চঞ্চল সরকার
গতকাল ১৩ জুন ছিল দেশের প্রবীণ রাজনীতিবিদ, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং সাবেক মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী। তার জন্ম ১৯৪৮ সালে। তার মানে মৃত্যুকালে তার বয়স ছিল ৭৩ বছরের কাছাকাছি। একেবারে অকালমৃত্যু বলা যাবে না।
মোহাম্মদ নাসিম ছিলেন রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য, পুরোদস্তুর রাজনীতির মানুষ। তার বাবা ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিশ্বস্ত সহচর, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক। মুক্তিযুদ্ধকালীন মুজিবনগর সরকারের একজন মন্ত্রী। স্বাধীন বাংলাদেশেও তিনি মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নিলে এম মনসুর আলী প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছিলেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্যদিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতির উল্টোযাত্রা শুরু হলে যে কঠিন সময় নেমে আসে, তখন আওয়ামী লীগর কেউ কেউ ঘাতকদের সঙ্গে রফা করে জীবন বাঁচানোর কৌশল নিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর লাশ ৩২ নম্বরের সিঁড়িতে পড়ে থাকতেই খন্দকার মোশতাকের মন্ত্রিসভায় আওয়ামী লীগের অনেকেই শপথ নিয়েছিলেন। যে কয়জন ভয়কে জয় করে খুনিদের পক্ষে যাননি, তাদের একজন মনসুর আলী। এর খেসারত তাকে দিতে হয়েছে জেলের ভেতরে গুলিতে প্রাণ দিয়ে। সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এএইচএম কামারুজ্জামান এবং মনসুর আলী—জাতীয় এই চার নেতা বঙ্গবন্ধুর প্রতি অটুট আনুগত্যের প্রমাণ দিয়ে ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর বুকের রক্ত ঢেলে রচনা করেছিলেন দেশপ্রেমের উজ্জ্বল ইতিহাস।
পঁচাত্তর-পরবর্তী রাজনীতির দুর্যোগকালে আওয়ামী লীগের নবীন-প্রবীণ কিছু নেতা-কর্মী দলকে পুনরায় সংগঠিত করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। বাধা-বিপত্তি ছিল, এমনকি মৃত্যুভয়ও ছিল। তারপরও উজানস্রোতে নৌকার পাল টানার কষ্টকর কাজটি বন্ধ করা হয়নি। এই কঠিন কালপর্বেই আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে নিজেকে সমর্পণ করেন মোহাম্মদ নাসিম। তিনি আগে অবশ্য ছাত্রলীগ এবং যুবলীগে সক্রিয় ছিলেন। ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে একটি সম্পাদকের পদ পাওয়ার মধ্যদিয়ে তার জাতীয় রাজনীতিতে পথচলা শুরু। তারপর গত ৩৯ বছর তিনি পথ ছাড়েননি। তিনি ছয়বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন, চারটি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। ১৪-দলীয় জোটের মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করেছেন আমৃত্যু। তার রাজনীতির যাত্রাপথ বকুল বিছানো ছিল না। তিনি ড্রয়িংরুম পলিটিক্স করতেন না। তিনি ছিলেন রাজনীতির মাঠের মানুষ। গোটা জীবন তিনি রাজনীতি করেছেন। রাজনীতি করতে গিয়ে পুলিশের হাতে লাঞ্ছিত-নিগৃহীত হয়েছেন, রক্ত ঝরিয়েছেন; কিন্তু আপস করেননি, নীতিভ্রষ্ট হননি।
অত্যন্ত হৃদয়বান, কর্মীবান্ধব, দরদি মনের মানুষ মোহাম্মদ নাসিম রাজনীতির এক উজ্জ্বল ব্যতিক্রম। কিন্তু মারা যাবার পর কিছু ভ্রষ্ট মানুষ যেভাবে তাঁর মৃত্যু নিয়ে বিকৃত উল্লাস করেছেন, তা ছিল রীতিমতো নিষ্ঠুর ও অমানবিক। স্বাস্থ্যমন্ত্রী থাকতে তিনি লাগাম টেনে না ধরে দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিয়েছেন, নিজের ছেলের বিরুদ্ধে কঠোর হতে পারেননি—এসব অভিযোগ তুলে একজন মৃত মানুষকে নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে যেসব বিদ্রুপ-কটাক্ষ করা হচ্ছে বা হয়েছে, তা থেকে বোঝা যায়, কী নীচু মানের রাজনৈতিক সংস্কৃতিচর্চা আমাদের দেশে চলছে। দেশে ক্রোধ ও বিদ্বেষের যে রাজনীতির চর্চা চলছে, তা অনেকের যুক্তিবোধকেও দুর্বল করে দিচ্ছে। অনেকের সাধারণ ভদ্রতাবোধও লুপ্ত হয়েছে বলে মনে হয়।
আওয়ামী লীগের জন্য মোহাম্মদ নাসিমের মৃত্যু-পরবর্তী প্রতিক্রিয়া থেকে শেখার আছে অনেক কিছু। দলের কোনো মন্ত্রী-এমপি-নেতার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ উঠলে, তা ধামাচাপা দেওয়া ঠিক হবে না। আওয়ামী লীগ এখন কিন্তু বন্ধুহীন অবস্থায় আছে। সবকিছুর পেছনে জামায়াত-বিএনপির হাত না দেখে আরও কারা, কোন দিক থেকে কলকাঠি নেড়ে আওয়ামী লীগ সম্পর্কে মানুষের মনে বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে, তা বুঝতে হবে। ঘরের মধ্যেও বিষধর সাপের উপস্থিতির আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
সব দৃষ্টি যখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিকে, তখন তাকে কঠোর হতেই হবে। বঙ্গবন্ধুর শাসনকালের শেষদিকে স্লোগান উঠেছিল: ‘মুজিব তুমি কঠোর হও।’ তিনি কঠোর হতে কিছুটা সময় নিয়েছিলেন। শত্রুরা সেই কালক্ষেপণের সুযোগ নিয়ে একরাতে সব শেষ করে দিয়েছে। শত্রুদের সময় দেওয়ার কৌশল রাজনীতিতে বড় বিপর্যয় ডেকে আনার আশঙ্কা তৈরি করে।
লেখক: ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক
গতকাল ১৩ জুন ছিল দেশের প্রবীণ রাজনীতিবিদ, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং সাবেক মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী। তার জন্ম ১৯৪৮ সালে। তার মানে মৃত্যুকালে তার বয়স ছিল ৭৩ বছরের কাছাকাছি। একেবারে অকালমৃত্যু বলা যাবে না।
মোহাম্মদ নাসিম ছিলেন রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য, পুরোদস্তুর রাজনীতির মানুষ। তার বাবা ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিশ্বস্ত সহচর, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক। মুক্তিযুদ্ধকালীন মুজিবনগর সরকারের একজন মন্ত্রী। স্বাধীন বাংলাদেশেও তিনি মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নিলে এম মনসুর আলী প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছিলেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্যদিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতির উল্টোযাত্রা শুরু হলে যে কঠিন সময় নেমে আসে, তখন আওয়ামী লীগর কেউ কেউ ঘাতকদের সঙ্গে রফা করে জীবন বাঁচানোর কৌশল নিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর লাশ ৩২ নম্বরের সিঁড়িতে পড়ে থাকতেই খন্দকার মোশতাকের মন্ত্রিসভায় আওয়ামী লীগের অনেকেই শপথ নিয়েছিলেন। যে কয়জন ভয়কে জয় করে খুনিদের পক্ষে যাননি, তাদের একজন মনসুর আলী। এর খেসারত তাকে দিতে হয়েছে জেলের ভেতরে গুলিতে প্রাণ দিয়ে। সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এএইচএম কামারুজ্জামান এবং মনসুর আলী—জাতীয় এই চার নেতা বঙ্গবন্ধুর প্রতি অটুট আনুগত্যের প্রমাণ দিয়ে ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর বুকের রক্ত ঢেলে রচনা করেছিলেন দেশপ্রেমের উজ্জ্বল ইতিহাস।
পঁচাত্তর-পরবর্তী রাজনীতির দুর্যোগকালে আওয়ামী লীগের নবীন-প্রবীণ কিছু নেতা-কর্মী দলকে পুনরায় সংগঠিত করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। বাধা-বিপত্তি ছিল, এমনকি মৃত্যুভয়ও ছিল। তারপরও উজানস্রোতে নৌকার পাল টানার কষ্টকর কাজটি বন্ধ করা হয়নি। এই কঠিন কালপর্বেই আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে নিজেকে সমর্পণ করেন মোহাম্মদ নাসিম। তিনি আগে অবশ্য ছাত্রলীগ এবং যুবলীগে সক্রিয় ছিলেন। ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে একটি সম্পাদকের পদ পাওয়ার মধ্যদিয়ে তার জাতীয় রাজনীতিতে পথচলা শুরু। তারপর গত ৩৯ বছর তিনি পথ ছাড়েননি। তিনি ছয়বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন, চারটি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। ১৪-দলীয় জোটের মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করেছেন আমৃত্যু। তার রাজনীতির যাত্রাপথ বকুল বিছানো ছিল না। তিনি ড্রয়িংরুম পলিটিক্স করতেন না। তিনি ছিলেন রাজনীতির মাঠের মানুষ। গোটা জীবন তিনি রাজনীতি করেছেন। রাজনীতি করতে গিয়ে পুলিশের হাতে লাঞ্ছিত-নিগৃহীত হয়েছেন, রক্ত ঝরিয়েছেন; কিন্তু আপস করেননি, নীতিভ্রষ্ট হননি।
অত্যন্ত হৃদয়বান, কর্মীবান্ধব, দরদি মনের মানুষ মোহাম্মদ নাসিম রাজনীতির এক উজ্জ্বল ব্যতিক্রম। কিন্তু মারা যাবার পর কিছু ভ্রষ্ট মানুষ যেভাবে তাঁর মৃত্যু নিয়ে বিকৃত উল্লাস করেছেন, তা ছিল রীতিমতো নিষ্ঠুর ও অমানবিক। স্বাস্থ্যমন্ত্রী থাকতে তিনি লাগাম টেনে না ধরে দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিয়েছেন, নিজের ছেলের বিরুদ্ধে কঠোর হতে পারেননি—এসব অভিযোগ তুলে একজন মৃত মানুষকে নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে যেসব বিদ্রুপ-কটাক্ষ করা হচ্ছে বা হয়েছে, তা থেকে বোঝা যায়, কী নীচু মানের রাজনৈতিক সংস্কৃতিচর্চা আমাদের দেশে চলছে। দেশে ক্রোধ ও বিদ্বেষের যে রাজনীতির চর্চা চলছে, তা অনেকের যুক্তিবোধকেও দুর্বল করে দিচ্ছে। অনেকের সাধারণ ভদ্রতাবোধও লুপ্ত হয়েছে বলে মনে হয়।
আওয়ামী লীগের জন্য মোহাম্মদ নাসিমের মৃত্যু-পরবর্তী প্রতিক্রিয়া থেকে শেখার আছে অনেক কিছু। দলের কোনো মন্ত্রী-এমপি-নেতার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ উঠলে, তা ধামাচাপা দেওয়া ঠিক হবে না। আওয়ামী লীগ এখন কিন্তু বন্ধুহীন অবস্থায় আছে। সবকিছুর পেছনে জামায়াত-বিএনপির হাত না দেখে আরও কারা, কোন দিক থেকে কলকাঠি নেড়ে আওয়ামী লীগ সম্পর্কে মানুষের মনে বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে, তা বুঝতে হবে। ঘরের মধ্যেও বিষধর সাপের উপস্থিতির আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
সব দৃষ্টি যখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিকে, তখন তাকে কঠোর হতেই হবে। বঙ্গবন্ধুর শাসনকালের শেষদিকে স্লোগান উঠেছিল: ‘মুজিব তুমি কঠোর হও।’ তিনি কঠোর হতে কিছুটা সময় নিয়েছিলেন। শত্রুরা সেই কালক্ষেপণের সুযোগ নিয়ে একরাতে সব শেষ করে দিয়েছে। শত্রুদের সময় দেওয়ার কৌশল রাজনীতিতে বড় বিপর্যয় ডেকে আনার আশঙ্কা তৈরি করে।
লেখক: ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস স্বয়ং একাধিকবার বলেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন এমন এক আবহে অনুষ্ঠিত হবে যে তা শুধু দেশে নয়, সারা পৃথিবীতে সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও সর্বজনে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। এটা তাঁর নিজের এবং অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে
২০ ঘণ্টা আগেসোমবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫। আস্থা আছে কি না, স্বপ্রণোদিত হয়ে যাচাই করতে গিয়ে বিপাকে পড়েন ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী ফ্রাঁসোয়া বাইরু। সংসদে ১৯৪ জন সংসদ সদস্য তাঁর ওপর আস্থা জানিয়ে ভোট দিলেও ৩৬৪ জন তাঁকে লাল কার্ড দেখিয়ে দিয়েছেন। উল্লেখ্য, ফ্রান্সের আইনপ্রণেতা হচ্ছেন মোট ৫৭৭ জন। ফলে মাত্র ৯ মাস ক্ষমতায়
২০ ঘণ্টা আগেসময় এখন অদ্ভুত এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। মানুষ তার হাজার বছরের ইতিহাসে অনেক বিপ্লবের সাক্ষী হয়েছে—কৃষি, শিল্প, তথ্যপ্রযুক্তি। প্রতিটি বিপ্লব আমাদের জীবনধারায় গভীর পরিবর্তন এনেছে, কেউ কেউ পেছনে পড়ে গেছে, কেউ সামনের সারিতে উঠে এসেছে। কিন্তু এইবার যা আসছে, তা হয়তো আর কাউকে কেবল পেছনেই ফেলবে না; বরং মানুষক
২০ ঘণ্টা আগেবাংলাদেশে ১৯৭২ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত কীটনাশক ব্যবহারের পরিমাণ প্রায় ১০ গুণ বেড়েছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকি তৈরি করছে। আজকের পত্রিকায় ১০ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত ‘সেন্টার ফর অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড বায়োসায়েন্স ইন্টারন্যাশনাল’ (ক্যাবি) আয়োজিত এক কর্মশালায় এই উদ্বেগজনক তথ্য উঠে এসেছে।
২০ ঘণ্টা আগে