Ajker Patrika

ভারতের সঙ্গে মিল রেখে দেওয়া হবে সমুদ্রে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা

তারিকুল ইসলাম কাজী, পাথরঘাটা
আপডেট : ২৪ জুন ২০২৩, ১৬: ১৭
ভারতের সঙ্গে মিল রেখে দেওয়া হবে সমুদ্রে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা

বাংলাদেশের জলসীমায় ইলিশ মৌসুমের শুরুতেই প্রতি বছর ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা থাকে। তবে একই সময়ে ভারতীয় জেলেরা বঙ্গোপসাগরে মাছ শিকারসহ নির্বিঘ্নে বাংলাদেশের জলসীমায় প্রবেশ করে মাছ শিকার করে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ পুরোনো। উপকূলীয় এলাকায় জেলেদের দাবি ছিল গবেষণা করে ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া।

সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ও বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের তত্ত্বাবধানে এক গবেষণায় উঠে এসেছে সমুদ্রে বেশির ভাগ মাছের প্রজনন এপ্রিলের মাঝামাঝি শুরু হয়। সেই লক্ষ্যে আগামী বছর থেকে ভারতের সঙ্গে সমন্বয় করে সমুদ্রে নিষেধাজ্ঞার সময় নির্ধারণ করা হবে। আজকের পত্রিকাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে মৎস্য অধিদপ্তর।

প্রতি বছর ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই বঙ্গোপসাগরে কোনো মাছ ধরতে পারেন না জেলেরা। সমুদ্রে মাছের উৎপাদন বাড়াতে ২০১৫ সাল থেকে শুরু হয় ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা। গত চার বছর ধরে এ বিষয়ে যৌথভাবে গবেষণা করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও শের-ই-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক। তাঁদের মতে, সমুদ্রে বেশির ভাগ মাছের প্রজনন এপ্রিলের মাঝামাঝি শুরু হয়। অথচ সাগরে নিষেধাজ্ঞা শুরু হয় ২০ মে থেকে। আর ভারতের সঙ্গে সময়ের মিল না থাকায় এর সুফল বাংলাদেশ ভোগ করতে পারে না।

জানা যায় বঙ্গোপসাগরে ভারতের অংশে মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞার সময় ১ এপ্রিল থেকে ৩১ মে। আর মিয়ানমারের নিষেধাজ্ঞাকাল চলে বাংলাদেশের সঙ্গে মিল রেখেই।

এ বিষয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ বিভাগের অধ্যাপক ও গবেষক ড. ইয়ামিন হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, যথাসময়ে সাগরে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা না দেওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বাংলাদেশ। কারণ নিষেধাজ্ঞা শুরুর আগেই অধিকাংশ মাছ প্রজনন করে ফেলছে। প্রজনের সময় নিষেধাজ্ঞা না দেওয়ায় মা ইলিশ জেলেদের জালে ধরা পড়ছে। ফলে প্রজনন বিঘ্নিত হচ্ছে।

তিনি জানান, ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার পর সমুদ্রে যে পরিমাণ মাছ বাড়ার কথা ছিল সেই পরিমাণ বাড়েনি, বরং দিনে দিন মাছের উৎপাদন কমেছে।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের পরিচালক ড. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশ ও ভারত দুই দেশেরই অংশ রয়েছে। এখানে মাছের প্রজাতিরও কোনো ভিন্নতা নেই। ভারতের অংশে যখন মাছ প্রজনন করে, ঠিক একই সময়ে বাংলাদেশের অংশেও মাছের প্রজনন শুরু হয়। কিন্তু বাংলাদেশের অংশে যথাসময়ে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয় না। আমরা ২২২ প্রজাতির মাছের ওপর গবেষণা করে দেখেছি, সমুদ্রে মাছের প্রজনন মৌসুম শুরু হয় মধ্য এপ্রিল থেকে, যা পুরোপুরি মিলে যাচ্ছে ভারতের সঙ্গে। তাই আমরা সুপারিশ করেছি ভারতের সঙ্গে মিল রেখে বাংলাদেশের অংশেও নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার।’

এ বিষয়ে মৎস্য অধিদপ্তরের মহা পরিচালক খ. মাহবুবুল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বাংলাদেশ ও ভারতের জয়েন্ট ওয়ার্কিং সভায় আলোচনা করে ভবিষ্যতে নিষেধাজ্ঞা সময়কাল নির্ধারণ করা হবে। এ নিয়ে ভারতের সঙ্গে আমাদের সমন্বিত কাজ চলছে। যেহেতু এতে আইনগত কোনো সমস্যা নেই, সে ক্ষেত্রে উভয় দেশ একত্রে নিষেধাজ্ঞা হতে পারে।’

তিনি আরও জানান, ‘জয়েন্ট ওয়ার্কিং সভায় ভারত সরকারকেও অনুরোধ করব, তারা যেন আমাদের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয়। আশা করছি, আগামী বছর থেকে আমরা ভারতের সঙ্গে মিল রেখেই বাংলাদেশের সমুদ্রে নিষেধাজ্ঞা দিতে পারব। এতে বাংলাদেশ লাভবান হবে।’

এদিকে নিষেধাজ্ঞাকাল পুনর্নির্ধারণের খবর পেয়ে জেলেরাও আনন্দিত। বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার দাবি ছিল শুরু থেকেই। এ নিয়ে অনেক আন্দোলন করেছেন জেলেরা। অবশেষে জেলেদের দাবি পূরণ হচ্ছে। এর মাধ্যমে দেশে মৎস্য সম্পদ রক্ষার জন্য সরকারের পদক্ষেপ সার্থক হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত