Ajker Patrika

জন্মাষ্টমী উৎসব

সব সময় পাশে থাকব, আপনারা নিশ্চিন্তে এ দেশে বসবাস করবেন: সেনাপ্রধান

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১৬ আগস্ট ২০২৫, ২২: ২৫
সব সময় পাশে থাকব, আপনারা নিশ্চিন্তে এ দেশে বসবাস করবেন: সেনাপ্রধান

সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেছেন, বাংলাদেশে ধর্ম, জাতি, বর্ণ ও গোত্রের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ থাকবে না। এই দেশের ওপর সব নাগরিকের অধিকার আছে। রাজধানীতে হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্মাষ্টমী উৎসবে অংশ নিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘আপনারা নিশ্চিন্তে এ দেশে বসবাস করবেন। আমরা সব সময় আপনাদের পাশে থাকব।’

আজ শনিবার বিকেলে পলাশী মোড়ে জন্মাষ্টমীর উৎসব ও মিছিলে ‘সম্মানিত অতিথি’ ছিলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। তাঁর সঙ্গে এই উৎসবে সম্মানিত অতিথি হিসেবে আরও ছিলেন নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল এম নাজমুল হাসান, বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন ও নবম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি (জেনারেল অফিসার কমান্ডিং) মেজর জেনারেল মো. মঈন খান।

জন্মাষ্টমীর উৎসব ও কেন্দ্রীয় মিছিলের আয়োজক বাংলাদেশ পূজা উদ্‌যাপন পরিষদ, মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটি ও শ্রীশ্রী ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির।

এই উৎসবে নৌবাহিনীর প্রধান, বিমানবাহিনীর প্রধান ও নবম পদাতিক ডিভিশনের জিওসির নাম উল্লেখ করে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, ‘আমরা সবাই মিলে, আমরা সব সময় আপনাদের পাশে থাকব।...আপনারা নিশ্চিন্তে এ দেশে বসবাস করবেন। আপনাদের যত ধর্মীয় পরব (অনুষ্ঠান), আপনারা উদ্‌যাপন করবেন, আনন্দ উদ্‌যাপন করবেন। আমরা একসঙ্গে এই আনন্দ ভাগাভাগি করে নেব।’

জন্মাষ্টমীর উৎসবে বক্তব্য দিচ্ছেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। রাজধানীর পলাশী মোড়। ১৬ আগস্ট ছবি: আইএসপিআর
জন্মাষ্টমীর উৎসবে বক্তব্য দিচ্ছেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। রাজধানীর পলাশী মোড়। ১৬ আগস্ট ছবি: আইএসপিআর

জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, শত শত বছর ধরে হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, বাঙালি, পাহাড়ি, উপজাতি—সবাই মিলে এই দেশে অত্যন্ত শান্তিতে ও সম্প্রীতির সঙ্গে বসবাস করছে।

সেনাপ্রধানের বক্তব্যের আগে নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল এম নাজমুল হাসান বলেন, জন্মাষ্টমী কেবল একটি ধর্মীয় উৎসব নয়; বরং শান্তি, সম্প্রীতি এবং মানবতার এক উদাত্ত আহ্বানও। শ্রীকৃষ্ণের শিক্ষা-জীবনাদর্শ শুধু অসত্য-অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর সাহসই জোগায় না, একই সঙ্গে অসহায়-আর্তমানবতার পাশে দাঁড়াতে এবং সমাজে সাম্য, ভ্রাতৃত্ব, সহনশীলতা ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় গভীরভাবে অনুপ্রাণিত করে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে জন্মাষ্টমীসহ সব ধর্মীয় অনুষ্ঠান এবং সার্বিকভাবে জনগণের নিরাপত্তা ও সেবায় নিয়োজিত থাকার কথা জানান অ্যাডমিরাল এম নাজমুল হাসান। তিনি বলেন, জন্মাষ্টমীর এই শোভাযাত্রা আবারও বিশ্বের কাছে প্রমাণ করবে, বাংলাদেশ একটি শান্তি ও সম্প্রীতির দেশ। যেখানে ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সবাই একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।

নৌবাহিনীর প্রধান বলেন, ‘লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা যে দেশ পেয়েছি, যে স্বাধীনতা পেয়েছি, সেই স্বাধীনতাকে রক্ষা করা আমাদের সবার পবিত্র দায়িত্ব। আর এই দেশকে আগামী প্রজন্মের জন্য একটি সুখী ও সমৃদ্ধিশালী দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে আমরা সবাই বদ্ধপরিকর।’

জন্মাষ্টমীর উৎসবে বক্তব্য দিচ্ছেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। রাজধানীর পলাশী মোড়। ১৬ আগস্ট ছবি: আইএসপিআর
জন্মাষ্টমীর উৎসবে বক্তব্য দিচ্ছেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। রাজধানীর পলাশী মোড়। ১৬ আগস্ট ছবি: আইএসপিআর

শ্রীকৃষ্ণের জীবনাদর্শ সম্পর্কে বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন তাঁর বক্তব্যে বলেন, সত্যের পথে অটল থাকতে হবে। অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে সাহসিকতার সঙ্গে রুখে দাঁড়াতে হবে। সবার সঙ্গে সৌহার্দ্য, সহমর্মিতা ও ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে।

পুরান ঢাকায় বেড়ে উঠেছেন, এই কথা জানিয়ে বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন বলেন, ‘এখান (পলাশীর মোড়) থেকে বেশি দূরে না, এই জয়কালী মন্দিরের পাশেই আমার বাসা ছিল এবং লক্ষ্মীবাজারে বড় হয়েছি। আমার লেখাপড়া ওখানেই। তো আমার অনেক বন্ধুবান্ধব হিন্দু সম্প্রদায়ে আছে। এখনো তাঁদের সঙ্গে আমার যোগাযোগ আছে, ওঠাবসা আছে। খ্রিষ্টানও আছে। এবং আমরা ছোটবেলা থেকেই একটা সম্প্রীতির মাধ্যমে বড় হয়ে উঠেছি, যেখানে আমরা কখনো ধর্ম নিয়ে ভেদাভেদ করিনি।’

শান্তি ও উন্নতির জন্য ঐক্য অপরিহার্য বলে উল্লেখ করেন বিমানবাহিনীর প্রধান।

জন্মাষ্টমী উৎসব ও মিছিল উপলক্ষে পলাশী মোড়ের এই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব। তিনি বলেন, সেনাবাহিনীর প্রধান, নৌবাহিনীর প্রধান ও বিমানবাহিনীর প্রধানের কোনো ধর্মীয় অনুষ্ঠানে একসঙ্গে উপস্থিত হওয়া একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। তিনি বলেন, ‘আমরা চাই সেই বাংলাদেশ, যে বাংলাদেশে হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান পাশাপাশি থাকবে।...ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার।’

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর, ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিচালনা কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সুব্রত চৌধুরী। মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির সাধারণ সম্পাদক তাপস চন্দ্র পাল অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন।

জন্মাষ্টমীর উৎসবে বক্তব্য দিচ্ছেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। রাজধানীর পলাশী মোড়। ১৬ আগস্ট ছবি: আইএসপিআর
জন্মাষ্টমীর উৎসবে বক্তব্য দিচ্ছেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। রাজধানীর পলাশী মোড়। ১৬ আগস্ট ছবি: আইএসপিআর

ধর্মীয় গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশনের পর আলোচনা পর্ব শুরু হয়। আলোচনা শেষে প্রদীপ প্রজ্বালনের মাধ্যমে জন্মাষ্টমীর কেন্দ্রীয় মিছিলের উদ্বোধন করেন সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী প্রধানেরা। তাঁদের সঙ্গে নবম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি এবং জন্মাষ্টমী উৎসবের আয়োজকেরাও প্রদীপ প্রজ্বালনে অংশ নেন।

পলাশীর মোড় থেকে শুরু হওয়া জন্মাষ্টমীর বর্ণাঢ্য এই মিছিল বিভিন্ন সড়ক ঘুরে পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কে গিয়ে শেষ হয়। এই মিছিলে সনাতন ধর্মাবলম্বী হাজারো নারী-পুরুষ অংশ নেন। মিছিলে মা-বাবার সঙ্গে শিশুরাও ছিল। তাদের অনেকে এসেছিল বর্ণিল সাজে। কেউ রাধা, কেউ কৃষ্ণ সেজে এসেছিল। এই মিছিলে শ্রীকৃষ্ণের রথ টেনে নিয়ে গেছে একটি হাতি।

সনাতন ধর্মের মানুষ বিশ্বাস করেন, পাশবিক শক্তি যখন ন্যায়নীতি, সত্য ও সুন্দরকে গ্রাস করতে উদ্যত হয়েছিল, তখন সেই শক্তিকে দমন করে মানবজাতির কল্যাণ এবং ন্যায়নীতি প্রতিষ্ঠার জন্য মহাবতার ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব ঘটেছিল। আজ শ্রীকৃষ্ণের শুভ জন্মতিথি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

শাস্তি পাচ্ছেন বিটিআরসির মহাপরিচালকসহ ৩০ জনের বেশি কর্মকর্তা

হোলি আর্টিজানের ঘটনায় ‘জঙ্গি সন্দেহে’ আটক ছিলেন অনিন্দ্য, রাজশাহীর সাবেক মেয়র লিটনের চাচাতো ভাই তিনি

‘তেলের ক্রেতা’ হিসেবে ভারতকে আর পাবে না রাশিয়া, জানালেন ডোনাল্ড ট্রাম্প

সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান: ভারতীয় দুই কোম্পানির ব্যাংক গ্যারান্টি প্রত্যাহার করল বাংলাদেশ

মহিলা মাদ্রাসা থেকে দুই শিশু শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত