Ajker Patrika

অসাধারণ এক শিল্পোদ্যোক্তা

আহমেদ শমসের
অসাধারণ এক শিল্পোদ্যোক্তা

ছোট বয়সেই যোগ দিয়েছিলেন পারিবারিক ব্যবসায়। মাত্র ১৫ বছর বয়সে পুরান ঢাকায় নিজের নামে শুরু করেছিলেন একটি কাপড়ের দোকান–আনোয়ার ক্লথ স্টোর। সে সময় নিজের মাথায় লুঙ্গির গাঁট্টি বয়ে নিয়ে হাটে বিক্রি করতেন। আগাগোড়া তিনি ছিলেন সৎ, সাহসী ও পরিশ্রমী। ফলে ক্রমে তিনি ওপরে উঠেছেন এবং গড়ে তুলেছেন এক বিশাল শিল্পসাম্রাজ্য। চেষ্টা থাকলে, উদ্যোগ থাকলে মানুষ যে এক জীবনেই কত কিছু করতে পারে, তার প্রমাণ দেশের প্রথম প্রজন্মের অন্যতম শিল্পোদ্যোক্তা আনোয়ার হোসেন।

১৯৬৮ সালে আনোয়ার সিল্ক মিলস প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে শিল্পোদ্যোগ শুরু, তারপর একে একে গড়ে তুলেছেন ২০ কোম্পানি, যেখানে কর্মসংস্থান হয়েছে কমপক্ষে ২০ হাজার মানুষের। তাঁর কারখানায় তৈরি মালা শাড়ি ছিল একসময় অত্যন্ত জনপ্রিয়। তাঁকে তখন মালা শাড়ির আনোয়ার হিসেবেই সবাই চিনত। বস্ত্র ছাড়াও সিমেন্ট, পাট, অটোমোবাইল, আবাসন, আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ নানা প্রতিষ্ঠান গড়ায় মনোযোগী হয়েছেন।

বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক ‘দি সিটি ব্যাংকের’ তিনি অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। তিনি একদিকে যেমন শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন, ১৮৫ বছরের পুরোনো পারিবারিক ব্যবসা সমৃদ্ধ করেছেন, নতুন নতুন মাত্রা যোগ করেছেন, মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিয়েছেন, অর্থনীতিকে পুষ্টি জুগিয়েছেন, অন্যদিকে তেমনি ব্যবসায়িক সংগঠনের নেতৃত্বও দিয়েছেন সফলভাবে। তিনি চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে ভালোবাসতেন, তাই কখনো পিছু হটেননি। বলা হয়ে থাকে, ব্যবসায়ে উত্থান-পতন স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু আনোয়ার হোসেন যেখানে হাত দিয়েছেন, সেখানেই সোনা ফলেছে। কোথাও ব্যর্থতার কথা শোনা যায় না।

বড় মাপের উদ্যোক্তা হয়েও আনোয়ার হোসেন তেমন আলোচিত মানুষ হিসেবে খুব একটা সামনে আসেননি। কিছুটা যেন প্রচার-প্রচারণার আড়ালে থেকে নীরবে কাজ করতে পছন্দ করতেন। তিনি অবশ্য একবার লালবাগ এলাকা থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তবে রাজনীতি নিয়ে সেভাবে মেতে ওঠেননি।

‘আমার আট দশক’ নামে একটি আত্মজীবনী লিখে আনোয়ার হোসেন একটি দারুণ কাজ করেছেন। এই বইটি পড়লে বোঝা যাবে, পঠনপাঠনেও তিনি আগ্রহী ছিলেন। বইটি তিনি শেষ করেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে উদ্ধৃত করে। এ থেকেও এটা স্পষ্ট যে, তিনি কতটা রবীন্দ্রানুরাগী ছিলেন। আমাদের দেশে অনেকের অনেক সফলতা আছে। কিন্তু অনেকেই নিজের অভিজ্ঞতা লিখে না যাওয়ায় পরবর্তী প্রজন্ম জানতে পারে না–কী তাদের করা উচিত, কোন পথে হাঁটলে লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব হয়।

আনোয়ার হোসেনের ‘আমার আট দশক’ বইটি পড়ে নতুন উদ্যোক্তারা দিকনির্দেশনা পেতে পারেন। আনোয়ার হোসেনের জন্ম ১৯৩৮ সালের ৩০ অক্টোবর। ৮৪ বছর বয়সে ১৭ আগস্ট ২০২১ তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর আগে তিনি কয়েক বছর শারীরিকভাবে অসুস্থ ছিলেন, ডিমেনশিয়া রোগে ভুগছিলেন। তাঁর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য জগতের একজন নিবেদিতপ্রাণ মানুষের শূন্যতা তৈরি হলো। ১৯ আগস্ট আজিমপুর কবরস্থানে মায়ের কবরে তাঁর দাফন সম্পন্ন হয়েছে দুই দফা জানাজা শেষে।

আনোয়ার হোসেন চলে গেলেন। রেখে গেলেন এক বড় শিল্পপরিবার। তিনি নিজে যেমন তাঁর পারিবারিক ব্যবসা এগিয়ে নিয়েছেন, তাঁর সন্তানেরাও তাঁর রেখে যাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো রক্ষা করে আরও নতুন সংখ্যা যোগ করবেন বলে আশা করা যায়। কীভাবে প্রতিষ্ঠান গড়তে হয়, সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে হয়, তা তিনি তাঁর উত্তর প্রজন্মকে হাতে-কলমে শিখিয়ে গেছেন। তাঁর বিদায় একধরনের শূন্যতা তৈরি করবে ঠিকই; কিন্তু তিনি যে বিশাল ছাদ রেখে গেলেন, তা শক্তি ও প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে নিশ্চয়ই। আনোয়ার হোসেনের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা।

লেখক: সাংবাদিক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ডাকসুতে শিবিরের জয়ে উদ্বেগ শশী থারুরের, জবাব দিলেন মেঘমল্লার

সবচেয়ে সুখী দেশ ফিনল্যান্ডে স্থায়ী বসবাসের আবেদন করবেন যেভাবে

‘ম্যামের মুখটা দেখলাম, মনে হলো—শুয়ে আছেন, কিছুই হয়নি তাঁর’

তিন ভোটে দায়িত্ব পালনকারীদের ‘যথাসম্ভব’ দূরে রাখতে হবে

৪ বিষয়ে সুরাহা চেয়ে ডাকসুর চিফ রিটার্নিং কর্মকর্তাকে অভিযোগ দিলেন ৯ পোলিং এজেন্ট

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত