Ajker Patrika

এক নজরে মহানবী (সা.)-এর জীবনাচরণের কয়েকটি দিক

আদিয়াত উল্লাহ
নবী মুহাম্মদ (সা.)। ছবি: সংগৃহীত
নবী মুহাম্মদ (সা.)। ছবি: সংগৃহীত

মানব মননের সর্বোত্তম বিকাশ ও আল্লাহর সব হুকুম-আহকাম, আদেশ-নিষেধ পালনের মাধ্যমে মানবীয় দুর্বলতার ঊর্ধ্বে উঠে মহান স্রষ্টার সন্তুষ্টি ও আখিরাতে তাঁর দিদার লাভের নিমিত্তে আল্লাহ তাআলা যেসব নির্বাচিত ব্যক্তিকে তাঁর নবী ও রাসুল হিসেবে পৃথিবীতে প্রেরণ করেছিলেন, নবী করিম (সা.) তাঁদের মধ্যে সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ।

তাঁর জীবনের প্রতিটি দিক, কর্মপদ্ধতি ও ওহির আলোকে তাঁর জীবনাচরণ মানুষের জীবনে হেদায়াত ও অবারিত নুরের এক অনন্য উৎস। তিনি ও তাঁর আদর্শ সমগ্র মানবজাতির জন্য আল্লাহর এক অনন্য উপহার।

জীবনের সর্বক্ষেত্রে তাঁর আদর্শ অনুসরণ মুমিনদের জন্য অত্যাবশ্যকীয় এবং মানবজাতির ইহকালীন সফলতা ও পরকালীন মুক্তির একমাত্র পথ। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসুলের মাঝে (তাঁর চারিত্রিক গুণাবলি ও জীবনাচরণে) রয়েছে উত্তম আদর্শ।’ (সুরা আহজাব: ২১)

কোরআনের জীবন্ত প্রতিচ্ছবি: রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জীবন ছিল কোরআনের প্রতিটি আয়াত, আদেশ ও নিষেধের এক জীবন্ত ও অনন্য চিত্র। কোরআন যেন প্রতিটি হরফে হরফে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর চরিত্রের মাধ্যমে যথার্থভাবে চিত্রিত হচ্ছিল। সাইয়িদা আয়েশা (রা.)-কে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর চরিত্র সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘কোরআনই ছিল তাঁর চরিত্র। কোরআনের রাগে তিনি রাগান্বিত হতেন এবং তার সন্তুষ্টিতে তিনি সন্তুষ্ট হতেন।’ (জামেউল ওয়াসাইল ফি শারহিশ শামাইল, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চরিত্রে যা এসেছে’ অধ্যায়)

সব প্রশংসনীয় গুণের পূর্ণতাদানকারী: রাসুলুল্লাহ (সা.) মানবচরিত্রের সব গুণের এক অনন্য আধার ছিলেন। তাঁর চরিত্র ছিল সব প্রকার গুণের এক উত্তম, অভূতপূর্ব, অনন্য ও চমৎকার সমন্বয়। তাঁর মাঝে ছিল না কোনো নিন্দনীয় অভ্যাস ও স্বভাব। তিনি ছিলেন সত্যবাদী, উত্তম আমানতদার, ওয়াদা রক্ষাকারী, আল্লাহর নেয়ামতের সর্বোত্তম শোকরকারী, লজ্জাশীল ও অনন্য ব্যক্তিত্বসম্পন্ন। রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজেই ইরশাদ করেন, ‘আমি চরিত্রের সব উত্তম গুণের পূর্ণতা দানের জন্যই প্রেরিত হয়েছি।’ (মুসনাদে আহমাদ: ৮৯৫২)

ছোটদের প্রতি দয়ার্দ্রতার অনন্য উদাহরণ: রাসুলুল্লাহ (সা.) ছোটদের প্রতি ছিলেন দয়ার এক অনন্য সাগর। তিনি ছোটদের আদর করার প্রতি গুরুত্বারোপ করতেন। আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সে আমাদের মধ্যে গণ্য নয়, যে আমাদের ছোটদের প্রতি রহম করে না এবং বড়দের অধিকার আদায় করে না।’ (সুনানে আবু দাউদ: ৪৯৪৩, জামে তিরমিজি: ১৯২০,২০৩২, মুসনাদে আহমাদ: ৬৭৩৩, আল আদাবুল মুফরাদ: ৩৫৪)

তিনি প্রায়শই ছোটদের নিয়ে আনন্দ করতেন, মজা করতেন, তাদের কাছে টেনে নিয়ে আদর করতেন, চুমু খেতেন, স্নেহের হাত বুলিয়ে দিতেন মাথার ওপর। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, একদা রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর নাতি হাসান (রা.)-কে চুমু খেলেন। আকরা ইবনে হাবিস (রা.) পাশে বসা ছিলেন। তিনি বললেন, ‘আমার ১০টা সন্তান। একজনকেও আমি কখনো চুমু দিইনি।’ নবী করিম (সা.) তাঁর দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘নিশ্চয় যে দয়া করে না, তার প্রতি দয়া করা হবে না।’ (সহিহ্ বুখারি: ৫৯৯৭, সহিহ্ মুসলিম: ২৩১৮)

এতিম শিশুদের এক অনন্য আশ্রয় ছিলেন তিনি। মুতার যুদ্ধে জাফর (রা.) শহীদ হলে তাঁর শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাতে তাঁর বাড়িতে যান, তাঁর কাঁধে জাফর (রা.)-এর পরিবারের দায়িত্ব তুলে নেন এবং এতিম শিশুদের মাথায় হাত বুলিয়ে দেন। জাফর (রা.)-এর বড় পুত্র আবদুল্লাহ (রা.) বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, ‘রাসুলে করিম (সা.) এসে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করলেন এবং আমাদের জন্য দোয়া করলেন—‘‘হে আল্লাহ, আপনি নিজেই জাফরের সন্তানদের অভিভাবক হয়ে যান।’’ (মুস্তাদরাকে হাকেম: ১৩৭৯)

পরিবার ও স্ত্রীদের সঙ্গে আচরণ: নিজ স্ত্রীগণ ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নবীজি (সা.)-এর আচরণ ছিল অনুপম, উত্তম ও সুন্দর। পরিবারের সদস্যদের সবার সঙ্গে উত্তম ও যথাযথ আচরণ করতেন তিনি। এ জন্য পরিবারের সব সদস্যের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ছিল স্বাভাবিক, সুন্দর ও হৃদ্যতাপূর্ণ। নবীজি (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে ওই ব্যক্তি উত্তম যে তার পরিবারের নিকট উত্তম। আর আমি আমার পরিবারের নিকট তোমাদের চেয়ে উত্তম।’ (জামে তিরমিজি: ৩৮৯৫, সুনানে দারেমি: ২২৬০, মিশকাতুল মাসাবিহ: ৩২৫২)। এখানে পরিবার বলতে স্ত্রীকে বোঝানো হয়েছে।

লেখক: শিক্ষার্থী, আরবি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত