হাবিবুর রনি
প্রশ্ন: বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৫তম উপাচার্য হিসেবে আপনি নিযুক্ত হয়েছেন। নতুন এই দায়িত্ব সামলানোর পরিকল্পনা কী?
এমদাদুল হক: আপনি পরিকল্পনার কথা বলেছেন। আমার পরিকল্পনা একটাই। ৪ বছর পরে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যে গ্র্যাজুয়েট তৈরি হবে, তারা যেন আদর্শ মানের এবং গ্লোবাল গ্র্যাজুয়েটে পরিণত হয়। তাদের নামটি শুধু যেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থাকে বরং তারা যেন বিশ্বের যেকোনো দেশে যেকোনো পরিস্থিতিতে নিজেকে খাপ খাওয়াতে পারে। চার বছর পর এ রকম গ্র্যাজুয়েট তৈরি করতে চাই, এটাই আমার মূল পরিকল্পনা।
প্রশ্ন: শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন কী ভাবছেন?
এমদাদুল হক: ওই তো বললাম, আমার পরিকল্পনা হচ্ছে গ্লোবাল গ্র্যাজুয়েট তৈরি করা এবং সেই গ্লোবাল গ্র্যাজুয়েট তৈরি করতে গেলে শিক্ষার্থীদের সেভাবেই প্রস্তুত করতে হবে। শিক্ষা কখনোই একপক্ষীয় নয়। শিক্ষকেরা শেখান, ছাত্ররা শেখে এবং তার জন্য একটি পরিবেশ প্রয়োজন হয়। সুন্দর পরিবেশ না হলে শিক্ষাটা সুন্দর হয় না। পরিবেশের পাশাপাশি ভালো উপকরণও লাগে। কাজেই আমার ভাবনা হচ্ছে, ছাত্রদের শেখানোর জন্য যা যা উপকরণ প্রয়োজন, যে ধরনের পরিবেশ দরকার, সেই পরিবেশ নিশ্চিত করা। মানসম্মত শিক্ষার পরিবেশটা তৈরি করে দিতে চাই।
প্রশ্ন: বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামোগত উন্নয়নের পরিকল্পনা কী?
এমদাদুল হক: আপনারা জেনে খুশি হবেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বড় অঙ্কের একটি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) এসেছে। যখন আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা পরিচালক হিসেবে নিযুক্ত ছিলাম, ৬৬০ কোটি টাকা বাজেটের ডিপিপির এ প্রকল্প পাস হয়। দায়িত্বে থাকাকালীন অনেক কাজই শুরু করেছিলাম। কিন্তু পরবর্তী পর্যায়ে করোনার প্রকোপসহ বিভিন্ন কারণে কাজটা আমরা সঠিকভাবে সম্পূর্ণ করতে পারিনি। তবে আশার কথা হচ্ছে, ওই প্রকল্প আবার সংশোধিত হয়ে অনুমোদন পেতে যাচ্ছে। খুব কাছাকাছি একটা সময়ে একনেকে সংশোধিত বাজেটটি উপস্থাপিত হবে এবং প্রকল্পটি একটি বৃহৎ আকারে হবে। যদি আমরা এটি বাস্তবায়ন করতে পারি, তাহলে আমার বিশ্বাস যে খুবই আকর্ষণীয় ও দর্শনীয় কতগুলো একাডেমিক ভবন থেকে শুরু করে শিক্ষার্থীদের জন্য ল্যাবরেটরি, আবাসিক হল, নতুন টিএসসিসহ সবকিছুই তৈরি হবে এখানে। শিক্ষার আন্তর্জাতিক মানের একটা পরিবেশ তৈরি হবে, আমার ধারণা। শুধু তা-ই নয়, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) সহায়তায় আরও একটি বৃহৎ প্রকল্প আমাদের বাকৃবিতে বাস্তবায়িত হবে। এটির একেবারেই দোরগোড়ায় আমরা চলে এসেছি। ৪ বছর সময় কম না একেবারেই। আমার বিশ্বাস, এই চার বছরে এই দুটো প্রকল্প যদি বাস্তবায়িত হয়ে যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামোগত একটি আমূল পরিবর্তন আমরা দেখতে পারব। আমি আশাবাদী মানুষ। আমার ধারণা, আমি পারব।
প্রশ্ন: বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রী হলের সিট সংকট রয়েছে। এ সমস্যা সমাধানে আপনারা কোনো উদ্যোগ হাতে নিয়েছেন কি?
ড. এমদাদুল হক: আপনারা দেখলে দেখতে পাবেন, তিনটি ছাত্রী হলের কাজ কিন্তু ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে এবং চলমান আছে। একটি হচ্ছে ‘রোজী জামাল’ হল, যেটির দোতলা পর্যন্ত সম্পন্ন হয়ে গেছে। এ বছরের শেষ দিকে এটি চারতলা কিংবা পাঁচতলা পর্যন্ত হয়ে যাওয়ার কথা। এ ছাড়া বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের আবাসিক এলাকার পেছনে ছাত্রীদের আরও দুটি—শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা হলের কাজ শুরু হয়েছে। এ দুটি আবাসিক হলে প্রায় ২ হাজার ৪০০ ছাত্রীর আবাসন হবে। নির্মাণকাজ তো আর হঠাৎ করে সম্পন্ন হয়ে যায় না, একটু সময় লাগে। আমি আশাবাদী, আগামী ২ থেকে ৩ বছরের মধ্যে আমরা প্রায় ৩ হাজার ছাত্রীর আবাসনব্যবস্থা করতে সক্ষম হব। সেই সঙ্গে ছাত্রদের থাকার জন্যও নতুন একটি ১০ তলা ভবনের কাজ শুরু হবে এবং সেখানে প্রায় ১ হাজার ২০০ ছাত্রের নতুন আবাসনব্যবস্থা তৈরি হবে।
প্রশ্ন: বাকৃবির বেশির ভাগ হলে ডাইনিং ও ক্যানটিন চালু নেই। এ ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নেবেন কি না?
ড. এমদাদুল হক: আমি শুনেছি এবং ইতিমধ্যে উদ্যোগও নিয়েছি। হলের প্রভোস্ট মহোদয়দের ডেকেছিলাম একদিন। তাঁদের সঙ্গে মিটিং হয়েছে। তাঁদের বলেছি, যেকোনো মূল্যে হলে ছাত্রদের ডাইনিংয়ে খাওয়াটা নিশ্চিত করতে হবে। তাঁরা ডাইনিং ও ক্যানটিন দ্রুত চালু করার ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে আমি আশাবাদী।
প্রশ্ন: বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোয় দ্রুতগতির ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা চালু নেই। এ ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ?
ড. এমদাদুল হক: ব্রডব্যান্ড সেবা চালু নেই হলগুলোয়, কিন্তু ইন্টারনেট চালু আছে। একসঙ্গে অনেক ব্যবহারকারী হওয়ার ফলে ইন্টারনেটে গতি ধীর আছে। তবে শুনে খুশি হবেন, ইতিমধ্যেই ইউজিসির সহায়তায় খুব অল্প সময়ের মধ্যে সব আবাসিক হলে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ হয়ে যাবে। আমি ইতিমধ্যে সেটির অনুমতি দিয়ে দিয়েছি এবং আমাদের যে আইটি পরিচালক আছেন, তিনি জানিয়েছেন, খুব অল্প সময়ের মধ্যে এই কাজগুলো শুরু হবে।
প্রশ্ন: অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বাকৃবির বর্তমান শিক্ষার্থীরা বিসিএসকেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে বলে শোনা যায়। শিক্ষার্থীদের গবেষণামুখী করতে আপনার পরিকল্পনা কী?
ড. এমদাদুল হক: এটি আসলেই ভাববার বিষয়। আমি অনেক সময় ক্লাসে শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করার চেষ্টা করি, বিসিএসে আমাদের জন্য একটা সুযোগ। বাট দিস ইজ নট অনলি ওয়ান অপরচুনিটি। ৫ শতাংশ কিংবা তার চেয়েও কমসংখ্যক ছেলেমেয়ে বিসিএসে প্রবেশের সুযোগ পায়। বাকি ৯৫ শতাংশকে কিন্তু অন্যান্য জব সেক্টরে প্রবেশ করতে হচ্ছে। কাজেই আমি মনে করি, শিক্ষার্থীদের বিসিএসের পাশাপাশি একজন আদর্শ কৃষিবিদ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করা উচিত। শিক্ষার্থীদের কীভাবে গবেষণামুখী কিংবা সাবজেক্ট ওরিয়েন্টেড পড়াশোনার দিকে ফিরিয়ে আনা যায়, সেটি এখন আমাদের ভাবনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
প্রশ্ন: ৬২ পেরিয়ে ৬৩ বছরে পা দিচ্ছে স্বনামধন্য এই বিশ্ববিদ্যালয়। এত বছরে মাত্র ৮টি সমাবর্তন সম্পন্ন হয়েছে। এই ৪ বছরে সমাবর্তন আয়োজনে আপনার পরিকল্পনা কী?
ড. এমদাদুল হক: আমার ৪ বছরের সময়ে একটা সমাবর্তন করার চেষ্টা করব। কিছুদিন আগেই একটা সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। আমি চাইলেও এখন আরেকটা সমাবর্তন আয়োজন করতে পারব না। তবে এটি শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর নয়, বরং মহামান্য রাষ্ট্রপতি এবং অন্য অনেক বিষয়ের ওপর নির্ভর করবে।
প্রশ্ন: বর্তমানে বাকৃবির শিক্ষকদের মাঝে দলীয় রাজনীতি ও কোন্দলের অভিযোগ পাওয়া গেছে, যার প্রভাব পড়ছে শিক্ষার্থীদের মাঝে। আপনি কি মনে করেন শিক্ষকেরা পাঠদান ও গবেষণা থেকে রাজনীতিতে সময় বেশি ব্যয় করছেন?
ড. এমদাদুল হক: এটা আমার কাছে মনে হয় না। কারণ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি আমি দেখি, বেশির ভাগ শিক্ষকই খুব গবেষণামুখী, প্রতিদিনই আন্তর্জাতিক জার্নালগুলোয় আমাদের শিক্ষকদের রিসার্চ পেপার পাবলিশ হচ্ছে। কাজেই তাঁরা গবেষণা থেকে পিছিয়ে বা রাজনীতিতে বেশি ঝুঁকে পড়ছেন, এটা আমার কাছে মনে হয় না। আর ক্লাস-পরীক্ষার কথা যদি বলি, সেখানে আমাদের শিক্ষকেরা খুবই নিয়মানুবর্তী। নিজের দীর্ঘ শিক্ষকতা জীবনে এমন কোনো রেকর্ড নেই যে পাঁচ মিনিট পরে আমি একটা ক্লাসে গিয়ে উপস্থিত হয়েছি। তবে হ্যাঁ, দুই-চারজন শিক্ষক যে থাকবে না, সেটা আমি বলব না। সেটা সব জায়গায়ই থাকে। এখানেও থাকতে পারে আবার না-ও পারে। কিন্তু আমি একদমই একমত না যে এখানকার শিক্ষকেরা পড়াশোনা বা গবেষণা বাদ দিয়ে রাজনীতির দিকে বেশি সময় ব্যয় করেন।
প্রশ্ন: বাকৃবির শিক্ষার মান ও পরিবেশ উন্নয়নের ব্যাপারে আপনার পরিকল্পনা কী?
ড. এমদাদুল হক: ছাত্র, শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী এবং এলাকাবাসী সবাইকে নিয়েই আমি ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে চাই। কারণ এর মধ্যে কোনো একটা কম্পোনেন্টও যদি সহযোগিতা না করে তাহলে কিন্তু শিক্ষার পরিবেশটা বিঘ্নিত হবে। কাজেই সবার কাছ থেকে আমি সহযোগিতা চাই। সেই সঙ্গে আমাদের যে উন্নয়ন পরিকল্পনাগুলো আছে, সেগুলো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সব প্রতিবন্ধকতা দূর করতে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। আমি সবাইকে নিয়েই কাজ করতে চাই, এটিই আমার পরিকল্পনা।
প্রশ্ন: বাকৃবির অতীত ইতিহাসে দেখা গেছে, দায়িত্ব নেওয়ার পর অনেক উপাচার্যই অনেক আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু চার বছর পর সেই আশ্বাসগুলো আশ্বাসই থেকে যেতে দেখা গেছে। আপনার ক্ষেত্রেও কি এ রকমটি হওয়ার আশঙ্কা আছে?
ড. এমদাদুল হক: প্রশ্নটার জবাব দেওয়া খুব কঠিন। কারণ আরও চার বছর পরের কথা আপনি কিন্তু চার বছর আগেই জিজ্ঞেস করে ফেললেন। আমি খুব পজিটিভ মানুষ। আমার সারা জীবনের কর্মকাণ্ড আপনি যদি হিসাব করে দেখেন, আমি সব সময় একটি নেগেটিভ জিনিসের মধ্যেও পজিটিভিটি খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করেছি। সবার সহযোগিতা পেলে আমি চেষ্টা করব। আমি কোনো প্রতিশ্রুতি দিইনি, শুধু আমার পরিকল্পনার কথা বলেছি। কারণ, প্রতিশ্রুতি আমার একার পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়। আমার পরিকল্পনাগুলো চার বছরের মধ্যে বাস্তবায়ন করতে চাই। এটাকে প্রতিশ্রুতি ভাবলে ভুল হবে।
প্রশ্ন: বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৫তম উপাচার্য হিসেবে আপনি নিযুক্ত হয়েছেন। নতুন এই দায়িত্ব সামলানোর পরিকল্পনা কী?
এমদাদুল হক: আপনি পরিকল্পনার কথা বলেছেন। আমার পরিকল্পনা একটাই। ৪ বছর পরে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যে গ্র্যাজুয়েট তৈরি হবে, তারা যেন আদর্শ মানের এবং গ্লোবাল গ্র্যাজুয়েটে পরিণত হয়। তাদের নামটি শুধু যেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থাকে বরং তারা যেন বিশ্বের যেকোনো দেশে যেকোনো পরিস্থিতিতে নিজেকে খাপ খাওয়াতে পারে। চার বছর পর এ রকম গ্র্যাজুয়েট তৈরি করতে চাই, এটাই আমার মূল পরিকল্পনা।
প্রশ্ন: শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন কী ভাবছেন?
এমদাদুল হক: ওই তো বললাম, আমার পরিকল্পনা হচ্ছে গ্লোবাল গ্র্যাজুয়েট তৈরি করা এবং সেই গ্লোবাল গ্র্যাজুয়েট তৈরি করতে গেলে শিক্ষার্থীদের সেভাবেই প্রস্তুত করতে হবে। শিক্ষা কখনোই একপক্ষীয় নয়। শিক্ষকেরা শেখান, ছাত্ররা শেখে এবং তার জন্য একটি পরিবেশ প্রয়োজন হয়। সুন্দর পরিবেশ না হলে শিক্ষাটা সুন্দর হয় না। পরিবেশের পাশাপাশি ভালো উপকরণও লাগে। কাজেই আমার ভাবনা হচ্ছে, ছাত্রদের শেখানোর জন্য যা যা উপকরণ প্রয়োজন, যে ধরনের পরিবেশ দরকার, সেই পরিবেশ নিশ্চিত করা। মানসম্মত শিক্ষার পরিবেশটা তৈরি করে দিতে চাই।
প্রশ্ন: বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামোগত উন্নয়নের পরিকল্পনা কী?
এমদাদুল হক: আপনারা জেনে খুশি হবেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বড় অঙ্কের একটি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) এসেছে। যখন আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা পরিচালক হিসেবে নিযুক্ত ছিলাম, ৬৬০ কোটি টাকা বাজেটের ডিপিপির এ প্রকল্প পাস হয়। দায়িত্বে থাকাকালীন অনেক কাজই শুরু করেছিলাম। কিন্তু পরবর্তী পর্যায়ে করোনার প্রকোপসহ বিভিন্ন কারণে কাজটা আমরা সঠিকভাবে সম্পূর্ণ করতে পারিনি। তবে আশার কথা হচ্ছে, ওই প্রকল্প আবার সংশোধিত হয়ে অনুমোদন পেতে যাচ্ছে। খুব কাছাকাছি একটা সময়ে একনেকে সংশোধিত বাজেটটি উপস্থাপিত হবে এবং প্রকল্পটি একটি বৃহৎ আকারে হবে। যদি আমরা এটি বাস্তবায়ন করতে পারি, তাহলে আমার বিশ্বাস যে খুবই আকর্ষণীয় ও দর্শনীয় কতগুলো একাডেমিক ভবন থেকে শুরু করে শিক্ষার্থীদের জন্য ল্যাবরেটরি, আবাসিক হল, নতুন টিএসসিসহ সবকিছুই তৈরি হবে এখানে। শিক্ষার আন্তর্জাতিক মানের একটা পরিবেশ তৈরি হবে, আমার ধারণা। শুধু তা-ই নয়, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) সহায়তায় আরও একটি বৃহৎ প্রকল্প আমাদের বাকৃবিতে বাস্তবায়িত হবে। এটির একেবারেই দোরগোড়ায় আমরা চলে এসেছি। ৪ বছর সময় কম না একেবারেই। আমার বিশ্বাস, এই চার বছরে এই দুটো প্রকল্প যদি বাস্তবায়িত হয়ে যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামোগত একটি আমূল পরিবর্তন আমরা দেখতে পারব। আমি আশাবাদী মানুষ। আমার ধারণা, আমি পারব।
প্রশ্ন: বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রী হলের সিট সংকট রয়েছে। এ সমস্যা সমাধানে আপনারা কোনো উদ্যোগ হাতে নিয়েছেন কি?
ড. এমদাদুল হক: আপনারা দেখলে দেখতে পাবেন, তিনটি ছাত্রী হলের কাজ কিন্তু ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে এবং চলমান আছে। একটি হচ্ছে ‘রোজী জামাল’ হল, যেটির দোতলা পর্যন্ত সম্পন্ন হয়ে গেছে। এ বছরের শেষ দিকে এটি চারতলা কিংবা পাঁচতলা পর্যন্ত হয়ে যাওয়ার কথা। এ ছাড়া বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের আবাসিক এলাকার পেছনে ছাত্রীদের আরও দুটি—শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা হলের কাজ শুরু হয়েছে। এ দুটি আবাসিক হলে প্রায় ২ হাজার ৪০০ ছাত্রীর আবাসন হবে। নির্মাণকাজ তো আর হঠাৎ করে সম্পন্ন হয়ে যায় না, একটু সময় লাগে। আমি আশাবাদী, আগামী ২ থেকে ৩ বছরের মধ্যে আমরা প্রায় ৩ হাজার ছাত্রীর আবাসনব্যবস্থা করতে সক্ষম হব। সেই সঙ্গে ছাত্রদের থাকার জন্যও নতুন একটি ১০ তলা ভবনের কাজ শুরু হবে এবং সেখানে প্রায় ১ হাজার ২০০ ছাত্রের নতুন আবাসনব্যবস্থা তৈরি হবে।
প্রশ্ন: বাকৃবির বেশির ভাগ হলে ডাইনিং ও ক্যানটিন চালু নেই। এ ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নেবেন কি না?
ড. এমদাদুল হক: আমি শুনেছি এবং ইতিমধ্যে উদ্যোগও নিয়েছি। হলের প্রভোস্ট মহোদয়দের ডেকেছিলাম একদিন। তাঁদের সঙ্গে মিটিং হয়েছে। তাঁদের বলেছি, যেকোনো মূল্যে হলে ছাত্রদের ডাইনিংয়ে খাওয়াটা নিশ্চিত করতে হবে। তাঁরা ডাইনিং ও ক্যানটিন দ্রুত চালু করার ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে আমি আশাবাদী।
প্রশ্ন: বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোয় দ্রুতগতির ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা চালু নেই। এ ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ?
ড. এমদাদুল হক: ব্রডব্যান্ড সেবা চালু নেই হলগুলোয়, কিন্তু ইন্টারনেট চালু আছে। একসঙ্গে অনেক ব্যবহারকারী হওয়ার ফলে ইন্টারনেটে গতি ধীর আছে। তবে শুনে খুশি হবেন, ইতিমধ্যেই ইউজিসির সহায়তায় খুব অল্প সময়ের মধ্যে সব আবাসিক হলে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ হয়ে যাবে। আমি ইতিমধ্যে সেটির অনুমতি দিয়ে দিয়েছি এবং আমাদের যে আইটি পরিচালক আছেন, তিনি জানিয়েছেন, খুব অল্প সময়ের মধ্যে এই কাজগুলো শুরু হবে।
প্রশ্ন: অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বাকৃবির বর্তমান শিক্ষার্থীরা বিসিএসকেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে বলে শোনা যায়। শিক্ষার্থীদের গবেষণামুখী করতে আপনার পরিকল্পনা কী?
ড. এমদাদুল হক: এটি আসলেই ভাববার বিষয়। আমি অনেক সময় ক্লাসে শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করার চেষ্টা করি, বিসিএসে আমাদের জন্য একটা সুযোগ। বাট দিস ইজ নট অনলি ওয়ান অপরচুনিটি। ৫ শতাংশ কিংবা তার চেয়েও কমসংখ্যক ছেলেমেয়ে বিসিএসে প্রবেশের সুযোগ পায়। বাকি ৯৫ শতাংশকে কিন্তু অন্যান্য জব সেক্টরে প্রবেশ করতে হচ্ছে। কাজেই আমি মনে করি, শিক্ষার্থীদের বিসিএসের পাশাপাশি একজন আদর্শ কৃষিবিদ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করা উচিত। শিক্ষার্থীদের কীভাবে গবেষণামুখী কিংবা সাবজেক্ট ওরিয়েন্টেড পড়াশোনার দিকে ফিরিয়ে আনা যায়, সেটি এখন আমাদের ভাবনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
প্রশ্ন: ৬২ পেরিয়ে ৬৩ বছরে পা দিচ্ছে স্বনামধন্য এই বিশ্ববিদ্যালয়। এত বছরে মাত্র ৮টি সমাবর্তন সম্পন্ন হয়েছে। এই ৪ বছরে সমাবর্তন আয়োজনে আপনার পরিকল্পনা কী?
ড. এমদাদুল হক: আমার ৪ বছরের সময়ে একটা সমাবর্তন করার চেষ্টা করব। কিছুদিন আগেই একটা সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। আমি চাইলেও এখন আরেকটা সমাবর্তন আয়োজন করতে পারব না। তবে এটি শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর নয়, বরং মহামান্য রাষ্ট্রপতি এবং অন্য অনেক বিষয়ের ওপর নির্ভর করবে।
প্রশ্ন: বর্তমানে বাকৃবির শিক্ষকদের মাঝে দলীয় রাজনীতি ও কোন্দলের অভিযোগ পাওয়া গেছে, যার প্রভাব পড়ছে শিক্ষার্থীদের মাঝে। আপনি কি মনে করেন শিক্ষকেরা পাঠদান ও গবেষণা থেকে রাজনীতিতে সময় বেশি ব্যয় করছেন?
ড. এমদাদুল হক: এটা আমার কাছে মনে হয় না। কারণ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি আমি দেখি, বেশির ভাগ শিক্ষকই খুব গবেষণামুখী, প্রতিদিনই আন্তর্জাতিক জার্নালগুলোয় আমাদের শিক্ষকদের রিসার্চ পেপার পাবলিশ হচ্ছে। কাজেই তাঁরা গবেষণা থেকে পিছিয়ে বা রাজনীতিতে বেশি ঝুঁকে পড়ছেন, এটা আমার কাছে মনে হয় না। আর ক্লাস-পরীক্ষার কথা যদি বলি, সেখানে আমাদের শিক্ষকেরা খুবই নিয়মানুবর্তী। নিজের দীর্ঘ শিক্ষকতা জীবনে এমন কোনো রেকর্ড নেই যে পাঁচ মিনিট পরে আমি একটা ক্লাসে গিয়ে উপস্থিত হয়েছি। তবে হ্যাঁ, দুই-চারজন শিক্ষক যে থাকবে না, সেটা আমি বলব না। সেটা সব জায়গায়ই থাকে। এখানেও থাকতে পারে আবার না-ও পারে। কিন্তু আমি একদমই একমত না যে এখানকার শিক্ষকেরা পড়াশোনা বা গবেষণা বাদ দিয়ে রাজনীতির দিকে বেশি সময় ব্যয় করেন।
প্রশ্ন: বাকৃবির শিক্ষার মান ও পরিবেশ উন্নয়নের ব্যাপারে আপনার পরিকল্পনা কী?
ড. এমদাদুল হক: ছাত্র, শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী এবং এলাকাবাসী সবাইকে নিয়েই আমি ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে চাই। কারণ এর মধ্যে কোনো একটা কম্পোনেন্টও যদি সহযোগিতা না করে তাহলে কিন্তু শিক্ষার পরিবেশটা বিঘ্নিত হবে। কাজেই সবার কাছ থেকে আমি সহযোগিতা চাই। সেই সঙ্গে আমাদের যে উন্নয়ন পরিকল্পনাগুলো আছে, সেগুলো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সব প্রতিবন্ধকতা দূর করতে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। আমি সবাইকে নিয়েই কাজ করতে চাই, এটিই আমার পরিকল্পনা।
প্রশ্ন: বাকৃবির অতীত ইতিহাসে দেখা গেছে, দায়িত্ব নেওয়ার পর অনেক উপাচার্যই অনেক আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু চার বছর পর সেই আশ্বাসগুলো আশ্বাসই থেকে যেতে দেখা গেছে। আপনার ক্ষেত্রেও কি এ রকমটি হওয়ার আশঙ্কা আছে?
ড. এমদাদুল হক: প্রশ্নটার জবাব দেওয়া খুব কঠিন। কারণ আরও চার বছর পরের কথা আপনি কিন্তু চার বছর আগেই জিজ্ঞেস করে ফেললেন। আমি খুব পজিটিভ মানুষ। আমার সারা জীবনের কর্মকাণ্ড আপনি যদি হিসাব করে দেখেন, আমি সব সময় একটি নেগেটিভ জিনিসের মধ্যেও পজিটিভিটি খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করেছি। সবার সহযোগিতা পেলে আমি চেষ্টা করব। আমি কোনো প্রতিশ্রুতি দিইনি, শুধু আমার পরিকল্পনার কথা বলেছি। কারণ, প্রতিশ্রুতি আমার একার পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়। আমার পরিকল্পনাগুলো চার বছরের মধ্যে বাস্তবায়ন করতে চাই। এটাকে প্রতিশ্রুতি ভাবলে ভুল হবে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মালয়েশিয়া। জঙ্গল ট্রেকিং, রেইনফরেস্ট আর পৃথিবীর বৃহত্তম ওরাংওটাং অভয়াশ্রমের জন্য এটি রোমাঞ্চপ্রিয় অভিযাত্রীদের কাছে এক অনন্য ঠিকানা। দর্শনার্থীরা দেশটির মনোরম জাতীয় উদ্যানগুলোয় হাইকিং করতে পারেন, স্ফটিক-স্বচ্ছ পানিতে স্নরকেলিং করার সুযোগ আছে, এমনকি রাত কাটানো যাবে কোন
১ ঘণ্টা আগেডিম দীর্ঘ সময় ধরে ঘরের তাপমাত্রায় রেখে দিলে তা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই ডিম সংরক্ষণের ভালো উপায় হলো ফ্রিজে রাখা। অনেকের বিশ্বাস, ডিম ধুয়ে, একটি সিল করা কনটেইনারে ঢুকিয়ে ফ্রিজে রাখলে তা অন্য খাবারে ব্যাকটেরিয়া ছড়ানো রোধ করে। এ তথ্য কি সত্যি?
১০ ঘণ্টা আগেযুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৪৯ মিলিয়ন পরিবারে অন্তত একটি করে বিড়াল আছে। কিন্তু কীভাবে? শুধু আদরের প্রাণী বলেই কি? নাকি এর পেছনে কোনো ব্যাখ্যা আছে? গবেষকেরা বলছেন, বিড়ালেরা শুধু আদরের পোষা প্রাণীই নয়, এটি মানুষের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে পারে।
১১ ঘণ্টা আগেপ্রসব-পরবর্তীকালে নতুন মায়েরা যেসব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন, সেগুলোর মধ্য়ে সবার আগে বলতে হয় পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশনের কথা। নিজের শরীর, শারীরিক গঠন ও মানসিক শান্তি পুনরায় ফিরে পাওয়ার এই যাত্রা যেন মন্থরগতির মনে হয়। সেলিব্রিটি মায়েরাও এর ব্যতিক্রম নন।
১২ ঘণ্টা আগে