Ajker Patrika

জুলাই জাতীয় সনদ

দলগুলোর মতানৈক্য কমাতে উদ্যোগ নেবে সরকার

  • ১৫ অক্টোবর সনদ স্বাক্ষরের ঘোষণা ঐকমত্য কমিশনের।
  • দলগুলোর সঙ্গে কমিশনের অনানুষ্ঠানিক সংলাপ এখনো চলবে।
  • সরকারের পক্ষ থেকেও আলোচনার তাগিদ দেবে কমিশন।
তানিম আহমেদ, ঢাকা 
আপডেট : ১০ অক্টোবর ২০২৫, ০৮: ২৭
দলগুলোর মতানৈক্য কমাতে উদ্যোগ নেবে সরকার

১৫ অক্টোবর জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষরিত হবে বলে ঘোষণা দিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। কিন্তু এই সদন বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে দলগুলোর মতভেদ এখনো স্পষ্ট। দফায় দফায় বৈঠক করেও এর সুরাহা করতে পারেনি কমিশন। এখন তারা বাস্তবায়নের পথরেখা সুপারিশ করে সরকারকে প্রতিবেদন দেবে। এরপর সরকারই দলগুলোর মধ্যে মতানৈক্য কমাতে উদ্যোগ নেবে বলে জানা গেছে।

ঐকমত্য কমিশন গতকাল বৃহস্পতিবার বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, ১৫ অক্টোবর জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় সনদের স্বাক্ষর অনুষ্ঠান হবে। এতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এবং ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জোটের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন। গতকাল কমিশনের সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়েছে।

গতকালের বৈঠকে কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ইফতেখারুজ্জামান ও মো. আইয়ুব মিয়া উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া ঐকমত্য গঠন প্রক্রিয়ায় যুক্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারও সভায় অংশ নেন।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সভায় জুলাই সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কমিশনের ৫টি বৈঠকে পাওয়া মতামত বিশ্লেষণ করা হয়। আশা প্রকাশ করা হয়, বিশেষজ্ঞ এবং রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে পাওয়া অভিমতসমূহ বিশ্লেষণ করে শিগগির বাস্তবায়নের উপায়-সংক্রান্ত সুপারিশ এবং চূড়ান্ত জুলাই সনদ সরকারের কাছে জমা দেওয়া হবে।

স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অংশ নিতে সংলাপে অংশ নেওয়া ৩০টি রাজনৈতিক দল ও জোটকে দুজন করে প্রতিনিধির নাম পাঠাতে বলে কমিশন। এরই মধ্যে অধিকাংশ রাজনৈতিক দল নাম পাঠিয়েছে। এরই মধ্যে স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের বিষয়ে বিএনপি, জামায়াত, জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) কয়েকটি দলের সঙ্গে কমিশনের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়, যাতে দলগুলো ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে বলে কমিশন সূত্র জানিয়েছে।

সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সর্বশেষ দফায় গত বুধবার সংলাপে বসে কমিশন। সেদিনের আলোচনায় কোনো সমাধান না হওয়ায় কমিশনের পক্ষ থেকে বলা

হয়, বিশেষজ্ঞ ও রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতে অন্তর্বর্তী সরকারকে একটি প্যাকেজ প্রস্তাব দেওয়া হবে। কমিশনের প্রস্তাবের মধ্যে থাকবে প্রথমে বিশেষ আদেশ জারি করা, যার ভিত্তিতে গণভোট অনুষ্ঠিত হবে এবং পরবর্তী জাতীয় সংসদকে দ্বৈত ভূমিকায় নিয়ে যাওয়া। এই সংসদ একই সঙ্গে সংবিধান সংস্কার পরিষদ সভা এবং নিয়মিত জাতীয় সংসদের ভূমিকা পালন করবে। জানা গেছে, বিশেষ আদেশের মধ্যেই সংসদকে কত দিনের জন্য দ্বৈত ভূমিকা দেওয়া হবে, সেটিও উল্লেখ থাকবে। কিন্তু গণভোটের দিনক্ষণ কমিশন সরকারের ওপর ছেড়ে দেবে।

এদিকে সনদ বাস্তবায়নের বিভিন্ন সম্ভাব্য পদ্ধতি নিয়ে ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ পেলে সরকার বিবেচনা করবে ও মতামত দেবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের বন, পরিবেশ ও জলবায়ু উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, মানসম্মত গণতন্ত্রে উত্তরণের পথে মতপার্থক্য থাকাটা স্বাভাবিক। কমিশনের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার সেই মতপার্থক্য কমিয়ে আনার কী উদ্যোগ নিতে পারে, তা বিবেচনা করবে।

সরকারের একটি সূত্র জানিয়েছে, আনুষ্ঠানিক সংলাপ শেষ হলেও ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ শেষ না হওয়ায় দলগুলোর সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক সংলাপ করবে তারা। একই সঙ্গে সরকারের পক্ষ থেকে দলগুলোকেও অনানুষ্ঠানিক আলোচনা চালিয়ে যেতে উৎসাহিত করা হচ্ছে; যাতে নোট অব ডিসেন্ট কমিয়ে আনা যায়। সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বে (পিআর) উচ্চকক্ষসহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে নোট অব ডিসেন্ট কমিয়ে আনা গেলে গণভোটের দিনক্ষণ নিয়ে দলগুলো এক জায়গায় আসবে।

জানা গেছে, সর্বশেষ ধাপের সংলাপে জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলনসহ ইসলামপন্থী দলগুলো ভোটের আগেই গণভোট করার দাবি জানিয়েছে। তাদের যুক্তি হচ্ছে, জুলাই সনদের গুরুত্ব, একসঙ্গে গণভোট ও জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে ভোটের দিন দ্বিগুণ সময়ের পাশাপাশি সাধারণ মানুষ জটিল পরিস্থিতিতে পড়তে পারে। অন্যদিকে বিএনপি, গণতন্ত্র মঞ্চসহ অন্য দলগুলো ভোটের দিন গণভোটের দাবি করছে। তাদের যুক্তি হচ্ছে, গণভোট আগে হলে জাতীয় নির্বাচন বিলম্বিত হতে পারে। একই সঙ্গে বিভিন্ন শক্তি ভোটের দিন অরাজকতা করে দেশকে অস্থিতিশীল করবে।

দলগুলোর মতানৈক্যের কারণে সংস্কার কার্যক্রম থমকে যেতে পারে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘সংস্কার প্রশ্নে অনেক ক্ষেত্রেই ঐকমত্য হয়েছে। চূড়ান্তভাবে ঐকমত্যে পৌঁছানো বাকি বাস্তবায়নের পথ নিয়ে। আমাদের উদ্যোগ নয়, জনগণের দাবি আর রাজনৈতিক দলের অঙ্গীকার, ফলে বাস্তবায়নের দায়িত্ব সবারই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত