Ajker Patrika

উত্তম আচরণে সমাজকে বিমুগ্ধ করেছিলেন মহানবী (সা.)

ইসলাম ডেস্ক 
মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)। ছবি: সংগৃহীত
মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)। ছবি: সংগৃহীত

মহানবী (সা.) ছিলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব। তিনি ছিলেন দয়া ও ভালোবাসার মূর্ত প্রতীক। জাতি-ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে সবার জন্য ছিল তাঁর বুকভরা দরদ। তাঁর চরিত্রের এক অতি বিস্ময়কর দিক ছিল—সবার সঙ্গে তাঁর সুন্দর আচরণ। বিপদে-আপদে তিনি মানুষের পাশে দাঁড়াতেন এবং দুঃখ-কষ্টের কথা প্রাণ খুলে তাঁর কাছে বলা যেত।

তিনি মানুষের দুর্দিনের কথা শুনতেন এবং আপনজন হয়ে তাদের পাশে দাঁড়াতেন। কারণ, তিনি ছিলেন ‘রহমাতাল্লিল আলামিন’ (সারা বিশ্বের জন্য রহমত) এবং সর্বোৎকৃষ্ট চরিত্রের অধিকারী। তাঁর মহৎ চরিত্র সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই তুমি মহান চরিত্রের ওপর অধিষ্ঠিত।’ (সুরা কলম: ৪)

শ্রেষ্ঠ গুণাবলির অধিকারী

আল্লাহ তাআলা মহানবী (সা.)-কে এমন মহৎ স্বভাব ও শ্রেষ্ঠ গুণাবলি দান করেছিলেন, যার মাধ্যমে তিনি পৃথিবীর সব মানুষ থেকে হয়ে উঠেছিলেন অনন্য ও অদ্বিতীয়। তিনি ছিলেন মজলুমের সাহায্যকারী, অসহায়ের পাশে দাঁড়াতেন এবং নির্বোধের আচরণে ধৈর্যের পরিচয় দিতেন। তিনি মন্দকে ভালো দ্বারা প্রতিহত করতেন এবং সর্বদা সহাস্যবদনে সাক্ষাৎ করতেন। তিনি ছিলেন সদা হাসিমুখ ও উদার হৃদয়ের।

মহানবী (সা.)-এর নাতি হজরত হাসান (রা.) তাঁর চরিত্র সম্পর্কে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘নবীজি (সা.) হাস্যোজ্জ্বল, অমায়িক চরিত্রের অধিকারী ও বিনয়ী ছিলেন। তাঁর কাছে আগত কেউ নিরাশ হতো না। তিনি নিজে তিনটি জিনিস পরিহার করতেন—রিয়া বা আত্মপ্রকাশ, অতিরঞ্জন ও অনর্থক কাজ। মানুষের জন্যও তিনি তিনটি জিনিস পরিহার করতেন: তিনি কাউকে নিন্দা করতেন না, দোষারোপ করতেন না এবং সওয়াবের প্রত্যাশা ছাড়া কোনো কথা বলতেন না।’

শ্রোতাদের প্রতি শ্রদ্ধা ও ক্ষমাশীলতা

যখন তিনি কথা বলতেন, শ্রবণকারীরা এমনভাবে মনোযোগ দিয়ে শুনত যেন তাদের মাথায় পাখি বসে আছে। তিনি যখন কথা শেষ করতেন, তখন তারা কথা বলত। তারা তাঁর সামনে কখনো ঝগড়া বা কথা-কাটাকাটি করত না। তাঁর উপস্থিতিতে তারাই কথা বলার অধিকার পেত, যারা প্রথম কথা বলা শুরু করত। তিনি মানুষের কথা বলার সময় বাধা দিতেন না, তবে যদি কেউ সীমা অতিক্রম করত, তখন তাকে আদেশ বা নিষেধ করতেন।

নবীজির এই মহৎ আচরণ দেখে অনেক শত্রুও মুগ্ধ হয়ে ইসলাম গ্রহণ করেছিল। বনু হানিফার নেতা সুমামা ইবনে উসাল (রা.)-এর সেই উক্তিটি এর এক জ্বলন্ত প্রমাণ, ‘হে মুহাম্মদ, আল্লাহর কসম, এই পৃথিবীতে আমার কাছে আপনার চেহারার চেয়ে অপছন্দের চেহারা আর ছিল না। কিন্তু এখন সব চেহারা থেকে আপনার চেহারাই অধিক প্রিয়। আল্লাহর কসম! আমার কাছে আপনার ধর্মের চেয়ে অধিক ঘৃণিত আর কোনো ধর্ম ছিল না। আর এখন সব ধর্ম অপেক্ষা আপনার ধর্মই আমার বেশি প্রিয়।’ (সহিহ্ বুখারি)

সফল জীবনের পথনির্দেশ

বস্তুত, মানবজীবনের এমন কোনো দিক নেই, যেখানে মহানবী (সা.)-এর পবিত্র জীবনে দিকনির্দেশনা নেই। জন্মলগ্ন থেকে শৈশব, কৈশোর, তারুণ্য, যৌবন ও বার্ধক্য—জীবনের সব পর্বের করণীয় ও বর্জনীয় নিখুঁতভাবে চিত্রিত হয়েছে তাঁর বাণী ও কর্মে। তাঁর আদর্শকে অনুসরণ না করলে মুসলমানদের ইহকালীন ও পরকালীন মুক্তি কিছুতেই সম্ভব নয়।

আজ মুসলিম সমাজের ক্রমবর্ধমান চারিত্রিক অবক্ষয়, পারিবারিক ও সামাজিক জীর্ণতা দূর করতে তাঁর আদর্শের বিকল্প অন্য কিছু নেই। ধ্বংসের পথে ধাবমান মুসলিম সমাজকে উদ্ধার করতে হলে তাঁর আদর্শকে আঁকড়ে ধরতে হবে। তাঁর আদর্শেই মিলবে অন্ধকারাচ্ছন্ন গোটা সমাজের মুক্তি।

লেখক: মুফতি ইবরাহীম আল খলীল, সহকারী শিক্ষাসচিব, মাদ্রাসা আশরাফুল মাদারিস, তেজগাঁও, ঢাকা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত