Ajker Patrika

ডিম ফ্রিজে রাখবেন কীভাবে? জেনে নিন শিশুকে ডিম খাওয়ানোর সঠিক উপায়

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 
আপডেট : ২৬ আগস্ট ২০২৫, ১২: ৩০
ভালোভাবে সেদ্ধ করা ডিম বা হার্ড বয়েল শিশুদের জন্য উপকারী। ছবি: এআই দিয়ে তৈরি।
ভালোভাবে সেদ্ধ করা ডিম বা হার্ড বয়েল শিশুদের জন্য উপকারী। ছবি: এআই দিয়ে তৈরি।

ডিম দীর্ঘ সময় ধরে ঘরের তাপমাত্রায় রেখে দিলে তা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই ডিম সংরক্ষণের ভালো উপায় হলো ফ্রিজে রাখা। অনেকের বিশ্বাস, ডিম ধুয়ে একটি সিল করা কনটেইনারে ঢুকিয়ে ফ্রিজে রাখলে তা অন্য খাবারে ব্যাকটেরিয়া ছড়ানো রোধ করে। এ তথ্য কি সত্যি? কখনো জানতে চেয়েছেন কোথাও?

মূলত মুরগি বা হাঁসের ডিমে প্রাকৃতিকভাবে মাটি বা বিষ্ঠার মতো ময়লা থাকতে পারে, যা রোগ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া বহন করে। তাই খাবারের মান বজায় রাখতে এবং ফুড পয়জনিংয়ের ঝুঁকি কমাতে ডিম ভালোভাবে পরিষ্কার করে সংরক্ষণ করা গুরুত্বপূর্ণ।

কীভাবে ডিম ফ্রিজে সংরক্ষণ করতে হবে

ভিয়েতনামের জাতীয় পুষ্টি ইনস্টিটিউটের সাবেক উপপরিচালক ড. নগুয়েন থি লাম কিছু পরামর্শ দিয়েছেন ডিম সংরক্ষণের বিষয়ে। তিনি জানান, ফ্রিজে ডিম রাখার সময় দুটি বিষয় বিবেচনায় রাখতে হবো—

  • পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা
  • সঠিকভাবে সিল করা

ডিম ভালোভাবে পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। তারপর শুকিয়ে একটি সিল করা কনটেইনারে রেখে ফ্রিজের ঠান্ডা অংশে সংরক্ষণ করতে হবে। এতে ডিম অন্যান্য খাবারে ব্যাকটেরিয়া ছড়ানো রোধ করবে এবং ভালো থাকবে।

ডিম খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা

ডিম একটি উচ্চ পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার। এটি প্রোটিন ও প্রয়োজনীয় অ্যামিনো অ্যাসিডে ভরপুর। শিশুদের জন্য দিনে একটি ডিম খাওয়া নিরাপদ। এতে থাকা কোলিন শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশ ও বুদ্ধি উন্নয়নে সহায়তা করে। যাদের ফ্যাটি লিভার আছে বা লিভার অ্যানজাইম বেশি, বিশেষ করে যাদের মাঝারি থেকে গুরুতর অবস্থা, তাদের জন্য ডিমের পরিবর্তে অন্য স্বাস্থ্যকর প্রোটিন উৎস বেছে নেওয়া ভালো।

প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য সপ্তাহে ৩ থেকে ৪টি ডিম খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।

সব সময় ডিম ধুয়ে রাখবেন কি না

ডিমের খোলসে ছোট ছোট ছিদ্র থাকে, যেখান দিয়ে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ভেতরে প্রবেশ করতে পারে। এমনকি যেসব খোলস দেখতে পরিষ্কার, সেগুলোও জীবাণু বহন করতে পারে। এরপরেও ডিম ধোয়া সব সময় জরুরি নয়। ডিম না ধুয়ে সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা হলেও কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত রেফ্রিজারেশন ছাড়াই ভালো থাকতে পারে। তাই ডিম ধোয়ার বিষয়টি ব্যক্তিগত বা পারিবারিক পছন্দের ওপর নির্ভর করে।

কোনো কোনো দেশে ডিম বিক্রির আগে ধোয়া বাধ্যতামূলক। তবে একবার ডিম ধুয়ে ফেললে অবশ্যই তা রেফ্রিজারেটরে রাখা উচিত।

কীভাবে ডিম ধুয়ে জীবাণুমুক্ত করবেন

  • যদি ডিমে সামান্য ময়লা বা বিষ্ঠা থাকে, তাহলে তোয়ালে বা স্যান্ডপেপার দিয়ে আলতো করে মুছে নিন।
  • ডিম ঘষে পরিষ্কার করবেন না। এতে খোলস ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
  • খুব বেশি নোংরা হলে ৯০ থেকে ১২০ ডিগ্রি ফারেনহাইট গরম পানিতে প্রতিটি ডিম আলাদাভাবে ধুয়ে ফেলুন।
  • ডিম ভিজিয়ে রাখবেন না। তাতে ব্যাকটেরিয়া খোলসের ভেতরে প্রবেশ করতে পারে।
  • ডিম পরিষ্কারের জন্য সাবান ব্যবহার করতে চাইলে গন্ধহীন সাবান ব্যবহার করুন।
  • গরম পানিতে ডিমের ভেতরের অংশ প্রসারিত হয়, ফলে ব্যাকটেরিয়া বাইরে বেরিয়ে আসে। তবে ঠান্ডা পানিতে ব্যাকটেরিয়া ভেতরে ঢুকে পড়ে।

ডিম না ধুয়ে যেভাবে সংরক্ষণ করবেন

  • ধোয়ার পরিবর্তে নরম কাপড় দিয়ে আলতোভাবে ময়লা বা বিষ্ঠা সরিয়ে ফেলুন।
  • তারপর বাড়ির ঠান্ডা কোণে বা শীতল জায়গায় সংরক্ষণ করুন।
  • ব্যবহারের আগে ডিম গরম পানিতে ধুয়ে নিন।
  • এভাবে কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত ডিম ভালো রাখা যায়।

নষ্ট ডিম চেনার উপায়

  • এ রকম ডিমের খোলস সাধারণত ফাটা থাকে।
  • নষ্ট ডিমের সাদা অংশ স্বাভাবিকের চেয়ে ঘোলাটে হয়।
  • নষ্ট ডিমের কুসুম খোলসের সঙ্গে লেগে থাকে।

শিশুদের ডিম খাওয়ানোর স্বাস্থ্যকর পদ্ধতি

শিশু অর্ধকঠিন খাবার খাওয়া শুরু করার প্রথম দিকের খাবার হিসেবে ডিম অত্যন্ত পুষ্টিকর খাবার হিসেবে পরিচিত। তবে এটি শিশুর জন্য খাবার উপযোগী করে তুলতে হবে সতর্কতার সঙ্গে।

শিশুদের ভালোভাবে সেদ্ধ করা ডিম এমন টুকরো করে খাওয়াতে হবে। ছবি: পেক্সেলস
শিশুদের ভালোভাবে সেদ্ধ করা ডিম এমন টুকরো করে খাওয়াতে হবে। ছবি: পেক্সেলস

১. শিশুদের জন্য সেদ্ধ ডিম স্বাস্থ্যকর

ডিম খাওয়ানোর ক্ষেত্রে শিশুদের জন্য নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর পদ্ধতি হলো ভালোভাবে সেদ্ধ করা ডিম বা হার্ড বয়েল।

সেদ্ধ ডিম খাওয়ানোর কারণ

  • এতে পুরো ডিম সম্পূর্ণভাবে সেদ্ধ হয় বলে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া থাকে না।
  • সেদ্ধ করলে ডিমের পুষ্টির ক্ষতি হয় খুবই সামান্য। প্রোটিন, কোলিন, ভিটামিন ডি, ভিটামিন বি ১২, সেলেনিয়াম ইত্যাদি উপাদান সঠিকভাবে সংরক্ষিত থাকে সেদ্ধ ডিমে।
  • ভালোভাবে সেদ্ধ করা ডিম নরম, চটচটে বা পিচ্ছিল হওয়ায় শিশুর গলায় আটকে যাওয়ার ঝুঁকি কম থাকে। এটি ম্যাস বা ভর্তা করে আরও নরম করে খাওয়ানো যায়।
  • ডিম সেদ্ধ করার জন্য তেল, মাখন বা চর্বি যোগ হয় না। এটি শিশুর অপরিণত পরিপাকতন্ত্রের জন্য উপযোগী।

২. অল্প তেলে তৈরি অমলেট

এক বছরের বেশি বয়সের শিশুদের অমলেট খাওয়ানো যেতে পারে। তবে এই অমলেট তৈরি করতে হবে অল্প তেল দিয়ে।

শিশুদের এভাবে গরম পানিতে তৈরি পোচ বা পানিত্যালানি খাওয়ানো যেতে পারে। ছবি: পেক্সেলস
শিশুদের এভাবে গরম পানিতে তৈরি পোচ বা পানিত্যালানি খাওয়ানো যেতে পারে। ছবি: পেক্সেলস

৩. গরম পানিতে পোচ বা পানিত্যালানি

টগবগ করে ফুটতে থাকা পানিতে ডিম ভেঙে দিয়ে দিন। তবে এটিও সেদ্ধ ডিমের মতো শক্ত হলেই শুধু খাওয়ানো যাবে। তাতে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া থাকবে না।

যেভাবে শিশুদের ডিম খাওয়ানো যাবে না

  • অর্ধসেদ্ধ বা কাঁচা ডিম: শিশুকে কাঁচা, অর্ধসেদ্ধ ডিম বা পোচ খাওয়ানো যাবে না। এগুলোতে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া থাকার ঝুঁকি থাকে।
  • ডিমের সাদা অংশ আলাদা করে: ৮ মাস বয়সের কম শিশুদের ডিমের সাদা অংশে অ্যালার্জির ঝুঁকি বেশি থাকে। তাই এই বয়সের আগে শিশুদের শুধু কুসুম খাওয়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়।

শিশুদের ডিম খাওয়ানোর সময় সতর্কতা

  • ডিমে অ্যালার্জি তৈরির উপাদান থাকে। তাই শিশুদের প্রথমবার ডিম খাওয়ানোর সময় সতর্ক থাকতে হবে। প্রথমবার ডিম খাওয়ানোর ৩ থেকে ৫ দিন পর্যন্ত খেয়াল রাখতে হবে, ডিম খাওয়ার পর শিশুর চুলকানি, ফুসকুড়ি, বমি, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি তৈরি হয় কি না।

সূত্র: আমেরিকান একাডেমি অব পেডিয়াট্রিকস (এএপি), একাডেমি অব নিউট্রিশন অ্যান্ড ডায়েটেটিকস, দ্য সেন্টার ফর ফুড সিকিউরিটি অ্যান্ড পাবলিক হেলথ, ই ভিএন এক্সপ্রেস

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত