Ajker Patrika

হোলি আর্টিজানের ঘটনায় ‘জঙ্গি সন্দেহে’ আটক ছিলেন অনিন্দ্য, রাজশাহীর সাবেক মেয়র লিটনের চাচাতো ভাই তিনি

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
আপডেট : ১৬ আগস্ট ২০২৫, ২১: ১৭
অনিন্দ্য ও রাজশাহীর সাবেক মেয়র লিটন। ছবি: সংগৃহীত
অনিন্দ্য ও রাজশাহীর সাবেক মেয়র লিটন। ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার মামলা থেকে পার পেয়ে যাওয়া মুনতাসিরুল আলম অনিন্দ্যকে (৩৩) আটক করেছে যৌথ বাহিনী। আজ শনিবার ভোররাত থেকে বেলা সাড়ে ৩টা পর্যন্ত রাজশাহী নগরের কাদিরগঞ্জ এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাঁকে আটক করা হয়।

অনিন্দ্যের বাবা শফিউল আলম লাট্টু রাজশাহী মহানগর বিএনপির সাবেক সহসভাপতি। তিনি জাতীয় ৪ নেতার অন্যতম প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা এ এইচ এম কামারুজ্জামানের ভাই। সে হিসেবে অনিন্দ্য রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) সাবেক মেয়র খায়রুজ্জামান লিটনের চাচাতো ভাই। অনিন্দ্য ‘ডক্টর ইংলিশ’ নামে একটি কোচিং সেন্টার পরিচালনা করেন। প্রতিষ্ঠানটি যে জায়গায় অবস্থিত সেটি লিটনদের পৈতৃক বাড়ি।

আজ ভোররাতে সেনাবাহিনী ও পুলিশের সদস্যরা কোচিং সেন্টারটি ঘেরাও করেন। এরপর অনিন্দ্যকে আটক করা হয়। এ ছাড়া মো. রবিন ও মো. ফয়সাল নামে অনিন্দ্যের দুই ‘সহযোগীকেও’ আটক করা হয়। তাঁরা অনিন্দ্যের কোচিং সেন্টারে চাকরি করতেন বলে স্বজনেরা দাবি করেছেন। বেলা সাড়ে ৩টার দিকে তাঁদের কোচিং সেন্টারটি থেকে নিয়ে যাওয়া হয়।

এর আগে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, অভিযানে তিনটি আগ্নেয়াস্ত্র, গুলি; সামরিক মানের দুরবিন ও স্নাইপার স্কোপ; ছয়টি দেশীয় অস্ত্র, সাতটি বিদেশি ধারালো ডেগার, পাঁচটি উন্নতমানের ওয়াকিটকি সেট, একটি সামরিক মানের জিপিএস, একটি টিজার গান, বিভিন্ন দেশি-বিদেশি কার্টিজ, বিপুলসংখ্যক অব্যবহৃত সিম কার্ড, বোমা তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জাম, ছয়টি কম্পিউটার সেট, দেশি-বিদেশি মদ এবং ১১টি নাইট্রোজেন কার্টিজ জব্দ করা হয়েছে। নাইট্রোজেন কার্টিজগুলো বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে।

রাজশাহীতে দুই সহযোগীসহ গ্রেপ্তার হয়েছেন মোস্তাসেরুল আলম অনিন্দ্য (সবার ডানে)। ছবি: আজকের পত্রিকা
রাজশাহীতে দুই সহযোগীসহ গ্রেপ্তার হয়েছেন মোস্তাসেরুল আলম অনিন্দ্য (সবার ডানে)। ছবি: আজকের পত্রিকা

অভিযান চলাকালে অনিন্দ্য জানান, একটি অস্ত্র তিনি পার্শ্ববর্তী পুকুরে ফেলে দিয়েছেন। সেটি উদ্ধারে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল এনে পুকুরের তলদেশে তল্লাশি চালানো হয়। তবে সেটি পাওয়া যায়নি। এক মাসের গোয়েন্দা নজরদারির পর এ অভিযান চালানো হয় বলে সেনাবাহিনী জানিয়েছে।

অনিন্দ্য ২০১৬ সালের এপ্রিলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক এ এফ এম রেজাউল করিম সিদ্দিকী হত্যাকাণ্ড এবং একই বছরের জুলাইয়ে গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার ঘটনায় ‘সন্দেহভাজন’ জঙ্গি হিসেবে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। সে সময় আলোচিত এ দুটি ঘটনায় অনিন্দ্যের সম্পৃক্ততা পেয়েছিলেন গোয়েন্দারা।

ঢাকার হোলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা ও অধ্যাপক এ এফ এম রেজাউল করিম সিদ্দিকী হত্যার ঘটনায় সরাসরি যুক্ত রাজশাহীর বাগমারার শরিফুল ইসলাম (মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি) ও অনিন্দ্য একসঙ্গে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের পড়াশোনা করতেন। ওই দুটি ঘটনার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, অনিন্দ্য জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের দায়িত্বশীল নেতা।

শিক্ষক হত্যা ও হোলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার ঘটনায় তিনি পরিকল্পনা, অস্ত্র ও বিস্ফোরক সংগ্রহ, জঙ্গি নির্বাচন প্রশিক্ষণের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ সামনে আসে। শিক্ষক রেজাউল হত্যা মামলায় তিনি গ্রেপ্তারও হয়েছিলেন। কয়েক দফা রিমান্ডেও নেওয়া হয়েছিল তাঁকে। এ ছাড়া হোলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদ করতে তাঁকে ঢাকায় নেওয়া হয়েছিল। তবে রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে দুটি মামলা থেকেই রেহাই পেয়ে যান।

ওই দুটি ঘটনার পর গোয়েন্দারা জানতে পারেন, রাজশাহীর পদ্মা আবাসিক ও সাহেববাজারের জিরোপয়েন্টের ন্যাশনাল ব্যাংকের ওপরে আনসার আল ইসলামের প্রধান তামিম চৌধুরীর সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেন অনিন্দ্য। এ নিয়ে তখন রাজনৈতিক অঙ্গনে তোলপাড় চলে। পরবর্তী সময় অনিন্দ্যের একসময়ের সহপাঠী শরিফুল ইসলাম দিল্লিতে এনআইএর কাছে গ্রেপ্তার হন। তিনি ভারতীয় গোয়েন্দাদের জানিয়েছিলেন, সহপাঠী অনিন্দ্যের মাধ্যমেই তিনি আনসার আল ইসলামে যোগ দিয়েছিলেন। অনিন্দ্য তাঁদের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা।

অনিন্দ্যকে কোচিং সেন্টার থেকে নিয়ে যাওয়ার সময় তাঁর মা তহমিনা চৌধুরী এসেছিলেন। তবে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেননি। অনিন্দ্যের সহযোগী হিসেবে গ্রেপ্তার হওয়া রবিনের মা নাসরিন খাতুন দাবি করেন, তাঁর ছেলে কোচিং সেন্টারসংলগ্ন মসজিদের মুয়াজ্জিন। মসজিদের পাশেই কোচিং সেন্টার বলে অনিন্দ্য তাঁকে মাসখানেক আগে কোচিং সেন্টার দেখাশোনার জন্যও নিয়োজিত করেন। আটক ফয়সালের ভাই মো. ফারুক দাবি করেন, তাঁর ভাই আগে মসজিদের খাদেম ছিলেন। পরে কোচিং সেন্টারে অফিস সহকারী হিসেবে চাকরি নেন। রবিন ও ফয়সাল সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত নয় বলে তাঁরা দাবি করেন।

এ বিষয়ে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান বলেন, ‘সেনাবাহিনী ও পুলিশের কুইক রেসপন্স টিম যৌথভাবে অভিযান চালিয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্রদের বিপক্ষে আটককৃতদের অবস্থান ছিল। সেসব মামলাতেও তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হবে। পাশাপাশি অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে আলাদা মামলা করা হবে।’

অনিন্দ্যের জঙ্গি সম্পৃক্ততার বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘এটা আমরা যাচাই করে দেখব। রিমান্ডে নেওয়া হবে, তখন জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। অভিযানে অস্ত্র ও বিস্ফোরক পেয়েছি, তারা যে সাধারণ মাপের অপরাধী না, সেটা বোঝাই যাচ্ছে। তাদের কোনো পরিকল্পনাও থাকতে পারে। এদের সঙ্গে আর কারও সংযোগ আছে কি না, সেটাও দেখা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

শাস্তি পাচ্ছেন বিটিআরসির মহাপরিচালকসহ ৩০ জনের বেশি কর্মকর্তা

হোলি আর্টিজানের ঘটনায় ‘জঙ্গি সন্দেহে’ আটক ছিলেন অনিন্দ্য, রাজশাহীর সাবেক মেয়র লিটনের চাচাতো ভাই তিনি

‘তেলের ক্রেতা’ হিসেবে ভারতকে আর পাবে না রাশিয়া, জানালেন ডোনাল্ড ট্রাম্প

সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান: ভারতীয় দুই কোম্পানির ব্যাংক গ্যারান্টি প্রত্যাহার করল বাংলাদেশ

মহিলা মাদ্রাসা থেকে দুই শিশু শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত