অনলাইন ডেস্ক
গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের বর্বর হামলার ভয়াবহতা বিশ্ব সম্প্রদায়ের চোখের সামনে চলমান। কিন্তু কেউ কিছু বলছে না। প্রায় দুই বছর ধরে চলা এই হত্যাযজ্ঞে প্রতিদিন গড়ে ১০০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হচ্ছে— যাদের মধ্যে অর্ধেকই শিশু।
জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ গত বছরের অক্টোবরে গাজাকে আখ্যা দিয়েছিল ‘শিশুদের কবরস্থান’ হিসেবে। আজকের বাস্তবতা আরও নিষ্ঠুর—গাজার ধ্বংসস্তূপে জন্ম নিচ্ছে শিশু, আবার কোথাও ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগে মরে যাচ্ছে মায়ের গর্ভেই।
গাজার শিশুরা শুধু এই যুদ্ধের ‘পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার’ শিকার নয়, তারা ইসরায়েলি রাষ্ট্রযন্ত্রের চোখে ভবিষ্যতের হুমকি। গাজার প্রজন্ম এমন একটি প্রজন্ম, যারা জন্ম থেকেই দখল, ক্ষুধা ও অবরোধের বাস্তবতায় লড়াই করে বড় হয়। ইসরায়েল এই ভবিষ্যৎকে ভয় পায়, তাই শিশুদের নিশানা বানানো তাদের রাষ্ট্রীয় কৌশল হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মাত্র ১৭ বছর বয়সে ভাগনি মারিয়া ও ভাগনে তামিমের সঙ্গে নিহত হয় ইউসুফ আল-জাক। ইউসুফের জন্ম হয়েছিল ২০০৮ সালে একটি ইসরায়েলি কারাগারে। তার মা ফাতেমা আল-জাককে ২০০৭ সালে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। এরপর অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় নিপীড়নের মধ্য দিয়ে তাঁকে গর্ভপাত করাতে চাপ দেওয়া হয়।
জন্মের পর ২০ মাস কারাগারে কাটিয়ে অবশেষে মুক্তি পেয়েছিল ইউসুফ। কিন্তু তার জীবন ইসরায়েলের চোখে ছিল এক জীবন্ত চ্যালেঞ্জ। পরিবারের দাবি, তাকে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করা হয়—কারণ, সে ইসরায়েলি দখলদারত্বের প্রতীকী এক পরাজয়ের নাম হয়ে উঠেছিল।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এই নিধনযজ্ঞকে বাইবেলের আমালেক জাতিকে ধ্বংসের গল্প দিয়ে বৈধতা দিয়েছেন। ইসরায়েলি মন্ত্রী ও ধর্মীয় নেতারা প্রকাশ্যেই বলেন, গাজায় কোনো নিরপরাধ মানুষ নেই। প্রতিটি ফিলিস্তিনি শিশু জন্ম থেকেই সন্ত্রাসী। ফিলিস্তিনি নারীরা মানুষের জন্ম দেন না, জন্ম দেন সন্ত্রাসীর। এমন বক্তব্য শুধু রাষ্ট্রীয় বর্বরতার অনুমোদনই নয়, বরং গণহত্যাকে রাষ্ট্রীয় কৌশলে পরিণত করেছে।
শুধু ক্ষেপণাস্ত্র নয়, ইসরায়েল গাজাকে ধীরে ধীরে নিঃশেষ করার নীতি প্রয়োগ করছে। গাজায় একই সঙ্গে চলছে দ্রুত গণহত্যা ও ধীর গণহত্যার যুগপৎ প্রয়োগ—একদিকে বোমা ও ড্রোনে তাৎক্ষণিক হত্যা, অন্যদিকে ক্ষুধা, অবরোধ ও স্বাস্থ্যসেবা ধ্বংস করে শিশুদের ধীরে ধীরে নিঃশেষ করা। এদিকে স্বাস্থ্য অবকাঠামো ভেঙে পড়ায় রোগব্যাধি, অপুষ্টি ও দারিদ্র্য শিশুদের মৃত্যু আরও ত্বরান্বিত করছে। খাবার ও ওষুধের জন্য লাইনে দাঁড়িয়েও প্রাণ হারাচ্ছে শিশুরা।
গাজায় ইসরায়েলি উপনিবেশবাদের এই কৌশল কী নতুন? না, এই কৌশল নতুন নয়। এটি অনেক পুরোনো কৌশল এবং খুবই সুপরিকল্পিত। একটি জাতির ভবিষ্যৎ নিশ্চিহ্ন করতে যা যা করা দরকার, সবই এই কৌশলের অংশ। সামাজিক কাঠামো ধ্বংস করে প্রজন্মকে নিস্তেজ করাই এই কৌশলের মূল উদ্দেশ্য। এর আগে একইভাবে একটি জাতিকে নিশ্চিহ্ন করতে কেনিয়ায় ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন ১৫ লাখ লোককে বন্দিশিবিরে পাঠিয়েছিল। আলজেরিয়ায় ফরাসিরা গ্রামবাসীদের ‘ক্যাম্প ডে রিগ্রুপমেন্টে’ বন্দী করে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিল।
গাজার শিশুরা বিশ্বের অন্যতম শিক্ষিত সমাজে বেড়ে ওঠে, এমনকি অবরোধের মধ্যেও। একটি শিশু, যার হাতে বই, স্বপ্ন কিংবা স্মৃতি রয়েছে—সেটিই হয়ে ওঠে দখলদার শক্তির কাছে সবচেয়ে বড় হুমকি। এই হুমকিকে নিঃশেষ করতেই ইসরায়েলের চোখে শিশুদের হত্যা কৌশলগত প্রয়োজন। ভবিষ্যতের মুক্তির আশা নিভিয়ে দেওয়ার নির্লজ্জ প্রয়াস।
গত ২১ মাসে গাজায় নিহত শিশুর সংখ্যা ১৭ হাজার ছাড়িয়েছে। গড়ে প্রতি ৪৫ মিনিটে একটি শিশু, অর্থাৎ গাজায় প্রতিদিন হত্যা করা হচ্ছে প্রায় ৩০টি শিশুকে। খেয়াল করুন, আপনাদের দেশে একটি স্কুলের শ্রেণিকক্ষে হয়তো গড়ে ৩০ জন করে শিক্ষার্থী। আর গাজায় প্রতিদিন গড়ে মারাই যাচ্ছে ঠিক ওই পরিমাণ শিশু!
এই বাস্তবতা দেখে প্রশ্ন তোলা জরুরি—কেন শিশুদের নিশানা? কারণ, গাজায় একটি শিশুর জীবন মানে শুধুই জীবন নয়—এটি ভবিষ্যৎ, এটি প্রতিরোধ, এটি মুক্তির সম্ভাবনা। তাই হয়তো আজ তাদের নিঃশেষ করাই ইসরায়েলের মূল লক্ষ্য।
[লেখক: ফিলিস্তিনি সাংবাদিক লিনা আলসাফিন। মিডল ইস্ট আই থেকে সংক্ষেপে অনূদিত]
গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের বর্বর হামলার ভয়াবহতা বিশ্ব সম্প্রদায়ের চোখের সামনে চলমান। কিন্তু কেউ কিছু বলছে না। প্রায় দুই বছর ধরে চলা এই হত্যাযজ্ঞে প্রতিদিন গড়ে ১০০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হচ্ছে— যাদের মধ্যে অর্ধেকই শিশু।
জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ গত বছরের অক্টোবরে গাজাকে আখ্যা দিয়েছিল ‘শিশুদের কবরস্থান’ হিসেবে। আজকের বাস্তবতা আরও নিষ্ঠুর—গাজার ধ্বংসস্তূপে জন্ম নিচ্ছে শিশু, আবার কোথাও ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগে মরে যাচ্ছে মায়ের গর্ভেই।
গাজার শিশুরা শুধু এই যুদ্ধের ‘পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার’ শিকার নয়, তারা ইসরায়েলি রাষ্ট্রযন্ত্রের চোখে ভবিষ্যতের হুমকি। গাজার প্রজন্ম এমন একটি প্রজন্ম, যারা জন্ম থেকেই দখল, ক্ষুধা ও অবরোধের বাস্তবতায় লড়াই করে বড় হয়। ইসরায়েল এই ভবিষ্যৎকে ভয় পায়, তাই শিশুদের নিশানা বানানো তাদের রাষ্ট্রীয় কৌশল হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মাত্র ১৭ বছর বয়সে ভাগনি মারিয়া ও ভাগনে তামিমের সঙ্গে নিহত হয় ইউসুফ আল-জাক। ইউসুফের জন্ম হয়েছিল ২০০৮ সালে একটি ইসরায়েলি কারাগারে। তার মা ফাতেমা আল-জাককে ২০০৭ সালে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। এরপর অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় নিপীড়নের মধ্য দিয়ে তাঁকে গর্ভপাত করাতে চাপ দেওয়া হয়।
জন্মের পর ২০ মাস কারাগারে কাটিয়ে অবশেষে মুক্তি পেয়েছিল ইউসুফ। কিন্তু তার জীবন ইসরায়েলের চোখে ছিল এক জীবন্ত চ্যালেঞ্জ। পরিবারের দাবি, তাকে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করা হয়—কারণ, সে ইসরায়েলি দখলদারত্বের প্রতীকী এক পরাজয়ের নাম হয়ে উঠেছিল।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এই নিধনযজ্ঞকে বাইবেলের আমালেক জাতিকে ধ্বংসের গল্প দিয়ে বৈধতা দিয়েছেন। ইসরায়েলি মন্ত্রী ও ধর্মীয় নেতারা প্রকাশ্যেই বলেন, গাজায় কোনো নিরপরাধ মানুষ নেই। প্রতিটি ফিলিস্তিনি শিশু জন্ম থেকেই সন্ত্রাসী। ফিলিস্তিনি নারীরা মানুষের জন্ম দেন না, জন্ম দেন সন্ত্রাসীর। এমন বক্তব্য শুধু রাষ্ট্রীয় বর্বরতার অনুমোদনই নয়, বরং গণহত্যাকে রাষ্ট্রীয় কৌশলে পরিণত করেছে।
শুধু ক্ষেপণাস্ত্র নয়, ইসরায়েল গাজাকে ধীরে ধীরে নিঃশেষ করার নীতি প্রয়োগ করছে। গাজায় একই সঙ্গে চলছে দ্রুত গণহত্যা ও ধীর গণহত্যার যুগপৎ প্রয়োগ—একদিকে বোমা ও ড্রোনে তাৎক্ষণিক হত্যা, অন্যদিকে ক্ষুধা, অবরোধ ও স্বাস্থ্যসেবা ধ্বংস করে শিশুদের ধীরে ধীরে নিঃশেষ করা। এদিকে স্বাস্থ্য অবকাঠামো ভেঙে পড়ায় রোগব্যাধি, অপুষ্টি ও দারিদ্র্য শিশুদের মৃত্যু আরও ত্বরান্বিত করছে। খাবার ও ওষুধের জন্য লাইনে দাঁড়িয়েও প্রাণ হারাচ্ছে শিশুরা।
গাজায় ইসরায়েলি উপনিবেশবাদের এই কৌশল কী নতুন? না, এই কৌশল নতুন নয়। এটি অনেক পুরোনো কৌশল এবং খুবই সুপরিকল্পিত। একটি জাতির ভবিষ্যৎ নিশ্চিহ্ন করতে যা যা করা দরকার, সবই এই কৌশলের অংশ। সামাজিক কাঠামো ধ্বংস করে প্রজন্মকে নিস্তেজ করাই এই কৌশলের মূল উদ্দেশ্য। এর আগে একইভাবে একটি জাতিকে নিশ্চিহ্ন করতে কেনিয়ায় ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন ১৫ লাখ লোককে বন্দিশিবিরে পাঠিয়েছিল। আলজেরিয়ায় ফরাসিরা গ্রামবাসীদের ‘ক্যাম্প ডে রিগ্রুপমেন্টে’ বন্দী করে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিল।
গাজার শিশুরা বিশ্বের অন্যতম শিক্ষিত সমাজে বেড়ে ওঠে, এমনকি অবরোধের মধ্যেও। একটি শিশু, যার হাতে বই, স্বপ্ন কিংবা স্মৃতি রয়েছে—সেটিই হয়ে ওঠে দখলদার শক্তির কাছে সবচেয়ে বড় হুমকি। এই হুমকিকে নিঃশেষ করতেই ইসরায়েলের চোখে শিশুদের হত্যা কৌশলগত প্রয়োজন। ভবিষ্যতের মুক্তির আশা নিভিয়ে দেওয়ার নির্লজ্জ প্রয়াস।
গত ২১ মাসে গাজায় নিহত শিশুর সংখ্যা ১৭ হাজার ছাড়িয়েছে। গড়ে প্রতি ৪৫ মিনিটে একটি শিশু, অর্থাৎ গাজায় প্রতিদিন হত্যা করা হচ্ছে প্রায় ৩০টি শিশুকে। খেয়াল করুন, আপনাদের দেশে একটি স্কুলের শ্রেণিকক্ষে হয়তো গড়ে ৩০ জন করে শিক্ষার্থী। আর গাজায় প্রতিদিন গড়ে মারাই যাচ্ছে ঠিক ওই পরিমাণ শিশু!
এই বাস্তবতা দেখে প্রশ্ন তোলা জরুরি—কেন শিশুদের নিশানা? কারণ, গাজায় একটি শিশুর জীবন মানে শুধুই জীবন নয়—এটি ভবিষ্যৎ, এটি প্রতিরোধ, এটি মুক্তির সম্ভাবনা। তাই হয়তো আজ তাদের নিঃশেষ করাই ইসরায়েলের মূল লক্ষ্য।
[লেখক: ফিলিস্তিনি সাংবাদিক লিনা আলসাফিন। মিডল ইস্ট আই থেকে সংক্ষেপে অনূদিত]
নানা অজুহাতে নিজে দেশের নাগরিকদেরই বাংলাদেশে ঠেলে পাঠাচ্ছে ভারতের বিজেপি সরকার। পশ্চিমবঙ্গ, আসামসহ বাঙালি অধ্যুষিত বিভিন্ন রাজ্যে এখন বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর আতঙ্কে আছেন বহু মানুষ। এই ভয়ে কলকাতায় এক ব্যক্তি আত্মহত্যা করেছেন।
৬ মিনিট আগেশাখা কাসেম ব্রিগেডের মুখপাত্র আবু ওবেইদা এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, হামাস যোদ্ধা এবং গাজার বেসামরিক নাগরিকেরা যা খায়, জিম্মিরাও তা-ই খায়। রেড ক্রসের আহ্বানকে স্বাগত জানালেও তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, গাজার সব মানুষ যেমন আছে জিম্মিরা তেমনই থাকবে। কোনো বিশেষ সুবিধা তাদের দেওয়া হবে না।
১৪ মিনিট আগেইয়েমেন উপকূলে নৌকা ডুবে অন্তত ৬৮ জন অভিবাসনপ্রত্যাশীর মৃত্যু হয়েছে এবং আরও ৭৪ জন নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের অভিবাসন সংস্থা। বিবিসির প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গতকাল রোববার বৈরী আবহাওয়ার...
১ ঘণ্টা আগেইরানের তেল, গ্যাস ও পেট্রোকেমিক্যাল স্থাপনাগুলোতে সাম্প্রতিক সময়ে ঘন ঘন অগ্নিকাণ্ড এবং বিস্ফোরণকে ‘অস্বাভাবিক ও বিপজ্জনক’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন দেশটির একজন জ্যেষ্ঠ সংসদ সদস্য। এসবের মধ্যে অন্তত কিছু ঘটনার জন্য তিনি ইসরায়েলের সম্ভাব্য তৎপরতাকে দায়ী করেছেন।
১১ ঘণ্টা আগে