Ajker Patrika

বিড়ালপ্রেমীদের জন্য সুখবর, এটি পুষলে পাওয়া যায় মানসিক ও শারীরিক উপকারিতা

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 
বিড়ালেরা শুধু আদরের পোষা প্রাণীই নয়, এটি মানুষের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে পারে। ছবি: এআই দিয়ে তৈরি
বিড়ালেরা শুধু আদরের পোষা প্রাণীই নয়, এটি মানুষের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে পারে। ছবি: এআই দিয়ে তৈরি

ভোররাতে আমাদের ঘুম ভাঙিয়ে খাবারের জন্য ডাকাডাকি করা কিংবা সদ্য পরিষ্কার করা কার্পেট হঠাৎ উল্টে দেওয়া! এসব ঝামেলা সত্ত্বেও বিশ্বজুড়ে কোটি মানুষ বিড়ালকে নিজেদের পরিবারের অংশ করে নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৪৯ মিলিয়ন পরিবারে অন্তত একটি করে বিড়াল আছে। কিন্তু কীভাবে? শুধু আদরের প্রাণী বলেই কি? নাকি এর পেছনে কোনো ব্যাখ্যা আছে? গবেষকেরা বলছেন, বিড়ালেরা শুধু আদরের পোষা প্রাণীই নয়, এটি মানুষের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে পারে।

একাকিত্ব কমায়

বিড়ালের সঙ্গে সময় কাটানো আমাদের মানসিক সুস্থতার জন্য উপকারী। বিড়াল একদিকে সঙ্গ দেয়, অন্যদিকে আমাদের একাকিত্ব ও নিঃসঙ্গতা দূর করে। তাদের খুনসুটি, খেলাধুলা বা হঠাৎ মজার কাণ্ডকারখানা আমাদের মুখে হাসি ফোটায়। গবেষণায় দেখা গেছে, যাঁরা বিড়াল পোষেন, তাঁরা অন্যদের তুলনায় অনেক কম একাকিত্ব অনুভব করেন। বিড়ালের স্বভাব-চরিত্র শান্ত বা বন্ধুত্বপূর্ণ হলে মানুষ তাদের প্রতি আরও বেশি আবেগপ্রবণ হয়ে ওঠে।

বিড়াল আমাদের একাকিত্ব ও নিঃসঙ্গতা দূর করতে পারে। ছবি: পেক্সেলস
বিড়াল আমাদের একাকিত্ব ও নিঃসঙ্গতা দূর করতে পারে। ছবি: পেক্সেলস

আধুনিক সমাজে বিড়াল এখন পরিবারের সদস্য। এক জরিপে দেখা গেছে, ৮২ শতাংশ মানুষ তাদের পোষ্যকে নিজের সন্তানের মতো মনে করে; বিশেষ করে মিলেনিয়াল ও জেন-জি প্রজন্ম বিড়ালকে পরিবারের অবিচ্ছেদ্য অংশ করে নিয়েছে।

চাপ ও দুশ্চিন্তা কমানোর প্রাকৃতিক ওষুধ

বিড়ালের উপস্থিতি শুধু মনের শান্তিই আনে না, শরীরের ভেতরের হরমোনগত পরিবর্তনেও প্রভাব ফেলে। বিড়ালের সঙ্গে সময় কাটালে কর্টিসল হরমোনের মাত্রা কমে। এই হরমোন দুশ্চিন্তা ও মানসিক চাপ তৈরি করে। এ ছাড়া বিড়ালের সংস্পর্শে হৃৎস্পন্দন ও রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকে। মাত্র ১০ মিনিট বিড়ালের সঙ্গে খেলা করলেই মন শান্ত হয় এবং শরীর দ্রুত স্বাভাবিক ছন্দে ফিরে আসে।

এক গবেষণায় ১২০ দম্পতি মানসিক চাপ মাপার পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। তাতে দেখা গেছে, বিড়ালমালিক দম্পতিদের হৃৎস্পন্দন তুলনামূলকভাবে কম, রক্তচাপ স্বাভাবিক ও মানসিক চাপের পরিস্থিতিতেও তাঁরা স্বাভাবিক ছিলেন। গবেষকেরা জানান, বিড়ালমালিক দম্পতিরা চ্যালেঞ্জকে হুমকি হিসেবে নয়, বরং ইতিবাচকভাবে দেখেছেন।

সম্পর্ক উন্নয়নে বিড়ালের ভূমিকা

মানুষের সঙ্গে বিড়ালের যে বন্ধন তৈরি হয়, তা আমাদের সামাজিক সম্পর্কেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। বিড়ালমালিকেরা সাধারণত বেশি উদার, কৌতূহলী ও কল্পনাপ্রবণ হয়ে থাকেন। তবে তাঁরা অনেক সময় অন্তর্মুখীও হতে পারেন, সেটিও খারাপ কিছু নয়। বিড়াল বিশেষ করে সামাজিক উদ্বেগে ভোগা মানুষের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখার ভরসা হয়ে ওঠে। বিড়াল থাকলে দৈনন্দিন জীবনে একটি রুটিন তৈরি হয়, যা মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষায় সহায়ক।

বিড়ালের গরগর শব্দ প্রাকৃতিক থেরাপি

বিড়ালের পরিচিত বৈশিষ্ট্যের একটি হলো তাদের ‘গরগর’ শব্দ। অনেক সময় আমরা এটিকে শুধু ভালোবাসা বা স্বস্তির বহিঃপ্রকাশ হিসেবে দেখি। কিন্তু এর পেছনেও রয়েছে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা। বিড়ালের গরগর শব্দের কম্পন ২৫ থেকে ১৫০ হার্টজের মধ্যে থাকে; বিশেষ করে ২৫ থেকে ৫০ হার্টজ ফ্রিকোয়েন্সি হাড় ও পেশি পুনর্গঠনে সহায়ক হতে পারে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের গবেষণা বলছে, বিড়ালের গরগর শব্দ হাড়ের দ্রুত সেরে ওঠায় সাহায্য করতে পারে। অতএব, বিড়াল যখন আমাদের কোলের ওপর শুয়ে গরগর করে, তখন হয়তো তারা নিজেদের সুস্থ রাখছে, তবে আমরাও সেই কম্পনের উপকার পাচ্ছি।

স্বাস্থ্যের জন্য উপকার

বিড়াল শুধু মনের শান্তিই আনে না, শরীরও ভালো রাখে। গবেষণায় দেখা গেছে—

  • বিড়াল হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক।
  • রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে।
  • মন খারাপ বা হতাশা কমাতে পারে।
  • এমনকি রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতেও ভূমিকা রাখে।

এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে অনেক বিড়ালমালিক তাঁদের বিড়াল বাইরে নিয়ে যান। এতে বিড়াল নিরাপদে বাইরের পরিবেশ উপভোগ করতে পারে, আর মালিকও প্রকৃতির সান্নিধ্যে সময় কাটানোর সুযোগ পান।

যদিও বিড়াল নিয়ে গবেষণা তুলনামূলক কম, তবে এখন পর্যন্ত যা জানা গেছে, তা ইতিবাচক। বিড়ালের উপস্থিতি আমাদের মানসিক প্রশান্তি আনে, একাকিত্ব দূর করে, দুশ্চিন্তা কমায়, এমনকি শরীরও সুস্থ রাখে। অতএব, বিড়ালের প্রতি ভালোবাসা শুধু আবেগের বিষয় নয়, হয়তো এর পেছনে রয়েছে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাও।

সূত্র: হেলথলাইন

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত