ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত কীটনাশক ব্যবহারের পরিমাণ প্রায় ১০ গুণ বেড়েছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকি তৈরি করছে। আজকের পত্রিকায় ১০ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত ‘সেন্টার ফর অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড বায়োসায়েন্স ইন্টারন্যাশনাল’ (ক্যাবি) আয়োজিত এক কর্মশালায় এই উদ্বেগজনক তথ্য উঠে এসেছে।
১৬ ঘণ্টা আগে